Surah আস-সাফফাত

Listen

Bangali বাংলা

Surah আস-সাফফাত - Aya count 182

وَٱلصَّـٰۤفَّـٰتِ صَفࣰّا ﴿١﴾

শপথ তাদের যারা সারিবদ্ধভাবে দণ্ডায়মান [১]

৩৭- সূরা আস-সাফফাত ১৮২ আয়াত, মক্কী [১] কাতাদাহ বলেন, আল্লাহ্ তা'আলা তাঁর সৃষ্টির শপথ করেছেন, তারপর আরেক সৃষ্টির শপথ করেছেন, তারপর অপর সৃষ্টির শপথ করেছেন। এখানে কাতারবন্দী দ্বারা ফেরেশতাদেরকে বুঝানো হয়েছে, যারা আকাশে কাতারবন্দী হয়ে আছেন। [তাবারী]


Arabic explanations of the Qur’an:

فَٱلزَّ ٰ⁠جِرَ ٰ⁠تِ زَجۡرࣰا ﴿٢﴾

অতঃপর যারা কঠোর পরিচালক [১]

[১] মুজাহিদ বলেন, এখানে কঠোর পরিচালক বলে ফেরেশতাদেরকে বুঝানো হয়েছে। [তাবারী] পক্ষান্তরে কাতাদাহ বলেন, এর দ্বারা কুরআনে যে সমস্ত জিনিসের ব্যাপারে আল্লাহ সতর্ক করেছেন তাই বুঝানো হয়েছে। [তাবারী]


Arabic explanations of the Qur’an:

فَٱلتَّـٰلِیَـٰتِ ذِكۡرًا ﴿٣﴾

আর যারা 'যিকর' আবৃত্তিতে রত- [১]

[১] মুজাহিদ বলেন, এখানে তেলাওয়াতে রত বলে ফেরেশতাদেরকে বোঝানো হয়েছে। আর কাতাদাহ বলেন, এর দ্বারা উদ্দেশ্য, কুরআন থেকে মানুষের ঘটনাবলী ও পূর্ববর্তী উম্মতদের কাহিনী যা তোমাদের উপর তেলাওয়াত করে শোনানো হয়। [তাবারী] আল্লামা শানকীতী বলেন, এখানে কাতারবন্দী, কঠোর পরিচালক ও তেলাওয়াতকারী বলে ফেরেশতাদের কয়েকটি দলকে বুঝানো হয়েছে। কারণ, এ সূরারই অন্যত্র কাতারবন্দী থাকা ফেরেশতাদের গুণ হিসেবে বর্ণিত হয়েছে। বলা হয়েছে, “আর আমরা তো সারিবদ্ধভাবে দণ্ডায়মান এবং আমরা অবশ্যই তাঁর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণাকারী।” [১৬৫-১৬৬]


Arabic explanations of the Qur’an:

إِنَّ إِلَـٰهَكُمۡ لَوَ ٰ⁠حِدࣱ ﴿٤﴾

নিশ্চয় তোমাদের ইলাহ্ এক,


Arabic explanations of the Qur’an:

رَّبُّ ٱلسَّمَـٰوَ ٰ⁠تِ وَٱلۡأَرۡضِ وَمَا بَیۡنَهُمَا وَرَبُّ ٱلۡمَشَـٰرِقِ ﴿٥﴾

যিনি আসমানসমূহ, যমীন ও তাদের অন্তর্বর্তী সবকিছুর রব এবং রব সকল উদয়স্থলের [১]।

[১] সুদ্দী বলেন, এর বহু বচনের কারণ হচ্ছে, শীত কাল এবং গ্ৰীষ্ম কালে সূর্য উদিত হওয়ার স্থানের ভিন্নতা। তিনি আরও বলেন, সারা বছরে সূর্যের ৩৬০টি উদিত হওয়ার স্থান রয়েছে, অনুরূপভাবে সূর্যাস্ত যাওয়ারও অনুরূপ স্থান রয়েছে। [তাবারী]


Arabic explanations of the Qur’an:

إِنَّا زَیَّنَّا ٱلسَّمَاۤءَ ٱلدُّنۡیَا بِزِینَةٍ ٱلۡكَوَاكِبِ ﴿٦﴾

নিশ্চয় আমরা কাছের আসমানকে নক্ষত্ররাজির সুষমা দ্বারা সুশোভিত করেছি [১]

[১] এর সমার্থে দেখুন, সূরা ফুসসিলাত ১২; সূরা আল-হিজর ১৬; সূরা আল-মুলক ৫।


Arabic explanations of the Qur’an:

وَحِفۡظࣰا مِّن كُلِّ شَیۡطَـٰنࣲ مَّارِدࣲ ﴿٧﴾

এবং রক্ষা করেছি প্রত্যেক বিদ্রোহী শয়তান থেকে [১]।

[১] অনুরূপ দেখুন, সূরা আল-হিজর ১৭-১৮।


Arabic explanations of the Qur’an:

لَّا یَسَّمَّعُونَ إِلَى ٱلۡمَلَإِ ٱلۡأَعۡلَىٰ وَیُقۡذَفُونَ مِن كُلِّ جَانِبࣲ ﴿٨﴾

ফলে তারা ঊর্ধ্ব জগতের কিছু শুনতে পারে না [১]। আর তাদের প্রতি নিক্ষিপ্ত হয় সব দিক থেকে---

[১] কাতাদাহ বলেন, ٱلۡمَلَإِ ٱلۡأَعۡلَىٰ বলে ফেরেশতাদের ঐ দলটিকে বোঝানো হয়েছে, যারা তাদের নীচে যারা আছে তাদের উপরে অবস্থান করছে। সেখান থেকে কোনো কিছু শোনা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। [তাবারী]


Arabic explanations of the Qur’an:

دُحُورࣰاۖ وَلَهُمۡ عَذَابࣱ وَاصِبٌ ﴿٩﴾

বিতাড়নের জন্য [১] এবং তাদের জন্য আছে অবিরাম শাস্তি।

[১] কি নিক্ষিপ্ত হয় তা বলা হয়নি। কাতাদাহ বলেন, তাদের উপর অগ্নিস্ফুলিঙ্গ বা উল্কাপিণ্ড নিক্ষেপ করা হয়। [তাবারী] আর মুজাহিদ বলেন, এখানে دحوراً শব্দটির অন্য অর্থ বিতাড়িত অবস্থায়। [তাবারী]


Arabic explanations of the Qur’an:

إِلَّا مَنۡ خَطِفَ ٱلۡخَطۡفَةَ فَأَتۡبَعَهُۥ شِهَابࣱ ثَاقِبࣱ ﴿١٠﴾

তবে কেউ হঠাৎ কিছু শুনে ফেললে জ্বলন্ত উল্কাপিণ্ড তার পশ্চাদ্ধাবন করে।


Arabic explanations of the Qur’an:

فَٱسۡتَفۡتِهِمۡ أَهُمۡ أَشَدُّ خَلۡقًا أَم مَّنۡ خَلَقۡنَاۤۚ إِنَّا خَلَقۡنَـٰهُم مِّن طِینࣲ لَّازِبِۭ ﴿١١﴾

সুতরাং তাদেরকে জিজ্ঞেস করুন, তারা সৃষ্টিতে দৃঢ়তর, না আমরা অন্য যা কিছু সৃষ্টি করেছি তা [১]? তাদেরকে তো আমরা সৃষ্টি করেছি আঠাল মাটি হতে।

[১] মুজাহিদ বলেন, অন্য সৃষ্টি যেমন, আসমান, যমীন ও পাহাড়। [তাবারী]


Arabic explanations of the Qur’an:

بَلۡ عَجِبۡتَ وَیَسۡخَرُونَ ﴿١٢﴾

আপনি তো বিস্ময় বোধ করছেন, আর তারা করছে বিদ্রূপ [১]।

[১] কাতাদাহ বলেন, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আশ্চর্য হচ্ছিলেন যে, এ কুরআন তাকে দেয়া হয়েছে, অথচ পথভ্রষ্টরা এটাকে নিয়ে উপহাস করছে। [তাবারী]


Arabic explanations of the Qur’an:

وَإِذَا ذُكِّرُواْ لَا یَذۡكُرُونَ ﴿١٣﴾

এবং যখন তাদেরকে উপদেশ দেয়া হয়, তখন তারা তা গ্রহণ করে না।


Arabic explanations of the Qur’an:

وَإِذَا رَأَوۡاْ ءَایَةࣰ یَسۡتَسۡخِرُونَ ﴿١٤﴾

আর যখন তারা কোনো নিদর্শন দেখে, তখন তারা উপহাস করে


Arabic explanations of the Qur’an:

وَقَالُوۤاْ إِنۡ هَـٰذَاۤ إِلَّا سِحۡرࣱ مُّبِینٌ ﴿١٥﴾

এবং বলে, 'এটা তো এক সুস্পষ্ট জাদু ছাড়া আর কিছুই নয়।


Arabic explanations of the Qur’an:

أَءِذَا مِتۡنَا وَكُنَّا تُرَابࣰا وَعِظَـٰمًا أَءِنَّا لَمَبۡعُوثُونَ ﴿١٦﴾

আমরা যখন মরে যাব এবং মাটি ও অস্থিতে পরিণত হব, তখনও কি আমরা পুনরুত্থিত হব?


Arabic explanations of the Qur’an:

أَوَءَابَاۤؤُنَا ٱلۡأَوَّلُونَ ﴿١٧﴾

এবং আমাদের পিতৃপুরুষরাও?’


Arabic explanations of the Qur’an:

قُلۡ نَعَمۡ وَأَنتُمۡ دَ ٰ⁠خِرُونَ ﴿١٨﴾

বলুন, ‘হ্যাঁ, এবং তোমরা হবে লাঞ্ছিত।'


Arabic explanations of the Qur’an:

فَإِنَّمَا هِیَ زَجۡرَةࣱ وَ ٰ⁠حِدَةࣱ فَإِذَا هُمۡ یَنظُرُونَ ﴿١٩﴾

অতঃপর তা তো একটিমাত্ৰ প্ৰচণ্ড ধমক---আর তখনই তারা দেখবে [১]

[১] زجرة শব্দের একাধিক অর্থ হয়ে থাকে। এর এক অর্থ, ‘প্রচণ্ড ধমক’ বা ‘ভয়ানক শব্দ’। এখানে মৃতদেরকে জীবিত করার উদ্দেশ্যে ইসরাফীল আলাইহিস সালামের শিংগায় দ্বিতীয় ফুৎকার বোঝানো হয়েছে। [ফাতহুল কাদীর]


Arabic explanations of the Qur’an:

وَقَالُواْ یَـٰوَیۡلَنَا هَـٰذَا یَوۡمُ ٱلدِّینِ ﴿٢٠﴾

এবং তারা বলবে, 'হায়, দুর্ভোগ আমাদের! এটাই তো প্রতিদান দিবস।'


Arabic explanations of the Qur’an:

هَـٰذَا یَوۡمُ ٱلۡفَصۡلِ ٱلَّذِی كُنتُم بِهِۦ تُكَذِّبُونَ ﴿٢١﴾

এটাই ফয়সালার দিন, যার প্রতি তোমরা মিথ্যা আরোপ করতে।


Arabic explanations of the Qur’an:

۞ ٱحۡشُرُواْ ٱلَّذِینَ ظَلَمُواْ وَأَزۡوَ ٰ⁠جَهُمۡ وَمَا كَانُواْ یَعۡبُدُونَ ﴿٢٢﴾

(ফেরেশতাদেরকে বলা হবে,) 'একত্র কর যালিম [১] ও তাদের সহচরদেরকে [২] এবং তাদেরক, যাদের 'ইবাদত করত তারা---

[১] আল্লামা শানকীতী বলেন, যালেম বলে এখানে কাফেরদেরকে বোঝানো হয়েছে। কারণ, পরবর্তী অংশ ‘আর যাদের ইবাদাত করত তারা আল্লাহর পরিবর্তে’ থেকে এটাই সুস্পষ্ট। কুরআনের বিভিন্ন স্থানে যুলুম বলে শির্ক উদ্দেশ্য নেয়া হয়েছে। [আদওয়াউল বায়ান] [২] ইবন আব্বাস বলেন, এখানে أزواج বলে অনুরূপ ও সমমতের লোক বোঝানো হয়েছে। কাতাদাহ বলেন, এর দ্বারা তাদের মত অন্যান্য কাফের বোঝানো হয়েছে। [তাবারী]


Arabic explanations of the Qur’an:

مِن دُونِ ٱللَّهِ فَٱهۡدُوهُمۡ إِلَىٰ صِرَ ٰ⁠طِ ٱلۡجَحِیمِ ﴿٢٣﴾

আল্লাহর পরিবর্তে। আর তাদেরকে পরিচালিত কর জাহান্নামের পথে [১],

[১] অথবা জাহান্নামের চতুর্থ দরজা হচ্ছে জাহীম। তাদেরকে সেদিকে পথনির্দেশ কর। [আত-তাফসীরুস সহীহ]


Arabic explanations of the Qur’an:

وَقِفُوهُمۡۖ إِنَّهُم مَّسۡـُٔولُونَ ﴿٢٤﴾

আর তাদেরকে থামাও, কারণ তাদেরকে তো প্রশ্ন করা হবে।


Arabic explanations of the Qur’an:

مَا لَكُمۡ لَا تَنَاصَرُونَ ﴿٢٥﴾

তোমাদের কী হল যে, তোমরা একে অন্যের সাহায্য করছ না?'


