Surah আল-জাসিয়া

Listen

Bangali বাংলা

Surah আল-জাসিয়া - Aya count 37

حمۤ ﴿١﴾

হা - মীম।

৪৫- সূরা আল-জাসিয়াহ ৩৭ আয়াত, মক্কী


Arabic explanations of the Qur’an:

تَنزِیلُ ٱلۡكِتَـٰبِ مِنَ ٱللَّهِ ٱلۡعَزِیزِ ٱلۡحَكِیمِ ﴿٢﴾

এ কিতাব মহাপরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময় আল্লাহর কাছ থেকে নাযিলকৃত।


Arabic explanations of the Qur’an:

إِنَّ فِی ٱلسَّمَـٰوَ ٰ⁠تِ وَٱلۡأَرۡضِ لَـَٔایَـٰتࣲ لِّلۡمُؤۡمِنِینَ ﴿٣﴾

নিশ্চয় আসমানসমূহ ও যমীনে মুমিনদের জন্য রয়েছে বহু নিদর্শন।


Arabic explanations of the Qur’an:

وَفِی خَلۡقِكُمۡ وَمَا یَبُثُّ مِن دَاۤبَّةٍ ءَایَـٰتࣱ لِّقَوۡمࣲ یُوقِنُونَ ﴿٤﴾

আর তোমাদের সৃষ্টি এবং জীব-জন্তুর বিস্তারে বহু নিদর্শন রয়েছে এমন সম্প্রদায়ের জন্য, যারা নিশ্চিত বিশ্বাস স্থাপন করে ;


Arabic explanations of the Qur’an:

وَٱخۡتِلَـٰفِ ٱلَّیۡلِ وَٱلنَّهَارِ وَمَاۤ أَنزَلَ ٱللَّهُ مِنَ ٱلسَّمَاۤءِ مِن رِّزۡقࣲ فَأَحۡیَا بِهِ ٱلۡأَرۡضَ بَعۡدَ مَوۡتِهَا وَتَصۡرِیفِ ٱلرِّیَـٰحِ ءَایَـٰتࣱ لِّقَوۡمࣲ یَعۡقِلُونَ ﴿٥﴾

আর রাত ও দিনের পরিবর্তনে এবং আল্লাহ আকাশ হতে যে রিযক (পানি) বর্ষণ করেন, অতঃপর তিনি তা দ্বারা যমীনকে তার মৃত্যুর পর পুনর্জীবিত করেন তাতে এবং বায়ুর পরিবর্তনে অনেক নিদর্শন রয়েছে, এমন সম্প্রদায়ের জন্য যারা বোঝে।


Arabic explanations of the Qur’an:

تِلۡكَ ءَایَـٰتُ ٱللَّهِ نَتۡلُوهَا عَلَیۡكَ بِٱلۡحَقِّۖ فَبِأَیِّ حَدِیثِۭ بَعۡدَ ٱللَّهِ وَءَایَـٰتِهِۦ یُؤۡمِنُونَ ﴿٦﴾

এগুলো আল্লাহর আয়াত, যা আমরা আপনার কাছে তিলাওয়াত করছি যথাযথভাবে। কাজেই আল্লাহ এবং তাঁর আয়াতের পরে তারা আর কোন্ বাণীতে ঈমান আনবে [১]

[১] অর্থাৎ আল্লাহর সত্ত্বা ও তাঁর ইবাদতের ক্ষেত্রে “ওয়াহদানিয়াত” বা একত্বের সপক্ষে স্বয়ং আল্লাহর পেশকৃত এসব যুক্তি-প্রমাণ সামনে আসার পরও যখন এসব লোক ঈমান গ্ৰহণ করছে না তখন এমন কি জিনিস আর আসতে পারে যার কারণে ঈমানের সম্পদ তাদের ভাগ্যে জুটবে? আল্লাহর কালামই তো সেই চূড়ান্ত বস্তু যার মাধ্যমে কোনো ব্যক্তি এই নিয়ামত লাভ করতে পারে। আর একটি অদেখা সত্য সম্পর্কে দৃঢ় বিশ্বাস সৃষ্টির জন্য সর্বাধিক যুক্তি সঙ্গত যেসব দলীল-প্রমাণ পেশ করা সম্ভব তা এই পবিত্ৰ কালামে পেশ করা হয়েছে। এরপরও যদি কেউ অস্বীকার করতেই বদ্ধপরিকর থাকে তাহলে করতে থাকুক। তার অস্বীকৃতির ফলে প্রকৃত সত্যের কোনো পরিবর্তন হবে না। [দেখুন, তাবারী]


Arabic explanations of the Qur’an:

وَیۡلࣱ لِّكُلِّ أَفَّاكٍ أَثِیمࣲ ﴿٧﴾

দুর্ভোগ প্রত্যেক ঘোর মিথ্যাবাদী পাপীর [১],

[১] কোনো কোনো বর্ণনা থেকে জানা যায় যে, এই আয়াত নদর ইবন হারেছ সম্পর্কে অবতীর্ণ হয়েছে, কোনো কোনো বর্ণনা থেকে হারেছ ইবন কালদাহ সম্পর্কে, আবার কোনো এক বর্ণনা থেকে আবু জাহল ও তার সঙ্গীদের সম্পর্কে অবতীর্ণ হওয়ার কথা জানা যায়। আয়াতের উদ্দেশ্য ব্যাখ্যা করার জন্য প্রকৃতপক্ষে কোনো ব্যক্তি বিশেষকে নির্দিষ্ট করার প্রয়োজন নেই। كل শব্দ ব্যক্ত করছে যে, যে কেউ এসব বিশেষণে বিশেষিত, তার জন্যই দুর্ভোগ - একজন হোক অথবা তিন জন। [কুরতবী, বাগভী]


Arabic explanations of the Qur’an:

یَسۡمَعُ ءَایَـٰتِ ٱللَّهِ تُتۡلَىٰ عَلَیۡهِ ثُمَّ یُصِرُّ مُسۡتَكۡبِرࣰا كَأَن لَّمۡ یَسۡمَعۡهَاۖ فَبَشِّرۡهُ بِعَذَابٍ أَلِیمࣲ ﴿٨﴾

সে আল্লাহর আয়াতসমূহ শোনে যা তার কাছে তিলাওয়াত করা হয়, তারপর সে ঔদ্ধত্যের সাথে অটল থাকে যেন সে তা শোনেনি। অতএব, আপনি তাকে সুসংবাদ দিন যন্ত্রণাদায়ক শাস্তির;


Arabic explanations of the Qur’an:

وَإِذَا عَلِمَ مِنۡ ءَایَـٰتِنَا شَیۡـًٔا ٱتَّخَذَهَا هُزُوًاۚ أُوْلَـٰۤىِٕكَ لَهُمۡ عَذَابࣱ مُّهِینࣱ ﴿٩﴾

আর যখন সে আমাদের কোনো আয়াত অবগত হয়, তখন সে সেটাকে পরিহাসের পাত্র রূপে গ্রহণ করে। তাদেরই জন্য রয়েছে লাঞ্ছনাদায়ক শাস্তি।


Arabic explanations of the Qur’an:

مِّن وَرَاۤىِٕهِمۡ جَهَنَّمُۖ وَلَا یُغۡنِی عَنۡهُم مَّا كَسَبُواْ شَیۡـࣰٔا وَلَا مَا ٱتَّخَذُواْ مِن دُونِ ٱللَّهِ أَوۡلِیَاۤءَۖ وَلَهُمۡ عَذَابٌ عَظِیمٌ ﴿١٠﴾

তাদের সামনে রয়েছে জাহান্নাম ; তাদের কৃতকর্ম তাদের কোনো কাজে আসবে না, তারা আল্লাহ্‌র পরিবর্তে যাদেরকে অভিভাবক স্থির করেছে ওরাও নয়। আর তাদের জন্য রয়েছে মহাশাস্তি।


Arabic explanations of the Qur’an:

هَـٰذَا هُدࣰىۖ وَٱلَّذِینَ كَفَرُواْ بِـَٔایَـٰتِ رَبِّهِمۡ لَهُمۡ عَذَابࣱ مِّن رِّجۡزٍ أَلِیمٌ ﴿١١﴾

এ কুরআন সৎপথের দিশারী; আর যারা তাদের রবের আয়াতসমূহের সাথে কুফরী করে, তাদের জন্য রয়েছে খুবই যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি।


Arabic explanations of the Qur’an:

۞ ٱللَّهُ ٱلَّذِی سَخَّرَ لَكُمُ ٱلۡبَحۡرَ لِتَجۡرِیَ ٱلۡفُلۡكُ فِیهِ بِأَمۡرِهِۦ وَلِتَبۡتَغُواْ مِن فَضۡلِهِۦ وَلَعَلَّكُمۡ تَشۡكُرُونَ ﴿١٢﴾

আল্লাহ, যিনি সাগরকে তোমাদের কল্যাণে নিয়োজিত করেছেন যেন তাঁর আদেশে তাতে নৌযানসমূহ চলাচল করতে পারে। আর যেন তোমরা তাঁর অনুগ্রহ তালাশ করতে পার [১] এবং যেন তোমরা (তাঁর প্রতি) কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর।

[১] পবিত্র কুরআনে ‘অনুগ্রহ তালাশ করা’ এর অর্থ সাধারণত জীবিকা উপার্জনের চেষ্টা -প্রচেষ্টা হয়ে থাকে। এখানে এরূপ অর্থ হতে পারে যে, তোমাদেরকে সমুদ্রে জাহাজ চালনার শক্তি দেয়া হয়েছে, যাতে তোমরা ব্যবসা বাণিজ্য করতে পার। এরূপ অৰ্থও সম্ভবপর যে, সমুদ্রে আমি অনেক উপকারী বস্তু সৃষ্টি করে সমুদ্রকে তোমাদের অধীন করে দিয়েছি, যাতে তোমরা সেগুলো খোঁজ করে উপকৃত হও। [দেখুন, তাবারী, সাদী]


Arabic explanations of the Qur’an:

وَسَخَّرَ لَكُم مَّا فِی ٱلسَّمَـٰوَ ٰ⁠تِ وَمَا فِی ٱلۡأَرۡضِ جَمِیعࣰا مِّنۡهُۚ إِنَّ فِی ذَ ٰ⁠لِكَ لَـَٔایَـٰتࣲ لِّقَوۡمࣲ یَتَفَكَّرُونَ ﴿١٣﴾

আর তিনি তোমাদের কল্যাণে নিয়োজিত করেছেন আসমানসমূহ ও যমীনের সমস্ত কিছু নিজ অনুগ্রহে, নিশ্চয় এতে অনেক নিদর্শনাবলী রয়েছে, এমন সম্প্রদায়ের জন্য যারা চিন্তা করে।


Arabic explanations of the Qur’an:

قُل لِّلَّذِینَ ءَامَنُواْ یَغۡفِرُواْ لِلَّذِینَ لَا یَرۡجُونَ أَیَّامَ ٱللَّهِ لِیَجۡزِیَ قَوۡمَۢا بِمَا كَانُواْ یَكۡسِبُونَ ﴿١٤﴾

যারা ঈমান এনেছে তাদেরকে বলুন, ‘তারা যেন ক্ষমা করে ওদেরকে, যারা আল্লাহর দিনগুলোর প্রত্যাশা করে না। যাতে আল্লাহ প্ৰত্যেক সম্প্রদায়কে তাদের কৃতকর্মের জন্য প্রতিদান দিতে পারেন।’


Arabic explanations of the Qur’an:

مَنۡ عَمِلَ صَـٰلِحࣰا فَلِنَفۡسِهِۦۖ وَمَنۡ أَسَاۤءَ فَعَلَیۡهَاۖ ثُمَّ إِلَىٰ رَبِّكُمۡ تُرۡجَعُونَ ﴿١٥﴾

যে সৎকাজ করে সে তার কল্যাণের জন্যই তা করে এবং কেউ মন্দ কাজ করলে তা তারই উপর বর্তাবে, তারপর তোমাদেরকে তোমাদের রবের দিকেই প্রত্যাবর্তিত করা হবে।


Arabic explanations of the Qur’an:

وَلَقَدۡ ءَاتَیۡنَا بَنِیۤ إِسۡرَ ٰ⁠ۤءِیلَ ٱلۡكِتَـٰبَ وَٱلۡحُكۡمَ وَٱلنُّبُوَّةَ وَرَزَقۡنَـٰهُم مِّنَ ٱلطَّیِّبَـٰتِ وَفَضَّلۡنَـٰهُمۡ عَلَى ٱلۡعَـٰلَمِینَ ﴿١٦﴾

আর অবশ্যই আমরা বনী ইসরাঈলকে কিতাব, কর্তৃত্ব [১] ও নবুওয়াত দান করেছিলাম এবং তাদেরকে রিযিক প্ৰদান করেছিলাম উত্তম বস্তু হতে, আর দিয়েছিলাম তাদেরকে সকল সৃষ্টির উপর শ্রেষ্ঠত্ব।

[১] হুকুম শব্দের কয়েকটি অর্থ হতে পারে। এক-কিতাবের জ্ঞান ও উপলব্ধি এবং দীনের অনুভূতি। দুই-কিতাবের অভিপ্রায় অনুসারে কাজ করার কৌশল। তিন-বিভিন্ন ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহণের যোগ্যতা। চার-ক্ষমতা বা রাজত্ব। [কুরতুবী, ফাতহুল কাদীর]


Arabic explanations of the Qur’an:

وَءَاتَیۡنَـٰهُم بَیِّنَـٰتࣲ مِّنَ ٱلۡأَمۡرِۖ فَمَا ٱخۡتَلَفُوۤاْ إِلَّا مِنۢ بَعۡدِ مَا جَاۤءَهُمُ ٱلۡعِلۡمُ بَغۡیَۢا بَیۡنَهُمۡۚ إِنَّ رَبَّكَ یَقۡضِی بَیۡنَهُمۡ یَوۡمَ ٱلۡقِیَـٰمَةِ فِیمَا كَانُواْ فِیهِ یَخۡتَلِفُونَ ﴿١٧﴾

আর আমরা তাদেরকে দীনের যাবতীয় বিষয়ে সুস্পষ্ট প্রমাণাদি দান করেছিলাম। তাদের কাছে জ্ঞান আসার পরও তারা শুধু পরস্পর বিদ্বেষবশতঃ মতবিরোধ করেছিল। তারা যে সব বিষয়ে মতবিরোধ করত, নিশ্চয় আপনার রব কিয়ামতের দিন তাদের মধ্যে সে সব বিষয়ে ফয়সালা করে দেবেন।


Arabic explanations of the Qur’an:

ثُمَّ جَعَلۡنَـٰكَ عَلَىٰ شَرِیعَةࣲ مِّنَ ٱلۡأَمۡرِ فَٱتَّبِعۡهَا وَلَا تَتَّبِعۡ أَهۡوَاۤءَ ٱلَّذِینَ لَا یَعۡلَمُونَ ﴿١٨﴾

তারপর আমরা আপনাকে প্রতিষ্ঠিত করেছি দীনের বিশেষ বিধানের উপর; কাজেই আপনি তার অনুসরণ করুন। আর যারা জানে না তাদের খেয়াল-খুশীর অনুসরণ করবেন না।


Arabic explanations of the Qur’an:

إِنَّهُمۡ لَن یُغۡنُواْ عَنكَ مِنَ ٱللَّهِ شَیۡـࣰٔاۚ وَإِنَّ ٱلظَّـٰلِمِینَ بَعۡضُهُمۡ أَوۡلِیَاۤءُ بَعۡضࣲۖ وَٱللَّهُ وَلِیُّ ٱلۡمُتَّقِینَ ﴿١٩﴾

নিশ্চয় তারা আল্লাহ্‌র মুকাবিলায় আপনার কোনই কাজে আসবে না; আর নিশ্চয় যালিমরা একে অন্যের বন্ধু এবং আল্লাহ্‌ মুত্তাকীদের বন্ধু।


Arabic explanations of the Qur’an:

هَـٰذَا بَصَـٰۤىِٕرُ لِلنَّاسِ وَهُدࣰى وَرَحۡمَةࣱ لِّقَوۡمࣲ یُوقِنُونَ ﴿٢٠﴾

এ কুরআন মানুষের জন্য আলোকবর্তিকা এবং হেদায়াত ও রহমত এমন সম্প্রদায়ের জন্য, যারা নিশ্চিত বিশ্বাস করে।


Arabic explanations of the Qur’an:

أَمۡ حَسِبَ ٱلَّذِینَ ٱجۡتَرَحُواْ ٱلسَّیِّـَٔاتِ أَن نَّجۡعَلَهُمۡ كَٱلَّذِینَ ءَامَنُواْ وَعَمِلُواْ ٱلصَّـٰلِحَـٰتِ سَوَاۤءࣰ مَّحۡیَاهُمۡ وَمَمَاتُهُمۡۚ سَاۤءَ مَا یَحۡكُمُونَ ﴿٢١﴾

নাকি যারা দুষ্কর্ম করেছে তারা মনে করে যে, আমরা জীবন ও মৃত্যুর দিক দিয়ে তাদেরকে ওদের মত গণ্য করব যারা ঈমান এনেছে এবং সৎকাজ করেছে? তাদের বিচার-সিদ্ধান্ত কতই না মন্দ !


Arabic explanations of the Qur’an:

وَخَلَقَ ٱللَّهُ ٱلسَّمَـٰوَ ٰ⁠تِ وَٱلۡأَرۡضَ بِٱلۡحَقِّ وَلِتُجۡزَىٰ كُلُّ نَفۡسِۭ بِمَا كَسَبَتۡ وَهُمۡ لَا یُظۡلَمُونَ ﴿٢٢﴾

আর আল্লাহ্‌ আসমানসমূহ ও যমীনকে সৃষ্টি করেছেন যথাযথভাবে এবং যাতে প্রত্যেক ব্যক্তিকে তার কাজ অনুযায়ী ফল দেয়া যেতে পারে। আর তাদের প্রতি যুলুম করা হবে না।


Arabic explanations of the Qur’an:

أَفَرَءَیۡتَ مَنِ ٱتَّخَذَ إِلَـٰهَهُۥ هَوَىٰهُ وَأَضَلَّهُ ٱللَّهُ عَلَىٰ عِلۡمࣲ وَخَتَمَ عَلَىٰ سَمۡعِهِۦ وَقَلۡبِهِۦ وَجَعَلَ عَلَىٰ بَصَرِهِۦ غِشَـٰوَةࣰ فَمَن یَهۡدِیهِ مِنۢ بَعۡدِ ٱللَّهِۚ أَفَلَا تَذَكَّرُونَ ﴿٢٣﴾

তবে কি আপনি লক্ষ্য করেছেন তাকে, যে তার খেয়াল-খুশীকে নিজ ইলাহ্‌ বানিয়ে নিয়েছে? আর তার কাছে জ্ঞান আসার পর আল্লাহ তাকে বিভ্রান্ত করেছেন [১] এবং তিনি তার কান ও হৃদয়ে মোহর করে দিয়েছেন। আর তিনি তার চোখের উপর রেখেছেন আবরণ। অতএব, আল্লাহর পরে কে তাকে হেদায়েত দিবে? তবু কি তোমরা উপদেশ গ্ৰহণ করবে না?

[১] এই বাক্যাংশের একটি অর্থ হতে পারে এই যে, জ্ঞান থাকা সত্ত্বেও আল্লাহর পক্ষ থেকে সে ব্যক্তিকে গোমরাহীর মধ্যে নিক্ষেপ করা হয়েছে। কেননা সে প্রবৃত্তির কামনা-বাসনার দাস হয়ে গিয়েছিলো। আরেকটি অর্থ হতে পারে এই যে, সে তার প্রবৃত্তির ইচ্ছা ও কামনা-বাসনাকে ইলাহ বানিয়ে বসেছে এ বিষয়টি জেনে আল্লাহ তাকে গোমরাহীর মধ্যে নিক্ষেপ করেছেন। [দেখুন, কুরতুবী]


Arabic explanations of the Qur’an:

وَقَالُواْ مَا هِیَ إِلَّا حَیَاتُنَا ٱلدُّنۡیَا نَمُوتُ وَنَحۡیَا وَمَا یُهۡلِكُنَاۤ إِلَّا ٱلدَّهۡرُۚ وَمَا لَهُم بِذَ ٰ⁠لِكَ مِنۡ عِلۡمٍۖ إِنۡ هُمۡ إِلَّا یَظُنُّونَ ﴿٢٤﴾

আর তারা বলে, ‘একমাত্র দুনিয়ার জীবনই আমাদের জীবন, আমরা মরি ও বাঁচি, আর কাল-ই কেবল আমাদেরকে ধবংস করে [১]।’ বস্তুত এ ব্যাপারে তাদের কোনো জ্ঞান নেই, তারা তো শুধু ধারণাই করে।

[১] دهر শব্দের অর্থ আসলে মহাকাল, অর্থাৎ জগতের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সময়ের সমষ্টি। কখনও দীর্ঘ সময়কালকেও دهر বলা হয়। কাফেররা বলেছে যে, আল্লাহর আদেশ ও ইচ্ছার সাথে জীবন ও মৃত্যুর কোনো সম্পর্ক নেই, বরং এগুলো প্রাকৃতিক কারণের অধীন। মৃত্যু সম্পর্কে তো সকলেই প্রত্যক্ষ করে যে, মানুষের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ও শক্তি-সামর্থ্য ব্যবহারের কারণে ক্ষয়প্রাপ্ত হতে থাকে এবং দীর্ঘকাল অতিবাহিত হওয়ার পর সম্পূর্ণ নিস্ক্রিয় হয়ে পড়ে। এরই নাম মৃত্যু। জীবনও তদ্রুপ, কোনো ইলাহী আদেশে নয়, বরং উপকরণের প্রাকৃতিক গতিশীলতার মাধ্যমেই তা অর্জিত হয়। মূলতঃ কাফের ও মুশরিকরা মহাকালের চক্রকেই সৃষ্টিজগত ও তার সমস্ত অবস্থার কারণ সাব্যস্ত করত এবং সবকিছুকে তারই কর্ম বলে অভিহিত করত। অথচ এগুলো সব প্রকৃতপক্ষে সর্বশক্তিমান আল্লাহর কুদরত ও ইচ্ছায় সম্পন্ন হয়ে থাকে। তাই সহীহ হাদীসসমূহে দাহর তথা মহাকালকে মন্দ বলতে নিষেধ করা হয়েছে। কেননা কাফেররা যে শক্তিকে দাহর শব্দ দ্বারা ব্যক্ত করে, প্রকৃতপক্ষে সেই কুদরত ও শক্তি আল্লাহ তা'আলারই। তাই দাহরকে মন্দ বলার ফল প্রকৃতপক্ষে আল্লাহ পর্যন্ত পৌঁছে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, বনী আদম ‘দাহর’ তথা মহাকালকে গালি দেয়, অথচ আল্লাহ বলেন, আমিই প্রকৃতপক্ষে মহাকাল, আমিই রাত - দিনের পরিবর্তন ঘটাই। [বুখারী ৫৭১৩]


Arabic explanations of the Qur’an:

وَإِذَا تُتۡلَىٰ عَلَیۡهِمۡ ءَایَـٰتُنَا بَیِّنَـٰتࣲ مَّا كَانَ حُجَّتَهُمۡ إِلَّاۤ أَن قَالُواْ ٱئۡتُواْ بِـَٔابَاۤىِٕنَاۤ إِن كُنتُمۡ صَـٰدِقِینَ ﴿٢٥﴾

আর তাদের কাছে যখন আমাদের সুস্পষ্ট আয়াতসমূহ তেলাওয়াত করা হয় তখন তাদের কোনো যুক্তি থাকে না শুধু এ কথা ছাড়া যে, তোমরা সত্যবাদী হলে আমাদের পিতৃপুরুষদেরকে নিয়ে আস।


Arabic explanations of the Qur’an:

قُلِ ٱللَّهُ یُحۡیِیكُمۡ ثُمَّ یُمِیتُكُمۡ ثُمَّ یَجۡمَعُكُمۡ إِلَىٰ یَوۡمِ ٱلۡقِیَـٰمَةِ لَا رَیۡبَ فِیهِ وَلَـٰكِنَّ أَكۡثَرَ ٱلنَّاسِ لَا یَعۡلَمُونَ ﴿٢٦﴾

বলুন, ‘আল্লাহই তোমাদেরকে জীবন দান করেন তারপর তোমাদের মৃত্যু ঘটান। তারপর তিনি তোমাদেরকে কিয়ামতের দিনে একত্র করবেন, যাতে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু বেশীর ভাগ মানুষ তা জানে না।’


Arabic explanations of the Qur’an:

وَلِلَّهِ مُلۡكُ ٱلسَّمَـٰوَ ٰ⁠تِ وَٱلۡأَرۡضِۚ وَیَوۡمَ تَقُومُ ٱلسَّاعَةُ یَوۡمَىِٕذࣲ یَخۡسَرُ ٱلۡمُبۡطِلُونَ ﴿٢٧﴾

আর আসমানসমূহ ও যমীনের রাজত্ব আল্লাহরই এবং যেদিন কিয়ামত সংঘটিত হবে সেদিন বাতিলপন্থীরা হবে ক্ষতিগ্রস্ত।


Arabic explanations of the Qur’an:

وَتَرَىٰ كُلَّ أُمَّةࣲ جَاثِیَةࣰۚ كُلُّ أُمَّةࣲ تُدۡعَىٰۤ إِلَىٰ كِتَـٰبِهَا ٱلۡیَوۡمَ تُجۡزَوۡنَ مَا كُنتُمۡ تَعۡمَلُونَ ﴿٢٨﴾

আর আপনি প্রত্যেক জাতিকে দেখবেন ভয়ে নতজানু [১], প্ৰত্যেক জাতিকে তার কিতাবের [২] প্রতি ডাকা হবে, (এবং বলা হবে) ‘আজ তোমাদেরকে তারই প্রতিফল দেয়া হবে যা তোমরা আমল করতে।

[১] جاثية এর অর্থ নতজানু হয়ে বসা। ভয়ের কারণে এভাবে বসবে। كُلَّ اُمَّةٍ (প্ৰত্যেক দল) শব্দ থেকে বাহ্যতঃ বোঝা যায় যে, মুমিন, কাফের, সৎ ও অসৎ নির্বিশেষে সকলেই হাশরের ময়দানে ভয়ে নতজানু হয়ে বসবে। সেখানে হাশরের ময়দানের এবং আল্লাহর আদালতের এমন ভীতি সৃষ্টি হবে যে, বড় বড় অহংকারীদের অহংকারও উবে যাবে। সেখানে সবাই অত্যন্ত বিনয়ের সাথে নতজানু হবে। কোনো কোনো আয়াত ও বর্ণনায় রয়েছে যে, হাশরের ময়দানে নবী-রাসূল ও সৎকর্মপরায়ণ ব্যক্তিগণ ভীত হবেন না। এটা আলোচ্য আয়াতের পরিপন্থী নয়; কেননা অল্প কিছুক্ষণের জন্যে এই ভয় ও ত্রাস নবী-রাসূল ও সৎ লোকদের মধ্যেও দেখা দেয়া সম্ভবপর। কিন্তু যেহেতু খুব অল্প সময়ের জন্যে এই ভয় দেখা দেবে, তাই একে না হওয়ার পর্যায়ে রেখে দেয়া হয়েছে। আবার এটাও সম্ভবপর যে, প্রত্যেক দল বলে অধিকাংশ হাশরবাসী বোঝানো হয়েছে। তাছাড়া كل শব্দটি মাঝে মাঝে অধিকাংশের অর্থেও ব্যবহৃত হয়। [দেখুন, ইবন কাসীর, কুরতুবী, সা’দী] [২] অধিকাংশ তফসীরবিদের মতে এখানে কিতাব অর্থ দুনিয়াতে ফেরেশতাগণের লিখিত আমলনামা। হাশরের ময়দানে এসব আমলনামা উড়ানো হবে এবং প্রত্যেকের আমলনামা তার হাতে পৌঁছে যাবে। তাকে বলা হবে, তুমি তোমার আমলনামা পাঠ কর এবং নিজেই হিসাব কর কি প্রতিফল তোমার পাওয়া উচিত। আমলনামার দিকে আহবান করার অর্থ আমলের হিসাবের দিকে আহবান করা। [দেখুন, ইবন কাসীর, সা’দী]


Arabic explanations of the Qur’an:

هَـٰذَا كِتَـٰبُنَا یَنطِقُ عَلَیۡكُم بِٱلۡحَقِّۚ إِنَّا كُنَّا نَسۡتَنسِخُ مَا كُنتُمۡ تَعۡمَلُونَ ﴿٢٩﴾

‘এই আমাদের লেখনি, যা তোমাদের ব্যাপারে সাক্ষ্য দেবে সত্যভাবে। নিশ্চয় তোমরা যা আমল করতে তা আমরা লিপিবদ্ধ করেছিলাম।’


Arabic explanations of the Qur’an:

فَأَمَّا ٱلَّذِینَ ءَامَنُواْ وَعَمِلُواْ ٱلصَّـٰلِحَـٰتِ فَیُدۡخِلُهُمۡ رَبُّهُمۡ فِی رَحۡمَتِهِۦۚ ذَ ٰ⁠لِكَ هُوَ ٱلۡفَوۡزُ ٱلۡمُبِینُ ﴿٣٠﴾

অতঃপর যারা ঈমান এনেছে এবং সৎকাজ করেছে পরিণামে তাদের রব তাদেরকে প্রবেশ করাবেন স্বীয় রহমতে। এটাই সুস্পষ্ট সাফল্য।


Arabic explanations of the Qur’an:

وَأَمَّا ٱلَّذِینَ كَفَرُوۤاْ أَفَلَمۡ تَكُنۡ ءَایَـٰتِی تُتۡلَىٰ عَلَیۡكُمۡ فَٱسۡتَكۡبَرۡتُمۡ وَكُنتُمۡ قَوۡمࣰا مُّجۡرِمِینَ ﴿٣١﴾

আর যারা কুফরী করেছে (তাদেরকে বলা হবে), ‘তোমাদের কাছে কি আমার আয়াতসমূহ পাঠ করা হয়নি? অতঃপর তোমরা অহংকার করেছিলে এবং তোমরা ছিলে এক অপরাধী সম্প্রদায়।’


Arabic explanations of the Qur’an:

وَإِذَا قِیلَ إِنَّ وَعۡدَ ٱللَّهِ حَقࣱّ وَٱلسَّاعَةُ لَا رَیۡبَ فِیهَا قُلۡتُم مَّا نَدۡرِی مَا ٱلسَّاعَةُ إِن نَّظُنُّ إِلَّا ظَنࣰّا وَمَا نَحۡنُ بِمُسۡتَیۡقِنِینَ ﴿٣٢﴾

আর যখন বলা হয়, ‘নিশ্চয় আল্লাহর প্রতিশ্রুতি সত্য এবং কিয়ামত--- এতে কোনো সন্দেহ নেই, তখন তোমরা বলে থাক, ‘আমরা জানি না কিয়ামত কী; আমরা কেবল অনুমান করি এবং আমরা তো দৃঢ় বিশ্বাসী নই।’


Arabic explanations of the Qur’an:

وَبَدَا لَهُمۡ سَیِّـَٔاتُ مَا عَمِلُواْ وَحَاقَ بِهِم مَّا كَانُواْ بِهِۦ یَسۡتَهۡزِءُونَ ﴿٣٣﴾

আর তাদের মন্দ কাজগুলোর কুফল তাদের কাছে প্ৰকাশিত হবে এবং যা নিয়ে তারা ঠাট্টা-বিদ্রূপ করত তা তাদেরকে পরিবেষ্টন করবে।


Arabic explanations of the Qur’an:

وَقِیلَ ٱلۡیَوۡمَ نَنسَىٰكُمۡ كَمَا نَسِیتُمۡ لِقَاۤءَ یَوۡمِكُمۡ هَـٰذَا وَمَأۡوَىٰكُمُ ٱلنَّارُ وَمَا لَكُم مِّن نَّـٰصِرِینَ ﴿٣٤﴾

আর বলা হবে, ‘আজ আমরা তোমাদেরকে ছেড়ে রাখব যেমন তোমরা এ দিনের সাক্ষাতের বিষয়টি ছেড়ে গিয়েছিলে। আর তোমাদের আবাসস্থল হবে জাহান্নাম এবং তোমাদের কোনো সাহায্যকারীও থাকবে না।


Arabic explanations of the Qur’an:

ذَ ٰ⁠لِكُم بِأَنَّكُمُ ٱتَّخَذۡتُمۡ ءَایَـٰتِ ٱللَّهِ هُزُوࣰا وَغَرَّتۡكُمُ ٱلۡحَیَوٰةُ ٱلدُّنۡیَاۚ فَٱلۡیَوۡمَ لَا یُخۡرَجُونَ مِنۡهَا وَلَا هُمۡ یُسۡتَعۡتَبُونَ ﴿٣٥﴾

‘এটা এ জন্যে যে, তোমরা আল্লাহর আয়াতসমূহকে ঠাট্টা-বিদ্রূপের পাত্র বানিয়েছিলে এবং দুনিয়ার জীবন তোমাদেরকে প্রতারিত করেছিল।’ সুতরাং আজ না তাদেরকে জাহান্নাম থেকে বের করা হবে, আর না তাদেরকে আল্লাহ্‌র সন্তুষ্টি লাভের সুযোগ দেয়া হবে।


Arabic explanations of the Qur’an:

فَلِلَّهِ ٱلۡحَمۡدُ رَبِّ ٱلسَّمَـٰوَ ٰ⁠تِ وَرَبِّ ٱلۡأَرۡضِ رَبِّ ٱلۡعَـٰلَمِینَ ﴿٣٦﴾

অতএব, সকল প্রশংসা আল্লাহরই, যিনি আসমানসমূহের রব, যমীনের রব ও সকল সৃষ্টির রব।


Arabic explanations of the Qur’an:

وَلَهُ ٱلۡكِبۡرِیَاۤءُ فِی ٱلسَّمَـٰوَ ٰ⁠تِ وَٱلۡأَرۡضِۖ وَهُوَ ٱلۡعَزِیزُ ٱلۡحَكِیمُ ﴿٣٧﴾

আর আসমানসমূহ ও যমীনের যাবতীয় গৌরব-গরিমা তাঁরই [১] এবং তিনি মহা পরাক্রমশালী, হিকমতওয়ালা।

[১] হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, আল্লাহ তা'আলা বলেন, “বড়ত্ব আমার বস্ত্র আর অহংকার আমার চাদর; যে কেউ এ দু'টির কোনো একটি নিয়ে টানাহেঁচড়া করবে, আমি তাকে জাহান্নামের অধিবাসী করে ছাড়বো।” [মুসলিম ২৬২০]


Arabic explanations of the Qur’an: