ٱلۡحَمۡدُ لِلَّهِ ٱلَّذِی خَلَقَ ٱلسَّمَـٰوَ ٰتِ وَٱلۡأَرۡضَ وَجَعَلَ ٱلظُّلُمَـٰتِ وَٱلنُّورَۖ ثُمَّ ٱلَّذِینَ كَفَرُواْ بِرَبِّهِمۡ یَعۡدِلُونَ ﴿١﴾
সকল প্রশংসা আল্লাহ্রই [১] যিনি আসমান ও যমীন সৃষ্টি করেছেন, আর সৃষ্টি করেছেন অন্ধকার ও আলো [২]। এরপরও কাফেরগণ তাদের রবের সমকক্ষ দাঁড় করায় [৩]।
هُوَ ٱلَّذِی خَلَقَكُم مِّن طِینࣲ ثُمَّ قَضَىٰۤ أَجَلࣰاۖ وَأَجَلࣱ مُّسَمًّى عِندَهُۥۖ ثُمَّ أَنتُمۡ تَمۡتَرُونَ ﴿٢﴾
তিনিই তোমাদেরকে কাদামাটি থেকে সৃষ্টি করেছেন [১], তারপর একটা সময় নির্দিষ্ট করেছেন এবং আর একটি নির্ধারিত সময় আছে যা তিনিই জানেন, এরপরও তোমরা সন্দেহ কর [২]।
وَهُوَ ٱللَّهُ فِی ٱلسَّمَـٰوَ ٰتِ وَفِی ٱلۡأَرۡضِ یَعۡلَمُ سِرَّكُمۡ وَجَهۡرَكُمۡ وَیَعۡلَمُ مَا تَكۡسِبُونَ ﴿٣﴾
আর আসমানসমূহ ও যমীনে তিনিই আল্লাহ [১] , তোমাদের গোপন ও প্রকাশ্য সবকিছু তিনি জানেন এবং তোমারা যা অর্জন কর তাও তিনি জানেন [২]।
وَمَا تَأۡتِیهِم مِّنۡ ءَایَةࣲ مِّنۡ ءَایَـٰتِ رَبِّهِمۡ إِلَّا كَانُواْ عَنۡهَا مُعۡرِضِینَ ﴿٤﴾
আর তাদের রবের আয়াতসমূহের এমন কোনো আয়াত তাদের কাছে উপস্থিত হয় না যা থেকে তারা মুখ না ফেরায় [১]।
فَقَدۡ كَذَّبُواْ بِٱلۡحَقِّ لَمَّا جَاۤءَهُمۡ فَسَوۡفَ یَأۡتِیهِمۡ أَنۢبَـٰۤؤُاْ مَا كَانُواْ بِهِۦ یَسۡتَهۡزِءُونَ ﴿٥﴾
সুতরাং সত্য যখন তাদের কাছে এসেছে তারা তো তাতে মিথ্যারোপ করেছে [১]। অতএব যা নিয়ে তারা ঠাট্টা-বিদ্রুপ করত তার যথার্থ সংবাদ অচিরেই তাদের কাছে পৌঁছবে [২]।
أَلَمۡ یَرَوۡاْ كَمۡ أَهۡلَكۡنَا مِن قَبۡلِهِم مِّن قَرۡنࣲ مَّكَّنَّـٰهُمۡ فِی ٱلۡأَرۡضِ مَا لَمۡ نُمَكِّن لَّكُمۡ وَأَرۡسَلۡنَا ٱلسَّمَاۤءَ عَلَیۡهِم مِّدۡرَارࣰا وَجَعَلۡنَا ٱلۡأَنۡهَـٰرَ تَجۡرِی مِن تَحۡتِهِمۡ فَأَهۡلَكۡنَـٰهُم بِذُنُوبِهِمۡ وَأَنشَأۡنَا مِنۢ بَعۡدِهِمۡ قَرۡنًا ءَاخَرِینَ ﴿٦﴾
তারা কি দেখে না [১] যে, আমারা তাদের আগে বহু প্রজন্মকে [২] বিনাশ করেছি; তাদেরকে যমীনে এমনভাবে প্রতিষ্টিত করেছিলাম যেমনটি তোমাদেরকেও করিনি এবং তাদের উপর মুষলধারে বৃষ্টি বর্ষণ করেছিলাম। আর তাদের পাদদেশে নদী প্রবাহিত করেছিলাম; তারপর তাদের পাপের জন্য তাদেরকে বিনাশ করেছি [৩] এবং তাদের পর অন্য প্রজন্মকে সৃষ্টি করেছি [৪]।
وَلَوۡ نَزَّلۡنَا عَلَیۡكَ كِتَـٰبࣰا فِی قِرۡطَاسࣲ فَلَمَسُوهُ بِأَیۡدِیهِمۡ لَقَالَ ٱلَّذِینَ كَفَرُوۤاْ إِنۡ هَـٰذَاۤ إِلَّا سِحۡرࣱ مُّبِینࣱ ﴿٧﴾
আমারা যদি আপনার প্রতি কাগজে লিখিত কিতাবও নাযিল করতাম, অতঃপর তারা যদি সেটা হাত দিয়ে স্পর্শ করত তবুও কাফেররা বলত, ‘এটা স্পষ্ট জাদু ছাড়া আর কিছু নয় [১]।’
وَقَالُواْ لَوۡلَاۤ أُنزِلَ عَلَیۡهِ مَلَكࣱۖ وَلَوۡ أَنزَلۡنَا مَلَكࣰا لَّقُضِیَ ٱلۡأَمۡرُ ثُمَّ لَا یُنظَرُونَ ﴿٨﴾
আর তারা বলে, ‘তার কাছে কোনো ফিরিশতা কেন নাযিল হয় না [১]? আর যদি আমারা ফিরিশতা নাযিল করতাম, তাহলে বিষয়টি চূড়ান্ত ফয়সালাই তো হয়ে যেত, তারপর তাদেরকে কোনো অবকাশ দেয়া হত না [২]।
وَلَوۡ جَعَلۡنَـٰهُ مَلَكࣰا لَّجَعَلۡنَـٰهُ رَجُلࣰا وَلَلَبَسۡنَا عَلَیۡهِم مَّا یَلۡبِسُونَ ﴿٩﴾
আর যদি তাকে ফিরিশতা করতাম তবে তাঁকে পুরুষ মানুষের আকৃতিতেই পাঠাতাম, আর তাদেরকে সেরূপ বিভ্রমে ফেলতাম যেরূপ বিভ্রমে তারা এখন রয়েছে [১]।
وَلَقَدِ ٱسۡتُهۡزِئَ بِرُسُلࣲ مِّن قَبۡلِكَ فَحَاقَ بِٱلَّذِینَ سَخِرُواْ مِنۡهُم مَّا كَانُواْ بِهِۦ یَسۡتَهۡزِءُونَ ﴿١٠﴾
আর আপনার আগে অনেক রাসূলকে নিয়েই তো ঠাট্টা-বিদ্রুপ করা হয়েছে। ফলে রাসূলদের সাথে বিদ্রুপকারীদেরকে তারা যা নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রুপ করছিল তা-ই পরিবেষ্টন করেছে [১]।
قُلۡ سِیرُواْ فِی ٱلۡأَرۡضِ ثُمَّ ٱنظُرُواْ كَیۡفَ كَانَ عَـٰقِبَةُ ٱلۡمُكَذِّبِینَ ﴿١١﴾
বলুন, ‘তোমারা যমীনে পরিভ্রমন কর, তরপর দেখ, যারা মিথ্যারোপ করেছে তাদের পরিণাম কি হয়েছিলো [১]!’
قُل لِّمَن مَّا فِی ٱلسَّمَـٰوَ ٰتِ وَٱلۡأَرۡضِۖ قُل لِّلَّهِۚ كَتَبَ عَلَىٰ نَفۡسِهِ ٱلرَّحۡمَةَۚ لَیَجۡمَعَنَّكُمۡ إِلَىٰ یَوۡمِ ٱلۡقِیَـٰمَةِ لَا رَیۡبَ فِیهِۚ ٱلَّذِینَ خَسِرُوۤاْ أَنفُسَهُمۡ فَهُمۡ لَا یُؤۡمِنُونَ ﴿١٢﴾
বলুন , ‘আসমানসমূহ ও যমীনে যা আছে তা কার? বলুন, ‘আল্লাহরই’ [১], তিনি তাঁর নিজের উপর দয়া করা লিখে নিয়েছেন [২]। কিয়ামতের দিন তিনি তোমাদেরকে অবশ্যই একত্র করবেন [৩], এতে কোনো সন্দেহ নেই। যারা নিজেরাই নিজেদের ক্ষতি করেছে তারা ঈমান আনবে না [৪]
۞ وَلَهُۥ مَا سَكَنَ فِی ٱلَّیۡلِ وَٱلنَّهَارِۚ وَهُوَ ٱلسَّمِیعُ ٱلۡعَلِیمُ ﴿١٣﴾
আর রাত ও দিনে যা কিছু স্থিত হয়, তা তাঁরই [১]এবং তিনি সবকিছু শুনেন, সবকিছু জানেন।
قُلۡ أَغَیۡرَ ٱللَّهِ أَتَّخِذُ وَلِیࣰّا فَاطِرِ ٱلسَّمَـٰوَ ٰتِ وَٱلۡأَرۡضِ وَهُوَ یُطۡعِمُ وَلَا یُطۡعَمُۗ قُلۡ إِنِّیۤ أُمِرۡتُ أَنۡ أَكُونَ أَوَّلَ مَنۡ أَسۡلَمَۖ وَلَا تَكُونَنَّ مِنَ ٱلۡمُشۡرِكِینَ ﴿١٤﴾
বলুন, ‘আমি কি আসমানসমূহ ও যমীনের স্রষ্টা আল্লাহ্ ছাড়া অন্যকে অভিভাবকরূপে গ্রহণ করব [১]? তিনিই খাবার দান করেন কিন্তু তাঁকে খাবার দেয়া হয় না [২]। বলুন ‘নিশ্চয় আমি আদেশ পেয়েছি যারা ইসলাম গ্রহণ করেছে তাদের মধ্যে যেন আমি প্রথম ব্যক্তি হই [৩],আর (আমাকে আরও আদেশ করা হয়েছে) ‘আপনি মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত হবেন না।’
قُلۡ إِنِّیۤ أَخَافُ إِنۡ عَصَیۡتُ رَبِّی عَذَابَ یَوۡمٍ عَظِیمࣲ ﴿١٥﴾
বলুন, ‘আমি যদি আমার রব –এর অবাধ্যতা করি, তবে নিশ্চয় আমি ভয় করি মহাদিনের শাস্তির [১]।’
مَّن یُصۡرَفۡ عَنۡهُ یَوۡمَىِٕذࣲ فَقَدۡ رَحِمَهُۥۚ وَذَ ٰلِكَ ٱلۡفَوۡزُ ٱلۡمُبِینُ ﴿١٦﴾
‘সেদিন যার থেকে তা সরিয়ে নেয়া হবে, তার প্রতি তো তিনি দয়া করলেন [১] এবং এটাই স্পষ্ট সফলতা [২]।’
وَإِن یَمۡسَسۡكَ ٱللَّهُ بِضُرࣲّ فَلَا كَاشِفَ لَهُۥۤ إِلَّا هُوَۖ وَإِن یَمۡسَسۡكَ بِخَیۡرࣲ فَهُوَ عَلَىٰ كُلِّ شَیۡءࣲ قَدِیرࣱ ﴿١٧﴾
আর যদি আল্লাহ্ আপনাকে কোনো দুর্দশা দ্বারা স্পর্শ করেন, তবে তিনি ছাড়া তা মোচনকারী আর কেঊ নেই। আর যদি তিনি আপনাকে কোনো কল্যাণ দ্বারা স্পর্শ করেন, তবে তিনি তো সব কিছুর উপর ক্ষমতাবান [১]।
وَهُوَ ٱلۡقَاهِرُ فَوۡقَ عِبَادِهِۦۚ وَهُوَ ٱلۡحَكِیمُ ٱلۡخَبِیرُ ﴿١٨﴾
আর তিনিই আপন বান্দাদের উপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণকারী [১], আর তিনি প্রজ্ঞাময়, সম্যাক অবহিত।
قُلۡ أَیُّ شَیۡءٍ أَكۡبَرُ شَهَـٰدَةࣰۖ قُلِ ٱللَّهُۖ شَهِیدُۢ بَیۡنِی وَبَیۡنَكُمۡۚ وَأُوحِیَ إِلَیَّ هَـٰذَا ٱلۡقُرۡءَانُ لِأُنذِرَكُم بِهِۦ وَمَنۢ بَلَغَۚ أَىِٕنَّكُمۡ لَتَشۡهَدُونَ أَنَّ مَعَ ٱللَّهِ ءَالِهَةً أُخۡرَىٰۚ قُل لَّاۤ أَشۡهَدُۚ قُلۡ إِنَّمَا هُوَ إِلَـٰهࣱ وَ ٰحِدࣱ وَإِنَّنِی بَرِیۤءࣱ مِّمَّا تُشۡرِكُونَ ﴿١٩﴾
বলুন, ‘কোন জিনিস সবচেয়ে বড় সাক্ষী’? বলুন, ’আল্লাহ আমার ও তোমাদের মধ্যে সাক্ষ্যদাতা [১]। আর এ কুরআন আমার নিকট ওহী করা হয়েছে যেন তোমাদেরকে এবং যার নিকট তা পৌঁছবে তাদেরকে এ দ্বারা সতর্ক করতে পারি [২]। তোমারা কি এ সাক্ষ্য দাও যে, আল্লাহ্র সাথে অন্য ইলাহও আছে? বলুন, ‘আমি সে সাক্ষ্য দেই না।’ বলুন ,’তিনি তো একমাত্র প্রকৃত ইলাহ এবং তোমারা যা শরীক কর তা থেকে আমি অবশই বিমুক্ত।’
ٱلَّذِینَ ءَاتَیۡنَـٰهُمُ ٱلۡكِتَـٰبَ یَعۡرِفُونَهُۥ كَمَا یَعۡرِفُونَ أَبۡنَاۤءَهُمُۘ ٱلَّذِینَ خَسِرُوۤاْ أَنفُسَهُمۡ فَهُمۡ لَا یُؤۡمِنُونَ ﴿٢٠﴾
আমরা যাদেরকে কিতাব দিয়েছি তারা তাকে [১] সেরূপ চিনে যেরূপ চিনে তাদের সন্তানদেরকে। যারা নিজেরাই নিজেদের ক্ষতি করেছে, তারাই ঈমান আনবে না [২]।
وَمَنۡ أَظۡلَمُ مِمَّنِ ٱفۡتَرَىٰ عَلَى ٱللَّهِ كَذِبًا أَوۡ كَذَّبَ بِـَٔایَـٰتِهِۦۤۚ إِنَّهُۥ لَا یُفۡلِحُ ٱلظَّـٰلِمُونَ ﴿٢١﴾
যে ব্যাক্তি আল্লাহ্ সম্বন্ধে মিথ্যা রচনা করে বা তাঁর আয়াতসমূহে মিথ্যারোপ করে, তার চেয়ে বড় যালিম আর কে? নিশ্চয় যালিমরা সাফল্য লাভ করতে পারে না।
وَیَوۡمَ نَحۡشُرُهُمۡ جَمِیعࣰا ثُمَّ نَقُولُ لِلَّذِینَ أَشۡرَكُوۤاْ أَیۡنَ شُرَكَاۤؤُكُمُ ٱلَّذِینَ كُنتُمۡ تَزۡعُمُونَ ﴿٢٢﴾
আর স্মরণ করুণ, যেদিন আমারা তাদের সবাইকে একত্র করব, তারপর যারা শির্ক করেছে তাদেরকে বলব, ‘যাদেরকে তোমারা আমার শরীক মনে করতে, তারা কোথায় [১]?’
ثُمَّ لَمۡ تَكُن فِتۡنَتُهُمۡ إِلَّاۤ أَن قَالُواْ وَٱللَّهِ رَبِّنَا مَا كُنَّا مُشۡرِكِینَ ﴿٢٣﴾
তারপর তাদের এ ছাড়া বলার অন্য কোনো অজুহাত থাকবে না, ‘আমাদের রব আল্লাহ্র শপথ! আমারা তো মুশরিকই ছিলাম না [১]।
ٱنظُرۡ كَیۡفَ كَذَبُواْ عَلَىٰۤ أَنفُسِهِمۡۚ وَضَلَّ عَنۡهُم مَّا كَانُواْ یَفۡتَرُونَ ﴿٢٤﴾
দেখুন, তারা নিজেদের প্রতি কিরূপ মিথ্যাচার করে এবং মিথ্যা তারা রটনা করত তা কীভাবে তাদের থেকে উধাও হয়ে গেল [১]।
وَمِنۡهُم مَّن یَسۡتَمِعُ إِلَیۡكَۖ وَجَعَلۡنَا عَلَىٰ قُلُوبِهِمۡ أَكِنَّةً أَن یَفۡقَهُوهُ وَفِیۤ ءَاذَانِهِمۡ وَقۡرࣰاۚ وَإِن یَرَوۡاْ كُلَّ ءَایَةࣲ لَّا یُؤۡمِنُواْ بِهَاۖ حَتَّىٰۤ إِذَا جَاۤءُوكَ یُجَـٰدِلُونَكَ یَقُولُ ٱلَّذِینَ كَفَرُوۤاْ إِنۡ هَـٰذَاۤ إِلَّاۤ أَسَـٰطِیرُ ٱلۡأَوَّلِینَ ﴿٢٥﴾
আর তাদের মধ্য কিছু সংখক আপনার প্রতি কান পেতে শুনে, কিন্তু আমরা তাদের অন্তরের উপর আবরণ করে দিয়েছি যেন তারা তা উপলব্ধি করতে না পারে; আর আমারা তাদের কানে বধিরতা তৈরী করেছি [১]। আর যদি সমস্ত আয়াতও তারা প্রত্যক্ষ করে তবুও তারা তাতে ঈমান আনবে না। এমনকি তারা যখন আপনার কাছে উপস্থিত হয়, তখন তারা আপনার সাথে বিতর্কে লিপ্ত হয়, যারা কুফরী করেছে তারা বলে, ‘এটাতো আগেকার দিনের উপকথা ছাড়া আর কিছু নয়।’
وَهُمۡ یَنۡهَوۡنَ عَنۡهُ وَیَنۡـَٔوۡنَ عَنۡهُۖ وَإِن یُهۡلِكُونَ إِلَّاۤ أَنفُسَهُمۡ وَمَا یَشۡعُرُونَ ﴿٢٦﴾
আর তারা অন্যাকে এগুলো শুনা থেকে বিরত রাখে এবং নিজেরাও এগুলো শুনা থেকে দুরে থাকে। আর তারা নিজেরাই শুধু নিজেদেরকে ধ্বংস করে, অথচ তারা উপলব্ধি করে না [১]।
وَلَوۡ تَرَىٰۤ إِذۡ وُقِفُواْ عَلَى ٱلنَّارِ فَقَالُواْ یَـٰلَیۡتَنَا نُرَدُّ وَلَا نُكَذِّبَ بِـَٔایَـٰتِ رَبِّنَا وَنَكُونَ مِنَ ٱلۡمُؤۡمِنِینَ ﴿٢٧﴾
আপনি যদি দেখতে পেতেন [১] যখন তাদেরকে আগুনের উপর দাঁড় করানো হবে তখন তারা বলবে, ‘হায়! যদি আমাদেরকে ফেরত পাঠানো হত, আর আমারা আমাদের রবের আয়াতসমূহে মিথ্যারোপ না করতাম এবং আমারা মুমিনদের অন্তর্ভুক্ত হতাম [২]।’
بَلۡ بَدَا لَهُم مَّا كَانُواْ یُخۡفُونَ مِن قَبۡلُۖ وَلَوۡ رُدُّواْ لَعَادُواْ لِمَا نُهُواْ عَنۡهُ وَإِنَّهُمۡ لَكَـٰذِبُونَ ﴿٢٨﴾
বরং আগে তারা যা গপন করত তা এখন তাদের কাছে প্রকাশ হয়ে গিয়েছে। আর তাদের আবার (দুনিয়ায়) ফেরৎ পাঠানো হলেও তাদেরকে যা করতে নিষেধ করা হয়েছিল আবার তারা তাই করত এবং নিশ্চয়ই তারা মিথ্যাবাদী [১]।
وَقَالُوۤاْ إِنۡ هِیَ إِلَّا حَیَاتُنَا ٱلدُّنۡیَا وَمَا نَحۡنُ بِمَبۡعُوثِینَ ﴿٢٩﴾
আর তারা বলে, ‘আমাদের পার্থিব জীবনই একমাত্র জীবন এবং আমাদেরকে পুনরুত্থিতও করা হবে না [১]।’
وَلَوۡ تَرَىٰۤ إِذۡ وُقِفُواْ عَلَىٰ رَبِّهِمۡۚ قَالَ أَلَیۡسَ هَـٰذَا بِٱلۡحَقِّۚ قَالُواْ بَلَىٰ وَرَبِّنَاۚ قَالَ فَذُوقُواْ ٱلۡعَذَابَ بِمَا كُنتُمۡ تَكۡفُرُونَ ﴿٣٠﴾
আর আপনি যদি দেখতে পেতেন, যখন তাদেরকে তাদের রবের সম্মুখে দাঁড় করান হবে; তিনি বলবেন, ‘এটা কি প্রকৃত সত্য নয়?’ তারা বলবে, ‘আমাদের রব –এর শপথ! নিশ্চয়ই সত্য’। তিনি বলবেন, ‘তবে তোমারা যে কুফরী করতে তার জন্য তোমারা এখন শাস্তি ভোগ কর।’
قَدۡ خَسِرَ ٱلَّذِینَ كَذَّبُواْ بِلِقَاۤءِ ٱللَّهِۖ حَتَّىٰۤ إِذَا جَاۤءَتۡهُمُ ٱلسَّاعَةُ بَغۡتَةࣰ قَالُواْ یَـٰحَسۡرَتَنَا عَلَىٰ مَا فَرَّطۡنَا فِیهَا وَهُمۡ یَحۡمِلُونَ أَوۡزَارَهُمۡ عَلَىٰ ظُهُورِهِمۡۚ أَلَا سَاۤءَ مَا یَزِرُونَ ﴿٣١﴾
যারা আল্লাহ্র সাক্ষাতকে মিথ্যা বলেছে তারা অবশ্যই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে [১] , এমনকি হঠাৎ তাদের কাছে যখন কিয়ামত উপস্থিত হবে [২] তখন তারা বলবে, ’হায়! এটাকে আমারা যে অবহেলা করেছি তার জন্য আক্ষেপ।’ আর তারা তাদের পিঠে নিজেদের পাপ বহন করবে। সাবধান, তারা যা বহন করবে তা খুবই নিকৃষ্ট!
وَمَا ٱلۡحَیَوٰةُ ٱلدُّنۡیَاۤ إِلَّا لَعِبࣱ وَلَهۡوࣱۖ وَلَلدَّارُ ٱلۡـَٔاخِرَةُ خَیۡرࣱ لِّلَّذِینَ یَتَّقُونَۚ أَفَلَا تَعۡقِلُونَ ﴿٣٢﴾
আর দুনিয়ার জীবন তো খেল–তামাশা ছাড়া আর কিছুই নয় এবং যারা তাকওয়া অবলম্বন করে তাদের জন্য আখেরাতের আবাসই উত্তম; অতএব, তোমারা কি অনুধাবন কর না?
قَدۡ نَعۡلَمُ إِنَّهُۥ لَیَحۡزُنُكَ ٱلَّذِی یَقُولُونَۖ فَإِنَّهُمۡ لَا یُكَذِّبُونَكَ وَلَـٰكِنَّ ٱلظَّـٰلِمِینَ بِـَٔایَـٰتِ ٱللَّهِ یَجۡحَدُونَ ﴿٣٣﴾
আমারা অবশ্যই জানি যে, তারা যা বলে তা আপনাকে নিশ্চিতই কষ্ট দেয়; কিন্তু তারা আপনার প্রতি মিথ্যারোপ করে না, বরং যালিমরা আল্লাহ্র আয়াতসমূহকে অস্বীকার করে [১]।
وَلَقَدۡ كُذِّبَتۡ رُسُلࣱ مِّن قَبۡلِكَ فَصَبَرُواْ عَلَىٰ مَا كُذِّبُواْ وَأُوذُواْ حَتَّىٰۤ أَتَىٰهُمۡ نَصۡرُنَاۚ وَلَا مُبَدِّلَ لِكَلِمَـٰتِ ٱللَّهِۚ وَلَقَدۡ جَاۤءَكَ مِن نَّبَإِیْ ٱلۡمُرۡسَلِینَ ﴿٣٤﴾
আর আপনার আগেও অনেক রাসূলের উপর মিথ্যারোপ করা হয়েছিল; কিন্তু তাদের উপর মিথ্যারোপ করা ও কষ্ট দেয়ার পরও তারা ধৈর্য ধারণ করেছিল, যে পর্যন্ত না আমাদের সাহায্য তাদের কাছে এসেছে [১]। আর আল্লাহ্র বাণীসমূহের কোনো পরীবর্তনকারী নেই। আর অবশ্যই রাসূলগণের কিছু সংবাদ আপনার কাছে এসেছে।
وَإِن كَانَ كَبُرَ عَلَیۡكَ إِعۡرَاضُهُمۡ فَإِنِ ٱسۡتَطَعۡتَ أَن تَبۡتَغِیَ نَفَقࣰا فِی ٱلۡأَرۡضِ أَوۡ سُلَّمࣰا فِی ٱلسَّمَاۤءِ فَتَأۡتِیَهُم بِـَٔایَةࣲۚ وَلَوۡ شَاۤءَ ٱللَّهُ لَجَمَعَهُمۡ عَلَى ٱلۡهُدَىٰۚ فَلَا تَكُونَنَّ مِنَ ٱلۡجَـٰهِلِینَ ﴿٣٥﴾
আর যদি তাদের উপেক্ষা আপনার কাছে কষ্টকর হয় তবে পারলে ভূগর্ভে সুড়ঙ্গ বা আকাশে সিঁড়ি খোঁজ করুন এবং তাদের কাছে কোনো নিদর্শন নিয়ে আসুন। আর আল্লাহ্ ইচ্ছে করলে তাদের সবাইকে অবশ্যই সৎপথে একত্র করতেন। কাজেই আপনি মূর্খদের অন্তর্ভুক্ত হবেন না।
۞ إِنَّمَا یَسۡتَجِیبُ ٱلَّذِینَ یَسۡمَعُونَۘ وَٱلۡمَوۡتَىٰ یَبۡعَثُهُمُ ٱللَّهُ ثُمَّ إِلَیۡهِ یُرۡجَعُونَ ﴿٣٦﴾
যারা শুনতে পায় শুধু তারাই ডাকে সাড়া দেয়। আর মৃতদেরকে আল্লাহ্ আবার জীবিত করবেন [১]; তারপর তাঁর দিকেই তাদেরকে প্রত্যাবর্তন করানো হবে।
وَقَالُواْ لَوۡلَا نُزِّلَ عَلَیۡهِ ءَایَةࣱ مِّن رَّبِّهِۦۚ قُلۡ إِنَّ ٱللَّهَ قَادِرٌ عَلَىٰۤ أَن یُنَزِّلَ ءَایَةࣰ وَلَـٰكِنَّ أَكۡثَرَهُمۡ لَا یَعۡلَمُونَ ﴿٣٧﴾
আর তারা বলে, ‘তার রবের কাছ থেকে তার উপর কোনো নিদর্শন আসে না কেন?’ বলুন, ‘নিদর্শন নাযিল করতে আল্লাহ্ অবশ্যই সক্ষম,’কিন্তু তাদের অধিংকাংশই জানে না [১]।’
وَمَا مِن دَاۤبَّةࣲ فِی ٱلۡأَرۡضِ وَلَا طَـٰۤىِٕرࣲ یَطِیرُ بِجَنَاحَیۡهِ إِلَّاۤ أُمَمٌ أَمۡثَالُكُمۚ مَّا فَرَّطۡنَا فِی ٱلۡكِتَـٰبِ مِن شَیۡءࣲۚ ثُمَّ إِلَىٰ رَبِّهِمۡ یُحۡشَرُونَ ﴿٣٨﴾
আর যমীনে বিচরণশীল প্রতিটি জীব বা দু’ডানা দিয়ে উড়ে এমন প্রতিটি পাখি, তোমাদের মতো এক একটি উম্মত। এ কিতাবে [১] আমারা কোনো কিছুই বাদ দেইনি; তারপর তাদেরকে তাদের রবের দিকে একত্র করা হবে [২]।
وَٱلَّذِینَ كَذَّبُواْ بِـَٔایَـٰتِنَا صُمࣱّ وَبُكۡمࣱ فِی ٱلظُّلُمَـٰتِۗ مَن یَشَإِ ٱللَّهُ یُضۡلِلۡهُ وَمَن یَشَأۡ یَجۡعَلۡهُ عَلَىٰ صِرَ ٰطࣲ مُّسۡتَقِیمࣲ ﴿٣٩﴾
আর যারা আমাদের আয়াতসমূহে মিথ্যারোপ করে, তারা অধির ও বোবা, অন্ধকারে রয়েছে [১]। যাকে ইচ্ছে আল্লাহ্ বিপদগামী করেন এবং যাকে ইচ্ছে তিনি সরল পথে স্থাপন করেন।
قُلۡ أَرَءَیۡتَكُمۡ إِنۡ أَتَىٰكُمۡ عَذَابُ ٱللَّهِ أَوۡ أَتَتۡكُمُ ٱلسَّاعَةُ أَغَیۡرَ ٱللَّهِ تَدۡعُونَ إِن كُنتُمۡ صَـٰدِقِینَ ﴿٤٠﴾
বলুন, ‘তোমরা আমাকে জানাও, যদি আল্লাহ্র শাস্তি তোমাদের উপর আপতিত হয় বা তোমাদের কাছে কিয়ামত উপস্থিত হয়,তবে কি তোমারা আল্লাহ্ ছাড়া অন্য কাউকেও ডাকবে, যদি তোমরা সত্যবাদী হও?
بَلۡ إِیَّاهُ تَدۡعُونَ فَیَكۡشِفُ مَا تَدۡعُونَ إِلَیۡهِ إِن شَاۤءَ وَتَنسَوۡنَ مَا تُشۡرِكُونَ ﴿٤١﴾
‘না, তোমারা শুধু তাঁকেই ডাকবে, তোমারা যে দুঃখের জন্য তাঁকে ডাকছ তিনি ইচ্ছে করলে তোমাদের সে দুঃখ দুর করবেন এবং যাকে তোমারা তাঁর শরীক করতে তা তোমারা ভুলে যাবে।
وَلَقَدۡ أَرۡسَلۡنَاۤ إِلَىٰۤ أُمَمࣲ مِّن قَبۡلِكَ فَأَخَذۡنَـٰهُم بِٱلۡبَأۡسَاۤءِ وَٱلضَّرَّاۤءِ لَعَلَّهُمۡ یَتَضَرَّعُونَ ﴿٤٢﴾
আর অবশ্যই আপনার আগে আমারা বহু জাতির কাছে রাসূল পাঠিয়েছি; অতঃপর তাদেরকে অর্থসংকট ও দুঃখ -কষ্ট দিয়ে পাকড়াও করেছি [১], যাতে তারা অনুনয় বিনয় করে [২]।
فَلَوۡلَاۤ إِذۡ جَاۤءَهُم بَأۡسُنَا تَضَرَّعُواْ وَلَـٰكِن قَسَتۡ قُلُوبُهُمۡ وَزَیَّنَ لَهُمُ ٱلشَّیۡطَـٰنُ مَا كَانُواْ یَعۡمَلُونَ ﴿٤٣﴾
সুতরাং যখন আমাদের শাস্তি তাদের উপর আপতিত হল, তখন তারা কেন বিনীত হল না? কিন্তু তাদের হৃদয় নিষ্ঠুর হয়েছিল এবং তারা যা করছিল শয়তান তা তাদের দৃষ্টিতে শোভন করেছিল।
فَلَمَّا نَسُواْ مَا ذُكِّرُواْ بِهِۦ فَتَحۡنَا عَلَیۡهِمۡ أَبۡوَ ٰبَ كُلِّ شَیۡءٍ حَتَّىٰۤ إِذَا فَرِحُواْ بِمَاۤ أُوتُوۤاْ أَخَذۡنَـٰهُم بَغۡتَةࣰ فَإِذَا هُم مُّبۡلِسُونَ ﴿٤٤﴾
অতঃপর তাদেরকে যে উপদেশ করা হয়েছিল তারা যখন তা ভুলে গেল তখন আমারা তাদের জন্য সবকিছুর দরজা খুলে দিলাম; অবশেষে তাদেরকে যা দেয়া হল যখন তারা তাতে উল্লসিত হল তখন হঠাৎ তাদেরকে পাকড়াও করলাম; ফলে তখনি তারা নিরাশ হল [১]।
فَقُطِعَ دَابِرُ ٱلۡقَوۡمِ ٱلَّذِینَ ظَلَمُواْۚ وَٱلۡحَمۡدُ لِلَّهِ رَبِّ ٱلۡعَـٰلَمِینَ ﴿٤٥﴾
ফলে যালিম সম্প্রদায়ের মূলোচ্ছেদ করা হল এবং সমস্ত প্রশংসা সৃষ্টিকুলের রব আল্লাহ্র জন্যই [১]।
قُلۡ أَرَءَیۡتُمۡ إِنۡ أَخَذَ ٱللَّهُ سَمۡعَكُمۡ وَأَبۡصَـٰرَكُمۡ وَخَتَمَ عَلَىٰ قُلُوبِكُم مَّنۡ إِلَـٰهٌ غَیۡرُ ٱللَّهِ یَأۡتِیكُم بِهِۗ ٱنظُرۡ كَیۡفَ نُصَرِّفُ ٱلۡـَٔایَـٰتِ ثُمَّ هُمۡ یَصۡدِفُونَ ﴿٤٦﴾
বলুন, ‘তোমরা কি ভেবে দেখেছ, আল্লাহ্ যদি তোমাদের শ্রবণশক্তি ও দৃষ্টিশক্তি কেড়ে নেন এবং তোমাদের হৃদয়ে মোহর করে দেন তবে আল্লাহ্ ছাড়া আর কোনো প্রকৃত ইলাহ যে তোমাদের এগুলো ফিরিয়ে দেবে?’ দেখুন,আমারা কীরূপ আয়াতসমূহ বিশতভাবে বর্ননা করি; এরপরও তারা মুখ ফিরিয়ে নেয়।
قُلۡ أَرَءَیۡتَكُمۡ إِنۡ أَتَىٰكُمۡ عَذَابُ ٱللَّهِ بَغۡتَةً أَوۡ جَهۡرَةً هَلۡ یُهۡلَكُ إِلَّا ٱلۡقَوۡمُ ٱلظَّـٰلِمُونَ ﴿٤٧﴾
বলুন, ‘তোমরা আমাকে জানাও, আল্লাহ্র শাস্তি হঠাৎ বা প্রকাশ্যে তোমাদের উপর আপতিত হলে যালিম সম্প্রদায় ছাড়া আর কাউকে ধ্বংস করা হবে কি?’
وَمَا نُرۡسِلُ ٱلۡمُرۡسَلِینَ إِلَّا مُبَشِّرِینَ وَمُنذِرِینَۖ فَمَنۡ ءَامَنَ وَأَصۡلَحَ فَلَا خَوۡفٌ عَلَیۡهِمۡ وَلَا هُمۡ یَحۡزَنُونَ ﴿٤٨﴾
আর আমারা রাসূলগণকে তো শুধু সুসংবাদবাহী ও সতর্ককারীরূপেই প্রেরণ করি। অতঃপর যারা ঈমান আনবে ও নিজেকে সংশোধন করবে, তাদের কোনো ভয় নেই এবং এবং তারা চিন্তিত হবে না।
وَٱلَّذِینَ كَذَّبُواْ بِـَٔایَـٰتِنَا یَمَسُّهُمُ ٱلۡعَذَابُ بِمَا كَانُواْ یَفۡسُقُونَ ﴿٤٩﴾
আর যারা আমাদের আয়াতসমূহে মিথ্যারোপ করেছে,তাদেরকে স্পর্শ করবে আযাব, কারণ তারা নাফরমানী করত।
قُل لَّاۤ أَقُولُ لَكُمۡ عِندِی خَزَاۤىِٕنُ ٱللَّهِ وَلَاۤ أَعۡلَمُ ٱلۡغَیۡبَ وَلَاۤ أَقُولُ لَكُمۡ إِنِّی مَلَكٌۖ إِنۡ أَتَّبِعُ إِلَّا مَا یُوحَىٰۤ إِلَیَّۚ قُلۡ هَلۡ یَسۡتَوِی ٱلۡأَعۡمَىٰ وَٱلۡبَصِیرُۚ أَفَلَا تَتَفَكَّرُونَ ﴿٥٠﴾
বলুন , ‘আমি তোমাদেরকে বলি না যে, আমর নিকট আল্লাহ্র ভান্ডারসমূহ আছে, আর আমি গায়েবোও জানি না এবং তোমাদের এও বলি না যে, আমি ফিরিশ্তা, আমার প্রতি যা অহীরূপে প্রেরণ করা হয়, আমি তো শুধু তারই অনুসরণ করি।’ বলুন, ‘অন্ধ ও চক্ষুষ্মান কি সমান হতে পারে?’ তোমারা কি চিন্তা কর না?
وَأَنذِرۡ بِهِ ٱلَّذِینَ یَخَافُونَ أَن یُحۡشَرُوۤاْ إِلَىٰ رَبِّهِمۡ لَیۡسَ لَهُم مِّن دُونِهِۦ وَلِیࣱّ وَلَا شَفِیعࣱ لَّعَلَّهُمۡ یَتَّقُونَ ﴿٥١﴾
আর আপনি এর দ্বারা তাদেরকে সতর্ক করুন, যারা ভয় করে যে, তাদেরকে তাদের রব-এর কাছে সমবেত করা হবে এমন অবস্থায় যে, তিনি ছাড়া তাদের জন্য থাকবে না কোনো অভিভাবক বা সুপারিশকারী। যাতে তারা তাকওয়ার অধিকারী হয় [১]
وَلَا تَطۡرُدِ ٱلَّذِینَ یَدۡعُونَ رَبَّهُم بِٱلۡغَدَوٰةِ وَٱلۡعَشِیِّ یُرِیدُونَ وَجۡهَهُۥۖ مَا عَلَیۡكَ مِنۡ حِسَابِهِم مِّن شَیۡءࣲ وَمَا مِنۡ حِسَابِكَ عَلَیۡهِم مِّن شَیۡءࣲ فَتَطۡرُدَهُمۡ فَتَكُونَ مِنَ ٱلظَّـٰلِمِینَ ﴿٥٢﴾
আর যারা তাদের রব-কে ভোরে ও সন্ধ্যায় তাঁর সন্তুষ্টি লাভের জন্য ডাকে তাদেরকে আপনি বিতাড়িত করবেন না [১]। তাদের কাজের জবাবদিহিতার দায়িত্ব আপনার উপর নেই এবং আপনার কোনো কাজের জবাবদিহিতার দায়িত্ব তাদের উপর নেই এবং আপনার কোনো জবাবদিহিতার দায়িত্ব তাদের উপর নেই যে, আপনি তাদেরকে বিতাড়িত করবেন; করলে আপনি যালিমদের অন্তর্ভুক্ত হবেন।
وَكَذَ ٰلِكَ فَتَنَّا بَعۡضَهُم بِبَعۡضࣲ لِّیَقُولُوۤاْ أَهَـٰۤؤُلَاۤءِ مَنَّ ٱللَّهُ عَلَیۡهِم مِّنۢ بَیۡنِنَاۤۗ أَلَیۡسَ ٱللَّهُ بِأَعۡلَمَ بِٱلشَّـٰكِرِینَ ﴿٥٣﴾
আর এভাবেই আমারা তাদের কাউকে অপর কারও দ্বারা পরীক্ষা করেছি, যাতে তারা বলে, ‘আমাদের মধ্যে কি এদের প্রতিই আল্লাহ্ অনুগ্রহ করলেন?’ আল্লাহ্ কি কৃতজ্ঞদের সম্বদ্ধে সবিশেষ অবগত নন?
وَإِذَا جَاۤءَكَ ٱلَّذِینَ یُؤۡمِنُونَ بِـَٔایَـٰتِنَا فَقُلۡ سَلَـٰمٌ عَلَیۡكُمۡۖ كَتَبَ رَبُّكُمۡ عَلَىٰ نَفۡسِهِ ٱلرَّحۡمَةَ أَنَّهُۥ مَنۡ عَمِلَ مِنكُمۡ سُوۤءَۢا بِجَهَـٰلَةࣲ ثُمَّ تَابَ مِنۢ بَعۡدِهِۦ وَأَصۡلَحَ فَأَنَّهُۥ غَفُورࣱ رَّحِیمࣱ ﴿٥٤﴾
আর যারা আমাদের আয়াতসমূহে ঈমান আনে, তারা যখন আপনার কাছে আসে তখন তাদেরকে আপনি বলুন, ‘তোমাদের প্রতি শান্তি বর্ষিত হোক’, তোমাদের রব তাঁর নিজের উপর দয়া লিখে নিয়েছেন [১]। তোমাদের মধ্যে কেউ অজ্ঞতাবশত [২] যদি খারাপ কাজ করে, তারপর তওবা করে এবং সংশোধন করে, তবে নিশ্চয় তিনি (আল্লাহ্) ক্ষমাশীল,পরম দয়ালু [৩]।
وَكَذَ ٰلِكَ نُفَصِّلُ ٱلۡـَٔایَـٰتِ وَلِتَسۡتَبِینَ سَبِیلُ ٱلۡمُجۡرِمِینَ ﴿٥٥﴾
আর এভাবে আমারা আয়াতসমূহ বিশদভাবে বর্ণনা করি; আর যেন অপরাধীদের পথ স্পষ্টভাবে প্রকাশ পায়।
قُلۡ إِنِّی نُهِیتُ أَنۡ أَعۡبُدَ ٱلَّذِینَ تَدۡعُونَ مِن دُونِ ٱللَّهِۚ قُل لَّاۤ أَتَّبِعُ أَهۡوَاۤءَكُمۡ قَدۡ ضَلَلۡتُ إِذࣰا وَمَاۤ أَنَا۠ مِنَ ٱلۡمُهۡتَدِینَ ﴿٥٦﴾
বলুন, ‘তোমারা আল্লাহ্ ছাড়া যাদেরকে ডাক, তাদের ইবাদত করতে আমাকে নিষেধ করা হয়েছে।’ বলুন, ‘আমি তোমাদের খেয়াল – খুশীর অনুসরণ করি না; করলে আমি বিপদগামী হব এবং সৎপথপ্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত থাকব না।’
قُلۡ إِنِّی عَلَىٰ بَیِّنَةࣲ مِّن رَّبِّی وَكَذَّبۡتُم بِهِۦۚ مَا عِندِی مَا تَسۡتَعۡجِلُونَ بِهِۦۤۚ إِنِ ٱلۡحُكۡمُ إِلَّا لِلَّهِۖ یَقُصُّ ٱلۡحَقَّۖ وَهُوَ خَیۡرُ ٱلۡفَـٰصِلِینَ ﴿٥٧﴾
বলুন, ‘নিশ্চয় আমি আমার রব-এর পক্ষ থেকে স্পষ্ট প্রমাণের উপর প্রতিষ্ঠিত; অথচ তোমারা এতে মিথ্যারোপ করেছ। তোমরা যা খুব তাড়াতাড়ি পেতে চাও তা আমার কাছে নেই। হুকুম কেবল আল্লাহ্র কাছেই, তিনি সত্য বর্ণনা করেন এবং ফয়সালাকারীদের মধ্যে তিনিই শ্রেষ্ঠ।’
قُل لَّوۡ أَنَّ عِندِی مَا تَسۡتَعۡجِلُونَ بِهِۦ لَقُضِیَ ٱلۡأَمۡرُ بَیۡنِی وَبَیۡنَكُمۡۗ وَٱللَّهُ أَعۡلَمُ بِٱلظَّـٰلِمِینَ ﴿٥٨﴾
বলুন, ‘তোমারা যা খুব তাড়াতাড়ি পেতে চাও তা যদি আমার কাছে থাকত, তবে আমার ও তোমাদের মধ্যে তো ফয়সালা হয়েই যেত। আর আল্লাহ্ যালিমদের ব্যাপারে অধিক অবগত।’
۞ وَعِندَهُۥ مَفَاتِحُ ٱلۡغَیۡبِ لَا یَعۡلَمُهَاۤ إِلَّا هُوَۚ وَیَعۡلَمُ مَا فِی ٱلۡبَرِّ وَٱلۡبَحۡرِۚ وَمَا تَسۡقُطُ مِن وَرَقَةٍ إِلَّا یَعۡلَمُهَا وَلَا حَبَّةࣲ فِی ظُلُمَـٰتِ ٱلۡأَرۡضِ وَلَا رَطۡبࣲ وَلَا یَابِسٍ إِلَّا فِی كِتَـٰبࣲ مُّبِینࣲ ﴿٥٩﴾
আর [১] গায়েবের চাবি [২] তাঁরই কাছে রয়েছে [৩], তিনি ছাড়া অন্য কেউ তা জানে না। স্থল ও সমুদ্রের অন্ধকারসমূহে যা কিছু আছে তা তিনিই অবগত রয়েছেন, তাঁর অজানায় একটি পাতাও পড়ে না। মাটির অন্ধকারে এমন কোনো শস্যকণাও অংকুরিত হয় না বা রসযুক্ত কিংবা শুষ্ক এমন কোনো বস্তু নেই যা সুস্পষ্ট কিতাবে নেই।
وَهُوَ ٱلَّذِی یَتَوَفَّىٰكُم بِٱلَّیۡلِ وَیَعۡلَمُ مَا جَرَحۡتُم بِٱلنَّهَارِ ثُمَّ یَبۡعَثُكُمۡ فِیهِ لِیُقۡضَىٰۤ أَجَلࣱ مُّسَمࣰّىۖ ثُمَّ إِلَیۡهِ مَرۡجِعُكُمۡ ثُمَّ یُنَبِّئُكُم بِمَا كُنتُمۡ تَعۡمَلُونَ ﴿٦٠﴾
তিনিই রাতে তোমাদের মৃত্যু ঘটান এবং দিনে যা কামাই কর তা তিনি জানেন। তারপর দিনে তোমাদেরকে তিনি আবার জীবিত করেন, যাতে নির্ধারিত সময় পূর্ণ করা হয়। তারপর তাঁর দিকেই তোমাদের প্রত্যাবর্তন। তারপর তোমারা যা করতে সে সম্বদ্ধে তিনি তোমাদেরকে অবহিত করবেন।
وَهُوَ ٱلۡقَاهِرُ فَوۡقَ عِبَادِهِۦۖ وَیُرۡسِلُ عَلَیۡكُمۡ حَفَظَةً حَتَّىٰۤ إِذَا جَاۤءَ أَحَدَكُمُ ٱلۡمَوۡتُ تَوَفَّتۡهُ رُسُلُنَا وَهُمۡ لَا یُفَرِّطُونَ ﴿٦١﴾
আর তিনি তাঁর বান্দাদের উপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণাধিকারী এবং তিনি তোমাদের উপর প্রেরণ করেন হেফাজতকারীদেরকে। অবশেষে তোমাদের কারও যখন মৃত্যু উপস্থিত হয় তখন আমাদের রাসূল (ফিরিশতা)গণ তার মৃত্যু ঘটায় এবং তারা কোনো ত্রুটি করে না।
ثُمَّ رُدُّوۤاْ إِلَى ٱللَّهِ مَوۡلَىٰهُمُ ٱلۡحَقِّۚ أَلَا لَهُ ٱلۡحُكۡمُ وَهُوَ أَسۡرَعُ ٱلۡحَـٰسِبِینَ ﴿٦٢﴾
তারপর তাদেরকে প্রকৃত রব আল্লাহ্র দিকে প্রত্যাবর্তিত করা হবে। জেনে রাখুন, হুকুম তো তাঁরই এবং তিনি সবচেয়ে দ্রুত হিসেব গ্রহণকারী।
قُلۡ مَن یُنَجِّیكُم مِّن ظُلُمَـٰتِ ٱلۡبَرِّ وَٱلۡبَحۡرِ تَدۡعُونَهُۥ تَضَرُّعࣰا وَخُفۡیَةࣰ لَّىِٕنۡ أَنجَىٰنَا مِنۡ هَـٰذِهِۦ لَنَكُونَنَّ مِنَ ٱلشَّـٰكِرِینَ ﴿٦٣﴾
বলুন, ‘কে তোমাদেরকে নাজাত দেন স্থলভাগের ও সাগরের অন্ধকার থেকে ? যখন তোমারা কাতরভাবে এবং গোপনে তাঁকে ডাক যে, আমাদেরকে এ থেকে রক্ষা করলে আমারা অবশ্যই কৃতজ্ঞদের অন্তর্ভুক্ত হব।’
قُلِ ٱللَّهُ یُنَجِّیكُم مِّنۡهَا وَمِن كُلِّ كَرۡبࣲ ثُمَّ أَنتُمۡ تُشۡرِكُونَ ﴿٦٤﴾
বলুন, ‘আল্লাহ্ই তোমাদেরকে তা থেকে এবং সমস্ত দুঃখ–কষ্ট থেকে নাজাত দেন। এরপরও তোমারা শির্ক কর [১]।’
قُلۡ هُوَ ٱلۡقَادِرُ عَلَىٰۤ أَن یَبۡعَثَ عَلَیۡكُمۡ عَذَابࣰا مِّن فَوۡقِكُمۡ أَوۡ مِن تَحۡتِ أَرۡجُلِكُمۡ أَوۡ یَلۡبِسَكُمۡ شِیَعࣰا وَیُذِیقَ بَعۡضَكُم بَأۡسَ بَعۡضٍۗ ٱنظُرۡ كَیۡفَ نُصَرِّفُ ٱلۡـَٔایَـٰتِ لَعَلَّهُمۡ یَفۡقَهُونَ ﴿٦٥﴾
বলুন [১], ‘তোমাদের উপর [২] বা নীচ থেকে শাস্তি পাঠাতে [৩] ,বা তোমাদেরকে বিভিন্ন সন্দেহপূর্ণ দলে বিভক্ত করতে বা এক দলকে অন্য দলের সংঘর্ষের আস্বাদ গ্রহণ করাতে [৪] তিনি (আল্লাহ) সক্ষম।’ দেখুন,আমারা কি রূপে বিভিন্নভাবে আয়াতসদমূহ বিবৃত করি যাতে তারা ভালোভাবে বুঝতে পারে।
وَكَذَّبَ بِهِۦ قَوۡمُكَ وَهُوَ ٱلۡحَقُّۚ قُل لَّسۡتُ عَلَیۡكُم بِوَكِیلࣲ ﴿٦٦﴾
আর আপনার সম্প্রদায় তো ওটাকে মিথ্যা বলেছে অথচ ওটা সত্য। বলুন, ‘আমি তোমাদের কার্যনির্বাহক নই।’
لِّكُلِّ نَبَإࣲ مُّسۡتَقَرࣱّۚ وَسَوۡفَ تَعۡلَمُونَ ﴿٦٧﴾
প্রত্যেক বার্তার জন্য নির্ধারিত সময় রয়েছে এবং অচিরেই তোমারা জানতে পারবে।
وَإِذَا رَأَیۡتَ ٱلَّذِینَ یَخُوضُونَ فِیۤ ءَایَـٰتِنَا فَأَعۡرِضۡ عَنۡهُمۡ حَتَّىٰ یَخُوضُواْ فِی حَدِیثٍ غَیۡرِهِۦۚ وَإِمَّا یُنسِیَنَّكَ ٱلشَّیۡطَـٰنُ فَلَا تَقۡعُدۡ بَعۡدَ ٱلذِّكۡرَىٰ مَعَ ٱلۡقَوۡمِ ٱلظَّـٰلِمِینَ ﴿٦٨﴾
আর আপনি যখন তাদেরকে দেখেন, যারা আমাদের আয়াতসমূহ সম্বদ্ধে উপহাসমূলক আলোচনায় মগ্ন হয়, তখন আপনি তাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিবেন, যে পর্যন্ত না তারা অন্য প্রসংগ শুরু করে [১]। আর শয়তান যদি আপনাকে ভুলিয়ে দেয় তবে স্মরণ হওয়ার পর যালিম সম্প্রদায়ের সাথে বসবেন না [২]।
وَمَا عَلَى ٱلَّذِینَ یَتَّقُونَ مِنۡ حِسَابِهِم مِّن شَیۡءࣲ وَلَـٰكِن ذِكۡرَىٰ لَعَلَّهُمۡ یَتَّقُونَ ﴿٦٩﴾
আর তাদের [১] কাজের জবাবদিহির দায়িত্ব, যারা তাকওয়া অবলম্বন করে তাদের নয়। তবে উপদেশ দেয়া তাদের কর্তব্য, যাতে তারাও তাকওয়া অবলম্বন করে।
وَذَرِ ٱلَّذِینَ ٱتَّخَذُواْ دِینَهُمۡ لَعِبࣰا وَلَهۡوࣰا وَغَرَّتۡهُمُ ٱلۡحَیَوٰةُ ٱلدُّنۡیَاۚ وَذَكِّرۡ بِهِۦۤ أَن تُبۡسَلَ نَفۡسُۢ بِمَا كَسَبَتۡ لَیۡسَ لَهَا مِن دُونِ ٱللَّهِ وَلِیࣱّ وَلَا شَفِیعࣱ وَإِن تَعۡدِلۡ كُلَّ عَدۡلࣲ لَّا یُؤۡخَذۡ مِنۡهَاۤۗ أُوْلَـٰۤىِٕكَ ٱلَّذِینَ أُبۡسِلُواْ بِمَا كَسَبُواْۖ لَهُمۡ شَرَابࣱ مِّنۡ حَمِیمࣲ وَعَذَابٌ أَلِیمُۢ بِمَا كَانُواْ یَكۡفُرُونَ ﴿٧٠﴾
আর যারা তাদের দীনকে খেল-তামাশারূপে গ্রহণ করে [১] এবং পার্থিব জীবন যাদেরকে প্রতারিত করে আপনি তাদের পতিত্যাগ করুন। আর আপনি এ কুরআন দ্বারা তাদেরকে উপদেশ দিন [২], যাতে কেউ নিজ কৃতকর্মের জন্য ধ্বংস না হয়, যখন আল্লহ ছাড়া আর কোনো অভিভাবক ও সুপারিশকারী থাকবে না এবং বিনিময়ে সবকিছু দিলেও তা গ্রহণ করা হবে না [৩]। এরাই নিজেদের কৃতকর্মের জন্য ধ্বংস হয়েছে; কুফরীর কারণে এদের জন্য রয়েছে অতি উষ্ণ পানীয় ও কষ্টদায়ক শাস্তি [৪]।
قُلۡ أَنَدۡعُواْ مِن دُونِ ٱللَّهِ مَا لَا یَنفَعُنَا وَلَا یَضُرُّنَا وَنُرَدُّ عَلَىٰۤ أَعۡقَابِنَا بَعۡدَ إِذۡ هَدَىٰنَا ٱللَّهُ كَٱلَّذِی ٱسۡتَهۡوَتۡهُ ٱلشَّیَـٰطِینُ فِی ٱلۡأَرۡضِ حَیۡرَانَ لَهُۥۤ أَصۡحَـٰبࣱ یَدۡعُونَهُۥۤ إِلَى ٱلۡهُدَى ٱئۡتِنَاۗ قُلۡ إِنَّ هُدَى ٱللَّهِ هُوَ ٱلۡهُدَىٰۖ وَأُمِرۡنَا لِنُسۡلِمَ لِرَبِّ ٱلۡعَـٰلَمِینَ ﴿٧١﴾
বলুন, ‘আল্লাহ্ ছাড়া আমারা কি এমন কিছুকে ডাকব, যা আমাদের কোনো উপকার কিংবা অপকার করতেও পারে না ? আর আল্লাহ্ আমাদেরকে হিদায়াত দেয়ার পর আমাদেরকে কি আগের অবস্থায় ফিরানো হবে [১] সে ব্যাক্তির মত, যাকে শয়তান যমীনে এমন শক্তভাবে পেয়ে বসেছে যে সে দিশেহারা ? তার রয়েছে কিছু (ঈমানদার) সহচর, তারা তাকে হিদায়াতের প্রতি আহবান করে বলে, ‘আমাদের কাছে আস?’ [২] বলুন, ‘আল্লাহ হিদায়াতই সঠিক হিদায়াত এবং আমারা আদিষ্ট হয়েছি সৃষ্টিকুলের রব-এর কাছে আত্নসমর্পণ করতে[৩]।’
وَأَنۡ أَقِیمُواْ ٱلصَّلَوٰةَ وَٱتَّقُوهُۚ وَهُوَ ٱلَّذِیۤ إِلَیۡهِ تُحۡشَرُونَ ﴿٧٢﴾
‘এবং সালাত কায়েম করতে ও তাঁর তাকওয়া অবলম্বন করতে। আর তিনিই, যাঁর কাছে তোমাদের সমাবেত করা হবে।’
وَهُوَ ٱلَّذِی خَلَقَ ٱلسَّمَـٰوَ ٰتِ وَٱلۡأَرۡضَ بِٱلۡحَقِّۖ وَیَوۡمَ یَقُولُ كُن فَیَكُونُۚ قَوۡلُهُ ٱلۡحَقُّۚ وَلَهُ ٱلۡمُلۡكُ یَوۡمَ یُنفَخُ فِی ٱلصُّورِۚ عَـٰلِمُ ٱلۡغَیۡبِ وَٱلشَّهَـٰدَةِۚ وَهُوَ ٱلۡحَكِیمُ ٱلۡخَبِیرُ ﴿٧٣﴾
তিনিই যথাযথভাবে আসমানসমূহ ও যমীন সৃষ্টি করেছেন। আর যেদিন তিনি বলবেন, ‘হও’ , তখনই তা হয়ে যাবে। তাঁর কথাই সত্য। যেদিন শিংগায় ফুঁৎকার দেয়া হবে সেদিনের কর্তৃত্ব তো তাঁরই। গায়েব ও উপস্থিত বিষয়ে তিনি পরিজ্ঞাত। আর তিনিই প্রজ্ঞাময়, সবিশেষ অবহিত।
۞ وَإِذۡ قَالَ إِبۡرَ ٰهِیمُ لِأَبِیهِ ءَازَرَ أَتَتَّخِذُ أَصۡنَامًا ءَالِهَةً إِنِّیۤ أَرَىٰكَ وَقَوۡمَكَ فِی ضَلَـٰلࣲ مُّبِینࣲ ﴿٧٤﴾
আর স্মরণ করুন [১], যখন ইবরাহীম তাঁর পিতা আযরকে বলেছিলেন [২], ‘আপনি কি মূর্তিকে ইলাহরূপে গ্রহণ করেন? আমি তো আপনাকে ও আপনার সম্প্রসদায়কে স্পষ্ট ভ্রষ্টতার মধ্যে দেখছি [৩]।’
وَكَذَ ٰلِكَ نُرِیۤ إِبۡرَ ٰهِیمَ مَلَكُوتَ ٱلسَّمَـٰوَ ٰتِ وَٱلۡأَرۡضِ وَلِیَكُونَ مِنَ ٱلۡمُوقِنِینَ ﴿٧٥﴾
এভাবে আমারা ইবরাহীমকে আসমানসমূহ ও যমীনে রাজত্ব [১] দেখাই, যাতে তিনি নিশ্চিত বিশ্বাসীদের অন্তর্ভুক্ত হন।
فَلَمَّا جَنَّ عَلَیۡهِ ٱلَّیۡلُ رَءَا كَوۡكَبࣰاۖ قَالَ هَـٰذَا رَبِّیۖ فَلَمَّاۤ أَفَلَ قَالَ لَاۤ أُحِبُّ ٱلۡـَٔافِلِینَ ﴿٧٦﴾
তারপর রাত যখন তাঁকে আচ্ছন্ন করল তখন তিনি তারকা দেখে বললেন, ‘এ আমার রব।’ তারপর যখন সেটা অস্তমিত হল তখন তিনি বললেন, ‘যা আন্তমিত হয় তা আমি পছন্দ করি না।’
فَلَمَّا رَءَا ٱلۡقَمَرَ بَازِغࣰا قَالَ هَـٰذَا رَبِّیۖ فَلَمَّاۤ أَفَلَ قَالَ لَىِٕن لَّمۡ یَهۡدِنِی رَبِّی لَأَكُونَنَّ مِنَ ٱلۡقَوۡمِ ٱلضَّاۤلِّینَ ﴿٧٧﴾
অতঃপর যখন তিনি চাঁদকে সমুজ্জ্বলরূপে উঠতে দেখলেন তখন বললেন , ‘এটা আমার রব।’ যখন সেটাও অস্তমিত হল তখন বলেন, ‘আমাকে আমার রব হিদায়াত না করলে আমি অবশ্যই পথভ্রষ্টদের শামিল হব।’
فَلَمَّا رَءَا ٱلشَّمۡسَ بَازِغَةࣰ قَالَ هَـٰذَا رَبِّی هَـٰذَاۤ أَكۡبَرُۖ فَلَمَّاۤ أَفَلَتۡ قَالَ یَـٰقَوۡمِ إِنِّی بَرِیۤءࣱ مِّمَّا تُشۡرِكُونَ ﴿٧٨﴾
‘অতঃপর যখন তিনি সূর্যকে দীপ্তিমানরূপে উঠতে দেখলেন তখন বললেন, ‘এটা আমার রব, এটা সবচেয়ে বড়।’ যখন এটাও অস্তমিল হল, তখন তিনি বললেন, হে আমার সম্প্রদায়! তোমারা যাকে আল্লাহ্র শরীক কর তার সাথে আমার কোনো সংশ্রব নেই।
إِنِّی وَجَّهۡتُ وَجۡهِیَ لِلَّذِی فَطَرَ ٱلسَّمَـٰوَ ٰتِ وَٱلۡأَرۡضَ حَنِیفࣰاۖ وَمَاۤ أَنَا۠ مِنَ ٱلۡمُشۡرِكِینَ ﴿٧٩﴾
‘আমি একনিষ্টভাবে তাঁর দিকে মুখ ফিরাচ্ছি যিনি আসমানসমূহ ও যমীন সৃষ্টি করেছেন এবং আমি মুশরিককদের অন্তর্ভুক্ত নই [১]।’
وَحَاۤجَّهُۥ قَوۡمُهُۥۚ قَالَ أَتُحَـٰۤجُّوۤنِّی فِی ٱللَّهِ وَقَدۡ هَدَىٰنِۚ وَلَاۤ أَخَافُ مَا تُشۡرِكُونَ بِهِۦۤ إِلَّاۤ أَن یَشَاۤءَ رَبِّی شَیۡـࣰٔاۚ وَسِعَ رَبِّی كُلَّ شَیۡءٍ عِلۡمًاۚ أَفَلَا تَتَذَكَّرُونَ ﴿٨٠﴾
আর তাঁর সম্প্রদায় তাঁর সাথে বিতর্কে লিপ্ত হল। তিনি বললেন, ‘তোমরা কি আল্লাহ্ সম্বদ্ধে আমার সাথে বিতর্কে লিপ্ত হচ্ছো? অথচ তিনি আমাকে হিদায়েত দিয়েছেন। আমার রব অন্য কোনো ইচ্ছে না করলে তোমরা যাকে তাঁর শরীক কর তাকে আমি ভয় করি না, আমার রব জ্ঞান দ্বারা সবকিছু পরিব্যাপ্ত করে আছেন, তবে কি তোমারা উপদেশ গ্রহণ করবে না?’
وَكَیۡفَ أَخَافُ مَاۤ أَشۡرَكۡتُمۡ وَلَا تَخَافُونَ أَنَّكُمۡ أَشۡرَكۡتُم بِٱللَّهِ مَا لَمۡ یُنَزِّلۡ بِهِۦ عَلَیۡكُمۡ سُلۡطَـٰنࣰاۚ فَأَیُّ ٱلۡفَرِیقَیۡنِ أَحَقُّ بِٱلۡأَمۡنِۖ إِن كُنتُمۡ تَعۡلَمُونَ ﴿٨١﴾
‘আর তোমরা যাকে আল্লাহ্র শরীক কর আমি তাকে কিরূপে ভয় করব? অথচ তোমরা ভয় করছ না যে, তোমরা আল্লাহ্র সাথে শরীক করছ এমন কিছু,যার পক্ষে তিনি তোমাদের কাছে কোনো প্রমাণ নাযিল করেন নি। কাজেই যদি তোমরা জান তবে বল, দু‘দলের মধ্যে কোন দল নিরাপত্তা লাভের বেশী হকদার।’
ٱلَّذِینَ ءَامَنُواْ وَلَمۡ یَلۡبِسُوۤاْ إِیمَـٰنَهُم بِظُلۡمٍ أُوْلَـٰۤىِٕكَ لَهُمُ ٱلۡأَمۡنُ وَهُم مُّهۡتَدُونَ ﴿٨٢﴾
যারা ঈমান এনেছে এবং তাদের ঈমানকে যুলুম [১] (শির্ক) দ্বারা কলুষিত করেনি, নিরাপত্তা তাদেরই জন্য [২] এবং তারাই হেদায়েতপ্রাপ্ত।
وَتِلۡكَ حُجَّتُنَاۤ ءَاتَیۡنَـٰهَاۤ إِبۡرَ ٰهِیمَ عَلَىٰ قَوۡمِهِۦۚ نَرۡفَعُ دَرَجَـٰتࣲ مَّن نَّشَاۤءُۗ إِنَّ رَبَّكَ حَكِیمٌ عَلِیمࣱ ﴿٨٣﴾
আর এটাই আমাদের যুক্তি –প্রমাণ যা ইবরাহীমকে তার জাতির মোকাবেলায়, যাকে ইচ্ছা আমরা মর্যাদায় উন্নীত করি। নিশ্চয় আপনার রব প্রজ্ঞাময়, সর্বজ্ঞ।
وَوَهَبۡنَا لَهُۥۤ إِسۡحَـٰقَ وَیَعۡقُوبَۚ كُلًّا هَدَیۡنَاۚ وَنُوحًا هَدَیۡنَا مِن قَبۡلُۖ وَمِن ذُرِّیَّتِهِۦ دَاوُۥدَ وَسُلَیۡمَـٰنَ وَأَیُّوبَ وَیُوسُفَ وَمُوسَىٰ وَهَـٰرُونَۚ وَكَذَ ٰلِكَ نَجۡزِی ٱلۡمُحۡسِنِینَ ﴿٨٤﴾
আর আমরা তাকে দান করেছিলাম ইসহাক ও ইয়া’কূব, এদের প্রত্যেককে হিদায়াত দিয়েছিলাম; পূর্বে নূহকেও আমরা হিদায়াত দিয়েছিলাম এবং তার বংশধর দাউদ, সুলাইমান, আইউব, ইউনূস, মূসা ও হারূনকেও; আর এভাবেই মুহসিনদেরকে পুরস্কৃত করি;
وَزَكَرِیَّا وَیَحۡیَىٰ وَعِیسَىٰ وَإِلۡیَاسَۖ كُلࣱّ مِّنَ ٱلصَّـٰلِحِینَ ﴿٨٥﴾
আর যাকারিয়্যা , ইয়াহইয়া, ঈসা এবং ইলয়াসকেও (হিদায়াত দিয়েছিলাম)। এরা প্রত্যেকেই সৎকর্মপরায়ণ ছিলেন;
وَإِسۡمَـٰعِیلَ وَٱلۡیَسَعَ وَیُونُسَ وَلُوطࣰاۚ وَكُلࣰّا فَضَّلۡنَا عَلَى ٱلۡعَـٰلَمِینَ ﴿٨٦﴾
এবং ইসমা’ঈল, আল-ইয়াসা, ‘ইউনুস ও লূতকেও (হিদায়াত দিয়েছিলাম); আর তাদের প্রত্যেককে আমরা শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছিলাম দৃষ্টিকুলের উপর।
وَمِنۡ ءَابَاۤىِٕهِمۡ وَذُرِّیَّـٰتِهِمۡ وَإِخۡوَ ٰنِهِمۡۖ وَٱجۡتَبَیۡنَـٰهُمۡ وَهَدَیۡنَـٰهُمۡ إِلَىٰ صِرَ ٰطࣲ مُّسۡتَقِیمࣲ ﴿٨٧﴾
এবং তাদের পিতৃপুরুষ, বংশধর ও ভাইদের কিছুসংখ্যককে। আর আমরা তাদেরকে মনোনীত করেছিলাম এবং সরল পথে পরিচালিত করেছিলাম।
ذَ ٰلِكَ هُدَى ٱللَّهِ یَهۡدِی بِهِۦ مَن یَشَاۤءُ مِنۡ عِبَادِهِۦۚ وَلَوۡ أَشۡرَكُواْ لَحَبِطَ عَنۡهُم مَّا كَانُواْ یَعۡمَلُونَ ﴿٨٨﴾
এটা আল্লাহ্র হিদায়াত, স্বীয় বান্দাদের মধ্যে যাকে ইচ্ছে তিনি এ দ্বারা হিদায়াত করেন। আর যদি তারা শির্ক করত তবে তাঁদের কৃতকর্ম নিস্ফল হত [১]।
أُوْلَـٰۤىِٕكَ ٱلَّذِینَ ءَاتَیۡنَـٰهُمُ ٱلۡكِتَـٰبَ وَٱلۡحُكۡمَ وَٱلنُّبُوَّةَۚ فَإِن یَكۡفُرۡ بِهَا هَـٰۤؤُلَاۤءِ فَقَدۡ وَكَّلۡنَا بِهَا قَوۡمࣰا لَّیۡسُواْ بِهَا بِكَـٰفِرِینَ ﴿٨٩﴾
এরাই তারা, যাদেরকে আমরা কিতাব, কতৃত্ব ও নবুওয়াত দান কারেছি, অতঃপর যদি তারা এগুলোর সাথে কুফরি করে, তবে আমরা এমন এক সম্প্রদায়কে এগুলোর ভার দিয়েছি যারা এগুলোর সাথে কাফির নয় [১]।
أُوْلَـٰۤىِٕكَ ٱلَّذِینَ هَدَى ٱللَّهُۖ فَبِهُدَىٰهُمُ ٱقۡتَدِهۡۗ قُل لَّاۤ أَسۡـَٔلُكُمۡ عَلَیۡهِ أَجۡرًاۖ إِنۡ هُوَ إِلَّا ذِكۡرَىٰ لِلۡعَـٰلَمِینَ ﴿٩٠﴾
এরাই তারা, যাদেরকে আল্লাহ্ হিদায়াত করেছেন, কাজেই আপনি তাদের পথের অনুসরণ করুন [১]। বলুন, ‘এর জন্য আমি তোমাদের কাছে পারিশ্রমিক চাই না, এ তো শুধু সৃষ্টিকুলের জন্য উপদেশ [২]।’
وَمَا قَدَرُواْ ٱللَّهَ حَقَّ قَدۡرِهِۦۤ إِذۡ قَالُواْ مَاۤ أَنزَلَ ٱللَّهُ عَلَىٰ بَشَرࣲ مِّن شَیۡءࣲۗ قُلۡ مَنۡ أَنزَلَ ٱلۡكِتَـٰبَ ٱلَّذِی جَاۤءَ بِهِۦ مُوسَىٰ نُورࣰا وَهُدࣰى لِّلنَّاسِۖ تَجۡعَلُونَهُۥ قَرَاطِیسَ تُبۡدُونَهَا وَتُخۡفُونَ كَثِیرࣰاۖ وَعُلِّمۡتُم مَّا لَمۡ تَعۡلَمُوۤاْ أَنتُمۡ وَلَاۤ ءَابَاۤؤُكُمۡۖ قُلِ ٱللَّهُۖ ثُمَّ ذَرۡهُمۡ فِی خَوۡضِهِمۡ یَلۡعَبُونَ ﴿٩١﴾
আর তারা আল্লাহকে তাঁর যথার্থ মর্যাদা দেয়নি, যখন তারা বলে, ‘আল্লাহ্ কোনো মানুষের উপর কিছুই নাযিল করেননি [১]। বলুন, ‘কে নাযিল করেছে মূসার আনীত কিতাব যা মানুষের জন্য আলো ও হিদায়াতস্বরূপ, যা তোমারা বিভিন্ন পৃষ্ঠায় লিপিবদ্ধ করে কিছু প্রকাশ কর ও অনেকাংশ গোপন রাখ এবং যা তোমাদের পিতৃপুরুষগণ ও তোমারা জানতে না তাও তোমাদেরকে শিক্ষা দেয়া হয়েছিলো?’ বলুন, ‘আল্লাহ্ই’; অতঃপর তাদেরকে তাদের আযাচিত সমালোচনার উপর ছেড়ে দিন, তারা খেলা করতে থাকুক [২]।
وَهَـٰذَا كِتَـٰبٌ أَنزَلۡنَـٰهُ مُبَارَكࣱ مُّصَدِّقُ ٱلَّذِی بَیۡنَ یَدَیۡهِ وَلِتُنذِرَ أُمَّ ٱلۡقُرَىٰ وَمَنۡ حَوۡلَهَاۚ وَٱلَّذِینَ یُؤۡمِنُونَ بِٱلۡـَٔاخِرَةِ یُؤۡمِنُونَ بِهِۦۖ وَهُمۡ عَلَىٰ صَلَاتِهِمۡ یُحَافِظُونَ ﴿٩٢﴾
আর এটি বরকতময় কিতাব, যা আমারা নাযিল করেছি, যা তার আগের সব কিতাবের সত্যায়নকারী এবং যা দ্বারা আপনি মক্কা ও তার চারপাশের মানুষদেরকে সতর্ক করেন [১]। আর যারা আখেরাতের উপর ঈমান রাখে, তারা এটাতেও ঈমান রাখে [২] এবং তারা তাদের সালাতের হিফযত করে।
وَمَنۡ أَظۡلَمُ مِمَّنِ ٱفۡتَرَىٰ عَلَى ٱللَّهِ كَذِبًا أَوۡ قَالَ أُوحِیَ إِلَیَّ وَلَمۡ یُوحَ إِلَیۡهِ شَیۡءࣱ وَمَن قَالَ سَأُنزِلُ مِثۡلَ مَاۤ أَنزَلَ ٱللَّهُۗ وَلَوۡ تَرَىٰۤ إِذِ ٱلظَّـٰلِمُونَ فِی غَمَرَ ٰتِ ٱلۡمَوۡتِ وَٱلۡمَلَـٰۤىِٕكَةُ بَاسِطُوۤاْ أَیۡدِیهِمۡ أَخۡرِجُوۤاْ أَنفُسَكُمُۖ ٱلۡیَوۡمَ تُجۡزَوۡنَ عَذَابَ ٱلۡهُونِ بِمَا كُنتُمۡ تَقُولُونَ عَلَى ٱللَّهِ غَیۡرَ ٱلۡحَقِّ وَكُنتُمۡ عَنۡ ءَایَـٰتِهِۦ تَسۡتَكۡبِرُونَ ﴿٩٣﴾
আর তার চেয়ে বড় যালিম আর কে যে আল্লাহ্ সম্ব্বদ্ধে মিথ্যা রটনা করে, কিংবা বলে, ‘আমার কাছে ওহী হয়,’অথচ তার প্রতি কিছুই ওহী করা হয় না এবং যে বলে, ‘আল্লাহ্ যা নাযিল করেছেন আমিও তার মত নাযিল করব?’ যদি আপনি দেখতে পেতেন, যখন যালিমরা মৃত্যু যন্ত্রনায় থাকবে এবং ফিরিশতাগণ হাত বাড়িয়ে বলবে, ‘তোমাদের প্রাণ বের কর। আজ তোমাদেরকে অবমাননাকর শাস্তি দেয়া হবে, কারণ তোমারা আল্লাহ্র উপর অসত্য বলতে এবং তাঁর আয়াতসমূহ সম্পর্কে অহংকার করতে।’
وَلَقَدۡ جِئۡتُمُونَا فُرَ ٰدَىٰ كَمَا خَلَقۡنَـٰكُمۡ أَوَّلَ مَرَّةࣲ وَتَرَكۡتُم مَّا خَوَّلۡنَـٰكُمۡ وَرَاۤءَ ظُهُورِكُمۡۖ وَمَا نَرَىٰ مَعَكُمۡ شُفَعَاۤءَكُمُ ٱلَّذِینَ زَعَمۡتُمۡ أَنَّهُمۡ فِیكُمۡ شُرَكَـٰۤؤُاْۚ لَقَد تَّقَطَّعَ بَیۡنَكُمۡ وَضَلَّ عَنكُم مَّا كُنتُمۡ تَزۡعُمُونَ ﴿٩٤﴾
আর অবশ্যই তোমারা আমাদের কাছে নিঃসঙ্গ অবস্থায় এসেছ, যেমন আমারা প্রথমবার তোমাদের সৃষ্টি করেছিলাম; আর আমারা তোমাদেরকে যা দিয়েছিলাম তা তোমারা তোমাদের পিছনে ফেলে এসেছ। আর তোমারা যাদেরকে তোমাদের ব্যাপারে (আল্লাহ্র সাথে) শরীক মনে করতে, তোমাদের সে সুপারিশকারিদেরকেও আমারা তোমাদের সাথে দেখছি না। তোমাদের মধ্যকার সম্পর্ক অবশ্যই ছিন্ন হয়েছে এবং যা ধারণা করেছিলে তাও তোমাদের থেকে হারিয়ে গিয়েছে।
۞ إِنَّ ٱللَّهَ فَالِقُ ٱلۡحَبِّ وَٱلنَّوَىٰۖ یُخۡرِجُ ٱلۡحَیَّ مِنَ ٱلۡمَیِّتِ وَمُخۡرِجُ ٱلۡمَیِّتِ مِنَ ٱلۡحَیِّۚ ذَ ٰلِكُمُ ٱللَّهُۖ فَأَنَّىٰ تُؤۡفَكُونَ ﴿٩٥﴾
নিশ্চয় আল্লাহ্ শস্য-বীজ ও আঁটি বিদীর্ণকারী, তিনিই প্রাণহীন থেকে জীবন্তকে বের করেন এবং জীবন্ত থেকে প্রাণহীন বেরকারী [১]। তিনিই তো আল্লাহ্, কাজেই তোমাদেরকে কোথায় ফিরানো হচ্ছে [২]?
فَالِقُ ٱلۡإِصۡبَاحِ وَجَعَلَ ٱلَّیۡلَ سَكَنࣰا وَٱلشَّمۡسَ وَٱلۡقَمَرَ حُسۡبَانࣰاۚ ذَ ٰلِكَ تَقۡدِیرُ ٱلۡعَزِیزِ ٱلۡعَلِیمِ ﴿٩٦﴾
তিনি প্রভাত উদ্ভাসক [১]। আর তিনি রাতকে প্রশান্তি এবং সূর্য ও চাঁদকে সময়ে নিরুপক করেছেন [২]; এটা পরাক্রমশালী, মহাজ্ঞানী আল্লাহ্র নির্ধারণ [৩]।
وَهُوَ ٱلَّذِی جَعَلَ لَكُمُ ٱلنُّجُومَ لِتَهۡتَدُواْ بِهَا فِی ظُلُمَـٰتِ ٱلۡبَرِّ وَٱلۡبَحۡرِۗ قَدۡ فَصَّلۡنَا ٱلۡـَٔایَـٰتِ لِقَوۡمࣲ یَعۡلَمُونَ ﴿٩٧﴾
আর তিনিই তোমাদের জন্য তারকামন্ডল সৃষ্টি করেছেন যেন তা দ্বারা তোমারা স্থলের ও সাগরের অন্ধকারে পথ খুঁজে পাও [১]। অবশ্যই আমরা জ্ঞানী সম্প্রদায়ের জন্য আয়াতসমূহ বিশদভাবে বিবৃত করেছি [২]।
وَهُوَ ٱلَّذِیۤ أَنشَأَكُم مِّن نَّفۡسࣲ وَ ٰحِدَةࣲ فَمُسۡتَقَرࣱّ وَمُسۡتَوۡدَعࣱۗ قَدۡ فَصَّلۡنَا ٱلۡـَٔایَـٰتِ لِقَوۡمࣲ یَفۡقَهُونَ ﴿٩٨﴾
আর তিনিই তোমাদেরকে একই ব্যাক্তি থেকে সৃষ্টি করেছেন, অতঃপর রয়েছে দির্ঘ ও স্বল্পকালীন বাসস্থান [১]। অবশ্যই আমারা অনুধাবনকারী সম্প্রদায়ের জন্য আয়াতসমূহ বিশদভাবে বর্ণনা করেছি।
وَهُوَ ٱلَّذِیۤ أَنزَلَ مِنَ ٱلسَّمَاۤءِ مَاۤءࣰ فَأَخۡرَجۡنَا بِهِۦ نَبَاتَ كُلِّ شَیۡءࣲ فَأَخۡرَجۡنَا مِنۡهُ خَضِرࣰا نُّخۡرِجُ مِنۡهُ حَبࣰّا مُّتَرَاكِبࣰا وَمِنَ ٱلنَّخۡلِ مِن طَلۡعِهَا قِنۡوَانࣱ دَانِیَةࣱ وَجَنَّـٰتࣲ مِّنۡ أَعۡنَابࣲ وَٱلزَّیۡتُونَ وَٱلرُّمَّانَ مُشۡتَبِهࣰا وَغَیۡرَ مُتَشَـٰبِهٍۗ ٱنظُرُوۤاْ إِلَىٰ ثَمَرِهِۦۤ إِذَاۤ أَثۡمَرَ وَیَنۡعِهِۦۤۚ إِنَّ فِی ذَ ٰلِكُمۡ لَـَٔایَـٰتࣲ لِّقَوۡمࣲ یُؤۡمِنُونَ ﴿٩٩﴾
আর তিনিই আসমান থেকে বৃষ্টি বর্ষণ করেন, তারপর তা দ্বারা আমারা সব রকমের উদ্ভিদের চারা উদগম করি; অতঃপর তা থেকে সবুজ পাতা উদ্গত করি। যা থেকে আমরা ঘন সন্নিবিষ্ট শস্যদানা উৎপাদন করি। আরও (নির্গত করি) খেজুর গাছের মাথি থেকে ঝুলন্ত কাঁদি, আংগুরের বাগান, যায়তুন ও আনার। একটার সাথে অন্যটার মিল আছে, আবার নেইও। লক্ষ্য করুন, এ ফলগুলোর দিকে যখন সেগুলো ফলবান হয় এবং সেগুলো পেকে উঠার পদ্ধতির প্রতি। নিশ্চয় মুমিন সম্প্রদায়ের জন্য এগুলোর মধ্যে নিদর্শনাবলী রয়েছে [১]।
وَجَعَلُواْ لِلَّهِ شُرَكَاۤءَ ٱلۡجِنَّ وَخَلَقَهُمۡۖ وَخَرَقُواْ لَهُۥ بَنِینَ وَبَنَـٰتِۭ بِغَیۡرِ عِلۡمࣲۚ سُبۡحَـٰنَهُۥ وَتَعَـٰلَىٰ عَمَّا یَصِفُونَ ﴿١٠٠﴾
আর তারা জিনকে আলাহর সাথে শরীক সাব্যস্ত করে, অথচ তিনিই এদেরকে সৃষ্টি করেছেন। আর তারা অজ্ঞতাবশত আল্লাহ্র প্রতি পুত্র –কন্যা আরোপ করে; তিনি পবিত্র –মহিমান্বিত! এবং তারা যা বলে তিনি তার উর্ধ্বে।
بَدِیعُ ٱلسَّمَـٰوَ ٰتِ وَٱلۡأَرۡضِۖ أَنَّىٰ یَكُونُ لَهُۥ وَلَدࣱ وَلَمۡ تَكُن لَّهُۥ صَـٰحِبَةࣱۖ وَخَلَقَ كُلَّ شَیۡءࣲۖ وَهُوَ بِكُلِّ شَیۡءٍ عَلِیمࣱ ﴿١٠١﴾
তিনি আসমান ও যমীনের স্রষ্টা, তাঁর সন্তান হবে কিভাবে ? তাঁর তো কোনো সঙ্গিনী নেই। আর তিনি সবকিছু সৃষ্টি করেছেন এবং প্রত্যেক বস্তু সম্বদ্ধে তিনি সবিশেষ অবগত।
ذَ ٰلِكُمُ ٱللَّهُ رَبُّكُمۡۖ لَاۤ إِلَـٰهَ إِلَّا هُوَۖ خَـٰلِقُ كُلِّ شَیۡءࣲ فَٱعۡبُدُوهُۚ وَهُوَ عَلَىٰ كُلِّ شَیۡءࣲ وَكِیلࣱ ﴿١٠٢﴾
তিনিই তো আল্লাহ্ , তোমাদের রব; তিনি ছাড়া কোনো সত্য ইলাহ নেই। তিনিই সবকিছুর স্রষ্টা; কাজেই তোমারা তাঁর ‘ইবাদত কর; তিনি সবকিছুর তত্ত্বাবধায়ক।
لَّا تُدۡرِكُهُ ٱلۡأَبۡصَـٰرُ وَهُوَ یُدۡرِكُ ٱلۡأَبۡصَـٰرَۖ وَهُوَ ٱللَّطِیفُ ٱلۡخَبِیرُ ﴿١٠٣﴾
দৃষ্টিসমূহ তাঁকে আয়ত্ব করতে পারে না [১], অথচ তিনি সকল দৃষ্টিকে আয়ত্ব করেন [২] এবং তিনি সূক্ষদর্শী , সম্যক অবহিত [৩]।
قَدۡ جَاۤءَكُم بَصَاۤىِٕرُ مِن رَّبِّكُمۡۖ فَمَنۡ أَبۡصَرَ فَلِنَفۡسِهِۦۖ وَمَنۡ عَمِیَ فَعَلَیۡهَاۚ وَمَاۤ أَنَا۠ عَلَیۡكُم بِحَفِیظࣲ ﴿١٠٤﴾
অবশ্যই তোমাদের রব–এর কাছ থেকে তোমাদের কাছে চাক্ষুষ প্রমাণাদি এসেছে। অতঃপর কেউ চক্ষুষ্মান হলে সেটা দ্বারা সে নিজেই লাভবান হবে, আর কেউ অন্ধ সাজলে তাতে সে নিজেই ক্ষতিগ্রস্ত হবে [১]। আর আমি তোমাদের উপর সংরক্ষক নই [২]।
وَكَذَ ٰلِكَ نُصَرِّفُ ٱلۡـَٔایَـٰتِ وَلِیَقُولُواْ دَرَسۡتَ وَلِنُبَیِّنَهُۥ لِقَوۡمࣲ یَعۡلَمُونَ ﴿١٠٥﴾
আর এভাবেই আমরা নানাভাবে আয়াতসমূহ বিবৃত করি [১] এবং যাতে তারা বলে, ‘আপনি পড়ে নিয়েছেন [২]’, আর যাতে আমরা এটাকে [৩] সুস্পষ্টভাবে জ্ঞানী সম্প্রদায়ের জন্য বর্ণনা করি [৪]।
ٱتَّبِعۡ مَاۤ أُوحِیَ إِلَیۡكَ مِن رَّبِّكَۖ لَاۤ إِلَـٰهَ إِلَّا هُوَۖ وَأَعۡرِضۡ عَنِ ٱلۡمُشۡرِكِینَ ﴿١٠٦﴾
আপনার রবের কাছ থেকে আপনার প্রতি যা ওহী হয়েছে আপনি তারই অনুসরণ করুন, তিনি ছাড়া অন্য কোনো সত্য ইলাহ নেই এবং মুশরিকদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিন।
وَلَوۡ شَاۤءَ ٱللَّهُ مَاۤ أَشۡرَكُواْۗ وَمَا جَعَلۡنَـٰكَ عَلَیۡهِمۡ حَفِیظࣰاۖ وَمَاۤ أَنتَ عَلَیۡهِم بِوَكِیلࣲ ﴿١٠٧﴾
আর আল্লাহ্ যদি ইচ্ছে করতেন তবে তারা শির্ক করত না। আর আমরা আপনাকে তাদের হিফাযত বানাইনি এবং তাদের তত্ত্বাবধায়কও নন।
وَلَا تَسُبُّواْ ٱلَّذِینَ یَدۡعُونَ مِن دُونِ ٱللَّهِ فَیَسُبُّواْ ٱللَّهَ عَدۡوَۢا بِغَیۡرِ عِلۡمࣲۗ كَذَ ٰلِكَ زَیَّنَّا لِكُلِّ أُمَّةٍ عَمَلَهُمۡ ثُمَّ إِلَىٰ رَبِّهِم مَّرۡجِعُهُمۡ فَیُنَبِّئُهُم بِمَا كَانُواْ یَعۡمَلُونَ ﴿١٠٨﴾
আর আল্লাহ্কে ছেড়ে যাদেরকে তারা ডাকে তাদেরকে তোমার গালি দিও না। কেননা তারা সীমালংঘন করে অজ্ঞানতাবশতঃ আল্লাহকেও গালি দেবে; এভাবে আমরা প্রত্যেক জাতির দৃষ্টিতে তাদের কার্যকলাপ শোভিত করেছি; তারপর তাদের রবের কাছেই তাদের প্রত্যাবর্তন। এরপর তিনি তাদেরকে তাদের করা কাজগুলো সম্বন্ধে জানিয়ে দেবেন [১]।
وَأَقۡسَمُواْ بِٱللَّهِ جَهۡدَ أَیۡمَـٰنِهِمۡ لَىِٕن جَاۤءَتۡهُمۡ ءَایَةࣱ لَّیُؤۡمِنُنَّ بِهَاۚ قُلۡ إِنَّمَا ٱلۡـَٔایَـٰتُ عِندَ ٱللَّهِۖ وَمَا یُشۡعِرُكُمۡ أَنَّهَاۤ إِذَا جَاۤءَتۡ لَا یُؤۡمِنُونَ ﴿١٠٩﴾
আর তারা আল্লাহ্র নামে কঠিন শপথ করে বলে, তাদের কাছে যদি কোনো নিদর্শন আসত তবে অবশ্যই তারা এতে ঈমান আনত [১]। বলুন, ‘নিদর্শন তো আল্লাহ্র কাছেই’। আর কিভাবে তোমাদের উপলব্ধিতে আসবে যে, যখন তা (নিদর্শন) এসে যাবে, তখন তারা ঈমান আনবে না [২]?
وَنُقَلِّبُ أَفۡـِٔدَتَهُمۡ وَأَبۡصَـٰرَهُمۡ كَمَا لَمۡ یُؤۡمِنُواْ بِهِۦۤ أَوَّلَ مَرَّةࣲ وَنَذَرُهُمۡ فِی طُغۡیَـٰنِهِمۡ یَعۡمَهُونَ ﴿١١٠﴾
আর তারা যেমন প্রথমবারে তাতে ঈমান আনেনি, তেমনি আমরাও তাদের অন্তরসমূহ ও দৃষ্টিসমূহ পাল্টে দেব এবং আমরা তদেরকে তাদের অবাধ্যতায় উদভ্রান্তের মত ঘুরপাক খাওয়া অবস্থায় ছেড়ে দেব [১]।
۞ وَلَوۡ أَنَّنَا نَزَّلۡنَاۤ إِلَیۡهِمُ ٱلۡمَلَـٰۤىِٕكَةَ وَكَلَّمَهُمُ ٱلۡمَوۡتَىٰ وَحَشَرۡنَا عَلَیۡهِمۡ كُلَّ شَیۡءࣲ قُبُلࣰا مَّا كَانُواْ لِیُؤۡمِنُوۤاْ إِلَّاۤ أَن یَشَاۤءَ ٱللَّهُ وَلَـٰكِنَّ أَكۡثَرَهُمۡ یَجۡهَلُونَ ﴿١١١﴾
আর আমরা তাদের কাছে ফিরিশতা পাঠালেও এবং মৃতেরা তাদের সাথে কথা বললেও এবং সকল বস্তুকে তাদের সামনে সমবেত করলেও আল্লাহ্র ইচ্ছে না হলে তারা কখনো ঈমান আনবে না; কিন্তু তাদের অধিকাংশই মূর্খ [১]।
وَكَذَ ٰلِكَ جَعَلۡنَا لِكُلِّ نَبِیٍّ عَدُوࣰّا شَیَـٰطِینَ ٱلۡإِنسِ وَٱلۡجِنِّ یُوحِی بَعۡضُهُمۡ إِلَىٰ بَعۡضࣲ زُخۡرُفَ ٱلۡقَوۡلِ غُرُورࣰاۚ وَلَوۡ شَاۤءَ رَبُّكَ مَا فَعَلُوهُۖ فَذَرۡهُمۡ وَمَا یَفۡتَرُونَ ﴿١١٢﴾
আর এভাবেই আমরা মানব ও জিনের মধ্য থেকে শয়তানদেরকে প্রত্যেক নবীর শত্রু করেছি [১], প্রতারণার উদ্দেশ্যে তারা একে অপরকে চমকপ্রদ বাক্যের কুমন্ত্রণা দেয়। যদি আপনার রব ইচ্ছে করতেন তবে তারা এসব করত না; কাজেই আপনি তাদেরকে ও তাদের মিথ্যা রটনাকে পরিত্যাগ করুন।
وَلِتَصۡغَىٰۤ إِلَیۡهِ أَفۡـِٔدَةُ ٱلَّذِینَ لَا یُؤۡمِنُونَ بِٱلۡـَٔاخِرَةِ وَلِیَرۡضَوۡهُ وَلِیَقۡتَرِفُواْ مَا هُم مُّقۡتَرِفُونَ ﴿١١٣﴾
আর তারা এ উদ্দেশ্যে কুমন্ত্রণা দেয় যে, যারা আখেরাতে ঈমান রাখে না তাদের মন যেন সে চমকপ্রদ কথার প্রতি অনুরাগী হয় এবং তাতে যেন তারা পরিতুষ্ট হয়। আর তারা যে অপকর্ম করে তাই যেন তারা করতে থাকে [১]।
أَفَغَیۡرَ ٱللَّهِ أَبۡتَغِی حَكَمࣰا وَهُوَ ٱلَّذِیۤ أَنزَلَ إِلَیۡكُمُ ٱلۡكِتَـٰبَ مُفَصَّلࣰاۚ وَٱلَّذِینَ ءَاتَیۡنَـٰهُمُ ٱلۡكِتَـٰبَ یَعۡلَمُونَ أَنَّهُۥ مُنَزَّلࣱ مِّن رَّبِّكَ بِٱلۡحَقِّۖ فَلَا تَكُونَنَّ مِنَ ٱلۡمُمۡتَرِینَ ﴿١١٤﴾
(বলুন) ‘তবে কি আমি আল্লাহ্ ছাড়া আর কাউকে ফয়সালাকারী হিসেবে তালাশ করব? অথচ তিনিই তোমাদের প্রতি বিস্তারিত কিতাব নাযিল করেছেন!’ আর আমরা যাদেরকে কিতাব দিয়েছি তারা জানে যে, নিশ্চয় এটা আপনার রবের কাছ থেকে যথাযথভাবে নাযিলকৃত [১]। কাজেই আপনি সন্দিহানদের অন্তর্ভুক্ত হবেন না [২]।
وَتَمَّتۡ كَلِمَتُ رَبِّكَ صِدۡقࣰا وَعَدۡلࣰاۚ لَّا مُبَدِّلَ لِكَلِمَـٰتِهِۦۚ وَهُوَ ٱلسَّمِیعُ ٱلۡعَلِیمُ ﴿١١٥﴾
আর সত্য ও ন্যায়ের দিক দিয়ে আপনার রবের বাণী পরিপূর্ণ [১]। তাঁর বাক্যসমূহের পরিবর্তনকারী কেউ নেই [২]। আর তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ [৩]।
وَإِن تُطِعۡ أَكۡثَرَ مَن فِی ٱلۡأَرۡضِ یُضِلُّوكَ عَن سَبِیلِ ٱللَّهِۚ إِن یَتَّبِعُونَ إِلَّا ٱلظَّنَّ وَإِنۡ هُمۡ إِلَّا یَخۡرُصُونَ ﴿١١٦﴾
আর যদি আপনি যমীনের অধিকাংশ লোকের কথামত চলেন, তবে তারা আপনাকে আল্লাহ্র পথ থেকে বিচ্যুত করবে [১]। তারা তো শুধু ধারণার অনুসরণ করে; আর তারা শুধু অনুমান ভিত্তিক কথা বলে।
إِنَّ رَبَّكَ هُوَ أَعۡلَمُ مَن یَضِلُّ عَن سَبِیلِهِۦۖ وَهُوَ أَعۡلَمُ بِٱلۡمُهۡتَدِینَ ﴿١١٧﴾
নিশ্চয় আপনার রব, কে তাঁর পথ ছেড়ে বিপথগামী হয় সে সম্বন্ধে অধিক অবগত। আর সৎপথে যারা আছে, তাদের সম্বন্ধেও তিনি অধিক অবগত।
فَكُلُواْ مِمَّا ذُكِرَ ٱسۡمُ ٱللَّهِ عَلَیۡهِ إِن كُنتُم بِـَٔایَـٰتِهِۦ مُؤۡمِنِینَ ﴿١١٨﴾
সুতরাং তোমরা তাঁর আয়াতসমূহে ঈমানদার হলে, যাতে আল্লাহর নাম নেয়া হয়েছে তা থেকে খাও;
وَمَا لَكُمۡ أَلَّا تَأۡكُلُواْ مِمَّا ذُكِرَ ٱسۡمُ ٱللَّهِ عَلَیۡهِ وَقَدۡ فَصَّلَ لَكُم مَّا حَرَّمَ عَلَیۡكُمۡ إِلَّا مَا ٱضۡطُرِرۡتُمۡ إِلَیۡهِۗ وَإِنَّ كَثِیرࣰا لَّیُضِلُّونَ بِأَهۡوَاۤىِٕهِم بِغَیۡرِ عِلۡمٍۚ إِنَّ رَبَّكَ هُوَ أَعۡلَمُ بِٱلۡمُعۡتَدِینَ ﴿١١٩﴾
আর তোমাদের কি হয়েছে যে, যাতে আল্লাহর নাম নেয়া হয়েছে তোমরা তা থেকে খাবে না? যা তোমাদের জন্য তিনি হারাম করেছেন তা তিনি বিশদভাবেই তোমাদের কাছে বিবৃত করেছেন [১], তবে তোমরা নিরুপায় হলে তা স্বতন্ত্র [২]। আর নিশ্চিয় অনেকে অজ্ঞতাবশত নিজেদের খেয়াল –খুশী দ্বারা অন্যকে বিপদ্গামী করে; নিশ্চয় আপানার রব সীমালঙ্ঘনকারীদের সম্বদ্ধে অধিক জানেন।
وَذَرُواْ ظَـٰهِرَ ٱلۡإِثۡمِ وَبَاطِنَهُۥۤۚ إِنَّ ٱلَّذِینَ یَكۡسِبُونَ ٱلۡإِثۡمَ سَیُجۡزَوۡنَ بِمَا كَانُواْ یَقۡتَرِفُونَ ﴿١٢٠﴾
আর তোমারা প্রকাশ্য এবং প্রচ্ছন্ন পাপ বর্জন কর; নিশ্চয় যারা পাপ অর্জন করে অচিরেই তাদেরকে তারা যা অর্জন করে তার প্রতিফলন দেয়া হবে।
وَلَا تَأۡكُلُواْ مِمَّا لَمۡ یُذۡكَرِ ٱسۡمُ ٱللَّهِ عَلَیۡهِ وَإِنَّهُۥ لَفِسۡقࣱۗ وَإِنَّ ٱلشَّیَـٰطِینَ لَیُوحُونَ إِلَىٰۤ أَوۡلِیَاۤىِٕهِمۡ لِیُجَـٰدِلُوكُمۡۖ وَإِنۡ أَطَعۡتُمُوهُمۡ إِنَّكُمۡ لَمُشۡرِكُونَ ﴿١٢١﴾
আর যাতে আল্লাহ্র নাম নেয়া হয়নি তার কিছুই তোমারা খেও না; এবং নিশ্চয় তা গর্হিত [১] নিশ্চয়ই শয়তানরা তাদের বন্ধুদেরকে তোমাদের সাথে বিবাদ করতে প্ররোচনা দেয়; আর যদি তোমারা তাদের অনুগত্য কর, তবে তোমারা অবশ্যই মুশরিক [২]।
أَوَمَن كَانَ مَیۡتࣰا فَأَحۡیَیۡنَـٰهُ وَجَعَلۡنَا لَهُۥ نُورࣰا یَمۡشِی بِهِۦ فِی ٱلنَّاسِ كَمَن مَّثَلُهُۥ فِی ٱلظُّلُمَـٰتِ لَیۡسَ بِخَارِجࣲ مِّنۡهَاۚ كَذَ ٰلِكَ زُیِّنَ لِلۡكَـٰفِرِینَ مَا كَانُواْ یَعۡمَلُونَ ﴿١٢٢﴾
যে ব্যাক্তি মৃত ছিল, যাকে আমরা পরে জীবিত করেছি এবং যাকে মানুষের মধ্যে চলার জন্য আলোক দিয়েছি, সে ব্যাক্তি কি ঐ ব্যাক্তির ন্যার যে অন্ধকারে রয়েছে এবং সেখান থেকে আর বের হবার নয়? এভাবেই কাফেরদের জন্য তাদের কাজগুলোকে শোভন করে দেয়া হয়েছে।
وَكَذَ ٰلِكَ جَعَلۡنَا فِی كُلِّ قَرۡیَةٍ أَكَـٰبِرَ مُجۡرِمِیهَا لِیَمۡكُرُواْ فِیهَاۖ وَمَا یَمۡكُرُونَ إِلَّا بِأَنفُسِهِمۡ وَمَا یَشۡعُرُونَ ﴿١٢٣﴾
আর এভাবেই আমারা প্রত্যেকে জনপদে সেখানকার অপরাধীদের প্রধানকে সেখানে চক্রান্ত করতে দিয়েছি; কিন্তু তারা শুধু তাদের নিজেদের বিরুদ্ধে চক্রান্ত করে, অথচ তারা উপলব্ধি করে না।
وَإِذَا جَاۤءَتۡهُمۡ ءَایَةࣱ قَالُواْ لَن نُّؤۡمِنَ حَتَّىٰ نُؤۡتَىٰ مِثۡلَ مَاۤ أُوتِیَ رُسُلُ ٱللَّهِۘ ٱللَّهُ أَعۡلَمُ حَیۡثُ یَجۡعَلُ رِسَالَتَهُۥۗ سَیُصِیبُ ٱلَّذِینَ أَجۡرَمُواْ صَغَارٌ عِندَ ٱللَّهِ وَعَذَابࣱ شَدِیدُۢ بِمَا كَانُواْ یَمۡكُرُونَ ﴿١٢٤﴾
আর যখন তাদের কাছে কোনো নিদর্শন আসে তখন তারা বলে, ‘আল্লাহ্র রাসূলগণকে যা দেয়া হয়েছিল আমাদেরকেও তার অনুরূপ না দেয়া পর্যন্ত আমরা কখনো ঈমান আনবো না।’ আল্লাহ্ তাঁর রিসালাত কোথায় অর্পণ করবেন তা তিনিই ভালো জানেন। যারা অপরাধ করেছে, তাদের চক্রান্তের কারণে আল্লহার কাছে [১] লাঞ্ছনা ও কঠোর শাস্তি অচিরেই তাদের উপর আপতিত হবে [২]।
فَمَن یُرِدِ ٱللَّهُ أَن یَهۡدِیَهُۥ یَشۡرَحۡ صَدۡرَهُۥ لِلۡإِسۡلَـٰمِۖ وَمَن یُرِدۡ أَن یُضِلَّهُۥ یَجۡعَلۡ صَدۡرَهُۥ ضَیِّقًا حَرَجࣰا كَأَنَّمَا یَصَّعَّدُ فِی ٱلسَّمَاۤءِۚ كَذَ ٰلِكَ یَجۡعَلُ ٱللَّهُ ٱلرِّجۡسَ عَلَى ٱلَّذِینَ لَا یُؤۡمِنُونَ ﴿١٢٥﴾
সুতরাং আল্লাহ্ কাউকে সৎপথে পরিচালিত করতে চাইলে তিনি তার বক্ষ ইসলামের জন্য প্রশস্ত করে দেন এবং কাউকে বিপদ্গামী করতে চাইলে তিনি তার বক্ষ খুব সংকীর্ণ করে দেন; (তার কাছে ইসলামের অনুসরণ) মনে হয় সে কষ্ট করে আকাশে উঠেছে [১]। এভাবেই আল্লাহ শাস্তি দেন তাদেরকে,যারা ঈমান আনে না [২]।
وَهَـٰذَا صِرَ ٰطُ رَبِّكَ مُسۡتَقِیمࣰاۗ قَدۡ فَصَّلۡنَا ٱلۡـَٔایَـٰتِ لِقَوۡمࣲ یَذَّكَّرُونَ ﴿١٢٦﴾
আর এটাই আপনার রব নির্দেশিত সরল পথ [১]। যারা উপদেশ গ্রহণ করে আমারা তাদের জন্য নিদর্শনসমূহ বিশদভাবে বিবৃত করেছি [২]
۞ لَهُمۡ دَارُ ٱلسَّلَـٰمِ عِندَ رَبِّهِمۡۖ وَهُوَ وَلِیُّهُم بِمَا كَانُواْ یَعۡمَلُونَ ﴿١٢٧﴾
তাদের রবের কাছে তাদের জন্য রয়েছে শান্তির আলয় [১] এবং তারা যা করত তার জন্য তিনিই তাদের অভিভাবক [২]।
وَیَوۡمَ یَحۡشُرُهُمۡ جَمِیعࣰا یَـٰمَعۡشَرَ ٱلۡجِنِّ قَدِ ٱسۡتَكۡثَرۡتُم مِّنَ ٱلۡإِنسِۖ وَقَالَ أَوۡلِیَاۤؤُهُم مِّنَ ٱلۡإِنسِ رَبَّنَا ٱسۡتَمۡتَعَ بَعۡضُنَا بِبَعۡضࣲ وَبَلَغۡنَاۤ أَجَلَنَا ٱلَّذِیۤ أَجَّلۡتَ لَنَاۚ قَالَ ٱلنَّارُ مَثۡوَىٰكُمۡ خَـٰلِدِینَ فِیهَاۤ إِلَّا مَا شَاۤءَ ٱللَّهُۗ إِنَّ رَبَّكَ حَكِیمٌ عَلِیمࣱ ﴿١٢٨﴾
আর যেদিন তিনি তাদের সবাইকে একত্র করবেন এবং বলবেন, ‘হে জিন সম্প্রদায় ! তোমারা তো অনেক লোককে পথভ্রষ্ট করেছিলে [১]’ এবং মানুষের মধ্য থেকে তাদের বন্ধুরা বলবে, ’হে আমাদের রব! আমাদের মধ্যে কিছু সংখ্যক অপর কিছু সংখ্যক দ্বারা লাভবান হয়েছে এবং আপনি আমাদের জন্য যে সময় নির্ধারণ করেছিলেন এখন আমারা তাতে উপনীত হয়েছি’। আল্লাহ্ বলবেন, ‘আগুনই তোমাদের বাসস্থান, তোমারা সেখানে স্থায়ী হবে’, যদি না আল্লাহ্ অন্য রকম ইচ্ছে করেন। নিশ্চয় আপনার রব প্রজ্ঞাময়, সর্বজ্ঞ [২]।
وَكَذَ ٰلِكَ نُوَلِّی بَعۡضَ ٱلظَّـٰلِمِینَ بَعۡضَۢا بِمَا كَانُواْ یَكۡسِبُونَ ﴿١٢٩﴾
আর এভাবেই আমারা যালিমদের কতককে কতকের বন্ধু বানিয়ে দেই, তারা যা অর্জন করত তার কারণে [১]।
یَـٰمَعۡشَرَ ٱلۡجِنِّ وَٱلۡإِنسِ أَلَمۡ یَأۡتِكُمۡ رُسُلࣱ مِّنكُمۡ یَقُصُّونَ عَلَیۡكُمۡ ءَایَـٰتِی وَیُنذِرُونَكُمۡ لِقَاۤءَ یَوۡمِكُمۡ هَـٰذَاۚ قَالُواْ شَهِدۡنَا عَلَىٰۤ أَنفُسِنَاۖ وَغَرَّتۡهُمُ ٱلۡحَیَوٰةُ ٱلدُّنۡیَا وَشَهِدُواْ عَلَىٰۤ أَنفُسِهِمۡ أَنَّهُمۡ كَانُواْ كَـٰفِرِینَ ﴿١٣٠﴾
'হে জিন ও মানুষের দল! তোমাদের মধ্য থেকে কি রাসূলগণ তোমাদের কাছে আসেনি যারা আমার নিদর্শন তোমাদের কাছে বিবৃত করত এবং তোমাদেরকে এ দিনের সম্মুখীন হওয়া সম্বন্ধে সতর্ক করত ?’ তারা বলবে, ‘আমারা আমাদের নিজেদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিলাম।’ বস্তুত দুনিয়ার জীবন তাদেরকে প্রতারিত করেছিল [১], আর তারা নিজেদের বিরুদ্ধে এই সাক্ষ্য দেবে, যে তারা কাফের ছিল [২]।
ذَ ٰلِكَ أَن لَّمۡ یَكُن رَّبُّكَ مُهۡلِكَ ٱلۡقُرَىٰ بِظُلۡمࣲ وَأَهۡلُهَا غَـٰفِلُونَ ﴿١٣١﴾
এটা এ জন্যে যে, অধিবাসীরা যখন গাফেল থাকে, তখন জনপদসমূহের অন্যায় আচরনের জন্য তাকে ধ্বংস করা আপনার রব-এর কাজ নয় [১]।
وَلِكُلࣲّ دَرَجَـٰتࣱ مِّمَّا عَمِلُواْۚ وَمَا رَبُّكَ بِغَـٰفِلٍ عَمَّا یَعۡمَلُونَ ﴿١٣٢﴾
আর তারা যা আমল করে, সে অনুসারে প্রত্যেকের মর্যাদা রয়েছে এবং তারা যা করে সে সম্বন্ধে আপনার রব গাফেল নন।
وَرَبُّكَ ٱلۡغَنِیُّ ذُو ٱلرَّحۡمَةِۚ إِن یَشَأۡ یُذۡهِبۡكُمۡ وَیَسۡتَخۡلِفۡ مِنۢ بَعۡدِكُم مَّا یَشَاۤءُ كَمَاۤ أَنشَأَكُم مِّن ذُرِّیَّةِ قَوۡمٍ ءَاخَرِینَ ﴿١٣٣﴾
আর আপনার রব অভাবমুক্ত, দয়াশীল [১]। তিনি ইচ্ছে করলে তোমাদেরকে অপসারিত করতে এবং তোমাদের পরে যাকে ইচ্ছে তোমাদের স্থানে আনতে পারেন, যেমন তোমাদেরকে তিনি অন্য এক সম্প্রদায়ের বংশ থেকে সৃষ্টি করেছেন।
إِنَّ مَا تُوعَدُونَ لَـَٔاتࣲۖ وَمَاۤ أَنتُم بِمُعۡجِزِینَ ﴿١٣٤﴾
নিশ্চয় তোমাদের সাথে যা ওয়াদা করা হচ্ছে তা অবশ্যই আসবে এবং তোমরা তা ব্যর্থ করতে পারবে না [১]।
قُلۡ یَـٰقَوۡمِ ٱعۡمَلُواْ عَلَىٰ مَكَانَتِكُمۡ إِنِّی عَامِلࣱۖ فَسَوۡفَ تَعۡلَمُونَ مَن تَكُونُ لَهُۥ عَـٰقِبَةُ ٱلدَّارِۚ إِنَّهُۥ لَا یُفۡلِحُ ٱلظَّـٰلِمُونَ ﴿١٣٥﴾
বলুন, ‘হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা তোমাদের অবস্থানে থেকে কাজ কর, নিশ্চয় আমিও আমার কাজ করছি। তোমারা শীঘ্রই জানতে পারবে, কার পরিণাম মঙ্গলময় [১]। নিশ্চয় যালিমরা সফল হয় না।’
وَجَعَلُواْ لِلَّهِ مِمَّا ذَرَأَ مِنَ ٱلۡحَرۡثِ وَٱلۡأَنۡعَـٰمِ نَصِیبࣰا فَقَالُواْ هَـٰذَا لِلَّهِ بِزَعۡمِهِمۡ وَهَـٰذَا لِشُرَكَاۤىِٕنَاۖ فَمَا كَانَ لِشُرَكَاۤىِٕهِمۡ فَلَا یَصِلُ إِلَى ٱللَّهِۖ وَمَا كَانَ لِلَّهِ فَهُوَ یَصِلُ إِلَىٰ شُرَكَاۤىِٕهِمۡۗ سَاۤءَ مَا یَحۡكُمُونَ ﴿١٣٦﴾
আল্লাহ যে শস্য ও গবাদি পশু সৃষ্টি করেছেন সে সবের মধ্য থেকে তারা আল্লাহর জন্য এক অংশ নির্দিষ্ট করে এবং নিজেদের ধারণা অনুযায়ী বলে, ‘এটা আল্লাহর জন্য এবং এটা আমাদের শরীকদের [১] জন্য’। অতঃপর যা তাদের শরীকদের অংশ তা আল্লাহর কাছে পৌঁছায় না এবং যা আল্লাহর অংশ তা তাদের শরীকদের কাছে পৌছায়, তারা যা ফয়সালা করে তা কতই না নিকৃষ্ট [২] !
وَكَذَ ٰلِكَ زَیَّنَ لِكَثِیرࣲ مِّنَ ٱلۡمُشۡرِكِینَ قَتۡلَ أَوۡلَـٰدِهِمۡ شُرَكَاۤؤُهُمۡ لِیُرۡدُوهُمۡ وَلِیَلۡبِسُواْ عَلَیۡهِمۡ دِینَهُمۡۖ وَلَوۡ شَاۤءَ ٱللَّهُ مَا فَعَلُوهُۖ فَذَرۡهُمۡ وَمَا یَفۡتَرُونَ ﴿١٣٧﴾
আর এভাবে তাদের শরীকরা বহু মুশরিকের দৃষ্টিতে তাদের সন্তানদের হত্যাকে শোভনীয় করেছে, তাদের ধ্বংস সাধনের জন্য এবং তাদের দীন সম্বন্ধে তাদের বিভ্রান্তি সৃষ্টির জন্য; আর আল্লাহ ইচ্ছে করলে তারা এসব করত না। কাজেই তাদেরকে তাদের মিথ্যা রটনা নিয়েই থাকতে দিন।
وَقَالُواْ هَـٰذِهِۦۤ أَنۡعَـٰمࣱ وَحَرۡثٌ حِجۡرࣱ لَّا یَطۡعَمُهَاۤ إِلَّا مَن نَّشَاۤءُ بِزَعۡمِهِمۡ وَأَنۡعَـٰمٌ حُرِّمَتۡ ظُهُورُهَا وَأَنۡعَـٰمࣱ لَّا یَذۡكُرُونَ ٱسۡمَ ٱللَّهِ عَلَیۡهَا ٱفۡتِرَاۤءً عَلَیۡهِۚ سَیَجۡزِیهِم بِمَا كَانُواْ یَفۡتَرُونَ ﴿١٣٨﴾
আর তারা তাদের ধারণা অনুযায়ী বলে, ‘এসব গবাদি পশু ও শস্যক্ষেত্র নিষিদ্ধ; আমরা যাকে ইচ্ছে করি সে ছাড়া কেউ এসব খেতে পারবে না,’ এবং কিছু সংখ্যক গবাদি পশুর পিঠে আরোহণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে এবং কিছু সংখ্যক পশু যবেহ করার সময় তারা আল্লাহর নাম নেয় না। এ সবকিছুই তারা আল্লাহ সম্বন্ধে মিথ্যা রটনার উদ্দেশ্যে বলে; তাদের এ মিথ্যা রটনার প্রতিফল তিনি অচিরেই তাদেরকে দেবেন।
وَقَالُواْ مَا فِی بُطُونِ هَـٰذِهِ ٱلۡأَنۡعَـٰمِ خَالِصَةࣱ لِّذُكُورِنَا وَمُحَرَّمٌ عَلَىٰۤ أَزۡوَ ٰجِنَاۖ وَإِن یَكُن مَّیۡتَةࣰ فَهُمۡ فِیهِ شُرَكَاۤءُۚ سَیَجۡزِیهِمۡ وَصۡفَهُمۡۚ إِنَّهُۥ حَكِیمٌ عَلِیمࣱ ﴿١٣٩﴾
তারা আরো বলে, ‘এসব গবাদি পশুর পেটে যা আছে তা আমাদের পুরুষদের জন্য নির্দিষ্ট এবং এটা আমাদের স্ত্রীদের জন্য অবৈধ, আর সেটা যদি মৃত হয় তবে সবাই এতে অংশীদার।’ ‘তিনি তাদের এরূপ বলার প্রতিফল অচিরেই তাদেরকে দেবেন; নিশ্চয় তিনি প্রজ্ঞাময়, সর্বজ্ঞ [১]।
قَدۡ خَسِرَ ٱلَّذِینَ قَتَلُوۤاْ أَوۡلَـٰدَهُمۡ سَفَهَۢا بِغَیۡرِ عِلۡمࣲ وَحَرَّمُواْ مَا رَزَقَهُمُ ٱللَّهُ ٱفۡتِرَاۤءً عَلَى ٱللَّهِۚ قَدۡ ضَلُّواْ وَمَا كَانُواْ مُهۡتَدِینَ ﴿١٤٠﴾
অবশ্যই তারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে যারা নির্বুদ্ধিতার জন্য ও অজ্ঞতাবশত নিজেদের সন্তানদেরকে হত্যা করেছে এবং আল্লাহ্র উপর মিথ্যা রটনা করে আল্লাহ্ প্রদও জীবিকাকে নিষিদ্ধ গণ্য করেছে। তারা অবশ্যই বিপথগামী হয়েছে এবং তারা হিদায়াতপ্রাপ্ত ছিল না [১]।
۞ وَهُوَ ٱلَّذِیۤ أَنشَأَ جَنَّـٰتࣲ مَّعۡرُوشَـٰتࣲ وَغَیۡرَ مَعۡرُوشَـٰتࣲ وَٱلنَّخۡلَ وَٱلزَّرۡعَ مُخۡتَلِفًا أُكُلُهُۥ وَٱلزَّیۡتُونَ وَٱلرُّمَّانَ مُتَشَـٰبِهࣰا وَغَیۡرَ مُتَشَـٰبِهࣲۚ كُلُواْ مِن ثَمَرِهِۦۤ إِذَاۤ أَثۡمَرَ وَءَاتُواْ حَقَّهُۥ یَوۡمَ حَصَادِهِۦۖ وَلَا تُسۡرِفُوۤاْۚ إِنَّهُۥ لَا یُحِبُّ ٱلۡمُسۡرِفِینَ ﴿١٤١﴾
আর তিনিই সৃষ্টি করেছেন এমন বাগানসমূহ যার কিছু মাচানির্ভর অপর কিছু মাচানির্ভর নয় এবং খেজুর বৃক্ষ ও শস্য, যার স্বাদ বিভিন্ন রকম, আর যায়তুন ও আনার, এগুলো একটি অন্যটির মত, আবার বিভিন্ন রূপেরও। যখন ওগুলো ফলবান হবে তখন সেগুলোর ফল খাবে এবং ফসল তোলার দিন সে সবের হক প্রদান করবে [১]। আর অপচয় করবে না; নিশ্চয় তিনি অপচয়কারীদেরকে পছন্দ করেন না।
وَمِنَ ٱلۡأَنۡعَـٰمِ حَمُولَةࣰ وَفَرۡشࣰاۚ كُلُواْ مِمَّا رَزَقَكُمُ ٱللَّهُ وَلَا تَتَّبِعُواْ خُطُوَ ٰتِ ٱلشَّیۡطَـٰنِۚ إِنَّهُۥ لَكُمۡ عَدُوࣱّ مُّبِینࣱ ﴿١٤٢﴾
আর গবাদি পশুর মধ্যে কিছু সংখ্যক ভারবাহী ও কিছু সংখ্যক ক্ষুদ্রাকার পশু সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহ যা রিযিকরূপে তোমাদেরকে দিয়েছেন তা থেকে খাও এবং শয়তানের পদাংক অনুসরণ করো না; সে তো তোমাদের প্রকাশ্য শক্র;
ثَمَـٰنِیَةَ أَزۡوَ ٰجࣲۖ مِّنَ ٱلضَّأۡنِ ٱثۡنَیۡنِ وَمِنَ ٱلۡمَعۡزِ ٱثۡنَیۡنِۗ قُلۡ ءَاۤلذَّكَرَیۡنِ حَرَّمَ أَمِ ٱلۡأُنثَیَیۡنِ أَمَّا ٱشۡتَمَلَتۡ عَلَیۡهِ أَرۡحَامُ ٱلۡأُنثَیَیۡنِۖ نَبِّـُٔونِی بِعِلۡمٍ إِن كُنتُمۡ صَـٰدِقِینَ ﴿١٤٣﴾
নর ও মাদী আটটি জোড়া [১], মেষের দুটি ও ছাগলের দুটি; বলুন, ‘নর দুটিই কি তিনি নিষিদ্ধ করেছেন কিংবা মাদী দুটিই অথবা মাদী দুটির গর্ভে যা আছে তা ? তোমারা সত্যবাদী হলে প্রমাণসহ আমাকে অবহিত কর' [২];
وَمِنَ ٱلۡإِبِلِ ٱثۡنَیۡنِ وَمِنَ ٱلۡبَقَرِ ٱثۡنَیۡنِۗ قُلۡ ءَاۤلذَّكَرَیۡنِ حَرَّمَ أَمِ ٱلۡأُنثَیَیۡنِ أَمَّا ٱشۡتَمَلَتۡ عَلَیۡهِ أَرۡحَامُ ٱلۡأُنثَیَیۡنِۖ أَمۡ كُنتُمۡ شُهَدَاۤءَ إِذۡ وَصَّىٰكُمُ ٱللَّهُ بِهَـٰذَاۚ فَمَنۡ أَظۡلَمُ مِمَّنِ ٱفۡتَرَىٰ عَلَى ٱللَّهِ كَذِبࣰا لِّیُضِلَّ ٱلنَّاسَ بِغَیۡرِ عِلۡمٍۚ إِنَّ ٱللَّهَ لَا یَهۡدِی ٱلۡقَوۡمَ ٱلظَّـٰلِمِینَ ﴿١٤٤﴾
এবং উটের দুটি ও গরুর দুটি। বলুন, ‘নর দুটিই কি তিনি নিষিদ্ধ করেছেন কিংবা মাদী দুটিই অথবা মাদী দুটির গর্ভে যা আছে তা? নাকি আল্লাহ যখন তোমাদেরকে এসব নির্দেশ দান করেন তখন তোমরা উপস্থিত ছিলে?’ কাজেই যে ব্যক্তি না জেনে মানুষকে বিভ্রান্ত করার জন্য আল্লাহ্ সম্বন্ধে মিথ্যা রটনা করে তার চেয়ে বড় যালিম আর কে? নিশ্চয় আল্লাহ যালিম সপ্রদায়কে হিদায়াত করেন না।
قُل لَّاۤ أَجِدُ فِی مَاۤ أُوحِیَ إِلَیَّ مُحَرَّمًا عَلَىٰ طَاعِمࣲ یَطۡعَمُهُۥۤ إِلَّاۤ أَن یَكُونَ مَیۡتَةً أَوۡ دَمࣰا مَّسۡفُوحًا أَوۡ لَحۡمَ خِنزِیرࣲ فَإِنَّهُۥ رِجۡسٌ أَوۡ فِسۡقًا أُهِلَّ لِغَیۡرِ ٱللَّهِ بِهِۦۚ فَمَنِ ٱضۡطُرَّ غَیۡرَ بَاغࣲ وَلَا عَادࣲ فَإِنَّ رَبَّكَ غَفُورࣱ رَّحِیمࣱ ﴿١٤٥﴾
বলুন, ‘আমার প্রতি যে ওহী হয়েছে তাতে, লোকে যা খায় তার মধ্যে আমি কিছুই হারাম পাই না, মৃত, বহমান রক্ত ও শুকরের মাংস ছাড়া [১]। কেননা এগুলো অবশ্যই অপবিত্র অথবা যা অবৈধ, আল্লাহ ছাড়া অন্যের জন্য উৎসর্গের কারণে।’ তবে যে কেউ অবাধ্য না হয়ে এবং সীমালংঘন না করে নিরুপায় হয়ে তা গ্রহণে বাধ্য হয়েছে, তবে নিশ্চয় আপনার রব ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।
وَعَلَى ٱلَّذِینَ هَادُواْ حَرَّمۡنَا كُلَّ ذِی ظُفُرࣲۖ وَمِنَ ٱلۡبَقَرِ وَٱلۡغَنَمِ حَرَّمۡنَا عَلَیۡهِمۡ شُحُومَهُمَاۤ إِلَّا مَا حَمَلَتۡ ظُهُورُهُمَاۤ أَوِ ٱلۡحَوَایَاۤ أَوۡ مَا ٱخۡتَلَطَ بِعَظۡمࣲۚ ذَ ٰلِكَ جَزَیۡنَـٰهُم بِبَغۡیِهِمۡۖ وَإِنَّا لَصَـٰدِقُونَ ﴿١٤٦﴾
আর আমরা ইয়াহূদীদের জন্য নখরযুক্ত সমস্ত পশু হারাম করেছিলাম এবং গরু ও ছাগলের চর্বিও তাদের জন্য হারাম করেছিলাম, তবে এগুলোর পিঠের অথবা অন্ত্রের কিংবা অস্থিসংলগ্ন চর্বি ছাড়া, তাদের অবাধ্যতার জন্য তাদেরকে এ প্রতিফল দিয়েছিলাম। আর নিশ্চয় আমরা সত্যবাদী।
فَإِن كَذَّبُوكَ فَقُل رَّبُّكُمۡ ذُو رَحۡمَةࣲ وَ ٰسِعَةࣲ وَلَا یُرَدُّ بَأۡسُهُۥ عَنِ ٱلۡقَوۡمِ ٱلۡمُجۡرِمِینَ ﴿١٤٧﴾
অতঃপর যদি তারা আপনার উপর মিথ্যারোপ করে, তবে বলুন, ‘তোমাদের রব সর্বব্যাপী দয়ার মালিক এবং অপরাধী সম্প্রদায়ের উপর থেকে তাঁর শাস্তি রদ করা হয় না।‘
سَیَقُولُ ٱلَّذِینَ أَشۡرَكُواْ لَوۡ شَاۤءَ ٱللَّهُ مَاۤ أَشۡرَكۡنَا وَلَاۤ ءَابَاۤؤُنَا وَلَا حَرَّمۡنَا مِن شَیۡءࣲۚ كَذَ ٰلِكَ كَذَّبَ ٱلَّذِینَ مِن قَبۡلِهِمۡ حَتَّىٰ ذَاقُواْ بَأۡسَنَاۗ قُلۡ هَلۡ عِندَكُم مِّنۡ عِلۡمࣲ فَتُخۡرِجُوهُ لَنَاۤۖ إِن تَتَّبِعُونَ إِلَّا ٱلظَّنَّ وَإِنۡ أَنتُمۡ إِلَّا تَخۡرُصُونَ ﴿١٤٨﴾
যারা শির্ক করেছে অচিরেই তারা বলবে , ‘আল্লাহ্ যদি ইচ্ছে করতেন তবে আমরা ও আমাদের পূর্বপুরুষগণ শির্ক করতাম না এবং কোনো কিছুই হারাম করতাম না।’ এভাবে তাদের পূর্ববর্তীগণও মিথ্যারোপ করেছিল, অবশেষে তারা আমাদের শাস্তি ভোগ করেছিল। বলুন, ‘তোমাদের কাছে কি কোন জ্ঞান আছে, যা তোমরা আমাদের জন্য প্রকাশ করবে? তোমরা শুধু কল্পনারই অনুসরণ কর এবং শুধু মনগড়া কথা বল [১]।’
قُلۡ فَلِلَّهِ ٱلۡحُجَّةُ ٱلۡبَـٰلِغَةُۖ فَلَوۡ شَاۤءَ لَهَدَىٰكُمۡ أَجۡمَعِینَ ﴿١٤٩﴾
বলুন, ‘ চূড়ান্ত প্রমাণ তো আল্লাহরই [১]; সুতরাং তিনি যদি ইচ্ছে করতেন, তবে তোমাদের সবাইকে অবশ্যই হিদায়াত দিতেন।’
قُلۡ هَلُمَّ شُهَدَاۤءَكُمُ ٱلَّذِینَ یَشۡهَدُونَ أَنَّ ٱللَّهَ حَرَّمَ هَـٰذَاۖ فَإِن شَهِدُواْ فَلَا تَشۡهَدۡ مَعَهُمۡۚ وَلَا تَتَّبِعۡ أَهۡوَاۤءَ ٱلَّذِینَ كَذَّبُواْ بِـَٔایَـٰتِنَا وَٱلَّذِینَ لَا یُؤۡمِنُونَ بِٱلۡـَٔاخِرَةِ وَهُم بِرَبِّهِمۡ یَعۡدِلُونَ ﴿١٥٠﴾
বলুন, ‘ আল্লাহ্ যে এটা নিষিদ্ধ করেছেন এ সম্বদ্ধে যারা সাক্ষ্য দেবে তাদেরকে হাযির কর।’ তারা সাক্ষ্য দিলেও আপনি তাদের সাথে সাক্ষ্য দিবেন না। আর আপনি তাদের খেয়াল-খুশীর অনুসরণ করবেন না, যারা আমাদের আয়াতসমূহে মিথ্যারোপ করে এবং যারা আখেরাতে ঈমান রাখে না। আর তারাই তাদের রবের সমকক্ষ দাঁড় করায়।
۞ قُلۡ تَعَالَوۡاْ أَتۡلُ مَا حَرَّمَ رَبُّكُمۡ عَلَیۡكُمۡۖ أَلَّا تُشۡرِكُواْ بِهِۦ شَیۡـࣰٔاۖ وَبِٱلۡوَ ٰلِدَیۡنِ إِحۡسَـٰنࣰاۖ وَلَا تَقۡتُلُوۤاْ أَوۡلَـٰدَكُم مِّنۡ إِمۡلَـٰقࣲ نَّحۡنُ نَرۡزُقُكُمۡ وَإِیَّاهُمۡۖ وَلَا تَقۡرَبُواْ ٱلۡفَوَ ٰحِشَ مَا ظَهَرَ مِنۡهَا وَمَا بَطَنَۖ وَلَا تَقۡتُلُواْ ٱلنَّفۡسَ ٱلَّتِی حَرَّمَ ٱللَّهُ إِلَّا بِٱلۡحَقِّۚ ذَ ٰلِكُمۡ وَصَّىٰكُم بِهِۦ لَعَلَّكُمۡ تَعۡقِلُونَ ﴿١٥١﴾
বলুন [১], ‘এস [২], তোমাদের রব তোমাদের উপর যা হারাম করেছেন তোমাদেরকে তা তিলাওয়াত করি, তা হচ্ছে , ‘তোমারা তাঁর সাথে কোনো শরীক করবে না [৩], পিতামাতার প্রতি সদ্ব্যবহার করবে [৪], দারিদ্রের ভয়ে তোমার তোমাদের সন্তানদের হত্যা করবে না, আমরাই তোমাদেরকে ও তাদেরকে রিযক দিয়ে থাকি [৫]। প্রকাশ্যে হোক কিংবা গোপনে হোক, অশ্লীল কাজের ধারে-কাছেও যাবে না [৬]। আল্লাহ্ যার হত্যা নিষিদ্ধ করেছেন যথার্থ কারণ ছাড়া তোমরা তাকে হত্যা করবে না [৭]।’ তোমাদেরকে তিনি এ নির্দেশ দিলেন যেন তোমরা বুঝতে পার।
وَلَا تَقۡرَبُواْ مَالَ ٱلۡیَتِیمِ إِلَّا بِٱلَّتِی هِیَ أَحۡسَنُ حَتَّىٰ یَبۡلُغَ أَشُدَّهُۥۚ وَأَوۡفُواْ ٱلۡكَیۡلَ وَٱلۡمِیزَانَ بِٱلۡقِسۡطِۖ لَا نُكَلِّفُ نَفۡسًا إِلَّا وُسۡعَهَاۖ وَإِذَا قُلۡتُمۡ فَٱعۡدِلُواْ وَلَوۡ كَانَ ذَا قُرۡبَىٰۖ وَبِعَهۡدِ ٱللَّهِ أَوۡفُواْۚ ذَ ٰلِكُمۡ وَصَّىٰكُم بِهِۦ لَعَلَّكُمۡ تَذَكَّرُونَ ﴿١٥٢﴾
আর ইয়াতীম বয়ঃপ্রাপ্ত না হওয়া পর্যন্ত উত্তম ব্যবস্থা ছাড়া তোমারা তার সম্পত্তির ধারে-কাছেও যাবে না [১] এবং পরিমাপ ও ওজন ন্যায্যভাবে পুরোপুরি দেবে [২]। আমরা কাউকেও তার সাধ্যের চেয়ে বেশী ভার অর্পণ করি না। আর যখন তোমরা কথা বলবে তখন ন্যায্য বলবে, স্বজনের সম্পর্কে হলেও [৩] এবং আল্লাহকে দেয়া অঙ্গীকার পূর্ণ করবে [৪]। এভাবে আল্লাহ্ তোমাদেরকে নির্দেশ দিলেন যেন তোমরা উপদেশ গ্রহণ কর।
وَأَنَّ هَـٰذَا صِرَ ٰطِی مُسۡتَقِیمࣰا فَٱتَّبِعُوهُۖ وَلَا تَتَّبِعُواْ ٱلسُّبُلَ فَتَفَرَّقَ بِكُمۡ عَن سَبِیلِهِۦۚ ذَ ٰلِكُمۡ وَصَّىٰكُم بِهِۦ لَعَلَّكُمۡ تَتَّقُونَ ﴿١٥٣﴾
আর এ পথই আমার সরল পথ। কাজেই তোমরা এর অনুসরণ কর [১] এবং বিভিন্ন পথ অনুসরণ করবে না [২], করলে তা তোমাদেরকে তাঁর পথ থেকে বিচ্ছিন্ন করবে। এভাবে আল্লাহ্ তোমাদেরকে নির্দেশ দিলেন যেন তোমারা তাকওয়ার অধিকারী হও।
ثُمَّ ءَاتَیۡنَا مُوسَى ٱلۡكِتَـٰبَ تَمَامًا عَلَى ٱلَّذِیۤ أَحۡسَنَ وَتَفۡصِیلࣰا لِّكُلِّ شَیۡءࣲ وَهُدࣰى وَرَحۡمَةࣰ لَّعَلَّهُم بِلِقَاۤءِ رَبِّهِمۡ یُؤۡمِنُونَ ﴿١٥٤﴾
তারপর আমরা মূসাকে দিয়েছিলাম কিতাব, যে ইহসান করে তার জন্য পরিপূর্ণতা, সবকিছুর বিশদ বিবরণ, হিদায়াত এবং রহমতস্বরূপ, যাতে তারা তাদের রবের সাক্ষাত সম্বন্ধে ঈমান রাখে।
وَهَـٰذَا كِتَـٰبٌ أَنزَلۡنَـٰهُ مُبَارَكࣱ فَٱتَّبِعُوهُ وَٱتَّقُواْ لَعَلَّكُمۡ تُرۡحَمُونَ ﴿١٥٥﴾
আর এ কিতাব, যা আমরা নাযিল করেছি – বরকতময়। কাজেই তোমারা তার অনুসরণ কর এবং তাকওয়া অবলম্বন কর, যাতে তোমরা রহমতপ্রাপ্ত হও।
أَن تَقُولُوۤاْ إِنَّمَاۤ أُنزِلَ ٱلۡكِتَـٰبُ عَلَىٰ طَاۤىِٕفَتَیۡنِ مِن قَبۡلِنَا وَإِن كُنَّا عَن دِرَاسَتِهِمۡ لَغَـٰفِلِینَ ﴿١٥٦﴾
যেন তোমরা না বল যে, ‘কিতাব তো শুধু আমাদের পূর্বে দু সম্প্রদায়ের প্রতিই নাযিল হয়েছিল; আমারা তাদের পঠন –পাঠন সম্বদ্ধে তো গাফিল ছিলাম,’
أَوۡ تَقُولُواْ لَوۡ أَنَّاۤ أُنزِلَ عَلَیۡنَا ٱلۡكِتَـٰبُ لَكُنَّاۤ أَهۡدَىٰ مِنۡهُمۡۚ فَقَدۡ جَاۤءَكُم بَیِّنَةࣱ مِّن رَّبِّكُمۡ وَهُدࣰى وَرَحۡمَةࣱۚ فَمَنۡ أَظۡلَمُ مِمَّن كَذَّبَ بِـَٔایَـٰتِ ٱللَّهِ وَصَدَفَ عَنۡهَاۗ سَنَجۡزِی ٱلَّذِینَ یَصۡدِفُونَ عَنۡ ءَایَـٰتِنَا سُوۤءَ ٱلۡعَذَابِ بِمَا كَانُواْ یَصۡدِفُونَ ﴿١٥٧﴾
কিংবা যেন তোমরা না বল যে, ‘যদি আমাদের প্রতি কিতাব নাযিল হত, তবে আমরা তো তাদের চেয়ে বেশী হিদায়াত প্রাপ্ত হতাম [১]।’ সুতরাং অবশ্যই তোমাদের কাছে তোমাদের রবের পক্ষ থেকে স্পষ্ট প্রমাণ, হিদায়াত ও রহমত এসেছে। অতঃপর যে আল্লাহর আয়াতসমূহে মিথ্যারোপ করবে এবং তা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে, তার চেয়ে বড় যালিম আর কে? যারা আমাদের আয়াতসমূহ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়, সত্যবিমুখিতার জন্য অচিরেই আমরা তাদেরকে নিকৃষ্ট শাস্তি দেব।
هَلۡ یَنظُرُونَ إِلَّاۤ أَن تَأۡتِیَهُمُ ٱلۡمَلَـٰۤىِٕكَةُ أَوۡ یَأۡتِیَ رَبُّكَ أَوۡ یَأۡتِیَ بَعۡضُ ءَایَـٰتِ رَبِّكَۗ یَوۡمَ یَأۡتِی بَعۡضُ ءَایَـٰتِ رَبِّكَ لَا یَنفَعُ نَفۡسًا إِیمَـٰنُهَا لَمۡ تَكُنۡ ءَامَنَتۡ مِن قَبۡلُ أَوۡ كَسَبَتۡ فِیۤ إِیمَـٰنِهَا خَیۡرࣰاۗ قُلِ ٱنتَظِرُوۤاْ إِنَّا مُنتَظِرُونَ ﴿١٥٨﴾
তারা শুধু এরই তো প্রতীক্ষা করে যে, তাদের কাছে ফিরিশতা আসবে, কিংবা আপনার রব আসবেন, কিংবা আপনার রবের কোনো নিদর্শন আসবে [১]? যেদিন আপনার রবের কোন নিদর্শন আসবে সেদিন তার ঈমান কোনো কাজে আসবে না, যে পূর্বে ঈমান আনেনি [২] অথবা যে ব্যাক্তি ঈমানের মাধ্যমে কল্যাণ লাভ করেনি [৩]। বলুন, ‘তোমরা প্রতীক্ষা কর , আমরাও প্রতীক্ষায় রইলাম।’
إِنَّ ٱلَّذِینَ فَرَّقُواْ دِینَهُمۡ وَكَانُواْ شِیَعࣰا لَّسۡتَ مِنۡهُمۡ فِی شَیۡءٍۚ إِنَّمَاۤ أَمۡرُهُمۡ إِلَى ٱللَّهِ ثُمَّ یُنَبِّئُهُم بِمَا كَانُواْ یَفۡعَلُونَ ﴿١٥٩﴾
নিশ্চয় যারা তাদের দীনকে বিচ্ছিন্ন করেছে এবং বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়েছে, তাদের কোনো দায়িত্ব আপনার নয় ; তাদের বিষয় তো আল্লাহ্র নিকট, তারপর তিনি তাদেরকে তাদের কৃতকর্ম সম্পর্কে জানাবেন [১]।
مَن جَاۤءَ بِٱلۡحَسَنَةِ فَلَهُۥ عَشۡرُ أَمۡثَالِهَاۖ وَمَن جَاۤءَ بِٱلسَّیِّئَةِ فَلَا یُجۡزَىٰۤ إِلَّا مِثۡلَهَا وَهُمۡ لَا یُظۡلَمُونَ ﴿١٦٠﴾
কেউ কোনো সৎকাজ করলে সে তার দশ গুণ পাবে। আর কেউ কোনো অসৎ কাজ করলে তাকে শুধু তার অনুরূপ প্রতিফলই দেয়া হবে এবং তাদের প্রতি যুলুম করা হবে না [১]।
قُلۡ إِنَّنِی هَدَىٰنِی رَبِّیۤ إِلَىٰ صِرَ ٰطࣲ مُّسۡتَقِیمࣲ دِینࣰا قِیَمࣰا مِّلَّةَ إِبۡرَ ٰهِیمَ حَنِیفࣰاۚ وَمَا كَانَ مِنَ ٱلۡمُشۡرِكِینَ ﴿١٦١﴾
বলুন, ‘আমার রব তো আমাকে সৎপথে পরিচালিত করেছেন। এটাই সুপ্রতিষ্ঠিত দীন, ইবরাহীমের মিল্লাত (আদর্শ), তিনি ছিলেন একনিষ্ঠ এবং তিনি মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন না [১]।'
قُلۡ إِنَّ صَلَاتِی وَنُسُكِی وَمَحۡیَایَ وَمَمَاتِی لِلَّهِ رَبِّ ٱلۡعَـٰلَمِینَ ﴿١٦٢﴾
বলুন, ‘আমার সালাত, আমার কুরবানী, আমার জীবন ও আমার মরণ সৃষ্টিকুলের রব আল্লাহরই জন্য [১]।’
لَا شَرِیكَ لَهُۥۖ وَبِذَ ٰلِكَ أُمِرۡتُ وَأَنَا۠ أَوَّلُ ٱلۡمُسۡلِمِینَ ﴿١٦٣﴾
‘তাঁর কোনো শরীক নেই। আর আমাকে এরই নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে [১] এবং আমি মুসলিমদের মধ্যে প্রথম।’
قُلۡ أَغَیۡرَ ٱللَّهِ أَبۡغِی رَبࣰّا وَهُوَ رَبُّ كُلِّ شَیۡءࣲۚ وَلَا تَكۡسِبُ كُلُّ نَفۡسٍ إِلَّا عَلَیۡهَاۚ وَلَا تَزِرُ وَازِرَةࣱ وِزۡرَ أُخۡرَىٰۚ ثُمَّ إِلَىٰ رَبِّكُم مَّرۡجِعُكُمۡ فَیُنَبِّئُكُم بِمَا كُنتُمۡ فِیهِ تَخۡتَلِفُونَ ﴿١٦٤﴾
বলুন, ‘আমি কি আল্লাহকে ছেড়ে অন্যকে রব খুঁজব? অথচ তিনিই সব কিছুর রব। ’প্রত্যেকে নিজ নিজ কৃতকর্মের জন্য দায়ী এবং কেউ অন্য কারো ভার গ্রহণ করবে না। তারপর তোমাদের প্রত্যাবর্তন তোমাদের রবের দিকেই , অতঃপর যে বিষয়ে তোমারা মতভেদ করতে, তা তিনি তোমাদেরকে অবহিত করবেন।
وَهُوَ ٱلَّذِی جَعَلَكُمۡ خَلَـٰۤىِٕفَ ٱلۡأَرۡضِ وَرَفَعَ بَعۡضَكُمۡ فَوۡقَ بَعۡضࣲ دَرَجَـٰتࣲ لِّیَبۡلُوَكُمۡ فِی مَاۤ ءَاتَىٰكُمۡۗ إِنَّ رَبَّكَ سَرِیعُ ٱلۡعِقَابِ وَإِنَّهُۥ لَغَفُورࣱ رَّحِیمُۢ ﴿١٦٥﴾
তিনিই তোমাদেরকে যমীনের খলীফা বানিয়েছেন [১] এবং যা তিনি তোমাদেরকে দিয়েছেন সে সম্বন্ধে পরীক্ষার উদ্দেশ্যে তোমাদের কিছু সংখ্যককে কিছু সংখ্যকের উপর মর্যাদায় উন্নীত করেছেন। নিশ্চয় আপনার রব দ্রুত শাস্তিপ্রদানকারী এবং নিশ্চয় তিনি ক্ষমাশীল,দয়াময় [২]