Arabic explanations of the Qur’an:

بَلۡ هُمُ ٱلۡیَوۡمَ مُسۡتَسۡلِمُونَ ﴿٢٦﴾

বস্তুত তারা হবে আজ আতাসমৰ্পণকারী।


Arabic explanations of the Qur’an:

وَأَقۡبَلَ بَعۡضُهُمۡ عَلَىٰ بَعۡضࣲ یَتَسَاۤءَلُونَ ﴿٢٧﴾

আর তারা একে অন্যের সামনাসামনি হয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করবে---


Arabic explanations of the Qur’an:

قَالُوۤاْ إِنَّكُمۡ كُنتُمۡ تَأۡتُونَنَا عَنِ ٱلۡیَمِینِ ﴿٢٨﴾

তারা বলবে, 'তোমরা তো তোমাদের শপথ নিয়ে আমাদের কাছে আসতে [১]।'

[১] এ আয়াতের কয়েকটি অর্থ হতে পারে। এক. তোমরা তোমাদের শপথ নিয়ে এসে বলতে যে, তোমরা হকের উপর আছ, তাই আমরা তোমাদেরকে বিশ্বাস করেছিলাম। তোমরা এমনভাবে আসতে যে, আমরা তোমাদেরকে নিরাপদ মনে করতাম। ফলে আমরা তোমাদের অনুসরণ করেছিলাম। অর্থাৎ তোমরাই আমাদেরকে পথভ্রষ্ট করেছ। [জালালাইন] দুই. অন্য অর্থ হচ্ছে, তোমরা দীন ও হকের লেবাস পরে আসতে, আর আমাদেরকে শরীআতের বিধি-বিধান সম্পর্কে উদাসীন করে দিতে। তা থেকে দূরে রাখতে। আর আমাদের কাছে ভ্ৰষ্ট পথকে শোভিত করে দেখাতে। [তাবারী; মুয়াসসার] তিন. তোমরা তোমাদের শক্তি ও প্রভাব নিয়ে আমাদেরকে প্রভাবিত করতে, ফলে আমরা তোমাদের অনুসরণ করতাম। [সা’দী]


Arabic explanations of the Qur’an:

قَالُواْ بَل لَّمۡ تَكُونُواْ مُؤۡمِنِینَ ﴿٢٩﴾

তারা (নেতৃস্থানীয় কাফেররা) বলবে, 'বরং তোমরা তো মুমিন ছিলে না,


Arabic explanations of the Qur’an:

وَمَا كَانَ لَنَا عَلَیۡكُم مِّن سُلۡطَـٰنِۭۖ بَلۡ كُنتُمۡ قَوۡمࣰا طَـٰغِینَ ﴿٣٠﴾

এবং তোমাদের উপর আমাদের কোনো কর্তৃত্ব ছিল না; বস্তুত তোমরাই ছিলে সীমালংঘনকারী সম্প্রদায়।


Arabic explanations of the Qur’an:

فَحَقَّ عَلَیۡنَا قَوۡلُ رَبِّنَاۤۖ إِنَّا لَذَاۤىِٕقُونَ ﴿٣١﴾

তাই আমাদের বিরুদ্ধে আমাদের রবের কথা সত্য হয়েছে, নিশ্চয় আমরা শাস্তি আস্বাদন করব।


Arabic explanations of the Qur’an:

فَأَغۡوَیۡنَـٰكُمۡ إِنَّا كُنَّا غَـٰوِینَ ﴿٣٢﴾

সুতরাং আমরা তোমাদেরকে বিভ্রান্ত করেছিলাম, কারণ আমরা নিজেরাও ছিলাম বিভ্রান্ত।


Arabic explanations of the Qur’an:

فَإِنَّهُمۡ یَوۡمَىِٕذࣲ فِی ٱلۡعَذَابِ مُشۡتَرِكُونَ ﴿٣٣﴾

অতঃপর তারা সবাই সেদিন শাস্তির শরীক হবে।


Arabic explanations of the Qur’an:

إِنَّا كَذَ ٰ⁠لِكَ نَفۡعَلُ بِٱلۡمُجۡرِمِینَ ﴿٣٤﴾

নিশ্চয় আমরা অপরাধীদের সাথে এরূপ করে থাকি।


Arabic explanations of the Qur’an:

إِنَّهُمۡ كَانُوۤاْ إِذَا قِیلَ لَهُمۡ لَاۤ إِلَـٰهَ إِلَّا ٱللَّهُ یَسۡتَكۡبِرُونَ ﴿٣٥﴾

তাদেরকে 'আল্লাহ ছাড়া কোনো সত্য ইলাহ নেই’ বলা হলে তারা অহংকার করত [১]

[১] অহংকারের কারণেই তারা মূলতঃ এ কালেমা উচ্চারণ করেনি। যদি তারা এ কালেমা উচ্চারণ করত তবে তাদের অবস্থা সম্পর্কে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যা বলেছেন তা হতো। তিনি বলেছেন, আমি তো মানুষের সাথে যুদ্ধ করার জন্য নির্দেশিত হয়েছি যতক্ষণ না তারা বলবে, ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’। যদি তারা তা বলে তবে তাদের জান ও মাল আমার হাত থেকে নিরাপদ হবে। তবে ইসলামের হক ছাড়া। আর তাদের হিসেব তো আল্লাহরই উপর। [বুখারী ২৫, মুসলিম ২২] ইমাম যুহরী বলেন, আল্লাহ তা'আলা তাঁর কিতাবেও তা উল্লেখ করেছেন। তিনি তাঁর কিতাবে একদল লোকের অহংকারের কথা বর্ণনা করে বলেছেন, “তাদেরকে ‘আল্লাহ ছাড়া কোনো সত্য ইলাহ নেই’ বলা হলে তারা অহংকার করত।” আরও বলেছেন, “যখন কাফিররা তাদের অন্তরে পোষণ করেছিল গোত্রীয় অহমিকা---অজ্ঞতার যুগের অহমিকা, তখন আল্লাহ তাঁর রাসূল ও মুমিনদের উপর স্বীয় প্রশান্তি নাযিল করলেন; আর তাদেরকে তাকওয়ার কালেমায় সুদৃঢ় করলেন,” আর সেই তাকওয়ার কালেমা হচ্ছে, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ ও মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ। মুশরিকরা হুদাইবিয়ার দিন এটা বলতে অহংকার করে বিরত ছিল। [ইবন হিব্বান ১/৪৫১-৪৫২; আত-তাফসীরুস সহীহ]


Arabic explanations of the Qur’an:

وَیَقُولُونَ أَىِٕنَّا لَتَارِكُوۤاْ ءَالِهَتِنَا لِشَاعِرࣲ مَّجۡنُونِۭ ﴿٣٦﴾

এবং বলত, 'আমরা কি এক উন্মাদ কবির কথায় আমাদের ইলাহদেরকে বর্জন করব?'


Arabic explanations of the Qur’an:

بَلۡ جَاۤءَ بِٱلۡحَقِّ وَصَدَّقَ ٱلۡمُرۡسَلِینَ ﴿٣٧﴾

বরং তিনি তো সত্য নিয়ে এসেছেন এবং তিনি রাসূলদেরকে সত্য বলে স্বীকার করেছেন।


Arabic explanations of the Qur’an:

إِنَّكُمۡ لَذَاۤىِٕقُواْ ٱلۡعَذَابِ ٱلۡأَلِیمِ ﴿٣٨﴾

তোমরা অবশ্যই যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি আস্বাদনকারী হবে


Arabic explanations of the Qur’an:

وَمَا تُجۡزَوۡنَ إِلَّا مَا كُنتُمۡ تَعۡمَلُونَ ﴿٣٩﴾

এবং তোমরা যা করতে তারই প্রতিফল পাবে---


Arabic explanations of the Qur’an:

إِلَّا عِبَادَ ٱللَّهِ ٱلۡمُخۡلَصِینَ ﴿٤٠﴾

তবে তারা নয় যারা আল্লাহর একনিষ্ঠ বান্দা।


Arabic explanations of the Qur’an:

أُوْلَـٰۤىِٕكَ لَهُمۡ رِزۡقࣱ مَّعۡلُومࣱ ﴿٤١﴾

তাদের জন্য আছে নির্ধারিত রিযিক---


Arabic explanations of the Qur’an:

فَوَ ٰ⁠كِهُ وَهُم مُّكۡرَمُونَ ﴿٤٢﴾

ফলমূল; আর তারা হবে সম্মানিত,


Arabic explanations of the Qur’an:

فِی جَنَّـٰتِ ٱلنَّعِیمِ ﴿٤٣﴾

নেয়ামত-পূর্ণ জান্নাতে


Arabic explanations of the Qur’an:

عَلَىٰ سُرُرࣲ مُّتَقَـٰبِلِینَ ﴿٤٤﴾

মুখোমুখি হয়ে আসনে আসীন হবে।


Arabic explanations of the Qur’an:

یُطَافُ عَلَیۡهِم بِكَأۡسࣲ مِّن مَّعِینِۭ ﴿٤٥﴾

তাদেরকে ঘুরে ঘুরে পরিবেশন করা হবে বিশুদ্ধ সুরাপূর্ণ পাত্ৰ [১]

[১] শরাবের পানপাত্র নিয়ে ঘুরে ঘুরে জান্নাতীদের মধ্যে কারা পরিবেশন করবে সেকথা এখানে বলা হয়নি। এর বিস্তারিত বর্ণনা দেয়া হয়েছে অন্যান্য স্থানে: “আর তাদের খিদমত করার জন্য ঘুরবে তাদের খাদেম ছেলেরা যারা এমন সুন্দর যেমন ঝিনুকে লুকানো মোতি।” [সূরা আত-তুর ২৪] “আর তাদের খিদমত করার জন্য ঘুরে ফিরবে এমন সব বালক যারা হামেশা বালকই থাকবে। তোমরা তাদেরকে দেখলে মনে করবে মোতি ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে।” [সূরা আল-ইনসান ১৯]


Arabic explanations of the Qur’an:

بَیۡضَاۤءَ لَذَّةࣲ لِّلشَّـٰرِبِینَ ﴿٤٦﴾

শুভ্ৰ উজ্জ্বল, যা হবে পানকারীদের জন্য সুস্বাদু।


Arabic explanations of the Qur’an:

لَا فِیهَا غَوۡلࣱ وَلَا هُمۡ عَنۡهَا یُنزَفُونَ ﴿٤٧﴾

তাতে ক্ষতিকর কিছু থাকবে না এবং তাতে তারা মাতালও হবে না,


Arabic explanations of the Qur’an:

وَعِندَهُمۡ قَـٰصِرَ ٰ⁠تُ ٱلطَّرۡفِ عِینࣱ ﴿٤٨﴾

তাদের সঙ্গে থাকবে আনতনয়না [১] ডাগর চোখ বিশিষ্টা [২] (হুরীগণ)।

[১] এখানে জান্নাতের হুরীদের বৈশিষ্ট্য বর্ণিত হয়েছে। এ আয়াতে প্রথমে তাদের গুণ বর্ণিত হয়েছে যে, তারা হবে ‘আনতনয়না’। যেসব স্বামীর সাথে আল্লাহ তা'আলা তাদের দাম্পত্য সম্পর্ক স্থাপন করে দেবেন, তারা তাদের ছাড়া কোনো ভিন্ন পুরুষের প্রতি দৃষ্টিপাত করবে না। কোনো কোনো মুফাসসির এর অর্থ করেছেন, তারা তাদের স্বামীদের দৃষ্টি নত রাখবে। অর্থাৎ তারা নিজেরা এমন ‘অনিন্দ্য সুন্দরী ও স্বামীর প্রতি নিবেদিতা’ হবে যে, স্বামীদের মনে অন্য কোনো নারীর প্রতি দৃষ্টিপাত করার বাসনাই হবে না। [দেখুন, তাবারী; আব্দওয়াউল বায়ান] [২] এখানে হুরীদের দ্বিতীয় গুণ বর্ণিত হয়েছে। বলা হয়েছে যে, তাদের চোখ বড় বড় হবে। মেয়েদের চোখ বড় হলে সুন্দর দেখায়। [দেখুন, তাবারী; আদওয়াউল বায়ান]


Arabic explanations of the Qur’an:

كَأَنَّهُنَّ بَیۡضࣱ مَّكۡنُونࣱ ﴿٤٩﴾

তারা যেন সুরক্ষিত ডিম্ব [১]।

[১] এখানে জান্নাতের হুরীগণের তৃতীয় গুণ বর্ণিত হয়েছে। তাদেরকে সুরক্ষিত ডিমের সাথে তুলনা করা হয়েছে। আরবদের কাছ এই তুলনা প্রসিদ্ধ ও সুবিদিত ছিল। যে ডিম পাখার নিচে লুকানো থাকে, তা এমনই সুরক্ষিত থাকে যে, এর উপর বাইরের ধূলিকণার কোনো প্রভাব পড়ে না। ফলে তা খুব স্বচ্ছ ও পরিচ্ছন্ন থাকে। এছাড়া এর রঙ সাদা হলুদাভ হয়ে থাকে; যা আরবদের কাছে মহিলাদের সর্বাধিক চিত্তাকর্ষক রঙ হিসেবে গণ্য হত। তাই এর সাথে তুলনা করা হয়েছে। [দেখুন, তাবারী; আদওয়াউল বায়ান]


Arabic explanations of the Qur’an:

فَأَقۡبَلَ بَعۡضُهُمۡ عَلَىٰ بَعۡضࣲ یَتَسَاۤءَلُونَ ﴿٥٠﴾

অতঃপর তারা একে অন্যের সামনাসামনি হয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করবে


Arabic explanations of the Qur’an:

قَالَ قَاۤىِٕلࣱ مِّنۡهُمۡ إِنِّی كَانَ لِی قَرِینࣱ ﴿٥١﴾

তাদের কেউ বলবে, 'আমার ছিল এক সঙ্গী;


Arabic explanations of the Qur’an:

یَقُولُ أَءِنَّكَ لَمِنَ ٱلۡمُصَدِّقِینَ ﴿٥٢﴾

‘সে বলত, 'তুমি কি তাদের অন্তর্ভুক যারা বিশ্বাস করে যে,


Arabic explanations of the Qur’an:

أَءِذَا مِتۡنَا وَكُنَّا تُرَابࣰا وَعِظَـٰمًا أَءِنَّا لَمَدِینُونَ ﴿٥٣﴾

‘আমরা যখন মরে যাব এবং আমরা মাটি ও অস্থিতে পরিণত হব তখনও কি আমাদেরকে প্রতিফল দেয়া হবে?’


Arabic explanations of the Qur’an:

قَالَ هَلۡ أَنتُم مُّطَّلِعُونَ ﴿٥٤﴾

আল্লাহ্‌ বলবেন, 'তোমরা কি তাকে দেখতে চাও?’


Arabic explanations of the Qur’an:

فَٱطَّلَعَ فَرَءَاهُ فِی سَوَاۤءِ ٱلۡجَحِیمِ ﴿٥٥﴾

অতঃপর সে ঝুঁকে দেখবে এবং তাকে দেখতে পাবে জাহান্নামের মধ্যস্থলে;


Arabic explanations of the Qur’an:

قَالَ تَٱللَّهِ إِن كِدتَّ لَتُرۡدِینِ ﴿٥٦﴾

বলবে, ‘আল্লাহর কসম! তুমি তো আমাকে প্রায় ধ্বংসই করেছিলে


Arabic explanations of the Qur’an:

وَلَوۡلَا نِعۡمَةُ رَبِّی لَكُنتُ مِنَ ٱلۡمُحۡضَرِینَ ﴿٥٧﴾

'আমার রবের অনুগ্রহ না থাকলে আমিও তো হাযিরকৃত [১] ব্যক্তিদের মধ্যে শামিল হতাম।

[১] অর্থাৎ যদি আমার উপর আল্লাহর নেয়ামত না থাকত, তবে তো আমি জাহান্নামের শাস্তিতে হাযিরকৃত লোকদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যেতাম। [সা'দী]


Arabic explanations of the Qur’an:

أَفَمَا نَحۡنُ بِمَیِّتِینَ ﴿٥٨﴾

আমাদের তো আর মৃত্যু হবে না


Arabic explanations of the Qur’an:

إِلَّا مَوۡتَتَنَا ٱلۡأُولَىٰ وَمَا نَحۡنُ بِمُعَذَّبِینَ ﴿٥٩﴾

প্রথম মৃত্যুর পর এবং আমাদেরকে শাস্তিও দেয়া হবে না !'


Arabic explanations of the Qur’an:

إِنَّ هَـٰذَا لَهُوَ ٱلۡفَوۡزُ ٱلۡعَظِیمُ ﴿٦٠﴾

এটা তো অবশ্যই মহাসাফল্য।


Arabic explanations of the Qur’an:

لِمِثۡلِ هَـٰذَا فَلۡیَعۡمَلِ ٱلۡعَـٰمِلُونَ ﴿٦١﴾

এরূপ সাফল্যের জন্য আমলকারীদের উচিত আমল করা,


Arabic explanations of the Qur’an:

أَذَ ٰ⁠لِكَ خَیۡرࣱ نُّزُلًا أَمۡ شَجَرَةُ ٱلزَّقُّومِ ﴿٦٢﴾

আপ্যায়নের জন্য কি এটাই শ্রেয়, না যাক্কুম গাছ?


Arabic explanations of the Qur’an:

إِنَّا جَعَلۡنَـٰهَا فِتۡنَةࣰ لِّلظَّـٰلِمِینَ ﴿٦٣﴾

যালিমদের জন্য আমরা এটা সৃষ্টি করেছি পরীক্ষাস্বরূপ,


Arabic explanations of the Qur’an:

إِنَّهَا شَجَرَةࣱ تَخۡرُجُ فِیۤ أَصۡلِ ٱلۡجَحِیمِ ﴿٦٤﴾

এ গাছ উদ্‌গত হয় জাহান্নামের তলদেশ থেকে,


Arabic explanations of the Qur’an:

طَلۡعُهَا كَأَنَّهُۥ رُءُوسُ ٱلشَّیَـٰطِینِ ﴿٦٥﴾

এর মোচা যেন শয়তানের মাথা,


Arabic explanations of the Qur’an:

فَإِنَّهُمۡ لَـَٔاكِلُونَ مِنۡهَا فَمَالِـُٔونَ مِنۡهَا ٱلۡبُطُونَ ﴿٦٦﴾

তারা তো এটা থেকে খাবে এবং উদর পূর্ণ করবে এটা দিয়ে [১]।

[১] আল্লামা শানকীতী বলেন, এ আয়াতে আল্লাহ বলেছেন যে, তারা তো যাক্কুম গাছ থেকে খাবে এবং উদর পূর্ণ করবে এটা দিয়ে। তদুপরি তাদের জন্য থাকবে ফুটন্ত পানির মিশ্রণ। অন্যত্রও তা বলেছেন, “তারপর হে বিভ্রান্ত মিথ্যারোপকারীরা! তোমরা অবশ্যই আহার করবে যক্কুম গাছ থেকে, অতঃপর সেটা দ্বারা তারা পেট পূর্ণ করবে, তদুপরি তারা পান করবে তার উপর অতি উষ্ণ পানি--অতঃপর পান করবে তৃষ্ণার্ত উটের ন্যায়।” [সূরা আল-ওয়াকি'আহ ৫১-৫৫]


Arabic explanations of the Qur’an:

ثُمَّ إِنَّ لَهُمۡ عَلَیۡهَا لَشَوۡبࣰا مِّنۡ حَمِیمࣲ ﴿٦٧﴾

তদুপরি তাদের জন্য থাকবে ফুটন্ত পানির মিশ্রণ।


Arabic explanations of the Qur’an:

ثُمَّ إِنَّ مَرۡجِعَهُمۡ لَإِلَى ٱلۡجَحِیمِ ﴿٦٨﴾

তারপর তাদের প্রত্যাবর্তন হবে প্ৰজ্বলিত আগুনেরই দিকে।


Arabic explanations of the Qur’an:

إِنَّهُمۡ أَلۡفَوۡاْ ءَابَاۤءَهُمۡ ضَاۤلِّینَ ﴿٦٩﴾

তারা তো তাদের পিতৃপুরুষদেরকে পেয়েছিল বিপথগামী,


Arabic explanations of the Qur’an:

فَهُمۡ عَلَىٰۤ ءَاثَـٰرِهِمۡ یُهۡرَعُونَ ﴿٧٠﴾

অতঃপর তাদের পদাঙ্ক অনুসরণে ধাবিত হয়েছিল [১]।

[১] মুজাহিদ বলেন, এর অর্থ কোনো কিছুর পিছনে দ্রুত চলা। [তাবারী] কাতাদাহ বলেন, খুব দ্রুত চলা। [তাবারী]


Arabic explanations of the Qur’an:

وَلَقَدۡ ضَلَّ قَبۡلَهُمۡ أَكۡثَرُ ٱلۡأَوَّلِینَ ﴿٧١﴾

আর অবশ্যই তাদের আগে পূর্ববতীদের বেশীর ভাগ বিপথগামী হয়েছিল,


Arabic explanations of the Qur’an:

وَلَقَدۡ أَرۡسَلۡنَا فِیهِم مُّنذِرِینَ ﴿٧٢﴾

আর অবশ্যই আমরা তাদের মধ্যে সতর্ককারী পাঠিয়েছিলাম।


Arabic explanations of the Qur’an:

فَٱنظُرۡ كَیۡفَ كَانَ عَـٰقِبَةُ ٱلۡمُنذَرِینَ ﴿٧٣﴾

কাজেই লক্ষ্য করুন যাদেরকে সতর্ক করা হয়েছিল, তাদের পরিণাম কী হয়েছিল!


Arabic explanations of the Qur’an:

إِلَّا عِبَادَ ٱللَّهِ ٱلۡمُخۡلَصِینَ ﴿٧٤﴾

তবে আল্লাহর একনিষ্ঠ বান্দাদের কথা স্বতন্ত্র [১]।

[১] সুদী বলেন, এরা হচ্ছে, তারা আল্লাহ যাদেরকে তাঁর নিজের জন্য বিশেষভাবে বাছাই করে নিয়েছেন। [তাবারী]


Arabic explanations of the Qur’an:

وَلَقَدۡ نَادَىٰنَا نُوحࣱ فَلَنِعۡمَ ٱلۡمُجِیبُونَ ﴿٧٥﴾

আর অবশ্যই নূহ আমাদেরকে ডেকেছিলেন, অতঃপর (দেখুন) আমরা কত উত্তম সাড়াদানকারী।


Arabic explanations of the Qur’an:

وَنَجَّیۡنَـٰهُ وَأَهۡلَهُۥ مِنَ ٱلۡكَرۡبِ ٱلۡعَظِیمِ ﴿٧٦﴾

আর তাকে এবং তার পরিবারবর্গকে আমরা উদ্ধার করেছিলাম মহাসংকট থেকে।


Arabic explanations of the Qur’an:

وَجَعَلۡنَا ذُرِّیَّتَهُۥ هُمُ ٱلۡبَاقِینَ ﴿٧٧﴾

আর তার বংশধরদেরকেই আমরা বিদ্যমান রেখেছি (বংশপরম্পরায়) [১],

[১] ইবন আব্বাস বলেন, এর অর্থ শুধু নৃহের সন্তানরাই অবশিষ্ট ছিল। [তাবারী]


Arabic explanations of the Qur’an:

وَتَرَكۡنَا عَلَیۡهِ فِی ٱلۡـَٔاخِرِینَ ﴿٧٨﴾

আর আমরা পরবর্তীদের মধ্যে তার জন্য সুখ্যাতি রেখেছি।


Arabic explanations of the Qur’an:

سَلَـٰمٌ عَلَىٰ نُوحࣲ فِی ٱلۡعَـٰلَمِینَ ﴿٧٩﴾

সমগ্র সৃষ্টির মধ্যে নূহের প্রতি শান্তি বর্ষিত হোক।


Arabic explanations of the Qur’an:

إِنَّا كَذَ ٰ⁠لِكَ نَجۡزِی ٱلۡمُحۡسِنِینَ ﴿٨٠﴾

নিশ্চয় আমরা এভাবে মুহসিনদেরকে পুরস্কৃত করে থাকি,


Arabic explanations of the Qur’an:

إِنَّهُۥ مِنۡ عِبَادِنَا ٱلۡمُؤۡمِنِینَ ﴿٨١﴾

নিশ্চয় তিনি ছিলেন আমাদের মুমিন বান্দাদের অন্যতম।


Arabic explanations of the Qur’an:

ثُمَّ أَغۡرَقۡنَا ٱلۡـَٔاخَرِینَ ﴿٨٢﴾

তারপর অন্য সকলকে আমরা নিমজ্জিত করেছিলাম।


Arabic explanations of the Qur’an:

۞ وَإِنَّ مِن شِیعَتِهِۦ لَإِبۡرَ ٰ⁠هِیمَ ﴿٨٣﴾

আর ইবরাহীম তো তার অনুগামীদের অন্তর্ভুক্ত [১]।

[১] ইবরাহীম আলাইহিস সালামের কাহিনী বিস্তারিত দেখুন, তার পিতা ও সম্প্রদায়ের সাথে তার বিভিন্ন আলোচনা, সূরা মারইয়াম ৪১-৪৯; সূরা আশ-শু'আরা ৬৯-৭০। ইবন আব্বাস বলেন, এখানে তার অনুগামী বলে, তার দীনের অনুগামী বোঝানো হয়েছে। [তাবারী] মুজাহিদ বলেন, তার পদ্ধতি ও নিয়ম-নীতির অনুগামী বোঝানো হয়েছে। [তাবারী]


Arabic explanations of the Qur’an:

إِذۡ جَاۤءَ رَبَّهُۥ بِقَلۡبࣲ سَلِیمٍ ﴿٨٤﴾

স্মরণ করুন, যখন তিনি তার রবের কাছে উপস্থিত হয়েছিলেন বিশুদ্ধচিত্তে [১] ;

[১] সুদী বলেন, অর্থাৎ শির্কমুক্ত হয়ে আল্লাহর কাছে আসলেন। [তাবারী]


Arabic explanations of the Qur’an:

إِذۡ قَالَ لِأَبِیهِ وَقَوۡمِهِۦ مَاذَا تَعۡبُدُونَ ﴿٨٥﴾

যখন তিনি তার পিতা ও তার সম্পপ্রদায়কে জিজ্ঞেস করেছিলেন, ‘তোমরা কিসের ইবাদাত করছ?


Arabic explanations of the Qur’an:

أَىِٕفۡكًا ءَالِهَةࣰ دُونَ ٱللَّهِ تُرِیدُونَ ﴿٨٦﴾

'তোমার কি আল্লাহর পরিবর্তে অলীক ইলাহ্‌গুলোকে চাও?


Arabic explanations of the Qur’an:

فَمَا ظَنُّكُم بِرَبِّ ٱلۡعَـٰلَمِینَ ﴿٨٧﴾

‘তাহলে সকলসৃষ্টির রব সম্বন্ধে তোমাদের ধারণা কী [১] ?’

[১] কাতাদাহ বলেন, অর্থাৎ যদি তোমরা তাঁর সাথে এমন অবস্থায় সাক্ষাৎ করেছ যে, তোমরা তাকে ছাড়া অন্যকে ইবাদাত করেছ। [তাবারী] তখন তাঁর ব্যাপারে তোমাদের কি ধারণা? তিনি কি তোমাদের এমনিই ছেড়ে দিবেন?


Arabic explanations of the Qur’an:

فَنَظَرَ نَظۡرَةࣰ فِی ٱلنُّجُومِ ﴿٨٨﴾

অতঃপর তিনি তারকারাজির দিকে একবার তাকালেন,


Arabic explanations of the Qur’an:

فَقَالَ إِنِّی سَقِیمࣱ ﴿٨٩﴾

এবং বললেন, 'নিশ্চয় আমি অসুস্থ [১]।'

[১] ইবরাহীম আলাইহিস সালাম তার জীবনে তিনটি মিথ্যা বলেছিলেন বলে যে কথা বলা হয়ে থাকে এটি তার একটি। কোনো কোনো মুফাসসির বলেন, এখানে অসুস্থ বলে বোঝানো হয়েছে যে, আমি অসুস্থ হয়ে পড়ব। কারণ, আরবী ভাষায় فعيل এর পদবাচ্য বহুল পরিমাণে ভবিষ্যৎ কালের জন্য ব্যবহৃত হয়। যেমন পবিত্র কুরআনে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সম্বোধন করে বলা হয়েছে اِنَّكَ مَيِّتٌ وَّاِنَّهُمْ مَّيِّتُوْنَ [সূরা আয-যুমার ৩০] এর বাহ্যিক অর্থ আপনিও মৃত এবং তারাও মৃত। কিন্তু এখানে এরূপ অর্থ উদ্দেশ্য নয়, বরং অর্থ হল, আপনিও মৃত্যুবরণ করবেন এবং তারাও মৃত্যুবরণ করবে। এমনিভাবে ইব্রাহীম আলাইহিস সালাম سقيم এর অর্থ নিয়েছিলেন যে, “আমি অসুস্থ হয়ে পড়ব”। এ কথা বলার কারণ এই যে, মৃত্যুর পূর্বে প্রত্যেক মানুষের অসুস্থ হওয়া স্থির নিশ্চিত। কোনো কোনো মুফাসসির বলেন, এতে তার উদ্দেশ্য ছিল মানসিক সংকোচ; যা স্বগোত্রের মুশরিকসুলভ কাণ্ডকীর্তি দেখে তার মনে সৃষ্টি হচ্ছিল। ‘আমার মন খারাপ’ বলেও এ অর্থ অনেকটা ব্যক্ত করা যায়। বলা বাহুল্য, এ বাক্যে 'মানসিক সংকোচন’ অর্থেরও পুরোপুরি অবকাশ রয়েছে। কেউ কেউ বলেন, ইব্রাহীম আলাইহিস সালামের একথাটিকে মিথ্যা বা বাস্তববিরোধী বলার জন্য প্রথমে কোনো উপায়ে একথা জানা উচিত যে, সে সময় ইবরাহীম আলাইহিস সালামের কোনো প্রকারের কোনো কষ্ট ও অসুস্থতা ছিল না এবং তিনি নিছক বাহানা করে একথা বলেছিলেন। যদি এর কোনো প্রমাণ না থেকে থাকে, তাহলে অযথা কিসের ভিত্তিতে একে মিথ্যা গণ্য করা হবে? হতে পারে ইব্রাহীম আলাইহিস সালাম তখন বাস্তবিকই কিছুটা অসুস্থ ছিলেন; তবে উৎসবে যোগদানে প্রতিবন্ধক হতে পারে, এমন অসুস্থতা ছিল না। তিনি তার মামুলি অসুস্থতার কথাই এমনভাবে ব্যক্ত করেছেন, যাতে শ্রোতারা মনে করে নেয় যে, তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছেন, কাজেই মেলায় যাওয়া সম্ভবপর নয়। আলেমগণ এটাকেই তাওরিয়াহ হিসেবে গ্রহণ করেছেন, যা বাহ্যিক আকার-আকৃতিতে মিথ্যা মনে হয়, কিন্তু বক্তার উদ্দেশ্যের দিকে লক্ষ্য করলে মিথ্যা হয় না। অর্থাৎ যার বাহ্যিক অৰ্থ বাস্তবের প্রতিকূলে এবং বক্তার উদ্দিষ্ট অর্থ বাস্তবের অনুকূলে। [দেখুন-তাবারী; ফাতহুল কাদীর] এ ব্যাখ্যা সর্বাধিক যুক্তিযুক্ত এবং সন্তোষজনক। কারণ, এক হাদিসে ইব্রাহীম আলাইহিস সালামের উক্তি فَقَالَ اَنِّىْ سَقِيْمٌ এর জন্যে كذب (মিথ্যা) শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। [বুখারী ৩৩৫৮] এ হাদীসেরই কোনো কোনো বর্ণনায় আরও বলা হয়েছে, “এগুলোর মধ্যে কোনো মিথ্যা এরূপ নয়; যা আল্লাহর দীনের প্রতিরক্ষা ও সমর্থনে বলা হয়নি”। [তিরমিয়ী ৩১৪৮]


Arabic explanations of the Qur’an:

فَتَوَلَّوۡاْ عَنۡهُ مُدۡبِرِینَ ﴿٩٠﴾

অতঃপর তারা তাকে পিছনে রেখে চলে গেল।


Arabic explanations of the Qur’an:

فَرَاغَ إِلَىٰۤ ءَالِهَتِهِمۡ فَقَالَ أَلَا تَأۡكُلُونَ ﴿٩١﴾

পরে তিনি চুপিচুপি তাদের দেবতাগুলোর কাছে গেলেন এবং বললেন, 'তোমরা খাদ্য গ্রহণ করছ না কেন?'


Arabic explanations of the Qur’an:

مَا لَكُمۡ لَا تَنطِقُونَ ﴿٩٢﴾

'তোমাদের কী হয়েছে যে তোমরা কথা বল না?'


Arabic explanations of the Qur’an:

فَرَاغَ عَلَیۡهِمۡ ضَرۡبَۢا بِٱلۡیَمِینِ ﴿٩٣﴾

অতঃপর তিনি তাদের উপর সবলে আঘাত হানলেন।


Arabic explanations of the Qur’an:

فَأَقۡبَلُوۤاْ إِلَیۡهِ یَزِفُّونَ ﴿٩٤﴾

তখন ঐ লোকগুলো তার দিকে ছুটে আসল।


Arabic explanations of the Qur’an:

قَالَ أَتَعۡبُدُونَ مَا تَنۡحِتُونَ ﴿٩٥﴾

তিনি বললেন, 'তোমরা নিজেরা যাদেরকে খোদাই করে নির্মাণ কর তোমরা কি তাদেরই ইবাদাত কর?


Arabic explanations of the Qur’an:

وَٱللَّهُ خَلَقَكُمۡ وَمَا تَعۡمَلُونَ ﴿٩٦﴾

অথচ আল্লাহ্ই সৃষ্টি করেছেন তোমাদেরকে এবং তোমরা যা তৈরী কর তাও [১]।'

[১] হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘নিশ্চয় আল্লাহই প্রত্যেক শিল্পী ও তার শিল্পকে তৈরী করেন।’ [মুস্তাদরাকে হাকিম ১/৩১] অর্থাৎ মানুষের কাজের স্রষ্টাও আল্লাহ। [আত-তাফসীরুস সহীহ]


Arabic explanations of the Qur’an:

قَالُواْ ٱبۡنُواْ لَهُۥ بُنۡیَـٰنࣰا فَأَلۡقُوهُ فِی ٱلۡجَحِیمِ ﴿٩٧﴾

তারা বলল, 'এর জন্য এক ইমারত নির্মাণ কর, তারপর একে জ্বলন্ত আগুনে নিক্ষেপ কর।'


Arabic explanations of the Qur’an:

فَأَرَادُواْ بِهِۦ كَیۡدࣰا فَجَعَلۡنَـٰهُمُ ٱلۡأَسۡفَلِینَ ﴿٩٨﴾

এভাবে তারা তার বিরুদ্ধে চক্রান্তের সংকল্প করেছিল; কিন্তু আমরা তাদেরকে খুবই হেয় করে দিলাম [১]।

[১] কাতাদাহ বলেন, অর্থাৎ এরপর আর তাদের সাথে বিতণ্ডায় যেতে হয়নি। তারপূর্বেই তাদের ধ্বংস করা হয়েছিল। [তাবারী; আত-তাফসীরুস সহীহ]


Arabic explanations of the Qur’an:

وَقَالَ إِنِّی ذَاهِبٌ إِلَىٰ رَبِّی سَیَهۡدِینِ ﴿٩٩﴾

তিনি বললেন, 'আমি আমার রবের দিকে চললাম [১], তিনি আমাকে অবশ্যই হেদায়াত করবেন,

[১] কাতাদাহ বলেন, অর্থাৎ তিনি বললেন, তিনি তার আমল, মন ও নিয়্যত সব নিয়েই যাচ্ছেন। [তাবারী]


Arabic explanations of the Qur’an:

رَبِّ هَبۡ لِی مِنَ ٱلصَّـٰلِحِینَ ﴿١٠٠﴾

'হে আমার রব! আমাকে এক সৎকর্মপরায়ণ সন্তান দান করুন।'


Arabic explanations of the Qur’an:

فَبَشَّرۡنَـٰهُ بِغُلَـٰمٍ حَلِیمࣲ ﴿١٠١﴾

অতঃপর আমরা তাকে এক সহিষ্ণু পুত্রের সুসংবাদ দিলাম [১]।

[১] এখান থেকে ইবরাহীম আলাইহিস সালাম ও তার বড় সন্তান ইসমাঈলের কাহিনী বর্ণিত হচ্ছে। এখানে আরও আছে ইসমাঈলের যবেহ ও তার বিনিময় দেয়ার আলোচনা। এ সূরা আস-সাফফাত ব্যতীত আর কোথাও এ ঘটনা আলোচিত হয় নি। [আত-তাফসীরুস সহীহ]


Arabic explanations of the Qur’an:

فَلَمَّا بَلَغَ مَعَهُ ٱلسَّعۡیَ قَالَ یَـٰبُنَیَّ إِنِّیۤ أَرَىٰ فِی ٱلۡمَنَامِ أَنِّیۤ أَذۡبَحُكَ فَٱنظُرۡ مَاذَا تَرَىٰۚ قَالَ یَـٰۤأَبَتِ ٱفۡعَلۡ مَا تُؤۡمَرُۖ سَتَجِدُنِیۤ إِن شَاۤءَ ٱللَّهُ مِنَ ٱلصَّـٰبِرِینَ ﴿١٠٢﴾

অতঃপর তিনি যখন তার পিতার সাথে কাজ করার মত বয়সে উপনীত হলেন, তখন ইবরাহীম বললেন, 'হে প্রিয় বৎস! আমি স্বপ্নে দেখি যে, তোমাকে আমি যবেহ করছি [১], এখন তোমার অভিমত কী বল?' তিনি বললেন, 'হে আমার পিতা! আপনি যা আদেশপ্ৰাপ্ত হয়েছেন তা-ই করুন। আল্লাহর ইচ্ছায় আপনি আমাকে ধৈর্যশীল পাবেন।'

[১] কাতাদাহ বলেন, নবী-রাসূলগণের স্বপ্ন ওহী হয়ে থাকে। তারা যখন স্বপ্নে কিছু দেখতেন সেটা বাস্তবে রূপ দিতেন। [তাবারী]


Arabic explanations of the Qur’an:

فَلَمَّاۤ أَسۡلَمَا وَتَلَّهُۥ لِلۡجَبِینِ ﴿١٠٣﴾

অতঃপর যখন তারা উভয়ে আনুগত্য প্রকাশ করলেন [১] এবং ইবরাহীম তার পুত্রকে উপুড় করে শায়িত করলেন,

[১] কাতাদাহ বলেন, যখন ইসমাঈল তার আত্মাকে আল্লাহর জন্য সোপর্দ করলেন, আর ইবরাহীম তার ছেলেকে আল্লাহর জন্য সমর্পন করলেন। [তাবারী]


Arabic explanations of the Qur’an:

وَنَـٰدَیۡنَـٰهُ أَن یَـٰۤإِبۡرَ ٰ⁠هِیمُ ﴿١٠٤﴾

তখন আমরা তাকে ডেকে বললাম, ‘হে ইবরাহীম!


Arabic explanations of the Qur’an:

قَدۡ صَدَّقۡتَ ٱلرُّءۡیَاۤۚ إِنَّا كَذَ ٰ⁠لِكَ نَجۡزِی ٱلۡمُحۡسِنِینَ ﴿١٠٥﴾

আপনি তো স্বপ্নের আদেশ সত্যই পালন করলেন!’---এভাবেই আমরা মুহসিনদেরকে পুরস্কৃত করে থাকি।


Arabic explanations of the Qur’an:

إِنَّ هَـٰذَا لَهُوَ ٱلۡبَلَـٰۤؤُاْ ٱلۡمُبِینُ ﴿١٠٦﴾

নিশ্চয়ই এটা ছিল এক স্পষ্ট পরীক্ষা।


Arabic explanations of the Qur’an:

وَفَدَیۡنَـٰهُ بِذِبۡحٍ عَظِیمࣲ ﴿١٠٧﴾

আর আমরা তাকে মুক্ত করলাম এক বড় যবেহ এর বিনিময়ে।


Arabic explanations of the Qur’an:

وَتَرَكۡنَا عَلَیۡهِ فِی ٱلۡـَٔاخِرِینَ ﴿١٠٨﴾

আর আমরা তার জন্য পরবর্তীদের মধ্যে সুনাম-সুখ্যাতি রেখে দিয়েছি।


Arabic explanations of the Qur’an:

سَلَـٰمٌ عَلَىٰۤ إِبۡرَ ٰ⁠هِیمَ ﴿١٠٩﴾

ইবরাহীমের উপর শান্তি বৰ্ষিত হোক।


Arabic explanations of the Qur’an:

كَذَ ٰ⁠لِكَ نَجۡزِی ٱلۡمُحۡسِنِینَ ﴿١١٠﴾

এভাবেই আমরা মুহসিনদেরকে পুরস্কৃত করে থাকি।


Arabic explanations of the Qur’an:

إِنَّهُۥ مِنۡ عِبَادِنَا ٱلۡمُؤۡمِنِینَ ﴿١١١﴾

নিশ্চয় তিনি ছিলেন আমাদের মুমিন বান্দাদের অন্যতম;


Arabic explanations of the Qur’an:

وَبَشَّرۡنَـٰهُ بِإِسۡحَـٰقَ نَبِیࣰّا مِّنَ ٱلصَّـٰلِحِینَ ﴿١١٢﴾

আর আমরা তাকে সুসংবাদ দিয়েছিলাম ইসহাকের, তিনি ছিলেন এক নবী, সৎকর্মপরায়ণদের অন্যতম।


Arabic explanations of the Qur’an:

وَبَـٰرَكۡنَا عَلَیۡهِ وَعَلَىٰۤ إِسۡحَـٰقَۚ وَمِن ذُرِّیَّتِهِمَا مُحۡسِنࣱ وَظَالِمࣱ لِّنَفۡسِهِۦ مُبِینࣱ ﴿١١٣﴾

আর আমরা ইবরাহীমের ওপর বরকত দান করেছিলাম এবং ইসহাকের উপরও; তাদের উভয়ের বংশধরদের মধ্যে কিছু সংখ্যক মুহসিন এবং কিছু সংখ্যক নিজেদের প্রতি স্পষ্ট অত্যাচারী।


Arabic explanations of the Qur’an:

وَلَقَدۡ مَنَنَّا عَلَىٰ مُوسَىٰ وَهَـٰرُونَ ﴿١١٤﴾

আর অবশ্যই আমরা অনুগ্রহ করেছিলাম মূসা ও হারূনের প্রতি,


Arabic explanations of the Qur’an:

وَنَجَّیۡنَـٰهُمَا وَقَوۡمَهُمَا مِنَ ٱلۡكَرۡبِ ٱلۡعَظِیمِ ﴿١١٥﴾

এবং তাদেরকে এবং তাদের সম্প্রদায়কে আমরা উদ্ধার করেছিলাম মহাসংকট থেকে [১]।

[১] সুদ্দী বলেন, মহাসংকট বলে ডুবে যাওয়া বুঝানো হয়েছে। [তাবারী] তবে হাসান বসরী বলেন, মহাসংকট বলে ফের’আউনের বংশধরদের বুঝানো হয়েছে। [তাবারী]


Arabic explanations of the Qur’an:

وَنَصَرۡنَـٰهُمۡ فَكَانُواْ هُمُ ٱلۡغَـٰلِبِینَ ﴿١١٦﴾

আর আমরা সাহায্য করেছিলাম তাদেরকে, ফলে তারাই হয়েছিল বিজয়ী।


Arabic explanations of the Qur’an:

وَءَاتَیۡنَـٰهُمَا ٱلۡكِتَـٰبَ ٱلۡمُسۡتَبِینَ ﴿١١٧﴾

আর আমরা উভয়কে দিয়েছিলাম বিশদ কিতাব [১]।

[১] কাতাদাহ বলেন, অর্থাৎ তাওরাত দিয়েছিলাম। যাতে হেদায়াত বর্ণিত ছিল, বিস্তারিত ও আহকামসমৃদ্ধ ছিল। [তাবারী।]


Arabic explanations of the Qur’an:

وَهَدَیۡنَـٰهُمَا ٱلصِّرَ ٰ⁠طَ ٱلۡمُسۡتَقِیمَ ﴿١١٨﴾

আর উভয়কে আমরা পরিচালিত করেছিলাম সরল পথে।


Arabic explanations of the Qur’an:

وَتَرَكۡنَا عَلَیۡهِمَا فِی ٱلۡـَٔاخِرِینَ ﴿١١٩﴾

আর আমরা তাদের উভয়ের জন্য পরবর্তীদের মধ্যে সুনাম-সুখ্যাতি রেখে দিয়েছি।


Arabic explanations of the Qur’an:

سَلَـٰمٌ عَلَىٰ مُوسَىٰ وَهَـٰرُونَ ﴿١٢٠﴾

মূসা ও হারূনের প্রতি সালাম (শান্তি ও নিরাপত্তা)।


Arabic explanations of the Qur’an:

إِنَّا كَذَ ٰ⁠لِكَ نَجۡزِی ٱلۡمُحۡسِنِینَ ﴿١٢١﴾

এভাবেই আমরা মুহসিনদেরকে পুরস্কৃত করে থাকি।


Arabic explanations of the Qur’an:

إِنَّهُمَا مِنۡ عِبَادِنَا ٱلۡمُؤۡمِنِینَ ﴿١٢٢﴾

নিশ্চয় তারা উভয়ে ছিলেন আমাদের মুমিন বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত।


Arabic explanations of the Qur’an:

وَإِنَّ إِلۡیَاسَ لَمِنَ ٱلۡمُرۡسَلِینَ ﴿١٢٣﴾

আর নিশ্চয় ইলইয়াস ছিলেন রাসূলগণের একজন [১]।

[১] কাতাদা বলেন, ইলইয়াস ও ইন্দ্রীস একই ব্যক্তি। [তাবারী] অন্যদের নিকট তাদের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। [ইবন কাসীর] সে মতে তিনি ছিলেন, ইলইয়াস ইবন ফিনহাস ইবন আইযার ইবনে হারূন ইবন ইমরান। তারা বালি নামীয় এক মূর্তির পূজা করত। তিনি তাদেরকে তা থেকে নিষেধ করেন। কিন্তু তারা তা থেকে বিরত হয় না। [ইবন কাসীর]


Arabic explanations of the Qur’an:

إِذۡ قَالَ لِقَوۡمِهِۦۤ أَلَا تَتَّقُونَ ﴿١٢٤﴾

যখন তিনি তার সম্প্রদায়কে বলেছিলেন, 'তোমরা কি তাকওয়া অবলম্বন করবে না?


Arabic explanations of the Qur’an:

أَتَدۡعُونَ بَعۡلࣰا وَتَذَرُونَ أَحۡسَنَ ٱلۡخَـٰلِقِینَ ﴿١٢٥﴾

'তোমরা কি বা'আলকে ডাকবে এবং পরিত্যাগ করবে শ্রেষ্ঠ স্রষ্টা---


Arabic explanations of the Qur’an:

ٱللَّهَ رَبَّكُمۡ وَرَبَّ ءَابَاۤىِٕكُمُ ٱلۡأَوَّلِینَ ﴿١٢٦﴾

'আল্লাহকে, যিনি তোমাদের রব এবং তোমাদের প্রাক্তন পিতৃপুরুষদেরও রব।'


Arabic explanations of the Qur’an:

فَكَذَّبُوهُ فَإِنَّهُمۡ لَمُحۡضَرُونَ ﴿١٢٧﴾

কিন্তু তারা তার প্রতি মিথ্যারোপ করেছিল, কাজেই তাদেরকে অবশ্যই শাস্তির জন্য উপস্থিত করা হবে।


Arabic explanations of the Qur’an:

إِلَّا عِبَادَ ٱللَّهِ ٱلۡمُخۡلَصِینَ ﴿١٢٨﴾

তবে আল্লাহর একনিষ্ঠ বান্দাদের কথা স্বতন্ত্ৰ।


Arabic explanations of the Qur’an:

وَتَرَكۡنَا عَلَیۡهِ فِی ٱلۡـَٔاخِرِینَ ﴿١٢٩﴾

আর আমরা তার জন্য পরবর্তীদের মধ্যে সুনাম-সুখ্যাতি রেখে দিয়েছি।


Arabic explanations of the Qur’an:

سَلَـٰمٌ عَلَىٰۤ إِلۡ یَاسِینَ ﴿١٣٠﴾

ইল্‌য়াসীনের [১] উপর শান্তি বৰ্ষিত হোক।

[১] অধিকাংশ মুফাসসির বলেন, এটি ইলিয়াসের দ্বিতীয় নাম। যেমন ইবরাহীমের দ্বিতীয় নাম ছিল আব্রাহাম। আর অন্য কোনো কোনো মুফাসসিরের মতে আরববাসীদের মধ্যে ইবরানী (হিব্রু) ভাষায় শব্দাবলীর বিভিন্ন উচ্চারণের প্রচলন ছিল। যেমন মীকাল ও মীকাইল এবং মীকাইন একই ফেরেশতাকে বলা হতো। একই ঘটনা ঘটেছে ইলিয়াসের নামের ব্যাপারেও। স্বয়ং কুরআন মজীদে একই পাহাড়কে একবার “তুরে সাইনা” বলা হচ্ছে এবং অন্যত্র বলা হচ্ছে, “তুরে সীনীন।” [তাবারী]


Arabic explanations of the Qur’an:

إِنَّا كَذَ ٰ⁠لِكَ نَجۡزِی ٱلۡمُحۡسِنِینَ ﴿١٣١﴾

এভাবেই তো আমরা মুহসিনদেরকে পুরস্কৃত করে থাকি।


Arabic explanations of the Qur’an:

إِنَّهُۥ مِنۡ عِبَادِنَا ٱلۡمُؤۡمِنِینَ ﴿١٣٢﴾

তিনি তো ছিলেন আমাদের মুমিন বান্দাদের অন্যতম।


Arabic explanations of the Qur’an:

وَإِنَّ لُوطࣰا لَّمِنَ ٱلۡمُرۡسَلِینَ ﴿١٣٣﴾

আর নিশ্চয় লুত ছিলেন রাসূলগণের একজন।


Arabic explanations of the Qur’an:

إِذۡ نَجَّیۡنَـٰهُ وَأَهۡلَهُۥۤ أَجۡمَعِینَ ﴿١٣٤﴾

স্মরণ করুন, যখন আমরা তাকে ও তার পরিবারের সকলকে উদ্ধার করেছিলাম---


Arabic explanations of the Qur’an:

إِلَّا عَجُوزࣰا فِی ٱلۡغَـٰبِرِینَ ﴿١٣٥﴾

পিছনে অবস্থানকারীদের অন্তর্ভুক্ত এক বৃদ্ধা ছাড়া।


Arabic explanations of the Qur’an:

ثُمَّ دَمَّرۡنَا ٱلۡـَٔاخَرِینَ ﴿١٣٦﴾

অতঃপর অবশিষ্টদেরকে আমরা সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করেছিলাম।


Arabic explanations of the Qur’an:

وَإِنَّكُمۡ لَتَمُرُّونَ عَلَیۡهِم مُّصۡبِحِینَ ﴿١٣٧﴾

আর তোমরা তো তাদের ধ্বংসাবশেষগুলো অতিক্রম করে থাক সকালে


Arabic explanations of the Qur’an:

وَبِٱلَّیۡلِۚ أَفَلَا تَعۡقِلُونَ ﴿١٣٨﴾

ও সন্ধ্যায় [১]। তবুও কি তোমরা বোঝা না?

[১] এ বিষয়ের দিকে ইংগিত করা হয়েছে যে, কুরাইশ ব্যবসায়ীরা সিরিয়া ও ফিলিস্তীন যাওয়ার পথে লুতের সম্প্রদায়ের বিধ্বস্ত জনপদ যেখানে অবস্থিত ছিল দিন-রাত সে এলাকা অতিক্রম করতো। [দেখুন, তাবারী, মুয়াস্‌সার, ফাতহুল কাদীর]


Arabic explanations of the Qur’an:

وَإِنَّ یُونُسَ لَمِنَ ٱلۡمُرۡسَلِینَ ﴿١٣٩﴾

আর নিশ্চয় ইউনুস ছিলেন রাসূলগণের একজন।


Arabic explanations of the Qur’an:

إِذۡ أَبَقَ إِلَى ٱلۡفُلۡكِ ٱلۡمَشۡحُونِ ﴿١٤٠﴾

স্মরণ করুন, যখন তিনি বোঝাই নৌযানের দিকে পালিয়ে গেলেন,


Arabic explanations of the Qur’an:

فَسَاهَمَ فَكَانَ مِنَ ٱلۡمُدۡحَضِینَ ﴿١٤١﴾

অতঃপর তিনি লটারীতে যোগগান করে পরাভূতদের অন্তর্ভুক্ত হলেন [১]।

[১] কাতাদাহ বলেন, তিনি নৌকায় উঠার পর নৌকাটির চলা থেমে গেল। তখন লোকেরা বুঝল যে, কোনো ঘটনা ঘটেছে, যার কারণে এটা আটকে গেছে। তখন তারা লটারী করল। তাতে ইউনুস আলাইহিস সালামের নাম আসল। তখন তিনি তার নিজেকে সাগরে নিক্ষেপ করলেন। আর তখনি একটি বড় মাছ তাকে গিলে ফেলল। [তাবারী]


Arabic explanations of the Qur’an:

فَٱلۡتَقَمَهُ ٱلۡحُوتُ وَهُوَ مُلِیمࣱ ﴿١٤٢﴾

অতঃপর এক বড় আকারের মাছ তাকে গিলে ফেলল, আর তখন সে নিজেকে ধিক্কার দিতে লাগল।


Arabic explanations of the Qur’an:

فَلَوۡلَاۤ أَنَّهُۥ كَانَ مِنَ ٱلۡمُسَبِّحِینَ ﴿١٤٣﴾

অতঃপর তিনি যদি আল্লাহর পবিত্ৰতা ও মহিমা ঘোষণাকারীদের অন্তর্ভুক্ত না হতেন [১],

[১] এর দুটি অর্থ হয় এবং দুটি অর্থই এখানে প্রযোজ্য। একটি অর্থ হচ্ছে, ইউনুস আলাইহিস সালাম পূর্বেই আল্লাহ থেকে গাফিল লোকদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন না বরং তিনি তাদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন যারা ছিলেন আল্লাহর চিরন্তন প্রশংসা, মহিমা ও পবিত্ৰতা ঘোষণাকারী। দ্বিতীয়টি হচ্ছে, যখন তিনি মাছের পেটে পৌঁছলেন তখন আল্লাহরই দিকে রুজূ করলেন এবং তারই প্রশংসা, মহিমা ও পবিত্রতা ঘোষণা করতে থাকলেন। অন্যত্র বলা হয়েছে: “তাই সে অন্ধকারের মধ্যে তিনি ডেকে উঠলেন, আপনি ছাড়া আর কোনো ইলাহ নেই, পাক-পবিত্র আপনার সত্তা, অবশ্যই আমি অপরাধী।” [সূরা আল আম্বিয়া ৮৭] রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, মাছের পেটে ইউনূস আলাইহিস সালামের পঠিত দোআ যে কোনো মুসলিম যে কোনো উদ্দেশ্যে পাঠ করবে, তার দো'আ কবুল হবে। [তিরমিয়ী ৩৫০৫]


Arabic explanations of the Qur’an:

لَلَبِثَ فِی بَطۡنِهِۦۤ إِلَىٰ یَوۡمِ یُبۡعَثُونَ ﴿١٤٤﴾

তাহলে তাকে উত্থানের দিন পর্যন্ত থাকতে হত তার পেটে।


Arabic explanations of the Qur’an:

۞ فَنَبَذۡنَـٰهُ بِٱلۡعَرَاۤءِ وَهُوَ سَقِیمࣱ ﴿١٤٥﴾

অতঃপর ইউনুসকে আমরা নিক্ষেপ করলাম এক তৃণহীন প্রান্তরে [১] এবং তিনি ছিলেন অসুস্থ।

[১] এটি কাতাদাহ এর মত। ইবন আব্বাস থেকে বর্ণিত, এর অর্থ, নদীর তীরে। [তাবারী]


Arabic explanations of the Qur’an:

وَأَنۢبَتۡنَا عَلَیۡهِ شَجَرَةࣰ مِّن یَقۡطِینࣲ ﴿١٤٦﴾

আর আমরা তার উপর ইয়াকতীন [১] প্ৰজাতির এক গাছ উদ্‌গত করলাম,

[১] ইয়াকতীন আরবী ভাষায় এমন ধরনের গাছকে বলা হয় যা কোনো গুঁড়ির ওপর দাঁড়িয়ে থাকে না বরং লতার মতো ছড়িয়ে যেতে থাকে। যেমন লাউ, তরমুজ, শশা ইত্যাদি। মোটকথা, সেখানে অলৌকিকভাবে এমন একটি লতাবিশিষ্ট বা লতানো গাছ উৎপন্ন করা হয়েছিল যার পাতাগুলো ইউনুসকে ছায়া দিচ্ছিল এবং ফলগুলো একই সংগে তার জন্য খাদ্য সরবরাহ করছিল এবং পানিরও যোগান দিচ্ছিল। [দেখুন, তাবারী]


Arabic explanations of the Qur’an:

وَأَرۡسَلۡنَـٰهُ إِلَىٰ مِاْئَةِ أَلۡفٍ أَوۡ یَزِیدُونَ ﴿١٤٧﴾

আর তাকে আমরা একলক্ষ বা তার চেয়ে বেশী লোকের প্রতি পাঠিয়েছিলাম।


Arabic explanations of the Qur’an:

فَـَٔامَنُواْ فَمَتَّعۡنَـٰهُمۡ إِلَىٰ حِینࣲ ﴿١٤٨﴾

অতঃপর তারা ঈমান এনেছিল; ফলে আমরা তাদেরকে কিছু কালের জন্য জীবনোপভোগ করতে দিলাম।


Arabic explanations of the Qur’an:

فَٱسۡتَفۡتِهِمۡ أَلِرَبِّكَ ٱلۡبَنَاتُ وَلَهُمُ ٱلۡبَنُونَ ﴿١٤٩﴾

এখন তাদেরকে জিজ্ঞেস করুন, 'আপনার রবের জন্যই কি রয়েছে কন্যা সন্তান [১] এবং তাদের জন্য পুত্র সন্তান?'

[১] বিভিন্ন বর্ণনায় এসেছে আরবের কুরাইশ, জুহাইনা, বনী সালামাহ, খুযা’আহ এবং অন্যান্য গোত্রের কেউ কেউ বিশ্বাস করতো, ফেরেশতারা আল্লাহর কন্যা। কুরআন মজীদের বিভিন্ন স্থানে তাদের এ জাহেলী আকীদার কথা বলা হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ দেখুন, সূরা আন নিসা ১১৭; সূরা আন নাহল ৫৭-৫৮; সূরা আল-ইসরা ৪০; সূরা আয্‌ যুখরুফ ১৬-১৯ এবং সূরা আন নাজম ২১-২৭ আয়াতসমূহ।


Arabic explanations of the Qur’an:

أَمۡ خَلَقۡنَا ٱلۡمَلَـٰۤىِٕكَةَ إِنَـٰثࣰا وَهُمۡ شَـٰهِدُونَ ﴿١٥٠﴾

অথবা আমরা কি ফেরেশতাদেরকে নারীরূপে সৃষ্টি করেছিলাম আর তারা দেখেছিল [১]?

[১] অন্যস্থানে এসেছে, “আর তারা রহমানের বান্দা ফেরেশতাগণকে নারী গণ্য করেছে; এদের সৃষ্টি কি তারা দেখেছিল? তাদের সাক্ষ্য অবশ্যই লিপিবদ্ধ করা হবে এবং তাদেরকে জিজ্ঞেস করা হবে।” [সূরা আয-যুখরুফ ১৯]


Arabic explanations of the Qur’an:

أَلَاۤ إِنَّهُم مِّنۡ إِفۡكِهِمۡ لَیَقُولُونَ ﴿١٥١﴾

সাবধান! তারা তো মনগড়া কথা বলে যে,


Arabic explanations of the Qur’an:

وَلَدَ ٱللَّهُ وَإِنَّهُمۡ لَكَـٰذِبُونَ ﴿١٥٢﴾

‘আল্লাহ সন্তান জন্ম দিয়েছেন।' আর তারা নিশ্চয় মিথ্যাবাদী।


Arabic explanations of the Qur’an:

أَصۡطَفَى ٱلۡبَنَاتِ عَلَى ٱلۡبَنِینَ ﴿١٥٣﴾

তিনি কি পুত্ৰ সন্তানের পরিবর্তে কন্যা সন্তান পছন্দ করেছেন?


Arabic explanations of the Qur’an:

مَا لَكُمۡ كَیۡفَ تَحۡكُمُونَ ﴿١٥٤﴾

তোমাদের কী হয়েছে, তোমরা কিরূপ বিচার কর?


Arabic explanations of the Qur’an:

أَفَلَا تَذَكَّرُونَ ﴿١٥٥﴾

তবে কি তোমরা উপদেশ গ্ৰহণ করবে না?


Arabic explanations of the Qur’an:

أَمۡ لَكُمۡ سُلۡطَـٰنࣱ مُّبِینࣱ ﴿١٥٦﴾

নাকি তোমাদের কোনো সুস্পষ্ট দলীল-প্ৰমাণ আছে?


Arabic explanations of the Qur’an:

فَأۡتُواْ بِكِتَـٰبِكُمۡ إِن كُنتُمۡ صَـٰدِقِینَ ﴿١٥٧﴾

তোমরা সত্যবাদী হলে তোমাদের কিতাব [১] উপস্থিত কর।

[১] কাতাদাহ বলেন, এখানে কিতাব বলে, গ্রহণযোগ্য ওযর উদ্দেশ্য। [তাবারী]


Arabic explanations of the Qur’an:

وَجَعَلُواْ بَیۡنَهُۥ وَبَیۡنَ ٱلۡجِنَّةِ نَسَبࣰاۚ وَلَقَدۡ عَلِمَتِ ٱلۡجِنَّةُ إِنَّهُمۡ لَمُحۡضَرُونَ ﴿١٥٨﴾

তারা আল্লাহ্ ও জিন জাতির মধ্যে আত্মীয়তার সম্পর্ক স্থির করেছে [১], অথচ জিনেরা জানে, নিশ্চয় তাদেরকে উপস্থিত করা হবে (শাস্তির জন্য)।

[১] এটা মুশরিকদের ভ্রান্ত বিশ্বাসের বর্ণনা যে, জিন সরদার দুহিতারা ফেরেশতাগণের জননী। কাজেই (নাউযুবিল্লাহ) আল্লাহ তা'আলা ও জিন সরদার-দুহিতাদের মধ্যে দাম্পত্য সম্পর্ক ছিল। এই সম্পর্কের ফলেই ফেরেশতাগণ জন্মলাভ করেছে। কোনো কোনো বর্ণনায় এসেছে, মুশরিকরা যখন ফেরেশতাগণকে আল্লাহর কন্যা সাব্যস্ত করল, তখন আবু বকর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু জিজ্ঞেস করলেন, তাহলে তাদের জননী কে? তারা জওয়াবে বলল, জিন সরদার-দুহিতারা। অপর এক বর্ণনায় এসেছে, কোনো কোনো আরববাসীর বিশ্বাস ছিল যে, (নাউযুবিল্লাহ) ইবলীস আল্লাহর ভ্রাতা। আল্লাহ মঙ্গলের স্রষ্টা আর সে অমঙ্গলের স্রষ্টা। এখানে তাদের বাতিল বিশ্বাস খণ্ডন করা হয়েছে। [দেখুন, ইবন কাসীর]


Arabic explanations of the Qur’an:

سُبۡحَـٰنَ ٱللَّهِ عَمَّا یَصِفُونَ ﴿١٥٩﴾

তারা (মুশরিকরা) যা আরোপ করে তা থেকে আল্লাহ্ পবিত্ৰ, মহান---


Arabic explanations of the Qur’an:

إِلَّا عِبَادَ ٱللَّهِ ٱلۡمُخۡلَصِینَ ﴿١٦٠﴾

তবে আল্লাহর একনিষ্ঠ বান্দাগণ ছাড়া,


Arabic explanations of the Qur’an:

فَإِنَّكُمۡ وَمَا تَعۡبُدُونَ ﴿١٦١﴾

অতঃপর নিশ্চয় তোমরা এবং তোমরা যাদের ইবাদাত কর তারা---


Arabic explanations of the Qur’an:

مَاۤ أَنتُمۡ عَلَیۡهِ بِفَـٰتِنِینَ ﴿١٦٢﴾

তোমরা (একনিষ্ঠ বান্দাদের) কাউকেও আল্লাহ সম্বন্ধে বিভ্রান্ত করতে পারবে না---


Arabic explanations of the Qur’an:

إِلَّا مَنۡ هُوَ صَالِ ٱلۡجَحِیمِ ﴿١٦٣﴾

শুধু প্ৰজ্জলিত আগুনে যে দগ্ধ হবে সে ছাড়া [১]।

[১] ইবন আব্ববাস বলেন, তোমরা কাউকে পথভ্রষ্ট করতে পারবে না, আর আমিও তোমাদের কাউকে পথভ্রষ্ট করব না তবে যার জন্য আমার ফয়সালা হয়ে গেছে সে জাহান্নামে দগ্ধ হবে, তার কথা ভিন্ন। [তাবারী] কাতাদাহ বলেন, তোমরা তোমাদের বাতিল দিয়ে আমার বান্দাদের কাউকে পথভ্ৰষ্ট করতে পারবে না, তবে যে জাহান্নামের আমল করে তোমাদেরকে বন্ধু বানিয়েছে সে ছাড়া। [তাবারী]


Arabic explanations of the Qur’an:

وَمَا مِنَّاۤ إِلَّا لَهُۥ مَقَامࣱ مَّعۡلُومࣱ ﴿١٦٤﴾

‘আর (জিবরীল বললেন) আমাদের প্রত্যেকের জন্য নির্ধারিত স্থান রয়েছে,


Arabic explanations of the Qur’an:

وَإِنَّا لَنَحۡنُ ٱلصَّاۤفُّونَ ﴿١٦٥﴾

‘আর আমরা তো সারিবদ্ধভাবে দণ্ডায়মান


Arabic explanations of the Qur’an:

وَإِنَّا لَنَحۡنُ ٱلۡمُسَبِّحُونَ ﴿١٦٦﴾

এবং আমরা অবশ্যই তাঁর পবিত্ৰতা ও মহিমা ঘোষনাকারী [১]।’

[২] আবদুল্লাহ ইবন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আসমানসমূহের মধ্যে এমন এক আসমান রয়েছে যার প্রতি বিঘাত জায়গায় কোনো ফেরেশতার কপাল অথবা তার দু’পা দাঁড়ানো অথবা সাজদা-রত অবস্থায় আছে। তারপর আবদুল্লাহ ইবন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু এ আয়াত তেলাওয়াত করলেন। [তাফসীর আবদুর রাযযাক ২৫৬৫] হাদীসে আরও এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমরা কি সেভাবে কাতারবন্দী হবে না যেভাবে ফেরেশতারা তাদের রবের কাছে কাতারবন্দী হয়? আমরা বললাম, হে আল্লাহ্‌র রাসূল! কিভাবে তারা তাদের রবের কাছে কাতারবন্দী হয়? তিনি বললেন, প্রথম কাতারগুলো পূর্ণ করে এবং কাতারে প্রাচীরের ন্যায় ফাঁক না রেখে দাঁড়ায়। [মুসলিম ৫২২]


Arabic explanations of the Qur’an:

وَإِن كَانُواْ لَیَقُولُونَ ﴿١٦٧﴾

আর তারা (মক্কাবাসীরা) অবশ্যই বলে আসছিল,


Arabic explanations of the Qur’an:

لَوۡ أَنَّ عِندَنَا ذِكۡرࣰا مِّنَ ٱلۡأَوَّلِینَ ﴿١٦٨﴾

‘পূর্ববর্তীদের কিতাবের মত যদি আমাদের কোনো কিতাব থাকত,


Arabic explanations of the Qur’an:

لَكُنَّا عِبَادَ ٱللَّهِ ٱلۡمُخۡلَصِینَ ﴿١٦٩﴾

আমরা অবশ্যই আল্লাহর একনিষ্ঠ বান্দা হতাম।’


Arabic explanations of the Qur’an:

فَكَفَرُواْ بِهِۦۖ فَسَوۡفَ یَعۡلَمُونَ ﴿١٧٠﴾

কিন্তু তারা কুরআনের সাথে কুফরী করল সুতরাং শীঘ্রই তারা জানতে পারবো [১];

[১] অর্থাৎ তারা তাদের কাছে নাযিলকৃত কিতাব কুরআনের সাথে কুফরী করেছে। অচিরেই তারা এ কুফরীর পরিণাম জানতে পারবে। [জালালাইন]


Arabic explanations of the Qur’an:

وَلَقَدۡ سَبَقَتۡ كَلِمَتُنَا لِعِبَادِنَا ٱلۡمُرۡسَلِینَ ﴿١٧١﴾

আর অবশ্যই আমাদের প্রেরিত বান্দাদের সম্পর্কে আমাদের এ বাক্য আগেই স্থির হয়েছে যে,


Arabic explanations of the Qur’an:

إِنَّهُمۡ لَهُمُ ٱلۡمَنصُورُونَ ﴿١٧٢﴾

নিশ্চয় তারা সাহায্যপ্রাপ্ত হবে


Arabic explanations of the Qur’an:

وَإِنَّ جُندَنَا لَهُمُ ٱلۡغَـٰلِبُونَ ﴿١٧٣﴾

এবং আমাদের বাহিনীই হবে বিজয়ী।


Arabic explanations of the Qur’an:

فَتَوَلَّ عَنۡهُمۡ حَتَّىٰ حِینࣲ ﴿١٧٤﴾

অতএব কিছু কালের জন্য আপনি তাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে থাকুন।


Arabic explanations of the Qur’an:

وَأَبۡصِرۡهُمۡ فَسَوۡفَ یُبۡصِرُونَ ﴿١٧٥﴾

আর আপনি তাদেরকে পর্যবেক্ষণ করুন, শীঘ্রই তারা দেখতে পাবে।


Arabic explanations of the Qur’an:

أَفَبِعَذَابِنَا یَسۡتَعۡجِلُونَ ﴿١٧٦﴾

তারা কি তবে আমাদের শাস্তি ত্বরান্বিত করতে চায়?


Arabic explanations of the Qur’an:

فَإِذَا نَزَلَ بِسَاحَتِهِمۡ فَسَاۤءَ صَبَاحُ ٱلۡمُنذَرِینَ ﴿١٧٧﴾

অতঃপর তাদের আঙিনায় যখন শাস্তি নেমে আসবে তখন সতর্কীকৃতদের প্ৰভাত হবে কত মন্দ [১] !

[১] আরবী বাক-পদ্ধতিতে আঙিনায় নেমে আসার অর্থ কোনো বিপদ একেবারে সামনে এসে উপস্থিত হওয়া বোঝায়। "সকাল” বলার কারণ এই যে, আরবে শক্ররা সাধারণতঃ এ সময়েই আক্রমণ পরিচালনা করত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামও তাই করতেন। তিনি কোনো শত্রুর ভূখণ্ডে রাত্ৰিবেলায় পৌঁছালেও আক্রমণের জন্যে সকাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতেন। [মুসলিম ৮৭৩] হাদীসে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন সকালবেলায় খায়বার দুর্গ আক্রমণ করেন, তখন এই বাক্যাবলি উচ্চারণ করেন, اللَّهُ أَكْبَرُ ، خَرِبَتْ خَيْبَرُ ، إِنَّا إِذَا نَزَلْنَا بِسَاحَةِ قَوْمٍ فَسَاءَ صَبَاحُ المُنْذَرِينَ অর্থাৎ, আল্লাহ মহান। খায়বার বিধ্বস্ত হয়ে গেছে। আমরা যখন কোনো সম্প্রদায়ের আঙিনায় অবতরণ করি, তখন যাদেরকে পূর্ব-সতর্ক করা হয়েছিল, তাদের সকাল খুবই মন্দ হয় ৷ [বুখারী ৩৭১, মুসলিম ১৩৬৫]


Arabic explanations of the Qur’an:

وَتَوَلَّ عَنۡهُمۡ حَتَّىٰ حِینࣲ ﴿١٧٨﴾

আর কিছু কালের জন্য আপনি তাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে থাকুন।


Arabic explanations of the Qur’an:

وَأَبۡصِرۡ فَسَوۡفَ یُبۡصِرُونَ ﴿١٧٩﴾

আর আপনি তাদেরকে পর্যবেক্ষণ করুন, শীঘ্রই তারা দেখতে পাবে।


Arabic explanations of the Qur’an:

سُبۡحَـٰنَ رَبِّكَ رَبِّ ٱلۡعِزَّةِ عَمَّا یَصِفُونَ ﴿١٨٠﴾

তারা যা আরোপ করে, তা থেকে পবিত্র ও মহান আপনার রব, সকল ক্ষমতার অধিকারী।


Arabic explanations of the Qur’an:

وَسَلَـٰمٌ عَلَى ٱلۡمُرۡسَلِینَ ﴿١٨١﴾

আর শান্তি বৰ্ষিত হোক রাসূলগণের প্ৰতি!


Arabic explanations of the Qur’an:

وَٱلۡحَمۡدُ لِلَّهِ رَبِّ ٱلۡعَـٰلَمِینَ ﴿١٨٢﴾

আর সকল প্রশংসা সৃষ্টিকুলের রব আল্লাহরই প্ৰাপ্য [১]।

[১] ১৮০-১৮২ নং আয়াতগুলোর মাধ্যমে সূরা সাফফাত সমাপ্ত করা হয়েছে। কি সুন্দর সমাপ্তি! সংক্ষেপে বলা যায় যে, আল্লাহ তা’আলা এই সংক্ষিপ্ত তিনটি আয়াতের মধ্যে সূরার সমস্ত বিষয়বস্তু ভরে দিয়েছেন। তাওহীদের বর্ণনা দ্বারা সূরার সূচনা হয়েছিল, যার সারমর্ম ছিল এই যে, মুশরিকরা আল্লাহ সম্পর্কে যেসব বিষয় বর্ণনা করে, আল্লাহ তা'আলা সেগুলো থেকে পবিত্র। সে মতে আলোচ্য প্রথম আয়াতে সে দীর্ঘ বিষয়বস্তুর দিকেই ইঙ্গিত রয়েছে। এরপর সূরায় নবী-রাসূলগণের ঘটনাবলী বৰ্ণিত হয়েছিল। সে মতে দ্বিতীয় আয়াতে সেগুলোর দিকে ইশারা করা হয়েছে। অতঃপর পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে কাফেরদের বিশ্বাস, সন্দেহ ও আপত্তিসমূহ যুক্তি ও উক্তির মাধ্যমে খণ্ডন করে বলা হয়েছিল যে, শেষ বিজয় সত্যপন্থীরাই অর্জন করবে। এসব বিষয়বস্তু যে ব্যক্তিই জ্ঞান ও অন্তদৃষ্টি সহকারে পাঠ করবে, সে অবশেষে আল্লাহ্ তা'আলার প্রশংসা ও স্তুতি পাঠ করতে বাধ্য হবে। সে মতে এই প্রশংসা ও স্তুতির ওপরই সূরার সমাপ্তি টানা হয়েছে। তাছাড়া এ তিন আয়াতের পরস্পর এক ধরনের সামঞ্জস্যতা লক্ষণীয়, প্রথম আয়াতে বলা হচ্ছে যে, কাফের মুশরিকরা যে সমস্ত খারাপ গুণে মহান আল্লাহকে চিত্রিত করার অপচেষ্টা চালিয়েছে তা থেকে তিনি কতই না পবিত্ৰ! তাদের কথা ও কর্মকাণ্ড তাঁর মহান সমীপে ও তার মর্যাদার সামান্যতমও হেরফের করার ক্ষমতা রাখে না। তারা তাঁকে খারাপ গুণে গুণান্বিত করতে চায়, পক্ষান্তরে নবী রাসূলগণ তাঁকে সঠিকভাবে জানে বিধায় তাঁর জন্য সমস্ত হক নাম ও সঠিক গুণে গুণান্বিত করে। তাই তারা সালাম পাওয়ার যোগ্য। তারা নিরাপত্তা পাবে; কারণ তারা আল্লাহর ব্যাপারে নিরাপত্তার বেষ্টনী অবলম্বন করেছে। আল্লাহর সঠিক গুণাবলীকে অস্বীকার করেনি। তারা তাঁকে তাঁর সঠিক নাম ও গুণ দ্বারা গুণান্বিত করে এবং সেগুলোর অসীলায় আহবান করে। আর তাদের আহবানে তিনিই সাড়া দেন; কারণ তিনিই তো সর্বপ্রশংসিত সত্ত্বা। দুনিয়া ও আখেরাতে সর্বদা সর্বত্র সর্বাবস্থায় তিনি প্ৰশংসিত। আর এটাই শেষ আয়াতে বর্ণিত হয়েছে। এখানে আরো একটি বিষয় লক্ষণীয় যে, প্রথম আয়াতে তাসবীহ বা পবিত্ৰতা ও মহানুভবতা ঘোষণার মাধ্যমে যাবতীয় খারাপ গুণকে সরাসরি অস্বীকার করা হয়েছে। আর পরোক্ষভাবে যাবতীয় সৎ ও সঠিক গুণকে সাব্যস্ত করা হয়েছে। তৃতীয় আয়াতে তাহমীদ বা প্রশংসা ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশের মাধ্যমে যাবতীয় সৎ ও সঠিক গুণাবলীকে আল্লাহর জন্য সরাসরি সাব্যস্ত করা হয়েছে। আর পরোক্ষভাবে যাবতীয় খারাপ গুণ থেকে মুক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। এর মাঝখানে রাসূলগণকে উল্লেখ করে এ কথাই প্রমাণ করতে চেয়েছেন যে, এ তাওহীদ বা আল্লাহর নাম ও গুণাবলীর ক্ষেত্রে সে নীতি অবলম্বন করা উচিত, যা প্রথম ও তৃতীয় আয়াতে বর্ণিত হয়েছে এবং তা একমাত্র রাসূলগণই সঠিকভাবে বুঝতে সক্ষম হয়েছেন; সুতরাং তারাই সালাম ও নিরাপত্তা পাওয়ার যোগ্য। এর বিপরীতে যারা আল্লাহর সুন্দর সুন্দর নামসমূহকে অস্বীকার করে, তার সিফাত বা গুণাবলীকে বিকৃত করে তারা রাসূলগণের পথে নয়, তাদের জন্য শান্তি ও নিরাপত্তা নেই। [দেখুন, মাজমু’ ফাতাওয়া ৩/১৩০; ইবনুল কাইয়্যেম, বাদায়ে’উল ফাওয়ায়েদ ২/১৭১; জালাউল আফহাম ১৭০]


Arabic explanations of the Qur’an: