الۤمۤصۤ ﴿١﴾
আলিফ, লাম, মীম, সাদ [১]।
كِتَـٰبٌ أُنزِلَ إِلَیۡكَ فَلَا یَكُن فِی صَدۡرِكَ حَرَجࣱ مِّنۡهُ لِتُنذِرَ بِهِۦ وَذِكۡرَىٰ لِلۡمُؤۡمِنِینَ ﴿٢﴾
এ কিতাব [১] আপনার প্রতি নাযিল করা হয়েছে, সুতরাং আপনার মনে যেন এ সম্পর্কে কোনো সন্দেহ [২] না থাকে। যাতে আপনি এর দ্বারা সতর্ক করতে পারেন [৩]। আর তা মুমিনদের জন্য উপদেশ।
ٱتَّبِعُواْ مَاۤ أُنزِلَ إِلَیۡكُم مِّن رَّبِّكُمۡ وَلَا تَتَّبِعُواْ مِن دُونِهِۦۤ أَوۡلِیَاۤءَۗ قَلِیلࣰا مَّا تَذَكَّرُونَ ﴿٣﴾
তোমাদের রবের পক্ষ থেকে তোমাদের কাছে যা নাযিল করা হয়েছে, তোমরা তার অনুসরণ কর এবং তাঁকে ছাড়া অন্য কাউকে অভিভাবকরূপে অনুসরণ করো না। তোমরা খুব অল্পই উপদেশ গ্রহণ কর [১] ।
وَكَم مِّن قَرۡیَةٍ أَهۡلَكۡنَـٰهَا فَجَاۤءَهَا بَأۡسُنَا بَیَـٰتًا أَوۡ هُمۡ قَاۤىِٕلُونَ ﴿٤﴾
আর এমন বহু জনপদ রয়েছে, যা আমরা ধ্বংস করে দিয়েছি। তখনই আমাদের শাস্তি তাদের উপর আপতিত হয়েছিল রাতে অথবা দুপুরে যখন তারা বিশ্রাম করছিল [১]।
فَمَا كَانَ دَعۡوَىٰهُمۡ إِذۡ جَاۤءَهُم بَأۡسُنَاۤ إِلَّاۤ أَن قَالُوۤاْ إِنَّا كُنَّا ظَـٰلِمِینَ ﴿٥﴾
অতঃপর যখন আমাদের শাস্তি তাদের উপর আপতিত হয়েছিল, তখন তাদের দাবী শুধু এই ছিল যে, তারা বলল, “নিশ্চয় আমরা যালিম ছিলাম [১]।
فَلَنَسۡـَٔلَنَّ ٱلَّذِینَ أُرۡسِلَ إِلَیۡهِمۡ وَلَنَسۡـَٔلَنَّ ٱلۡمُرۡسَلِینَ ﴿٦﴾
অতঃপর যাদের কাছে রাসূল পাঠানো হয়েছিল অবশ্যই তাদেরকে আমরা জিজ্ঞেস করব এবং রাসূলগণকেও অবশ্যই আমরা জিজ্ঞেস করব [১]।
فَلَنَقُصَّنَّ عَلَیۡهِم بِعِلۡمࣲۖ وَمَا كُنَّا غَاۤىِٕبِینَ ﴿٧﴾
অতঃপর অবশ্যই আমরা তাদের কাছে পূর্ণ জ্ঞানের সাথে তাদের কাজগুলো বিবৃত করব, আর আমারা তো অনুপস্থিত ছিলাম না [১]।
وَٱلۡوَزۡنُ یَوۡمَىِٕذٍ ٱلۡحَقُّۚ فَمَن ثَقُلَتۡ مَوَ ٰزِینُهُۥ فَأُوْلَـٰۤىِٕكَ هُمُ ٱلۡمُفۡلِحُونَ ﴿٨﴾
আর সেদিন ওজন [১] যথাযথ হবে [২] সুতরাং যাদের পাল্লা ভারী হবে তারাই সফলকাম হবে [৩]।
وَمَنۡ خَفَّتۡ مَوَ ٰزِینُهُۥ فَأُوْلَـٰۤىِٕكَ ٱلَّذِینَ خَسِرُوۤاْ أَنفُسَهُم بِمَا كَانُواْ بِـَٔایَـٰتِنَا یَظۡلِمُونَ ﴿٩﴾
আর যাদের পাল্লা হালকা হবে, তারাই সে সব লোক, যারা নিজেদের ক্ষতি করেছে [১], যেহেতু তারা আমাদের আয়াতসমূহের প্রতি যুলুম করত।
وَلَقَدۡ مَكَّنَّـٰكُمۡ فِی ٱلۡأَرۡضِ وَجَعَلۡنَا لَكُمۡ فِیهَا مَعَـٰیِشَۗ قَلِیلࣰا مَّا تَشۡكُرُونَ ﴿١٠﴾
আর অবশ্যই আমরা তোমাদেরকে যমীনে প্রতিষ্ঠিত করেছি এবং তাতে তোমাদের জন্য জীবিকার ব্যাবস্থাও করেছি; তোমারা খুব অল্পই কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন কর [১]।
وَلَقَدۡ خَلَقۡنَـٰكُمۡ ثُمَّ صَوَّرۡنَـٰكُمۡ ثُمَّ قُلۡنَا لِلۡمَلَـٰۤىِٕكَةِ ٱسۡجُدُواْ لِـَٔادَمَ فَسَجَدُوۤاْ إِلَّاۤ إِبۡلِیسَ لَمۡ یَكُن مِّنَ ٱلسَّـٰجِدِینَ ﴿١١﴾
আর অবশ্যই আমরা তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছি, তারপর আমরা তোমাদের আকৃতি প্রদান করেছি [১], তারপর আমরা ফিরিশতাদেরকে বললাম, আদমকে সিজদা কর। অতঃপর ইবলীস ছাড়া সবাই সিজদা করল। সে সিজদাকারীদের অন্তর্ভূক্ত হল না।
قَالَ مَا مَنَعَكَ أَلَّا تَسۡجُدَ إِذۡ أَمَرۡتُكَۖ قَالَ أَنَا۠ خَیۡرࣱ مِّنۡهُ خَلَقۡتَنِی مِن نَّارࣲ وَخَلَقۡتَهُۥ مِن طِینࣲ ﴿١٢﴾
তিনি বললেন, ‘আমি যখন তোমাকে আদেশ দিলাম তখন কি তোমাকে নিবৃত্ত করল যে, তুমি সিজদা করলে না?’ সে বলল, ‘আমি তার চেয়ে শ্ৰেষ্ঠ; আপনি আমাকে আগুন দিয়ে সৃষ্টি করেছেন এবং তাকে কাদামাটি দিয়ে সৃষ্টি করেছেন [১]।
قَالَ فَٱهۡبِطۡ مِنۡهَا فَمَا یَكُونُ لَكَ أَن تَتَكَبَّرَ فِیهَا فَٱخۡرُجۡ إِنَّكَ مِنَ ٱلصَّـٰغِرِینَ ﴿١٣﴾
তিনি বললেন, ‘তাহলে তুমি এখান থেকে নেমে যাও, এখানে থেকে অহংকার করবে, এটা হতে পারে না। সুতরাং তুমি বের হয়ে যাও, নিশ্চয় তুমি অধমদের [১] অন্তর্ভুক্ত।’
قَالَ أَنظِرۡنِیۤ إِلَىٰ یَوۡمِ یُبۡعَثُونَ ﴿١٤﴾
সে বলল, ‘আমাকে সেদিন পর্যন্ত অবকাশ দিন, যেদিন তারা পুনরুথিত হবে।’
قَالَ إِنَّكَ مِنَ ٱلۡمُنظَرِینَ ﴿١٥﴾
তিনি বললেন, ‘নিশ্চয় তুমি অবকাশপ্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত [১]।’
قَالَ فَبِمَاۤ أَغۡوَیۡتَنِی لَأَقۡعُدَنَّ لَهُمۡ صِرَ ٰطَكَ ٱلۡمُسۡتَقِیمَ ﴿١٦﴾
সে বলল, ‘আপনি যে আমাকে পথভ্রষ্ট করলেন, সে কারণে অবশ্যই অবশ্যই আমি আপনার সরল পথে মানুষের জন্য বসে থাকব [১]।’
ثُمَّ لَـَٔاتِیَنَّهُم مِّنۢ بَیۡنِ أَیۡدِیهِمۡ وَمِنۡ خَلۡفِهِمۡ وَعَنۡ أَیۡمَـٰنِهِمۡ وَعَن شَمَاۤىِٕلِهِمۡۖ وَلَا تَجِدُ أَكۡثَرَهُمۡ شَـٰكِرِینَ ﴿١٧﴾
‘তারপর অবশ্যই আমি তাদের কাছে আসব তাদের সামনে থেকে ও তাদের পিছন থেকে, ‘তাদের ডানদিক থেকে ও তাদের বাম দিক থেকে [১] এবং আপনি তাদের অধিকাংশকে কৃতজ্ঞ পাবেন না [২]।’
قَالَ ٱخۡرُجۡ مِنۡهَا مَذۡءُومࣰا مَّدۡحُورࣰاۖ لَّمَن تَبِعَكَ مِنۡهُمۡ لَأَمۡلَأَنَّ جَهَنَّمَ مِنكُمۡ أَجۡمَعِینَ ﴿١٨﴾
তিনি বললেন, ‘এখান থেকে বের হয়ে যাও ধিকৃত, বিতাড়িত অবস্থায়।মানুষের মধ্যে যারাই তোমার অনুসরণ করবে, অবশ্যই অবশ্যই আমি তোমাদের সবাইকে দিয়ে জাহান্নাম পূর্ণ করব [১]।’
وَیَـٰۤـَٔادَمُ ٱسۡكُنۡ أَنتَ وَزَوۡجُكَ ٱلۡجَنَّةَ فَكُلَا مِنۡ حَیۡثُ شِئۡتُمَا وَلَا تَقۡرَبَا هَـٰذِهِ ٱلشَّجَرَةَ فَتَكُونَا مِنَ ٱلظَّـٰلِمِینَ ﴿١٩﴾
“আর হে আদম! আপনি ও আপনার স্ত্রী জান্নাতে বসবাস করুন, অতঃপর যেথা হতে ইচ্ছা খান, কিন্তু এ গাছের ধারে –কাছেও যাবেন না, তাহলে আপনারা যালেমদের অন্তর্ভূক্ত হবেন।’
فَوَسۡوَسَ لَهُمَا ٱلشَّیۡطَـٰنُ لِیُبۡدِیَ لَهُمَا مَا وُۥرِیَ عَنۡهُمَا مِن سَوۡءَ ٰ تِهِمَا وَقَالَ مَا نَهَىٰكُمَا رَبُّكُمَا عَنۡ هَـٰذِهِ ٱلشَّجَرَةِ إِلَّاۤ أَن تَكُونَا مَلَكَیۡنِ أَوۡ تَكُونَا مِنَ ٱلۡخَـٰلِدِینَ ﴿٢٠﴾
তারপর তাদের লজ্জাস্থান, যা তাদের কাছে গোপন রাখা হয়েছিল তা তাদের কাছে প্রকাশ করার জন্য শয়তান তাদেরকে কুমন্ত্রণা দিল এবং বলল, ‘পাছে তোমরা উভয় ফিরিশ্তা হয়ে যাও কিংবা তোমরা স্থায়ীদের অন্তর্ভুক্ত হও, এ জন্যেই তোমাদের রব এ গাছ থেকে তোমাদেরকে নিষেধ করেছেন।’
وَقَاسَمَهُمَاۤ إِنِّی لَكُمَا لَمِنَ ٱلنَّـٰصِحِینَ ﴿٢١﴾
আর সে তাদের উভয়ের কাছে শপথ করে বলল, ‘নিশ্চয় আমি তোমাদের শুভাকাংখীদের একজন [১]।'
فَدَلَّىٰهُمَا بِغُرُورࣲۚ فَلَمَّا ذَاقَا ٱلشَّجَرَةَ بَدَتۡ لَهُمَا سَوۡءَ ٰ تُهُمَا وَطَفِقَا یَخۡصِفَانِ عَلَیۡهِمَا مِن وَرَقِ ٱلۡجَنَّةِۖ وَنَادَىٰهُمَا رَبُّهُمَاۤ أَلَمۡ أَنۡهَكُمَا عَن تِلۡكُمَا ٱلشَّجَرَةِ وَأَقُل لَّكُمَاۤ إِنَّ ٱلشَّیۡطَـٰنَ لَكُمَا عَدُوࣱّ مُّبِینࣱ ﴿٢٢﴾
অতঃপর সে তাদেরকে প্রবঞ্চনার দ্বারা অধঃপতিত করল। এরপর যখন তারা সে গাছের ফল খেল, তখন তাদের লজ্জাস্থান তাদের কাছে প্রকাশ হয়ে পড়ল এবং তারা জান্নাতের পাতা দিয়ে নিজেদেরকে আবৃত করতে লাগল। তখন তাদের রব তাদেরকে ডেকে বললেন, “আমি কি তোমাদেরকে এ গাছ থেকে নিষেধ করিনি এবং আমি কি তোমাদেরকে বলিনি যে, নিশ্চয় শয়তান তোমাদের উভয়ের প্রকাশ্য শত্রু?’
قَالَا رَبَّنَا ظَلَمۡنَاۤ أَنفُسَنَا وَإِن لَّمۡ تَغۡفِرۡ لَنَا وَتَرۡحَمۡنَا لَنَكُونَنَّ مِنَ ٱلۡخَـٰسِرِینَ ﴿٢٣﴾
তারা বলল, ‘হে আমাদের রব! আমারা নিজেদের প্রতি যুলুম করছি। আর যদি আপনি আমাদেরকে ক্ষমা না করেন এবং দয়া না করেন, তবে অবশ্যই আমরা ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হব [১]।’
قَالَ ٱهۡبِطُواْ بَعۡضُكُمۡ لِبَعۡضٍ عَدُوࣱّۖ وَلَكُمۡ فِی ٱلۡأَرۡضِ مُسۡتَقَرࣱّ وَمَتَـٰعٌ إِلَىٰ حِینࣲ ﴿٢٤﴾
তিনি বললেন, ‘তোমরা নেমে যাও, তোমরা একে অন্যের শক্র এবং যমীনে কিছুদিনের জন্য তোমাদের বসবাস ও জীবিকা রইল।’
قَالَ فِیهَا تَحۡیَوۡنَ وَفِیهَا تَمُوتُونَ وَمِنۡهَا تُخۡرَجُونَ ﴿٢٥﴾
তিনি বললেন, ‘সেখানেই তোমারা যাপন করবে এবং সেখানেই তোমরা মারা যাবে। আর সেখান থেকেই তোমাদেরকে বের করা হবে [১]।’
یَـٰبَنِیۤ ءَادَمَ قَدۡ أَنزَلۡنَا عَلَیۡكُمۡ لِبَاسࣰا یُوَ ٰرِی سَوۡءَ ٰ تِكُمۡ وَرِیشࣰاۖ وَلِبَاسُ ٱلتَّقۡوَىٰ ذَ ٰلِكَ خَیۡرࣱۚ ذَ ٰلِكَ مِنۡ ءَایَـٰتِ ٱللَّهِ لَعَلَّهُمۡ یَذَّكَّرُونَ ﴿٢٦﴾
হে বনী আদম! অবশ্যই আমরা তোমাদের জন্য পোষাক নাযিল করেছি, তোমাদের লজ্জাস্থান ঢাকা ও বেশ-ভুষার জন্য। আর তাকওয়ার পোষাক [১], এটাই সর্বোওম [২]। এটা আল্লাহ্র নিদর্শসমূহের অন্যতম, যাতে তারা উপদেশ গ্রহণ করে [৩]।
یَـٰبَنِیۤ ءَادَمَ لَا یَفۡتِنَنَّكُمُ ٱلشَّیۡطَـٰنُ كَمَاۤ أَخۡرَجَ أَبَوَیۡكُم مِّنَ ٱلۡجَنَّةِ یَنزِعُ عَنۡهُمَا لِبَاسَهُمَا لِیُرِیَهُمَا سَوۡءَ ٰ تِهِمَاۤۚ إِنَّهُۥ یَرَىٰكُمۡ هُوَ وَقَبِیلُهُۥ مِنۡ حَیۡثُ لَا تَرَوۡنَهُمۡۗ إِنَّا جَعَلۡنَا ٱلشَّیَـٰطِینَ أَوۡلِیَاۤءَ لِلَّذِینَ لَا یُؤۡمِنُونَ ﴿٢٧﴾
হে বনী আদম! শয়তান যেন তোমাদেরকে কিছুতেই প্রলুব্ধ না করে- যেভাবে সে তোমাদের পিতামাতাকে জান্নাত থেকে বের করেছিল, সে তাদেরকে তাদের লজ্জাস্থান দেখানোর জন্য [১] বিবস্ত্র করেছিল [২]। নিশ্চয় সে নিজে এবং তার দল তোমাদেরকে এমনভাবে দেখে যে, তোমরা তাদেরকে দেখতে পাও না। নিশ্চয় আমরা শয়তানকে তাদের অভিভাবক করেছি, যারা ঈমান আনে না।
وَإِذَا فَعَلُواْ فَـٰحِشَةࣰ قَالُواْ وَجَدۡنَا عَلَیۡهَاۤ ءَابَاۤءَنَا وَٱللَّهُ أَمَرَنَا بِهَاۗ قُلۡ إِنَّ ٱللَّهَ لَا یَأۡمُرُ بِٱلۡفَحۡشَاۤءِۖ أَتَقُولُونَ عَلَى ٱللَّهِ مَا لَا تَعۡلَمُونَ ﴿٢٨﴾
আর যখন তারা কোনো অশ্লীল আচরণ করে [১] তখন বলে, ‘আমরা আমাদের পূর্বপুরুষদেরকে এতে পেয়েছি এবং আল্লাহও আমাদেরকে এরই নির্দেশ দিয়েছেন।’ বলুন, ‘আল্লাহ্ অশ্লীলতার নির্দেশ দেন না। তোমরা কি আল্লাহ্ সম্বদ্ধে এমন কিছু বলছ যা তোমারা জান না [২]?’
قُلۡ أَمَرَ رَبِّی بِٱلۡقِسۡطِۖ وَأَقِیمُواْ وُجُوهَكُمۡ عِندَ كُلِّ مَسۡجِدࣲ وَٱدۡعُوهُ مُخۡلِصِینَ لَهُ ٱلدِّینَۚ كَمَا بَدَأَكُمۡ تَعُودُونَ ﴿٢٩﴾
বলুন, ‘আমার রব নির্দেশ দিয়েছেন ন্যায়বিচারের [১]।’ আর তোমরা প্রত্যেক সাজদাহ বা ইবাদতে তোমাদের লক্ষ্য একমাত্র আল্লাহকেই নির্ধারণ কর [২] এবং তাঁরই অনুগত্যে বিশুদ্ধচিত্ত হয়ে একনিষ্ঠভাবে তাঁকে ডাক [৩]। তিনি যেভাবে তোমাদেরকে প্রথমে সৃষ্টি করেছেন তোমরা সেভাবে ফিরে আসবে [৪]।
فَرِیقًا هَدَىٰ وَفَرِیقًا حَقَّ عَلَیۡهِمُ ٱلضَّلَـٰلَةُۚ إِنَّهُمُ ٱتَّخَذُواْ ٱلشَّیَـٰطِینَ أَوۡلِیَاۤءَ مِن دُونِ ٱللَّهِ وَیَحۡسَبُونَ أَنَّهُم مُّهۡتَدُونَ ﴿٣٠﴾
একদলকে তিনি হিদায়াত করেছেন। আর অপরদল,তাদের উপর পথ ভ্রান্তি নির্ধারিত হয়েছে [১]। নিশ্চয় তারা আল্লাহকে ছেড়ে শয়তানকে তাদের অভিভাবক-রুপে গ্রহণ করেছিল এবং মনে করত [২] তারাই হিদায়াতপ্রাপ্ত।
۞ یَـٰبَنِیۤ ءَادَمَ خُذُواْ زِینَتَكُمۡ عِندَ كُلِّ مَسۡجِدࣲ وَكُلُواْ وَٱشۡرَبُواْ وَلَا تُسۡرِفُوۤاْۚ إِنَّهُۥ لَا یُحِبُّ ٱلۡمُسۡرِفِینَ ﴿٣١﴾
হে বনী আদম! প্রত্যেক সালাতের সময় তোমরা সুন্দর পোষাক গ্রহণ কর [১]। আর খাও এবং পান কর কিন্তু অপচয় কর না [২] নিশ্চয় তিনি অপচয়কারীদেরকে পছন্দ করেন না।
قُلۡ مَنۡ حَرَّمَ زِینَةَ ٱللَّهِ ٱلَّتِیۤ أَخۡرَجَ لِعِبَادِهِۦ وَٱلطَّیِّبَـٰتِ مِنَ ٱلرِّزۡقِۚ قُلۡ هِیَ لِلَّذِینَ ءَامَنُواْ فِی ٱلۡحَیَوٰةِ ٱلدُّنۡیَا خَالِصَةࣰ یَوۡمَ ٱلۡقِیَـٰمَةِۗ كَذَ ٰلِكَ نُفَصِّلُ ٱلۡـَٔایَـٰتِ لِقَوۡمࣲ یَعۡلَمُونَ ﴿٣٢﴾
বলুন, 'আল্লাহ নিজের বান্দাদের জন্য যেসব শোভার বস্তু ও বিশুদ্ধ জীবিক সৃষ্টি করেছেন তা কে হারাম করেছে [১]?’ বলুন, ‘পার্থিব জীবনে, বিশেষ করে কেয়ামতের দিনে এ সব তাদের জন্য, যারা ঈমান আনে [২]।’ এভাবে আমরা জ্ঞানী সম্প্রদায়ের জন্য আয়াতসমূহ বিশদভাবে বিবৃত করি।
قُلۡ إِنَّمَا حَرَّمَ رَبِّیَ ٱلۡفَوَ ٰحِشَ مَا ظَهَرَ مِنۡهَا وَمَا بَطَنَ وَٱلۡإِثۡمَ وَٱلۡبَغۡیَ بِغَیۡرِ ٱلۡحَقِّ وَأَن تُشۡرِكُواْ بِٱللَّهِ مَا لَمۡ یُنَزِّلۡ بِهِۦ سُلۡطَـٰنࣰا وَأَن تَقُولُواْ عَلَى ٱللَّهِ مَا لَا تَعۡلَمُونَ ﴿٣٣﴾
বলুন, ‘নিশ্চয় আমার রব হারাম করেছেন প্রকাশ্য ও গোপন অশ্লীলতা [১]। আর পাপ ও অন্যায়ভাবে সীমালঙ্ঘন এবং কোনো কিছুকে আল্লাহর শরীক করা- যার কোনো সনদ তিনি নাযিল করেননি। আর আল্লাহ সম্বন্ধে এমন কিছু বলা যা তোমরা জান না [২]।’
وَلِكُلِّ أُمَّةٍ أَجَلࣱۖ فَإِذَا جَاۤءَ أَجَلُهُمۡ لَا یَسۡتَأۡخِرُونَ سَاعَةࣰ وَلَا یَسۡتَقۡدِمُونَ ﴿٣٤﴾
আর প্রত্যেক জাতির জন্য এক নির্দিষ্ট সময় আছে [১]। অতঃপর যখন তাদের সময় আসবে তখন তারা মুহূর্তকাল দেরি করতে পারবে না এবং এগিয়েও আনতে পারবে না।
یَـٰبَنِیۤ ءَادَمَ إِمَّا یَأۡتِیَنَّكُمۡ رُسُلࣱ مِّنكُمۡ یَقُصُّونَ عَلَیۡكُمۡ ءَایَـٰتِی فَمَنِ ٱتَّقَىٰ وَأَصۡلَحَ فَلَا خَوۡفٌ عَلَیۡهِمۡ وَلَا هُمۡ یَحۡزَنُونَ ﴿٣٥﴾
হে বনী আদম! যদি তোমাদের নিকট তোমাদের মধ্য থেকে রাসূলগণ আসেন, যারা আমার আয়াতসমূহ তোমাদের কাছে বিবৃত করবেন, তখন যারা তাকওয়া অবলম্বন করবে এবং নিজেদের সংশোধন করবে, তাদের কোনো ভয় থাকবে না এবং তারা চিন্তিতও হবে না।
وَٱلَّذِینَ كَذَّبُواْ بِـَٔایَـٰتِنَا وَٱسۡتَكۡبَرُواْ عَنۡهَاۤ أُوْلَـٰۤىِٕكَ أَصۡحَـٰبُ ٱلنَّارِۖ هُمۡ فِیهَا خَـٰلِدُونَ ﴿٣٦﴾
আর যারা আমাদের আয়াতসমূহে মিথ্যারোপ করেছে এবং তার ব্যাপারে অহংকার করেছে, তারাই অগ্নিবাসী, সেখানে তারা স্থায়ী হবে।
فَمَنۡ أَظۡلَمُ مِمَّنِ ٱفۡتَرَىٰ عَلَى ٱللَّهِ كَذِبًا أَوۡ كَذَّبَ بِـَٔایَـٰتِهِۦۤۚ أُوْلَـٰۤىِٕكَ یَنَالُهُمۡ نَصِیبُهُم مِّنَ ٱلۡكِتَـٰبِۖ حَتَّىٰۤ إِذَا جَاۤءَتۡهُمۡ رُسُلُنَا یَتَوَفَّوۡنَهُمۡ قَالُوۤاْ أَیۡنَ مَا كُنتُمۡ تَدۡعُونَ مِن دُونِ ٱللَّهِۖ قَالُواْ ضَلُّواْ عَنَّا وَشَهِدُواْ عَلَىٰۤ أَنفُسِهِمۡ أَنَّهُمۡ كَانُواْ كَـٰفِرِینَ ﴿٣٧﴾
সুতরাং যে ব্যক্তি আল্লাহ সম্বন্ধে মিথ্যা রটনা করে কিংবা তাঁর আয়াতসমূহে মিথ্যারোপ করে তার চেয়ে বড় যালিম আর কে? তাদের জন্য যে অংশ লেখা আছে তা তাদের কাছে পৌঁছবে [১]। অবশেষে যখন আমাদের ফিরিশতাগণ তাদের জান কবজের জন্য তাদের কাছে আসবে, তখন তারা জিজ্ঞেস করবে, ‘আল্লাহ ছাড়া যাদেরকে তোমরা ডাকতে [২] তারা কোথায়?' তারা বলবে, ‘তারা আমাদের থেকে উধাও হয়েছে’ এবং তারা নিজেদের বিপক্ষে সাক্ষ্য দেবে যে, নিশ্চয় তারা কাফের ছিল।
قَالَ ٱدۡخُلُواْ فِیۤ أُمَمࣲ قَدۡ خَلَتۡ مِن قَبۡلِكُم مِّنَ ٱلۡجِنِّ وَٱلۡإِنسِ فِی ٱلنَّارِۖ كُلَّمَا دَخَلَتۡ أُمَّةࣱ لَّعَنَتۡ أُخۡتَهَاۖ حَتَّىٰۤ إِذَا ٱدَّارَكُواْ فِیهَا جَمِیعࣰا قَالَتۡ أُخۡرَىٰهُمۡ لِأُولَىٰهُمۡ رَبَّنَا هَـٰۤؤُلَاۤءِ أَضَلُّونَا فَـَٔاتِهِمۡ عَذَابࣰا ضِعۡفࣰا مِّنَ ٱلنَّارِۖ قَالَ لِكُلࣲّ ضِعۡفࣱ وَلَـٰكِن لَّا تَعۡلَمُونَ ﴿٣٨﴾
আল্লাহ্ বলবেন, ‘তোমাদের আগে যে জিন ও মানবদল গত হয়েছে তাদের সাথে তোমরা আগুনে প্রবেশ কর।’ যখনই কোনো দল তাতে প্রবেশ করবে তখনই অন্য দলকে তারা অভিসম্পাত করবে [১]। অবশেষে যখন সবাই তাতে একত্র হবে, তখন তাদের পরবর্তীরা পূর্ববর্তীদের সম্পর্কে বলবে, ‘হে আমাদের রব! এরাই আমাদেরকে বিভ্রান্ত করেছিল [২]; কাজেই এদেরকে দ্বিগুন আগুনে শাস্তি দিন।’ আল্লাহ্ বলবেন, ‘প্রত্যেকের জন্য দ্বিগুন রয়েছে, কিন্তু তোমরা জান না’।
وَقَالَتۡ أُولَىٰهُمۡ لِأُخۡرَىٰهُمۡ فَمَا كَانَ لَكُمۡ عَلَیۡنَا مِن فَضۡلࣲ فَذُوقُواْ ٱلۡعَذَابَ بِمَا كُنتُمۡ تَكۡسِبُونَ ﴿٣٩﴾
আর তাদের পূর্ববর্তীরা পরবর্তীদেরকে বলবে, ‘আমাদের উপর তোমাদের কোনো শ্রেষ্ঠত্ব নেই, কাজেই তোমরা যা অর্জন করেছিলে তার জন্য শাস্তি ভোগ কর [১]।’
إِنَّ ٱلَّذِینَ كَذَّبُواْ بِـَٔایَـٰتِنَا وَٱسۡتَكۡبَرُواْ عَنۡهَا لَا تُفَتَّحُ لَهُمۡ أَبۡوَ ٰبُ ٱلسَّمَاۤءِ وَلَا یَدۡخُلُونَ ٱلۡجَنَّةَ حَتَّىٰ یَلِجَ ٱلۡجَمَلُ فِی سَمِّ ٱلۡخِیَاطِۚ وَكَذَ ٰلِكَ نَجۡزِی ٱلۡمُجۡرِمِینَ ﴿٤٠﴾
নিশ্চয় যারা আমাদের আয়াতসমূহে মিথ্যারোপ করে এবং তা সম্বন্ধে অহংকার করে, তাদের জন্য আকাশের দরজা খোলা হবে না এবং তারা জান্নাতেও প্রবেশ করতে পারবে না [১] যতক্ষণ না সূঁচের ছিদ্র দিয়ে উট প্রবেশ করে [২] আর এভাবেই আমরা অপরাধীদেরকে প্রতিফল দেব।
لَهُم مِّن جَهَنَّمَ مِهَادࣱ وَمِن فَوۡقِهِمۡ غَوَاشࣲۚ وَكَذَ ٰلِكَ نَجۡزِی ٱلظَّـٰلِمِینَ ﴿٤١﴾
তাদের শয্যা হবে জাহান্নামের এবং তাদের উপরের আচ্ছাদনও; আর এভাবেই আমরা যালিমদেরকে প্রতিফল দেব।
وَٱلَّذِینَ ءَامَنُواْ وَعَمِلُواْ ٱلصَّـٰلِحَـٰتِ لَا نُكَلِّفُ نَفۡسًا إِلَّا وُسۡعَهَاۤ أُوْلَـٰۤىِٕكَ أَصۡحَـٰبُ ٱلۡجَنَّةِۖ هُمۡ فِیهَا خَـٰلِدُونَ ﴿٤٢﴾
আর যারা ঈমান এনেছে ও সৎকাজ করেছে –আমরা কারো উপর তার সাধ্যের অতিরিক্ত ভার চাপিয়ে দেই না-তারাই জান্নাতবাসী, সেখানে তারা স্থায়ী হবে।
وَنَزَعۡنَا مَا فِی صُدُورِهِم مِّنۡ غِلࣲّ تَجۡرِی مِن تَحۡتِهِمُ ٱلۡأَنۡهَـٰرُۖ وَقَالُواْ ٱلۡحَمۡدُ لِلَّهِ ٱلَّذِی هَدَىٰنَا لِهَـٰذَا وَمَا كُنَّا لِنَهۡتَدِیَ لَوۡلَاۤ أَنۡ هَدَىٰنَا ٱللَّهُۖ لَقَدۡ جَاۤءَتۡ رُسُلُ رَبِّنَا بِٱلۡحَقِّۖ وَنُودُوۤاْ أَن تِلۡكُمُ ٱلۡجَنَّةُ أُورِثۡتُمُوهَا بِمَا كُنتُمۡ تَعۡمَلُونَ ﴿٤٣﴾
আর আমরা তাদের অন্তর থেকে ঈর্ষা দূর করব [১], তাদের পাদদেশে প্রবাহিত হবে নদীসমূহ। আর তারা বলবে, ‘যাবতীয় প্রশংসা আল্লাহরই যিনি আমাদেরকে এ পথের হিদায়াত করেছেন। আল্লাহ আমাদেরকে হিদায়াত না করলে, আমরা কখনো হিদায়াত পেতাম না। অবশ্যই আমাদের রবের রাসূলগণ সত্য নিয়ে এসেছিলেন।’ আর তাদেরকে সম্বোধন করে বলা হবে, "তোমরা যা করতে তারই জন্য তোমাদেরকে এ জান্নাতের [২] ওয়ারিস করা হয়েছে।’
وَنَادَىٰۤ أَصۡحَـٰبُ ٱلۡجَنَّةِ أَصۡحَـٰبَ ٱلنَّارِ أَن قَدۡ وَجَدۡنَا مَا وَعَدَنَا رَبُّنَا حَقࣰّا فَهَلۡ وَجَدتُّم مَّا وَعَدَ رَبُّكُمۡ حَقࣰّاۖ قَالُواْ نَعَمۡۚ فَأَذَّنَ مُؤَذِّنُۢ بَیۡنَهُمۡ أَن لَّعۡنَةُ ٱللَّهِ عَلَى ٱلظَّـٰلِمِینَ ﴿٤٤﴾
আর জান্নাতবাসীগণ জাহান্নামবাসীদেরকে সম্বোধন করে বলবে, ‘আমাদের রব আমাদেরকে যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন আমরা তো তা সত্য পেয়েছি। তোমাদের রব তোমাদেরকে যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তোমরা তা সত্য পেয়েছ কি? তারা বলবে, ‘হ্যাঁ।’ অতঃপর একজন ঘোষণাকারী তাদের মধ্যে ঘোষণা করবে, আল্লাহর লা'নত যালিমদের উপর---
ٱلَّذِینَ یَصُدُّونَ عَن سَبِیلِ ٱللَّهِ وَیَبۡغُونَهَا عِوَجࣰا وَهُم بِٱلۡـَٔاخِرَةِ كَـٰفِرُونَ ﴿٤٥﴾
‘যারা আল্লাহর পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করত এবং সে পথে জটিলতা খুঁজে বেড়াত; এবং তারা আখেরাতকে অস্বীকারকারী ছিল।’
وَبَیۡنَهُمَا حِجَابࣱۚ وَعَلَى ٱلۡأَعۡرَافِ رِجَالࣱ یَعۡرِفُونَ كُلَّۢا بِسِیمَىٰهُمۡۚ وَنَادَوۡاْ أَصۡحَـٰبَ ٱلۡجَنَّةِ أَن سَلَـٰمٌ عَلَیۡكُمۡۚ لَمۡ یَدۡخُلُوهَا وَهُمۡ یَطۡمَعُونَ ﴿٤٦﴾
আর তাদের উভয়ের মধ্যে পর্দা থাকবে। আর আ’রাফে [১] কিছু লোক থাকবে, যারা প্রত্যেককে তার চিহ্ন দ্বারা চিনবে [২]। আর তারা জান্নাতবাসীদেরকে সম্বোধন করে বলবে, ‘তোমাদের উপর সালাম [৩]।’ তারা তখনো জান্নাতে প্রবেশ করেনি, কিন্তু আকাংখা করে।
۞ وَإِذَا صُرِفَتۡ أَبۡصَـٰرُهُمۡ تِلۡقَاۤءَ أَصۡحَـٰبِ ٱلنَّارِ قَالُواْ رَبَّنَا لَا تَجۡعَلۡنَا مَعَ ٱلۡقَوۡمِ ٱلظَّـٰلِمِینَ ﴿٤٧﴾
আর যখন দৃষ্টি অগ্নিবাসীদের দিকে ফিরিয়ে দেয়া হবে, তখন তারা বলবে, ‘হে আমার রব! আমাদেরকে যালিম সম্প্রদায়ের সঙ্গী করবেন না [১]।’
وَنَادَىٰۤ أَصۡحَـٰبُ ٱلۡأَعۡرَافِ رِجَالࣰا یَعۡرِفُونَهُم بِسِیمَىٰهُمۡ قَالُواْ مَاۤ أَغۡنَىٰ عَنكُمۡ جَمۡعُكُمۡ وَمَا كُنتُمۡ تَسۡتَكۡبِرُونَ ﴿٤٨﴾
আর আ’রাফবাসীরা এমন লোকদেরকে ডাকবে, যাদেরকে তারা তাদের চিহ্ন দ্বারা চিনবে, তারা বলবে, ‘তোমাদের দল ও তোমাদের অহংকার কোনো কাজে আসল না।’
أَهَـٰۤؤُلَاۤءِ ٱلَّذِینَ أَقۡسَمۡتُمۡ لَا یَنَالُهُمُ ٱللَّهُ بِرَحۡمَةٍۚ ٱدۡخُلُواْ ٱلۡجَنَّةَ لَا خَوۡفٌ عَلَیۡكُمۡ وَلَاۤ أَنتُمۡ تَحۡزَنُونَ ﴿٤٩﴾
এরাই কি তারা [১] যাদের সম্বন্ধে তোমরা শপথ করে বলতে যে, আল্লাহ তাদেরকে রহমতে শামিল করবেন না? (এদেরকেই বলা হবে,) ‘তোমরা জান্নাতে প্রবেশ কর, তোমাদের কোনো ভয় নেই এবং তোমরা চিন্তিতও হবে না।’
وَنَادَىٰۤ أَصۡحَـٰبُ ٱلنَّارِ أَصۡحَـٰبَ ٱلۡجَنَّةِ أَنۡ أَفِیضُواْ عَلَیۡنَا مِنَ ٱلۡمَاۤءِ أَوۡ مِمَّا رَزَقَكُمُ ٱللَّهُۚ قَالُوۤاْ إِنَّ ٱللَّهَ حَرَّمَهُمَا عَلَى ٱلۡكَـٰفِرِینَ ﴿٥٠﴾
আর জাহান্নামীরা জান্নাতীদেরকে সম্বোধন করে বলবে, ‘আমাদের উপর ঢেলে দাও কিছু পানি অথবা তা থেকে যা আল্লাহ জীবিকারূপে তোমাদেরকে দিয়েছেন।’ তারা বলবে, ‘আল্লাহ তো এ দুটি হারাম করেছেন কাফেরদের জন্য।
ٱلَّذِینَ ٱتَّخَذُواْ دِینَهُمۡ لَهۡوࣰا وَلَعِبࣰا وَغَرَّتۡهُمُ ٱلۡحَیَوٰةُ ٱلدُّنۡیَاۚ فَٱلۡیَوۡمَ نَنسَىٰهُمۡ كَمَا نَسُواْ لِقَاۤءَ یَوۡمِهِمۡ هَـٰذَا وَمَا كَانُواْ بِـَٔایَـٰتِنَا یَجۡحَدُونَ ﴿٥١﴾
‘যারা তাদের দীনকে খেল-তামাশারূপে গ্রহণ করেছিল। আর দুনিয়ার জীবন যাদেরকে প্রতারিত করেছিল। কাজেই আজ আমরা তাদেরকে (জাহান্নামে) ছেড়ে রাখব, যেমনিভাবে তারা তাদের এ দিনের সাক্ষাতের জন্য কাজ করা ছেড়ে দিয়েছিল [১], আর (যেমন) তারা আমাদের আয়াতসমূহ অস্বীকার করেছিল।
وَلَقَدۡ جِئۡنَـٰهُم بِكِتَـٰبࣲ فَصَّلۡنَـٰهُ عَلَىٰ عِلۡمٍ هُدࣰى وَرَحۡمَةࣰ لِّقَوۡمࣲ یُؤۡمِنُونَ ﴿٥٢﴾
আর অবশ্যই আমরা তাদের নিকট নিয়ে এসেছি এমন এক কিতাব যা আমরা জ্ঞানের ভিত্তিতে বিশদ ব্যাখ্যা করেছি [২]। আর যা মুমিন সম্প্রদায়ের জন্য হিদায়াত ও রহমতস্বরূপ।
هَلۡ یَنظُرُونَ إِلَّا تَأۡوِیلَهُۥۚ یَوۡمَ یَأۡتِی تَأۡوِیلُهُۥ یَقُولُ ٱلَّذِینَ نَسُوهُ مِن قَبۡلُ قَدۡ جَاۤءَتۡ رُسُلُ رَبِّنَا بِٱلۡحَقِّ فَهَل لَّنَا مِن شُفَعَاۤءَ فَیَشۡفَعُواْ لَنَاۤ أَوۡ نُرَدُّ فَنَعۡمَلَ غَیۡرَ ٱلَّذِی كُنَّا نَعۡمَلُۚ قَدۡ خَسِرُوۤاْ أَنفُسَهُمۡ وَضَلَّ عَنۡهُم مَّا كَانُواْ یَفۡتَرُونَ ﴿٥٣﴾
তারা কি শুধু সে পরিণামের অপেক্ষা করে? যেদিন সে পরিণাম প্রকাশ পাবে, সেদিন যারা আগে সেটার কথা ভুলে গিয়েছিল তারা বলবে, ‘আমাদের রবের রাসূলগণ তো সত্যবাণী এনেছিলেন, আমাদের কি এমন কোনো সুপারিশকারী আছে যে আমাদের জন্য সুপারিশ করবে অথবা আমাদেরকে কি আবার ফেরত পাঠানো হবে-- যেন আমরা আগে যা করতাম তা থেকে ভিন্ন কিছু করতে পারি?’ অবশ্যই তারা নিজেদেরকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে এবং তারা যে মিথ্যা রটনা করত, তা তাদের কাছ থেকে হারিয়ে গেছে।
إِنَّ رَبَّكُمُ ٱللَّهُ ٱلَّذِی خَلَقَ ٱلسَّمَـٰوَ ٰتِ وَٱلۡأَرۡضَ فِی سِتَّةِ أَیَّامࣲ ثُمَّ ٱسۡتَوَىٰ عَلَى ٱلۡعَرۡشِۖ یُغۡشِی ٱلَّیۡلَ ٱلنَّهَارَ یَطۡلُبُهُۥ حَثِیثࣰا وَٱلشَّمۡسَ وَٱلۡقَمَرَ وَٱلنُّجُومَ مُسَخَّرَ ٰتِۭ بِأَمۡرِهِۦۤۗ أَلَا لَهُ ٱلۡخَلۡقُ وَٱلۡأَمۡرُۗ تَبَارَكَ ٱللَّهُ رَبُّ ٱلۡعَـٰلَمِینَ ﴿٥٤﴾
নিশ্চয় তোমাদের রব আল্লাহ্ যিনি আসমানসমূহ ও যমীন ছয় [১] দিনে [২] সৃষ্টি করেছেন [৩]; তারপর তিনি ‘আরশের উপর উঠেছেন [৪]। তিনিই দিনকে রাত দিয়ে ঢেকে দেন, তাদের একে অন্যকে দ্রুতগতিতে অনুসরণ করে। আর সূর্য,চাঁদ ও নক্ষত্ররাজি, যা তাঁরই হুকুমের অনুগত, তা তিনিই সৃষ্টি করেছেন [৫]।জেনে রাখ, সৃজন ও আদেশ তাঁরই [৬]। সৃষ্টিকুলের রব আল্লাহ্ কত বরকতময়!
ٱدۡعُواْ رَبَّكُمۡ تَضَرُّعࣰا وَخُفۡیَةًۚ إِنَّهُۥ لَا یُحِبُّ ٱلۡمُعۡتَدِینَ ﴿٥٥﴾
তোমরা বিনিতভাবে ও গোপনে [১] তোমাদের রবকে ডাক [২]; নিশ্চয় তিনি সীমালংঘনকারীদেরকে পছন্দ করেন না [৩]।
وَلَا تُفۡسِدُواْ فِی ٱلۡأَرۡضِ بَعۡدَ إِصۡلَـٰحِهَا وَٱدۡعُوهُ خَوۡفࣰا وَطَمَعًاۚ إِنَّ رَحۡمَتَ ٱللَّهِ قَرِیبࣱ مِّنَ ٱلۡمُحۡسِنِینَ ﴿٥٦﴾
আর যমীনে শান্তি স্থাপনের পর তোমরা সেখানে বিপর্যয় সৃষ্টি করো না [১]। আর আল্লাহকে ভয় ও আশার সাথে ডাক [২]। নিশ্চয় আল্লাহ্র অনুগ্রহ মুহসিনদের খুব নিকটে [৩]।
وَهُوَ ٱلَّذِی یُرۡسِلُ ٱلرِّیَـٰحَ بُشۡرَۢا بَیۡنَ یَدَیۡ رَحۡمَتِهِۦۖ حَتَّىٰۤ إِذَاۤ أَقَلَّتۡ سَحَابࣰا ثِقَالࣰا سُقۡنَـٰهُ لِبَلَدࣲ مَّیِّتࣲ فَأَنزَلۡنَا بِهِ ٱلۡمَاۤءَ فَأَخۡرَجۡنَا بِهِۦ مِن كُلِّ ٱلثَّمَرَ ٰتِۚ كَذَ ٰلِكَ نُخۡرِجُ ٱلۡمَوۡتَىٰ لَعَلَّكُمۡ تَذَكَّرُونَ ﴿٥٧﴾
আর তিনিই সে সত্তা; যিনি তাঁর রহমত বৃষ্টির আগে বায়ূ প্রবাহিত করেন সুসংবাদ হিসেবে [১], অবশেষে যখন সেটা ভারী মেঘমালা বয়ে আনে [২] তখন আমরা সেটাকে মৃত জনপদের দিকে চালিয়ে দেই, অতঃপর আমরা তার দ্বারা বৃষ্টি বর্ষণ করি [৩], তারপর তা দিয়ে সব রকমের ফল উৎপাদন করি। এভাবেই আমরা মৃতদেরকে বের করব, যাতে তোমরা উপদেশ গ্রহণ কর [৪]।
وَٱلۡبَلَدُ ٱلطَّیِّبُ یَخۡرُجُ نَبَاتُهُۥ بِإِذۡنِ رَبِّهِۦۖ وَٱلَّذِی خَبُثَ لَا یَخۡرُجُ إِلَّا نَكِدࣰاۚ كَذَ ٰلِكَ نُصَرِّفُ ٱلۡـَٔایَـٰتِ لِقَوۡمࣲ یَشۡكُرُونَ ﴿٥٨﴾
আর উৎকৃষ্ট ভূমি-তার ফসল তার রবের আদেশে উৎপন্ন হয়। আর যা নিকৃষ্ট, তাতে কঠোর পরিশ্রম না করলে কিছুই জন্মে না [১]। এভাবে আমরা কৃতজ্ঞ সম্প্রদায়ের জন্য নিদর্শনসমূহ বিভিন্নভাবে বিবৃত করি [২]।
لَقَدۡ أَرۡسَلۡنَا نُوحًا إِلَىٰ قَوۡمِهِۦ فَقَالَ یَـٰقَوۡمِ ٱعۡبُدُواْ ٱللَّهَ مَا لَكُم مِّنۡ إِلَـٰهٍ غَیۡرُهُۥۤ إِنِّیۤ أَخَافُ عَلَیۡكُمۡ عَذَابَ یَوۡمٍ عَظِیمࣲ ﴿٥٩﴾
অবশ্যই আমরা নূহ্কে পাঠিয়েছিলাম তার সম্প্রদায়ের কাছে। অতঃপর তিনি বলেছিলেন, 'হে আমার সম্প্রদায়! আল্লাহর ইবাদাত কর, তিনি ছাড়া তোমাদের অন্য কোনো সত্য ইলাহ নেই। নিশ্চয় আমি তোমাদের উপর মহাদিনের শাস্তির আশংকা করছি।’
قَالَ ٱلۡمَلَأُ مِن قَوۡمِهِۦۤ إِنَّا لَنَرَىٰكَ فِی ضَلَـٰلࣲ مُّبِینࣲ ﴿٦٠﴾
তার সম্প্রদায়ের প্রধানরা বলেছিল, ‘আমরা তো তোমাকে স্পষ্ট ভ্রষ্টতার মধ্যে নিপতিত দেখছি।’
قَالَ یَـٰقَوۡمِ لَیۡسَ بِی ضَلَـٰلَةࣱ وَلَـٰكِنِّی رَسُولࣱ مِّن رَّبِّ ٱلۡعَـٰلَمِینَ ﴿٦١﴾
তিনি বলেছিলেন, ‘হে আমার সম্পপ্রদায়! আমার মধ্যে কোনো ভ্ৰষ্টতা নেই, বরং আমি তো সৃষ্টিকুলের রবের পক্ষ থেকে রাসূল।’
أُبَلِّغُكُمۡ رِسَـٰلَـٰتِ رَبِّی وَأَنصَحُ لَكُمۡ وَأَعۡلَمُ مِنَ ٱللَّهِ مَا لَا تَعۡلَمُونَ ﴿٦٢﴾
‘আমি আমার রবের রিসালাত (যা দিয়ে আমাকে পাঠানো হয়েছে তা) তোমাদের কাছে পৌছাচ্ছি এবং তোমাদের কল্যাণ কামনা করছি। আর তোমরা যা জান না আমি তা আল্লাহর কাছ থেকে জানি।’
أَوَعَجِبۡتُمۡ أَن جَاۤءَكُمۡ ذِكۡرࣱ مِّن رَّبِّكُمۡ عَلَىٰ رَجُلࣲ مِّنكُمۡ لِیُنذِرَكُمۡ وَلِتَتَّقُواْ وَلَعَلَّكُمۡ تُرۡحَمُونَ ﴿٦٣﴾
তোমরা কি বিস্মিত হচ্ছ যে, তোমাদেরই একজনের মাধ্যমে তোমাদের রবের কাছে থেকে তোমাদের কাছে উপদেশ [১] এসেছে, যাতে তিনি তোমাদেরকে সতর্ক করেন এবং যাতে তোমরা তাকওয়া অবলম্বন কর। আর যাতে তোমরা রহমতপ্রাপ্ত হও ?’
فَكَذَّبُوهُ فَأَنجَیۡنَـٰهُ وَٱلَّذِینَ مَعَهُۥ فِی ٱلۡفُلۡكِ وَأَغۡرَقۡنَا ٱلَّذِینَ كَذَّبُواْ بِـَٔایَـٰتِنَاۤۚ إِنَّهُمۡ كَانُواْ قَوۡمًا عَمِینَ ﴿٦٤﴾
অতঃপর তারা তার উপর মিথ্যারোপ করল। ফলে তাকে ও তার সাথে যারা নৌকায় ছিল আমরা তাদেরকে উদ্ধার করি এবং যারা আমাদের আয়াতসমূহে মিথ্যারোপ করেছিল তাদেরকে ডুবিয়ে দেই। তারা তো ছিল এক অন্ধ সম্প্রদায় [১]।
۞ وَإِلَىٰ عَادٍ أَخَاهُمۡ هُودࣰاۚ قَالَ یَـٰقَوۡمِ ٱعۡبُدُواْ ٱللَّهَ مَا لَكُم مِّنۡ إِلَـٰهٍ غَیۡرُهُۥۤۚ أَفَلَا تَتَّقُونَ ﴿٦٥﴾
আর ‘আদ [১] জাতির নিকট তাদের ভাই হূদকে পাঠিয়েছিলাম। তিনি বলেছিলেন, ‘হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা আল্লাহ্র ইবাদত কর, তিনি ব্যতীত তোমাদের অন্য কোনো সত্য ইলাহ নেই। তোমারা কি তাকওয়া অবলম্বন করবে না [২]?’
قَالَ ٱلۡمَلَأُ ٱلَّذِینَ كَفَرُواْ مِن قَوۡمِهِۦۤ إِنَّا لَنَرَىٰكَ فِی سَفَاهَةࣲ وَإِنَّا لَنَظُنُّكَ مِنَ ٱلۡكَـٰذِبِینَ ﴿٦٦﴾
তার সম্প্রদায়ের প্রধানরা, যারা কুফরী করেছিল, তারা বলেছিল , ‘ আমরা তো তোমাকে নির্বুদ্ধিতায় নিপতিত দেখছি। আর আমরা তো তোমাকে মিথ্যাবাদীদের অন্তর্ভুক্ত মনে করি [১]।’
قَالَ یَـٰقَوۡمِ لَیۡسَ بِی سَفَاهَةࣱ وَلَـٰكِنِّی رَسُولࣱ مِّن رَّبِّ ٱلۡعَـٰلَمِینَ ﴿٦٧﴾
তিনি বললেন, হে আমার সম্প্রদায়! আমার মধ্যে কোনো নির্বুদ্ধিতা নেই, বরং আমি সৃষ্টিকুলের রবের পক্ষ থেকে একজন রাসূল [১]।’
أُبَلِّغُكُمۡ رِسَـٰلَـٰتِ رَبِّی وَأَنَا۠ لَكُمۡ نَاصِحٌ أَمِینٌ ﴿٦٨﴾
‘আমি আমার রবের রিসালাত (যা দিয়ে আমাকে পাঠানো হয়েছে তা) তোমাদের কাছে পৌঁছাচ্ছি এবং আমি তোমাদের একজন বিশ্বস্ত হিতাকাংখী।
أَوَعَجِبۡتُمۡ أَن جَاۤءَكُمۡ ذِكۡرࣱ مِّن رَّبِّكُمۡ عَلَىٰ رَجُلࣲ مِّنكُمۡ لِیُنذِرَكُمۡۚ وَٱذۡكُرُوۤاْ إِذۡ جَعَلَكُمۡ خُلَفَاۤءَ مِنۢ بَعۡدِ قَوۡمِ نُوحࣲ وَزَادَكُمۡ فِی ٱلۡخَلۡقِ بَصۜۡطَةࣰۖ فَٱذۡكُرُوۤاْ ءَالَاۤءَ ٱللَّهِ لَعَلَّكُمۡ تُفۡلِحُونَ ﴿٦٩﴾
‘তোমরা কি বিস্মিত হচ্ছ যে, তোমাদের কাছে তোমাদের একজনের মাধ্যমে তোমাদের রবের কাছ থেকে তোমাদেরকে সতর্ক করার জন্য উপদেশ এসেছে [১]? এবং স্মরণ কর যে, আল্লাহ তোমাদেরকে নূহের সম্প্রদায়ের (ধ্বংসের) পরে তোমাদেরকে (তোমাদের আগের লোকদের) স্থলাভিষিক্ত করেছেন [২] এবং সৃষ্টিতে (দৈহিক গঠনে) তোমাদেরকে বেশী পরিমাণে হৃষ্ট-পুষ্ট বলিষ্ঠ করেছেন। কাজেই তোমরা আল্লাহর অনুগ্রহসমূহ স্মরণ কর, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার।’
قَالُوۤاْ أَجِئۡتَنَا لِنَعۡبُدَ ٱللَّهَ وَحۡدَهُۥ وَنَذَرَ مَا كَانَ یَعۡبُدُ ءَابَاۤؤُنَا فَأۡتِنَا بِمَا تَعِدُنَاۤ إِن كُنتَ مِنَ ٱلصَّـٰدِقِینَ ﴿٧٠﴾
তারা বলল, ‘তুমি কি আমাদের কাছে এ উদ্দেশ্যে এসেছ যে, আমরা যেন এক আল্লাহ্র ইবাদত করি এবং আমাদের পিতৃপুরুষরা যার ইবাদত করত তা ছেড়ে দেই [১]? কাজেই তুমি সত্যবাদী হলে আমাদেরকে যা ভয় দেখাচ্ছ [২] তা নিয়ে এস।’
قَالَ قَدۡ وَقَعَ عَلَیۡكُم مِّن رَّبِّكُمۡ رِجۡسࣱ وَغَضَبٌۖ أَتُجَـٰدِلُونَنِی فِیۤ أَسۡمَاۤءࣲ سَمَّیۡتُمُوهَاۤ أَنتُمۡ وَءَابَاۤؤُكُم مَّا نَزَّلَ ٱللَّهُ بِهَا مِن سُلۡطَـٰنࣲۚ فَٱنتَظِرُوۤاْ إِنِّی مَعَكُم مِّنَ ٱلۡمُنتَظِرِینَ ﴿٧١﴾
তিনি বললেন, ‘তোমাদের রবের শাস্তি ও ক্রোধ তো তোমাদের উপর নির্ধারিত হয়েই আছে; তবে কি তোমরা আমার সাথে বিতর্কে লিপ্ত হতে চাও এমন কতগুলি নাম সম্বন্ধে যেগুলোর নাম তোমরা ও তোমাদের পিতৃপুরুষরা রেখেছে [১], যে সম্বন্ধে আল্লাহ্ কোনো সনদ নাযিল করেননি [২]? কাজেই তোমরা প্রতীক্ষা কর, আমিও তোমাদের সাথে প্রতীক্ষায় রইলাম।’
فَأَنجَیۡنَـٰهُ وَٱلَّذِینَ مَعَهُۥ بِرَحۡمَةࣲ مِّنَّا وَقَطَعۡنَا دَابِرَ ٱلَّذِینَ كَذَّبُواْ بِـَٔایَـٰتِنَاۖ وَمَا كَانُواْ مُؤۡمِنِینَ ﴿٧٢﴾
তারপর আমরা তাকে ও তার সাথীদেরকে আমাদের অনুগ্রহে উদ্ধার করেছিলাম; আর আমাদের আয়াতসমূহে যারা মিথ্যারোপ করেছিল এবং যারা মুমিন ছিল না তাদেরকে নির্মূল করেছিলাম [১]।
وَإِلَىٰ ثَمُودَ أَخَاهُمۡ صَـٰلِحࣰاۚ قَالَ یَـٰقَوۡمِ ٱعۡبُدُواْ ٱللَّهَ مَا لَكُم مِّنۡ إِلَـٰهٍ غَیۡرُهُۥۖ قَدۡ جَاۤءَتۡكُم بَیِّنَةࣱ مِّن رَّبِّكُمۡۖ هَـٰذِهِۦ نَاقَةُ ٱللَّهِ لَكُمۡ ءَایَةࣰۖ فَذَرُوهَا تَأۡكُلۡ فِیۤ أَرۡضِ ٱللَّهِۖ وَلَا تَمَسُّوهَا بِسُوۤءࣲ فَیَأۡخُذَكُمۡ عَذَابٌ أَلِیمࣱ ﴿٧٣﴾
আর সামূদ [১] জাতির নিকট তাদের ভাই সালেহকে পাঠিয়েছিলাম। তিনি বলেছিলেন, ‘হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা আল্লাহ্র ইবাদত কর। তিনি ব্যতীত তোমাদের জন্য অন্য কোনো সত্য ইলাহ নেই। অবশ্যই তোমাদের নিকট তোমাদের রবের পক্ষ হতে স্পষ্ট নিদর্শন এসেছে [২] এটি আল্লাহ্র উষ্ট্রী, তোমাদের জন্য নিদর্শনস্বরূপ। সুতরাং তোমরা তাকে আল্লাহ্র যমীনে চরে খেতে দাও এবং তাকে কোনো কষ্ট দিও না, দিলে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি তোমাদেরকে পেয়ে বসবে [৩]।
وَٱذۡكُرُوۤاْ إِذۡ جَعَلَكُمۡ خُلَفَاۤءَ مِنۢ بَعۡدِ عَادࣲ وَبَوَّأَكُمۡ فِی ٱلۡأَرۡضِ تَتَّخِذُونَ مِن سُهُولِهَا قُصُورࣰا وَتَنۡحِتُونَ ٱلۡجِبَالَ بُیُوتࣰاۖ فَٱذۡكُرُوۤاْ ءَالَاۤءَ ٱللَّهِ وَلَا تَعۡثَوۡاْ فِی ٱلۡأَرۡضِ مُفۡسِدِینَ ﴿٧٤﴾
আর স্মরণ কর, ‘আদ জাতির (ধ্বংসের) পরে তিনি তোমাদেরকে (তোমাদের আগের লোকদের) স্থলাভিষিক্ত করেছেন। আর তিনি তোমাদেরকে যমীনে এমনভাবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন যে, তোমরা সমতল ভূমিতে প্রাসাদ নির্মাণ ও পাহাড় কেটে ঘরবাড়ি তৈরী করছ [১]। কাজেই তোমরা আল্লাহ্র অনুগ্রহ স্মরণ কর এবং যমীনে বিপর্যয় সৃষ্টি করে বেড়িও না [২]।’
قَالَ ٱلۡمَلَأُ ٱلَّذِینَ ٱسۡتَكۡبَرُواْ مِن قَوۡمِهِۦ لِلَّذِینَ ٱسۡتُضۡعِفُواْ لِمَنۡ ءَامَنَ مِنۡهُمۡ أَتَعۡلَمُونَ أَنَّ صَـٰلِحࣰا مُّرۡسَلࣱ مِّن رَّبِّهِۦۚ قَالُوۤاْ إِنَّا بِمَاۤ أُرۡسِلَ بِهِۦ مُؤۡمِنُونَ ﴿٧٥﴾
তাঁর সম্প্রদায়ের অহংকারী নেতারা সে সম্প্রদায়ের যারা ঈমান এনেছিল- যাদেরকে দুর্বল মনে করা হত তাদেরকে বলল, ‘তোমরা কি জান যে, সালিহ তার রব এর পক্ষ থেকে প্রেরিত?’ তারা বলল, ‘নিশ্চয় তিনি যা নিয়ে প্রেরিত হয়েছেন, আমরা তার উপর ঈমানদার।’
قَالَ ٱلَّذِینَ ٱسۡتَكۡبَرُوۤاْ إِنَّا بِٱلَّذِیۤ ءَامَنتُم بِهِۦ كَـٰفِرُونَ ﴿٧٦﴾
যারা অহংকার করেছিল তারা বলল, ‘নিশ্চয় তোমরা যার প্রতি ঈমান এনেছ, আমরা তাতে কুফরীকারী [১]।’
فَعَقَرُواْ ٱلنَّاقَةَ وَعَتَوۡاْ عَنۡ أَمۡرِ رَبِّهِمۡ وَقَالُواْ یَـٰصَـٰلِحُ ٱئۡتِنَا بِمَا تَعِدُنَاۤ إِن كُنتَ مِنَ ٱلۡمُرۡسَلِینَ ﴿٧٧﴾
অতঃপর তারা সে উষ্ট্রীকে হত্যা করে এবং আল্লাহর আদেশ অমান্য করে এবং বলে, ‘হে সালিহ! তুমি আমাদেরকে যার ভয় দেখাচ্ছ, তা নিয়ে এস, যদি তুমি রাসূলগণের অন্তর্ভুক্ত হয়ে থাক।’
فَأَخَذَتۡهُمُ ٱلرَّجۡفَةُ فَأَصۡبَحُواْ فِی دَارِهِمۡ جَـٰثِمِینَ ﴿٧٨﴾
অতঃপর ভূমিকম্প তাদেরকে পাকড়াও করল, ফলে তারা নিজ নিজ ঘরে উপুড় হয়ে পড়ে (মরে) রইল [১]।
فَتَوَلَّىٰ عَنۡهُمۡ وَقَالَ یَـٰقَوۡمِ لَقَدۡ أَبۡلَغۡتُكُمۡ رِسَالَةَ رَبِّی وَنَصَحۡتُ لَكُمۡ وَلَـٰكِن لَّا تُحِبُّونَ ٱلنَّـٰصِحِینَ ﴿٧٩﴾
এরপর তিনি তাদের কাছ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে বললেন, ‘হে আমার সম্প্রদায়! আমি তো আমার রবের রিসালত (যা নিয়ে আমাকে পাঠানো হয়েছে তা) তোমাদের কাছে পৌঁছে দিয়েছিলাম এবং তোমাদের কল্যাণ কামনা করেছিলাম, কিন্তু তোমরা কল্যাণকামীদেরকে পছন্দ কর না [১]।’
وَلُوطًا إِذۡ قَالَ لِقَوۡمِهِۦۤ أَتَأۡتُونَ ٱلۡفَـٰحِشَةَ مَا سَبَقَكُم بِهَا مِنۡ أَحَدࣲ مِّنَ ٱلۡعَـٰلَمِینَ ﴿٨٠﴾
আর আমি লূতকেও [১] পাঠিয়েছিলাম [২]। তিনি তার সম্প্রদায়কে বলেছিলেন, ‘তোমরা কি এমন খারাপ কাজ করে যাচ্ছ যা তোমাদের আগে সৃষ্টিকুলের কেউ করেনি ?
إِنَّكُمۡ لَتَأۡتُونَ ٱلرِّجَالَ شَهۡوَةࣰ مِّن دُونِ ٱلنِّسَاۤءِۚ بَلۡ أَنتُمۡ قَوۡمࣱ مُّسۡرِفُونَ ﴿٨١﴾
‘তোমরা তো কাম-তৃপ্তির জন্য নারীদের ছেড়ে পুরুষের কাছে যাও, বরং তোমরা সীমালংঘনকারী সম্প্রদায়।’
وَمَا كَانَ جَوَابَ قَوۡمِهِۦۤ إِلَّاۤ أَن قَالُوۤاْ أَخۡرِجُوهُم مِّن قَرۡیَتِكُمۡۖ إِنَّهُمۡ أُنَاسࣱ یَتَطَهَّرُونَ ﴿٨٢﴾
উত্তরে তার সম্প্রদায় শুধু বলল, ‘এদেরকে তোমাদের জনপদ থেকে বহিস্কার কর, এরা তো এমন লোক যারা অতি পবিত্র হতে চায়।’
فَأَنجَیۡنَـٰهُ وَأَهۡلَهُۥۤ إِلَّا ٱمۡرَأَتَهُۥ كَانَتۡ مِنَ ٱلۡغَـٰبِرِینَ ﴿٨٣﴾
অতঃপর আমরা তাকে ও তার পরিজনদের সবাইকে উদ্ধার করেছিলাম, তার স্ত্রী ছাড়া, সে ছিল পিছনে অবস্থানকারীদের অন্তর্ভুক্ত।
وَأَمۡطَرۡنَا عَلَیۡهِم مَّطَرࣰاۖ فَٱنظُرۡ كَیۡفَ كَانَ عَـٰقِبَةُ ٱلۡمُجۡرِمِینَ ﴿٨٤﴾
আর আমরা তাদের উপর ভীষণভাবে বৃষ্টি বর্ষণ করেছিলাম। কাজেই দেখুন, অপরাধীদের পরিণাম কিরূপ হয়েছিল [১]।
وَإِلَىٰ مَدۡیَنَ أَخَاهُمۡ شُعَیۡبࣰاۚ قَالَ یَـٰقَوۡمِ ٱعۡبُدُواْ ٱللَّهَ مَا لَكُم مِّنۡ إِلَـٰهٍ غَیۡرُهُۥۖ قَدۡ جَاۤءَتۡكُم بَیِّنَةࣱ مِّن رَّبِّكُمۡۖ فَأَوۡفُواْ ٱلۡكَیۡلَ وَٱلۡمِیزَانَ وَلَا تَبۡخَسُواْ ٱلنَّاسَ أَشۡیَاۤءَهُمۡ وَلَا تُفۡسِدُواْ فِی ٱلۡأَرۡضِ بَعۡدَ إِصۡلَـٰحِهَاۚ ذَ ٰلِكُمۡ خَیۡرࣱ لَّكُمۡ إِن كُنتُم مُّؤۡمِنِینَ ﴿٨٥﴾
আর মাদয়ানবাসীদের [১] নিকট তাদের ভাই শু’আইবকে পাঠিয়েছিলাম। তিনি বলেছিলেন, ‘হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা আল্লাহ্র ইবাদত কর, তিনি ব্যতীত তোমাদের অন্য কোনো সত্য ইলাহ নেই; তোমাদের রবের কাছ থেকে তোমাদের কাছে স্পষ্ট প্রমাণ এসেছে। কাজেই তোমরা মাপ ও অজন ঠিকভাবে দেবে, লোকদেরকে তাদের প্রাপ্য বস্তু কম দেবে না এবং দুনিয়ার শান্তি স্থাপনের পর বিপর্যয় ঘটাবে না; তোমরা মুমিন হলে তোমাদের জন্য এটাই কল্যাণকর।’
وَلَا تَقۡعُدُواْ بِكُلِّ صِرَ ٰطࣲ تُوعِدُونَ وَتَصُدُّونَ عَن سَبِیلِ ٱللَّهِ مَنۡ ءَامَنَ بِهِۦ وَتَبۡغُونَهَا عِوَجࣰاۚ وَٱذۡكُرُوۤاْ إِذۡ كُنتُمۡ قَلِیلࣰا فَكَثَّرَكُمۡۖ وَٱنظُرُواْ كَیۡفَ كَانَ عَـٰقِبَةُ ٱلۡمُفۡسِدِینَ ﴿٨٦﴾
‘আর তাঁর প্রতি যারা ঈমান এনেছে তাদেরকে ভয় দেখানোর জন্য, আল্লাহ্র পথ থেকে বাধা দিতে এবং তাতে বক্রতা অনুসন্ধান করতে তোমরা প্রতিটি পথে বসে থেকো না।’ আর স্মরণ কর, ‘তোমরা যখন সংখ্যায় কম ছিলে, আল্লাহ্ তখন তোমাদের সংখ্যা বৃদ্ধি করেছেন এবং বিপর্যয় সৃষ্টিকারীদের পরিণাম কিরূপ ছিল, তা লক্ষ্য কর।’
وَإِن كَانَ طَاۤىِٕفَةࣱ مِّنكُمۡ ءَامَنُواْ بِٱلَّذِیۤ أُرۡسِلۡتُ بِهِۦ وَطَاۤىِٕفَةࣱ لَّمۡ یُؤۡمِنُواْ فَٱصۡبِرُواْ حَتَّىٰ یَحۡكُمَ ٱللَّهُ بَیۡنَنَاۚ وَهُوَ خَیۡرُ ٱلۡحَـٰكِمِینَ ﴿٨٧﴾
‘আমি যা নিয়ে প্রেরিত হয়েছি তাতে যদি তোমাদের কোনো দল ঈমান আনে এবং কোনো দল না আনে, তবে ধৈর্য ধর, যতক্ষণ না আল্লাহ্ আমাদের মধ্যে ফয়সালা করে দেন, আর তিনিই শ্রেষ্ঠ ফয়সালাকারী।’
۞ قَالَ ٱلۡمَلَأُ ٱلَّذِینَ ٱسۡتَكۡبَرُواْ مِن قَوۡمِهِۦ لَنُخۡرِجَنَّكَ یَـٰشُعَیۡبُ وَٱلَّذِینَ ءَامَنُواْ مَعَكَ مِن قَرۡیَتِنَاۤ أَوۡ لَتَعُودُنَّ فِی مِلَّتِنَاۚ قَالَ أَوَلَوۡ كُنَّا كَـٰرِهِینَ ﴿٨٨﴾
তাঁর সম্প্রদায়ের অহংকারী নেতারা বলল, ‘হে শু'আইব! আমরা অবশ্যই তোমাকে ও তোমার সাথে যারা ঈমান এনেছে তাদেরকে আমাদের জনপদ থেকে বের করে দেব অথবা তোমাদেরকে আমাদের ধর্মাদর্শে ফিরে আসতে হবে।’ তিনি বললেন, ‘যদিও আমরা সেটাকে ঘৃণা করি তবুও?’
قَدِ ٱفۡتَرَیۡنَا عَلَى ٱللَّهِ كَذِبًا إِنۡ عُدۡنَا فِی مِلَّتِكُم بَعۡدَ إِذۡ نَجَّىٰنَا ٱللَّهُ مِنۡهَاۚ وَمَا یَكُونُ لَنَاۤ أَن نَّعُودَ فِیهَاۤ إِلَّاۤ أَن یَشَاۤءَ ٱللَّهُ رَبُّنَاۚ وَسِعَ رَبُّنَا كُلَّ شَیۡءٍ عِلۡمًاۚ عَلَى ٱللَّهِ تَوَكَّلۡنَاۚ رَبَّنَا ٱفۡتَحۡ بَیۡنَنَا وَبَیۡنَ قَوۡمِنَا بِٱلۡحَقِّ وَأَنتَ خَیۡرُ ٱلۡفَـٰتِحِینَ ﴿٨٩﴾
‘তোমাদের ধর্মাদর্শ থেকে আল্লাহ আমাদেরকে উদ্ধার করার পর যদি আমরা তাতে ফিরে যাই তবে তো আমরা আল্লাহর প্রতি মিথ্যা আরোপ করব। আর আমাদের রব আল্লাহ ইচ্ছে না করলে তাতে ফিরে যাওয়া আমাদের জন্য সমীচীন নয়। সবকিছুই আমাদের রবের জ্ঞানের সীমায় রয়েছে, আমরা আল্লাহ্র উপরই নির্ভর করি। হে আমাদের রব! আমাদের ও আমাদের সম্প্রদায়ের মধ্যে ন্যায্যভাবে ফয়সালা করে দিন এবং আপনিই শ্রেষ্ঠ ফয়সালাকারী।’
وَقَالَ ٱلۡمَلَأُ ٱلَّذِینَ كَفَرُواْ مِن قَوۡمِهِۦ لَىِٕنِ ٱتَّبَعۡتُمۡ شُعَیۡبًا إِنَّكُمۡ إِذࣰا لَّخَـٰسِرُونَ ﴿٩٠﴾
আর তাঁর সম্প্রদায়ের নেতাদের মধ্যে যারা কুফরী করেছিল তারা বলল, ‘তোমরা যদি শু'আইবকে অনুসরণ কর, তবে নিশ্চয় তোমরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’
فَأَخَذَتۡهُمُ ٱلرَّجۡفَةُ فَأَصۡبَحُواْ فِی دَارِهِمۡ جَـٰثِمِینَ ﴿٩١﴾
অতঃপর ভূমিকম্প তাদেরকে পাকড়াও করল। ফলে তারা নিজ নিজ ঘরে উপুড় হয়ে পড়ে (মরে) রইল।
ٱلَّذِینَ كَذَّبُواْ شُعَیۡبࣰا كَأَن لَّمۡ یَغۡنَوۡاْ فِیهَاۚ ٱلَّذِینَ كَذَّبُواْ شُعَیۡبࣰا كَانُواْ هُمُ ٱلۡخَـٰسِرِینَ ﴿٩٢﴾
শু'আইবকে যারা মিথ্যাবাদী বলেছিল, ‘মনে হল তারা যেন কখনো সেখানে বসবাসই করেনি। শু'আইবকে যারা মিথ্যাবাদী বলেছিল তারাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল।
فَتَوَلَّىٰ عَنۡهُمۡ وَقَالَ یَـٰقَوۡمِ لَقَدۡ أَبۡلَغۡتُكُمۡ رِسَـٰلَـٰتِ رَبِّی وَنَصَحۡتُ لَكُمۡۖ فَكَیۡفَ ءَاسَىٰ عَلَىٰ قَوۡمࣲ كَـٰفِرِینَ ﴿٩٣﴾
অতঃপর তিনি তাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলেন এবং বললেন, ‘হে আমার সম্পপ্রদায়! আমার রবের রিসালাত (প্রাপ্ত বাণী) আমি তো তোমাদের কাছে পৌঁছে দিয়েছি এবং তোমাদের কল্যাণ কামনা করেছি। সুতরাং আমি কাফের সম্প্রদায়ের জন্য কি করে আক্ষেপ করি [১]!’
وَمَاۤ أَرۡسَلۡنَا فِی قَرۡیَةࣲ مِّن نَّبِیٍّ إِلَّاۤ أَخَذۡنَاۤ أَهۡلَهَا بِٱلۡبَأۡسَاۤءِ وَٱلضَّرَّاۤءِ لَعَلَّهُمۡ یَضَّرَّعُونَ ﴿٩٤﴾
আর আমরা কোনো জনপদে নবী পাঠালেই সেখানকার অধিবাসীদেরকে অর্থ-সংকট ও দুঃখ-কষ্ট দ্বারা আক্রান্ত করি, যাতে তারা কাকুতি-মিনতি করে [১]।
ثُمَّ بَدَّلۡنَا مَكَانَ ٱلسَّیِّئَةِ ٱلۡحَسَنَةَ حَتَّىٰ عَفَواْ وَّقَالُواْ قَدۡ مَسَّ ءَابَاۤءَنَا ٱلضَّرَّاۤءُ وَٱلسَّرَّاۤءُ فَأَخَذۡنَـٰهُم بَغۡتَةࣰ وَهُمۡ لَا یَشۡعُرُونَ ﴿٩٥﴾
তারপর আমরা অকল্যাণকে কল্যাণে পরিবর্তিত করি। অবশেষে তারা প্রাচুর্যের অধিকারী হয় এবং বলে, 'আমাদের পূর্বপুরুষরাও তো দুঃখ- সুখ ভোগ করেছে।’ অতঃপর হঠাৎ আমরা তাদেরকে পাকড়াও করি, এমনভাবে যে, তারা উপলব্ধিও করতে পারে না [১]।
وَلَوۡ أَنَّ أَهۡلَ ٱلۡقُرَىٰۤ ءَامَنُواْ وَٱتَّقَوۡاْ لَفَتَحۡنَا عَلَیۡهِم بَرَكَـٰتࣲ مِّنَ ٱلسَّمَاۤءِ وَٱلۡأَرۡضِ وَلَـٰكِن كَذَّبُواْ فَأَخَذۡنَـٰهُم بِمَا كَانُواْ یَكۡسِبُونَ ﴿٩٦﴾
আর যদি সে সব জনপদের অধিবাসীরা ঈমান আনত এবং তাকওয়া অবলম্বন করত তবে অবশ্যই আমরা তাদের জন্য আসমান ও যমীনের বরকতসমূহ উন্মুক্ত করে দিতাম [১], কিন্তু তারা মিথারোপ করেছিল; কাজেই আমারা তাদের কৃতকর্মের জন্য তাদেরকে পাকড়াও করেছি।
أَفَأَمِنَ أَهۡلُ ٱلۡقُرَىٰۤ أَن یَأۡتِیَهُم بَأۡسُنَا بَیَـٰتࣰا وَهُمۡ نَاۤىِٕمُونَ ﴿٩٧﴾
তবে কি জনপদের অধিবাসীরা নিরাপদ হয়ে গেছে যে, আমাদের শাস্তি তাদের উপর রাতে আসবে, যখন তারা থাকবে গভীর ঘুমে?
أَوَأَمِنَ أَهۡلُ ٱلۡقُرَىٰۤ أَن یَأۡتِیَهُم بَأۡسُنَا ضُحࣰى وَهُمۡ یَلۡعَبُونَ ﴿٩٨﴾
নাকি জনপদের অধিবাসীরা নিরাপদ হয়ে গেছে যে, আমাদের শাস্তি তাদের উপর আসবে দিনের বেলা, যখন তারা খেলাধুলায় মেতে থাকবে?
أَفَأَمِنُواْ مَكۡرَ ٱللَّهِۚ فَلَا یَأۡمَنُ مَكۡرَ ٱللَّهِ إِلَّا ٱلۡقَوۡمُ ٱلۡخَـٰسِرُونَ ﴿٩٩﴾
তারা কি আল্লাহর কৌশল থেকেও নিরাপদ হয়ে গেছে? বস্তুত ক্ষতিগ্রস্ত সম্প্রদায় ছাড়া কেউই আল্লাহর কৌশলকে নিরাপদ মনে করে না [১]।
أَوَلَمۡ یَهۡدِ لِلَّذِینَ یَرِثُونَ ٱلۡأَرۡضَ مِنۢ بَعۡدِ أَهۡلِهَاۤ أَن لَّوۡ نَشَاۤءُ أَصَبۡنَـٰهُم بِذُنُوبِهِمۡۚ وَنَطۡبَعُ عَلَىٰ قُلُوبِهِمۡ فَهُمۡ لَا یَسۡمَعُونَ ﴿١٠٠﴾
কোনো দেশের জনগনের পর যারা ঐ দেশের উত্তরাধিকারী হয় তাদের কাছে এটা কি প্রতীয়মান হয়নি যে, আমরা ইচ্ছে করলে তাদের পাপের দরুন তাদেরকে শাস্তি দিতে পারি [১]? আর আমরা তাদের হৃদয় মোহর করে দেব, ফলে তারা শুনবে না [২]।
تِلۡكَ ٱلۡقُرَىٰ نَقُصُّ عَلَیۡكَ مِنۡ أَنۢبَاۤىِٕهَاۚ وَلَقَدۡ جَاۤءَتۡهُمۡ رُسُلُهُم بِٱلۡبَیِّنَـٰتِ فَمَا كَانُواْ لِیُؤۡمِنُواْ بِمَا كَذَّبُواْ مِن قَبۡلُۚ كَذَ ٰلِكَ یَطۡبَعُ ٱللَّهُ عَلَىٰ قُلُوبِ ٱلۡكَـٰفِرِینَ ﴿١٠١﴾
এসব জনপদের কিছু বিবরণ আমরা আপনার কাছে বর্ণনা করছি, তাদের কাছে তাদের রাসূলগুণ তো স্পষ্ট প্রমাণসহ এসেছিলেন; কিন্তু পূর্বে তারা যাতে মিথ্যারোপ করেছিল, তাতে তারা ঈমান আনার ছিল না [১], এভাবে আল্লাহ কাফেরদের হৃদয় মোহর করে দেন।
وَمَا وَجَدۡنَا لِأَكۡثَرِهِم مِّنۡ عَهۡدࣲۖ وَإِن وَجَدۡنَاۤ أَكۡثَرَهُمۡ لَفَـٰسِقِینَ ﴿١٠٢﴾
আর আমরা তাদের অধিকাংশকে প্রতিশ্রুতি পালনকারী পাইনি; বরং আমরা তাদের অধিকাংশকে তো ফাসেকই পেয়েছি [১]।
ثُمَّ بَعَثۡنَا مِنۢ بَعۡدِهِم مُّوسَىٰ بِـَٔایَـٰتِنَاۤ إِلَىٰ فِرۡعَوۡنَ وَمَلَإِیْهِۦ فَظَلَمُواْ بِهَاۖ فَٱنظُرۡ كَیۡفَ كَانَ عَـٰقِبَةُ ٱلۡمُفۡسِدِینَ ﴿١٠٣﴾
তারপর আমরা তাদের পরে মূসাকে আমাদের নিদর্শনসহ ফির’আউন ও তার পরিষদবর্গের কাছে প্রেরণ করেছি; কিন্তু তারা সেগুলোর সাথে অত্যাচার করেছে [১]। সুতরাং বিপর্যয় সৃষ্টিকারীদের পরিণাম কি হয়েছিল তা লক্ষ্য করুন।
وَقَالَ مُوسَىٰ یَـٰفِرۡعَوۡنُ إِنِّی رَسُولࣱ مِّن رَّبِّ ٱلۡعَـٰلَمِینَ ﴿١٠٤﴾
আর মূসা বললেন, ‘হে ফির’আউন [১]! নিশ্চয় আমি সৃষ্টিকুলের রবের কাছ থেকে প্রেরিত।’
حَقِیقٌ عَلَىٰۤ أَن لَّاۤ أَقُولَ عَلَى ٱللَّهِ إِلَّا ٱلۡحَقَّۚ قَدۡ جِئۡتُكُم بِبَیِّنَةࣲ مِّن رَّبِّكُمۡ فَأَرۡسِلۡ مَعِیَ بَنِیۤ إِسۡرَ ٰۤءِیلَ ﴿١٠٥﴾
‘এটা স্থির নিশ্চিত যে, আমি আল্লাহ সম্বন্ধে সত্য ছাড়া বলব না। তোমাদের রবের কাছ থেকে স্পষ্ট প্রমাণ নিয়ে আমি তোমাদের কাছে এসেছি, কাজেই বনী ইসরাঈলকে তুমি আমার সাথে পাঠিয়ে দাও [১]।’
قَالَ إِن كُنتَ جِئۡتَ بِـَٔایَةࣲ فَأۡتِ بِهَاۤ إِن كُنتَ مِنَ ٱلصَّـٰدِقِینَ ﴿١٠٦﴾
ফির’আউন বলল, ‘যদি তুমি কোনো নিদর্শন এনে থাক, তবে তুমি সত্যবাদী হলে তা পেশ কর।’
فَأَلۡقَىٰ عَصَاهُ فَإِذَا هِیَ ثُعۡبَانࣱ مُّبِینࣱ ﴿١٠٧﴾
অতঃপর মূসা তাঁর হাতের লাঠি নিক্ষেপ করলেন এবং সাথে সাথেই তা এক অজগর সাপে পরিণত হল [১]।
وَنَزَعَ یَدَهُۥ فَإِذَا هِیَ بَیۡضَاۤءُ لِلنَّـٰظِرِینَ ﴿١٠٨﴾
এবং তিনি তাঁর হাত বের করলেন [১] আর সাথে সাথেই তা দর্শকদের কাছে শুভ্র উজ্জ্বল দেখাতে লাগল [২]।
قَالَ ٱلۡمَلَأُ مِن قَوۡمِ فِرۡعَوۡنَ إِنَّ هَـٰذَا لَسَـٰحِرٌ عَلِیمࣱ ﴿١٠٩﴾
ফির’আউন সম্প্রদায়ের নেতারা বলল, ‘এ তো একজন সুদক্ষ জাদুকর [১],’
یُرِیدُ أَن یُخۡرِجَكُم مِّنۡ أَرۡضِكُمۡۖ فَمَاذَا تَأۡمُرُونَ ﴿١١٠﴾
‘এ তোমাদেরকে তোমাদের দেশ থেকে বের করে দিতে চায়, এখন তোমরা কি পরামর্শ দাও [১]?’
قَالُوۤاْ أَرۡجِهۡ وَأَخَاهُ وَأَرۡسِلۡ فِی ٱلۡمَدَاۤىِٕنِ حَـٰشِرِینَ ﴿١١١﴾
তারা বলল, ‘তাকে ও তার ভাইকে কিছু অবকাশ দাও এবং নগরে নগরে সংগ্রাহকদেরকে পাঠাও [১],’
وَجَاۤءَ ٱلسَّحَرَةُ فِرۡعَوۡنَ قَالُوۤاْ إِنَّ لَنَا لَأَجۡرًا إِن كُنَّا نَحۡنُ ٱلۡغَـٰلِبِینَ ﴿١١٣﴾
জাদুকররা ফির’আউনের কাছে এসে বলল, ‘আমরা যদি বিজয়ী হই তবে আমাদের জন্য পুরস্কার থাকবে তো [১]?’
قَالَ نَعَمۡ وَإِنَّكُمۡ لَمِنَ ٱلۡمُقَرَّبِینَ ﴿١١٤﴾
সে বলল, হ্যাঁ এবং তোমরা অবশ্যই আমার ঘনিষ্ঠদের অন্তর্ভুক্ত হবে।’
قَالُواْ یَـٰمُوسَىٰۤ إِمَّاۤ أَن تُلۡقِیَ وَإِمَّاۤ أَن نَّكُونَ نَحۡنُ ٱلۡمُلۡقِینَ ﴿١١٥﴾
তারা বলল, ‘হে মূসা! তুমিই কি নিক্ষেপ করবে, না আমরাই নিক্ষেপ করব [১]?’
قَالَ أَلۡقُواْۖ فَلَمَّاۤ أَلۡقَوۡاْ سَحَرُوۤاْ أَعۡیُنَ ٱلنَّاسِ وَٱسۡتَرۡهَبُوهُمۡ وَجَاۤءُو بِسِحۡرٍ عَظِیمࣲ ﴿١١٦﴾
তিনি বললেন, ‘তোমরাই নিক্ষেপ কর’। যখন তারা নিক্ষেপ করল, তখন তারা লোকদের চোখে জাদু করল, তাদেরকে আতংকিত করল এবং তারা এক বড় রকমের জাদু নিয়ে এল [১]।
۞ وَأَوۡحَیۡنَاۤ إِلَىٰ مُوسَىٰۤ أَنۡ أَلۡقِ عَصَاكَۖ فَإِذَا هِیَ تَلۡقَفُ مَا یَأۡفِكُونَ ﴿١١٧﴾
আর আমরা মূসার কাছে ওহী পাঠালাম যে, ‘আপনি আপনার লাঠি নিক্ষেপ করুন' [১]। সাথে সাথে সেটা তারা যে অলীক বস্তু বানিয়েছিল তা গিলে ফেলতে লাগল;
فَوَقَعَ ٱلۡحَقُّ وَبَطَلَ مَا كَانُواْ یَعۡمَلُونَ ﴿١١٨﴾
ফলে সত্য প্রতিষ্ঠিত হল এবং তারা যা করছিল তা বাতিল হয়ে গেল।
فَغُلِبُواْ هُنَالِكَ وَٱنقَلَبُواْ صَـٰغِرِینَ ﴿١١٩﴾
সুতরাং সেখানে তারা পরাভূত হল ও লাঞ্ছিত হয়ে ফিরে গেল,
قَالُوۤاْ ءَامَنَّا بِرَبِّ ٱلۡعَـٰلَمِینَ ﴿١٢١﴾
তারা বলল, ‘আমরা ঈমান আনলাম সৃষ্টিকুলের রবের প্রতি।’
قَالَ فِرۡعَوۡنُ ءَامَنتُم بِهِۦ قَبۡلَ أَنۡ ءَاذَنَ لَكُمۡۖ إِنَّ هَـٰذَا لَمَكۡرࣱ مَّكَرۡتُمُوهُ فِی ٱلۡمَدِینَةِ لِتُخۡرِجُواْ مِنۡهَاۤ أَهۡلَهَاۖ فَسَوۡفَ تَعۡلَمُونَ ﴿١٢٣﴾
ফির'আউন বলল, ‘কি! আমি তোমাদেরকে অনুমতি দেয়ার আগে তোমরা তাতে ঈমান আনলে? এটা তো এক চক্রান্ত; তোমরা এ চক্রান্ত করেছ নগরবাসীদেরকে এখান থেকে বের করে দেয়ার জন্য [১]। সুতরাং তোমরা শীঘ্রই এর পরিণাম জানতে পারবে।
لَأُقَطِّعَنَّ أَیۡدِیَكُمۡ وَأَرۡجُلَكُم مِّنۡ خِلَـٰفࣲ ثُمَّ لَأُصَلِّبَنَّكُمۡ أَجۡمَعِینَ ﴿١٢٤﴾
‘অবশ্যই অবশ্যই আমি তোমাদের হাত-পা বিপরীত দিক থেকে কেটে টুকরো করে ফেলবো; তারপর অবশ্যই তোমাদের সবাইকে শূলে চড়াব [১]।’
قَالُوۤاْ إِنَّاۤ إِلَىٰ رَبِّنَا مُنقَلِبُونَ ﴿١٢٥﴾
তারা বলল, ‘নিশ্চয় আমরা আমাদের রবের কাছেই ফিরে যাব;’
وَمَا تَنقِمُ مِنَّاۤ إِلَّاۤ أَنۡ ءَامَنَّا بِـَٔایَـٰتِ رَبِّنَا لَمَّا جَاۤءَتۡنَاۚ رَبَّنَاۤ أَفۡرِغۡ عَلَیۡنَا صَبۡرࣰا وَتَوَفَّنَا مُسۡلِمِینَ ﴿١٢٦﴾
‘আর তুমি তো আমাদেরকে শাস্তি দিচ্ছ শুধু এ জন্যে যে, আমরা আমাদের রবের নিদর্শনে ঈমান এনেছি যখন তা আমাদের কাছে এসেছে। হে আমাদের রব! আমাদেরকে পরিপূর্ণ ধৈর্য দান করুন এবং মুসলিমরূপে আমাদেরকে মৃত্যু দিন।’
وَقَالَ ٱلۡمَلَأُ مِن قَوۡمِ فِرۡعَوۡنَ أَتَذَرُ مُوسَىٰ وَقَوۡمَهُۥ لِیُفۡسِدُواْ فِی ٱلۡأَرۡضِ وَیَذَرَكَ وَءَالِهَتَكَۚ قَالَ سَنُقَتِّلُ أَبۡنَاۤءَهُمۡ وَنَسۡتَحۡیِۦ نِسَاۤءَهُمۡ وَإِنَّا فَوۡقَهُمۡ قَـٰهِرُونَ ﴿١٢٧﴾
আর ফির’আউন সম্প্রদায়ের নেতারা বলল, ‘আপনি কি মূসা ও তার সম্প্রদায়কে যমীনে বিপর্যয় সৃষ্টি করতে এবং আপনাকে ও আপনার উপাস্যদেরকে [১] বর্জন করতে দেবেন? সে বলল, ‘শীঘ্রই আমরা তাদের পুত্রদেরকে হত্যা করব এবং তাদের নারীদেরকে জীবিত রাখব। আর নিশ্চয় আমরা তাদের উপর শক্তিধর [২]।’
قَالَ مُوسَىٰ لِقَوۡمِهِ ٱسۡتَعِینُواْ بِٱللَّهِ وَٱصۡبِرُوۤاْۖ إِنَّ ٱلۡأَرۡضَ لِلَّهِ یُورِثُهَا مَن یَشَاۤءُ مِنۡ عِبَادِهِۦۖ وَٱلۡعَـٰقِبَةُ لِلۡمُتَّقِینَ ﴿١٢٨﴾
মূসা তার সম্প্রদায়কে বললেন, ‘আল্লাহ্র কাছে সাহায্য চাও এবং ধৈর্য ধর; নিশ্চয় যমীন আল্লাহরই। তিনি তাঁর বান্দাদের মধ্যে যাকে ইচ্ছে তার ওয়ারিশ বানান। আর শুভ পরিণাম তো মুত্তাকীদের জন্যই [১]।’
قَالُوۤاْ أُوذِینَا مِن قَبۡلِ أَن تَأۡتِیَنَا وَمِنۢ بَعۡدِ مَا جِئۡتَنَاۚ قَالَ عَسَىٰ رَبُّكُمۡ أَن یُهۡلِكَ عَدُوَّكُمۡ وَیَسۡتَخۡلِفَكُمۡ فِی ٱلۡأَرۡضِ فَیَنظُرَ كَیۡفَ تَعۡمَلُونَ ﴿١٢٩﴾
তারা বলল, ‘আপনি আমাদের কাছে আসার আগেও আমরা নির্যাতিত হয়েছি এবং আপনি আসার পরও।’ তিনি বললেন, শীঘ্রই তোমাদের রব তোমাদের শক্রকে ধ্বংস করবেন এবং তিনি তোমাদেরকে যমীনে স্থলাভিষিক্ত করবেন, তারপর তোমরা কি কর তা তিনি লক্ষ্য করবেন।’
وَلَقَدۡ أَخَذۡنَاۤ ءَالَ فِرۡعَوۡنَ بِٱلسِّنِینَ وَنَقۡصࣲ مِّنَ ٱلثَّمَرَ ٰتِ لَعَلَّهُمۡ یَذَّكَّرُونَ ﴿١٣٠﴾
আর অবশ্যই আমরা ফির’আউনের অনুসারীদেরকে দুর্ভিক্ষ ও ফল-ফসলের ক্ষতির দ্বারা আক্রান্ত করেছি, যাতে তারা উপদেশ গ্রহণ করে।
فَإِذَا جَاۤءَتۡهُمُ ٱلۡحَسَنَةُ قَالُواْ لَنَا هَـٰذِهِۦۖ وَإِن تُصِبۡهُمۡ سَیِّئَةࣱ یَطَّیَّرُواْ بِمُوسَىٰ وَمَن مَّعَهُۥۤۗ أَلَاۤ إِنَّمَا طَـٰۤىِٕرُهُمۡ عِندَ ٱللَّهِ وَلَـٰكِنَّ أَكۡثَرَهُمۡ لَا یَعۡلَمُونَ ﴿١٣١﴾
অতঃপর যখন তাদের কাছে কোনো কল্যাণ আসত, তখন তারা বলত, ‘এটা আমাদের পাওনা।’ আর যখন কোনো অকল্যাণ পৌঁছত তখন তারা মূসা ও তার সাথীদেরকে অলক্ষুণে [১] গণ্য করত। সাবধান! তাদের অকল্যাণ তো কেবল আল্লাহর নিয়ন্ত্রণে; কিন্তু তাদের অনেকেই জানে না।
وَقَالُواْ مَهۡمَا تَأۡتِنَا بِهِۦ مِنۡ ءَایَةࣲ لِّتَسۡحَرَنَا بِهَا فَمَا نَحۡنُ لَكَ بِمُؤۡمِنِینَ ﴿١٣٢﴾
আর তারা বলত, আমাদেরকে জাদু করার জন্য তুমি যে কোনো নিদর্শন আমাদের কাছে পেশ কর না কেন, আমরা তোমার উপর ঈমান আনব না।
فَأَرۡسَلۡنَا عَلَیۡهِمُ ٱلطُّوفَانَ وَٱلۡجَرَادَ وَٱلۡقُمَّلَ وَٱلضَّفَادِعَ وَٱلدَّمَ ءَایَـٰتࣲ مُّفَصَّلَـٰتࣲ فَٱسۡتَكۡبَرُواْ وَكَانُواْ قَوۡمࣰا مُّجۡرِمِینَ ﴿١٣٣﴾
অতঃপর আমরা তাদের উপর তুফান, পঙ্গপাল, উকুন, ব্যাঙ ও রক্ত বিস্তারিত নিদর্শন হিসেবে প্রেরণ করি। এরপরও তারা অহংকার করল। আর তারা ছিল এক অপরাধী সম্প্রদায় [১]।
وَلَمَّا وَقَعَ عَلَیۡهِمُ ٱلرِّجۡزُ قَالُواْ یَـٰمُوسَى ٱدۡعُ لَنَا رَبَّكَ بِمَا عَهِدَ عِندَكَۖ لَىِٕن كَشَفۡتَ عَنَّا ٱلرِّجۡزَ لَنُؤۡمِنَنَّ لَكَ وَلَنُرۡسِلَنَّ مَعَكَ بَنِیۤ إِسۡرَ ٰۤءِیلَ ﴿١٣٤﴾
আর যখন তাদের উপর শাস্তি আসত তারা বলত, ‘হে মূসা! তুমি তোমার রবের কাছে আমাদের জন্য প্রার্থনা কর তোমার সাথে তিনি যে অংগীকার করেছেন সে অনুযায়ী; যদি তুমি আমাদের থেকে শাস্তি দূর করে দিতে পার তবে আমরা তো তোমার উপর ঈমান আনবই এবং বনী ইসরাঈলকেও তোমার সাথে অবশ্যই যেতে দেব।’
فَلَمَّا كَشَفۡنَا عَنۡهُمُ ٱلرِّجۡزَ إِلَىٰۤ أَجَلٍ هُم بَـٰلِغُوهُ إِذَا هُمۡ یَنكُثُونَ ﴿١٣٥﴾
আমরা যখনই তাদের উপর থেকে শাস্তি [১] দূর করে দিতাম এক নির্দিষ্ট সময়ের জন্য যা তাদের জন্য নির্ধারিত ছিল, তারা তখনই তাদের অংগীকার ভংগ করত।
فَٱنتَقَمۡنَا مِنۡهُمۡ فَأَغۡرَقۡنَـٰهُمۡ فِی ٱلۡیَمِّ بِأَنَّهُمۡ كَذَّبُواْ بِـَٔایَـٰتِنَا وَكَانُواْ عَنۡهَا غَـٰفِلِینَ ﴿١٣٦﴾
কাজেই আমরা তাদের থেকে প্রতিশোধ নিয়েছি এবং তাদেরকে অতল সাগরে ডুবিয়ে দিয়েছি। কারণ, তারা আমাদের নিদর্শনকে অস্বীকার করত এবং এ সম্বন্ধে তারা ছিল গাফেল।
وَأَوۡرَثۡنَا ٱلۡقَوۡمَ ٱلَّذِینَ كَانُواْ یُسۡتَضۡعَفُونَ مَشَـٰرِقَ ٱلۡأَرۡضِ وَمَغَـٰرِبَهَا ٱلَّتِی بَـٰرَكۡنَا فِیهَاۖ وَتَمَّتۡ كَلِمَتُ رَبِّكَ ٱلۡحُسۡنَىٰ عَلَىٰ بَنِیۤ إِسۡرَ ٰۤءِیلَ بِمَا صَبَرُواْۖ وَدَمَّرۡنَا مَا كَانَ یَصۡنَعُ فِرۡعَوۡنُ وَقَوۡمُهُۥ وَمَا كَانُواْ یَعۡرِشُونَ ﴿١٣٧﴾
যে সম্প্রদায়কে দুর্বল মনে করা হত তাদেরকে আমরা আমাদের কল্যাণপ্রাপ্ত রাজ্যের পূর্ব ও পশ্চিমের উত্তরাধিকারী করি [১]; এবং বনী ইসরাঈল সম্বন্ধে আপনার রবের শুভ বাণী সত্যে পরিণত হল, যেহেতু তারা ধৈর্য ধরেছিল, আর ফির’আউন ও তার সম্প্রদায়ের শিল্প এবং যেসব প্রাসাদ তারা নির্মাণ করেছিল তা ধ্বংস করেছি।
وَجَـٰوَزۡنَا بِبَنِیۤ إِسۡرَ ٰۤءِیلَ ٱلۡبَحۡرَ فَأَتَوۡاْ عَلَىٰ قَوۡمࣲ یَعۡكُفُونَ عَلَىٰۤ أَصۡنَامࣲ لَّهُمۡۚ قَالُواْ یَـٰمُوسَى ٱجۡعَل لَّنَاۤ إِلَـٰهࣰا كَمَا لَهُمۡ ءَالِهَةࣱۚ قَالَ إِنَّكُمۡ قَوۡمࣱ تَجۡهَلُونَ ﴿١٣٨﴾
আর আমরা বনী ইসরাঈলকে সাগর পার করিয়ে দেই; তারপর তারা মূর্তিপূজায় রত এক জাতির কাছে উপস্থিত হয়। তারা বলল, ‘হে মূসা! তাদের মা’বুদদের ন্যায় আমাদের জন্যও একজন মা’বুদ স্থির করে দাও [১]। তিনি বললেন, ‘তোমরা তো এক জাহিল সম্প্রদায়।’
إِنَّ هَـٰۤؤُلَاۤءِ مُتَبَّرࣱ مَّا هُمۡ فِیهِ وَبَـٰطِلࣱ مَّا كَانُواْ یَعۡمَلُونَ ﴿١٣٩﴾
‘এসব লোক যাতে লিপ্ত রয়েছে তা তো বিধ্বস্ত করা হবে এবং তারা যা করছে তাও অমূলক।’
قَالَ أَغَیۡرَ ٱللَّهِ أَبۡغِیكُمۡ إِلَـٰهࣰا وَهُوَ فَضَّلَكُمۡ عَلَى ٱلۡعَـٰلَمِینَ ﴿١٤٠﴾
তিনি আরো বললেন, ‘আল্লাহ্ ছাড়া তোমাদের জন্য আমি কি অন্য ইলাহ খোঁজ করব অথচ তিনি তোমাদেরকে সৃষ্টিকুলের উপর শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন?’
وَإِذۡ أَنجَیۡنَـٰكُم مِّنۡ ءَالِ فِرۡعَوۡنَ یَسُومُونَكُمۡ سُوۤءَ ٱلۡعَذَابِ یُقَتِّلُونَ أَبۡنَاۤءَكُمۡ وَیَسۡتَحۡیُونَ نِسَاۤءَكُمۡۚ وَفِی ذَ ٰلِكُم بَلَاۤءࣱ مِّن رَّبِّكُمۡ عَظِیمࣱ ﴿١٤١﴾
আর স্মরণ কর, যখন আমরা তোমাদেরকে ফির’আউনের অনুসারীদের হাত থেকে উদ্ধার করেছি যারা তোমাদেরকে নিকৃষ্ট শাস্তি দিত। তারা তোমাদের পুত্রসন্তানদেরকে হত্যা করত এবং তোমাদের নারীদেরকে জীবিত রাখত; এতে ছিল তোমাদের রবের এক মহাপরীক্ষা [১]।
۞ وَوَ ٰعَدۡنَا مُوسَىٰ ثَلَـٰثِینَ لَیۡلَةࣰ وَأَتۡمَمۡنَـٰهَا بِعَشۡرࣲ فَتَمَّ مِیقَـٰتُ رَبِّهِۦۤ أَرۡبَعِینَ لَیۡلَةࣰۚ وَقَالَ مُوسَىٰ لِأَخِیهِ هَـٰرُونَ ٱخۡلُفۡنِی فِی قَوۡمِی وَأَصۡلِحۡ وَلَا تَتَّبِعۡ سَبِیلَ ٱلۡمُفۡسِدِینَ ﴿١٤٢﴾
আর মূসার জন্য আমরা ত্রিশ রাতের ওয়াদা করি [১] এবং আরো দশ দিয়ে তা পূর্ণ করি। এভাবে তার রবের নির্ধারিত সময় চল্লিশ রাতে [২] পূর্ণ হয়। এবং মূসা তার ভাই হারূনকে বললেন, ‘আমার অনুপস্থিতিতে আমার সম্প্রদায়ের মধ্যে আপনি আমার প্রতিনিধিত্ব করবেন, সংশোধন করবেন আর বিপর্যয় সৃষ্টিকারীদের পথ অনুসরণ করবেন না [৩]।’
وَلَمَّا جَاۤءَ مُوسَىٰ لِمِیقَـٰتِنَا وَكَلَّمَهُۥ رَبُّهُۥ قَالَ رَبِّ أَرِنِیۤ أَنظُرۡ إِلَیۡكَۚ قَالَ لَن تَرَىٰنِی وَلَـٰكِنِ ٱنظُرۡ إِلَى ٱلۡجَبَلِ فَإِنِ ٱسۡتَقَرَّ مَكَانَهُۥ فَسَوۡفَ تَرَىٰنِیۚ فَلَمَّا تَجَلَّىٰ رَبُّهُۥ لِلۡجَبَلِ جَعَلَهُۥ دَكࣰّا وَخَرَّ مُوسَىٰ صَعِقࣰاۚ فَلَمَّاۤ أَفَاقَ قَالَ سُبۡحَـٰنَكَ تُبۡتُ إِلَیۡكَ وَأَنَا۠ أَوَّلُ ٱلۡمُؤۡمِنِینَ ﴿١٤٣﴾
আর মূসা যখন আমাদের নির্ধারিত সময়ে উপস্থিত হলেন এবং তার রব তার সাথে কথা বললেন [১], তখন তিনি বললেন, ‘হে আমার রব! আমাকে দর্শন দান করুন, আমি আপনাকে দেখব’। তিনি বললেন, ‘আপনি আমাকে দেখতে পাবেন না [২]। আপনি বরং পাহাড়ের দিকেই তাকিয়ে দেখুন [৩], সেটা যদি নিজের জায়গায় স্থির থাকে তবে আপনি আমাকে দেখতে পাবেন।’ যখন তাঁর রব পাহারে জৌতি প্রকাশ করলেন [৪] তখন তা পাহাড়কে চূর্ণ-বিচূর্ণ করল এবং মূসা সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়লেন [৫]। যখন তিনি জ্ঞান ফিরে পেলেন তখন বললেন, ‘মহিমাময় আপনি, আমি অনুতপ্ত হয়ে আপনার কাছে তাওবাহ্ করছি এবং মুমিনদের মধ্যে আমিই প্রথম।’
قَالَ یَـٰمُوسَىٰۤ إِنِّی ٱصۡطَفَیۡتُكَ عَلَى ٱلنَّاسِ بِرِسَـٰلَـٰتِی وَبِكَلَـٰمِی فَخُذۡ مَاۤ ءَاتَیۡتُكَ وَكُن مِّنَ ٱلشَّـٰكِرِینَ ﴿١٤٤﴾
তিনি বললেন, ‘হে মূসা! আমি আপনাকে আমার রিসালাত ও বাক্যালাপ দিয়ে মানুষের উপর বেছে নিয়েছি; কাজেই আমি আপনাকে যা দিলাম তা গ্রহণ করুন এবং শোকর আদায়কারীদের অন্তর্ভুক্ত হোন।
وَكَتَبۡنَا لَهُۥ فِی ٱلۡأَلۡوَاحِ مِن كُلِّ شَیۡءࣲ مَّوۡعِظَةࣰ وَتَفۡصِیلࣰا لِّكُلِّ شَیۡءࣲ فَخُذۡهَا بِقُوَّةࣲ وَأۡمُرۡ قَوۡمَكَ یَأۡخُذُواْ بِأَحۡسَنِهَاۚ سَأُوْرِیكُمۡ دَارَ ٱلۡفَـٰسِقِینَ ﴿١٤٥﴾
আর আমরা তার জন্য ফলকসমূহে [১] সর্ববিষয়ে উপদেশ ও সকল বিষয়ের স্পষ্ট ব্যাখ্যা লিখে [২] দিয়েছি; সুতরাং এগুলো শক্তভাবে ধরুন এবং আপনার সম্প্রদায়কে তার যা উত্তম তাই গ্রহণ করতে নির্দেশ দিন [৩]। আমি শীগ্রই [৪] ফাসেকদের বাসস্থান [৫] তোমাদেরকে দেখাব।
سَأَصۡرِفُ عَنۡ ءَایَـٰتِیَ ٱلَّذِینَ یَتَكَبَّرُونَ فِی ٱلۡأَرۡضِ بِغَیۡرِ ٱلۡحَقِّ وَإِن یَرَوۡاْ كُلَّ ءَایَةࣲ لَّا یُؤۡمِنُواْ بِهَا وَإِن یَرَوۡاْ سَبِیلَ ٱلرُّشۡدِ لَا یَتَّخِذُوهُ سَبِیلࣰا وَإِن یَرَوۡاْ سَبِیلَ ٱلۡغَیِّ یَتَّخِذُوهُ سَبِیلࣰاۚ ذَ ٰلِكَ بِأَنَّهُمۡ كَذَّبُواْ بِـَٔایَـٰتِنَا وَكَانُواْ عَنۡهَا غَـٰفِلِینَ ﴿١٤٦﴾
যমীনে যারা অন্যায়ভাবে অহংকার করে বেড়ায় আমার নিদর্শনসমূহ থেকে আমি তাদের অবশ্যই ফিরিয়ে রাখব। আর তারা প্রত্যেকটি নিদর্শন দেখলেও তাতে ঈমান আনবে না এবং তারা সৎপথ দেখলেও সেটাকে পথ বলে গ্রহণ করবে না, কিন্তু তারা ভুল পথ দেখলে সেটাকে পথ হিসেবে গ্রহণ করবে। এটা এ জন্য যে ,তারা আমাদের নিদর্শনসমূহে নিথ্যারোপ করেছে এবং সে সম্বদ্ধে তারা ছিল গাফেল।
وَٱلَّذِینَ كَذَّبُواْ بِـَٔایَـٰتِنَا وَلِقَاۤءِ ٱلۡـَٔاخِرَةِ حَبِطَتۡ أَعۡمَـٰلُهُمۡۚ هَلۡ یُجۡزَوۡنَ إِلَّا مَا كَانُواْ یَعۡمَلُونَ ﴿١٤٧﴾
আর যারা আমাদের নিদর্শন ও আখেরাতের সাক্ষাতে মিথ্যারোপ করেছে তাদের কাজকর্ম বিফল হয়ে গেছে। তারা যা করে সে অনুযায়ীই তাদেরকে প্রতিফল দেয়া হবে।
وَٱتَّخَذَ قَوۡمُ مُوسَىٰ مِنۢ بَعۡدِهِۦ مِنۡ حُلِیِّهِمۡ عِجۡلࣰا جَسَدࣰا لَّهُۥ خُوَارٌۚ أَلَمۡ یَرَوۡاْ أَنَّهُۥ لَا یُكَلِّمُهُمۡ وَلَا یَهۡدِیهِمۡ سَبِیلًاۘ ٱتَّخَذُوهُ وَكَانُواْ ظَـٰلِمِینَ ﴿١٤٨﴾
আর মূসার সম্প্রদায় তার অনুপস্থিতিতে নিজেদের অলংকার দিয়ে একটি বাছুর তৈরী করল, একটা দেহ, যা 'হাম্বা’ শব্দ করত। তারা কি দেখল না যে, এটা তাদের সাথে কথা বলে না এবং তাদেরকে পথও দেখায় না? তারা এটাকে উপাস্যরূপে গ্রহণ করল এবং তারা ছিল যালেম [১]।
وَلَمَّا سُقِطَ فِیۤ أَیۡدِیهِمۡ وَرَأَوۡاْ أَنَّهُمۡ قَدۡ ضَلُّواْ قَالُواْ لَىِٕن لَّمۡ یَرۡحَمۡنَا رَبُّنَا وَیَغۡفِرۡ لَنَا لَنَكُونَنَّ مِنَ ٱلۡخَـٰسِرِینَ ﴿١٤٩﴾
আর তারা যখন অনুতপ্ত হল এবং দেখল যে, তারা বিপথগামী হয়ে গেছে, তখন তারা বলল, ‘আমাদের রব যদি আমাদের প্রতি দয়া না করেন ও আমাদেরকে ক্ষমা না করেন তবে আমরা তো ক্ষতিগ্রস্ত হবই [১]।’
وَلَمَّا رَجَعَ مُوسَىٰۤ إِلَىٰ قَوۡمِهِۦ غَضۡبَـٰنَ أَسِفࣰا قَالَ بِئۡسَمَا خَلَفۡتُمُونِی مِنۢ بَعۡدِیۤۖ أَعَجِلۡتُمۡ أَمۡرَ رَبِّكُمۡۖ وَأَلۡقَى ٱلۡأَلۡوَاحَ وَأَخَذَ بِرَأۡسِ أَخِیهِ یَجُرُّهُۥۤ إِلَیۡهِۚ قَالَ ٱبۡنَ أُمَّ إِنَّ ٱلۡقَوۡمَ ٱسۡتَضۡعَفُونِی وَكَادُواْ یَقۡتُلُونَنِی فَلَا تُشۡمِتۡ بِیَ ٱلۡأَعۡدَاۤءَ وَلَا تَجۡعَلۡنِی مَعَ ٱلۡقَوۡمِ ٱلظَّـٰلِمِینَ ﴿١٥٠﴾
আর মূসা যখন ক্রুদ্ধ ও ক্ষুদ্ধ হয়ে নিজ সম্প্রদায়ের কাছে ফিরে আসলেন তখন বললেন, ‘আমার অনুপস্থিতিতে তোমরা আমার কত নিকৃষ্ট প্রতিনিধিত্ব করেছ! তোমাদের রবের আদেশের আগেই তোমরা তাড়াহুড়ো করলে? এবং তিনি ফলকগুলো ফেলে দিলেন [১] আর তার ভাইকে চুলে ধরে নিজের দিকে টেনে আনতে লাগলেন। হারূন বললেন, ‘হে আমার সহোদর! লোকেরা তো আমাকে দুর্বল মনে করেছিল এবং আমাকে প্রায় হত্যা করেই ফেলেছিল। সুতরাং তুমি আমার সাথে এমন করবে না যাতে শত্রুরা আনন্দিত হয় এবং আমাকে যালিমদের অন্তর্ভুক্ত করবে না।’
قَالَ رَبِّ ٱغۡفِرۡ لِی وَلِأَخِی وَأَدۡخِلۡنَا فِی رَحۡمَتِكَۖ وَأَنتَ أَرۡحَمُ ٱلرَّ ٰحِمِینَ ﴿١٥١﴾
মূসা বললেন, ‘হে আমার রব! আমাকে ও আমার ভাইকে ক্ষমা করুন এবং আমাদেরকে আপনার রহমতের মধ্যে প্রবিষ্ট করুন। আর আপনিই শ্রেষ্ঠ দয়ালু।’
إِنَّ ٱلَّذِینَ ٱتَّخَذُواْ ٱلۡعِجۡلَ سَیَنَالُهُمۡ غَضَبࣱ مِّن رَّبِّهِمۡ وَذِلَّةࣱ فِی ٱلۡحَیَوٰةِ ٱلدُّنۡیَاۚ وَكَذَ ٰلِكَ نَجۡزِی ٱلۡمُفۡتَرِینَ ﴿١٥٢﴾
নিশ্চয় যারা গো-বাছুরকে উপাস্যরূপে গ্রহণ করেছে, দুনিয়ার জীবনে তাদের উপর ক্রোধ ও লাঞ্ছনা আপতিত হবেই [১]। আর এভাবেই আমরা মিথ্যা রটনাকারীদেরকে প্রতিফল দিয়ে থাকি [২]।
وَٱلَّذِینَ عَمِلُواْ ٱلسَّیِّـَٔاتِ ثُمَّ تَابُواْ مِنۢ بَعۡدِهَا وَءَامَنُوۤاْ إِنَّ رَبَّكَ مِنۢ بَعۡدِهَا لَغَفُورࣱ رَّحِیمࣱ ﴿١٥٣﴾
আর যারা অসৎকাজ করে, তারা পরে তওবা করলে ও ঈমান আনলে আপনার রব তো এরপরও পরম ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু [১]।
وَلَمَّا سَكَتَ عَن مُّوسَى ٱلۡغَضَبُ أَخَذَ ٱلۡأَلۡوَاحَۖ وَفِی نُسۡخَتِهَا هُدࣰى وَرَحۡمَةࣱ لِّلَّذِینَ هُمۡ لِرَبِّهِمۡ یَرۡهَبُونَ ﴿١٥٤﴾
আর মূসার রাগ যখন প্রশমিত হল, তখন তিনি ফলকগুলো তুলে নিলেন। যারা তাদের রবকে ভয় করে তাদের জন্য সে কপিগুলোতে [১] যা লিখিত ছিল তাতে ছিলো হিদায়াত ও রহমত।
وَٱخۡتَارَ مُوسَىٰ قَوۡمَهُۥ سَبۡعِینَ رَجُلࣰا لِّمِیقَـٰتِنَاۖ فَلَمَّاۤ أَخَذَتۡهُمُ ٱلرَّجۡفَةُ قَالَ رَبِّ لَوۡ شِئۡتَ أَهۡلَكۡتَهُم مِّن قَبۡلُ وَإِیَّـٰیَۖ أَتُهۡلِكُنَا بِمَا فَعَلَ ٱلسُّفَهَاۤءُ مِنَّاۤۖ إِنۡ هِیَ إِلَّا فِتۡنَتُكَ تُضِلُّ بِهَا مَن تَشَاۤءُ وَتَهۡدِی مَن تَشَاۤءُۖ أَنتَ وَلِیُّنَا فَٱغۡفِرۡ لَنَا وَٱرۡحَمۡنَاۖ وَأَنتَ خَیۡرُ ٱلۡغَـٰفِرِینَ ﴿١٥٥﴾
আর মূসা তার সম্প্রদায় থেকে সত্তর জন লোককে আমাদের নির্ধারিত স্থানে একত্র হওয়ার জন্য মনোনীত করলেন। অতঃপর তারা যখন ভুমিকম্প দ্বারা আক্রান্ত হলো তখন মূসা বললেন, ‘হে আমার রব! আপনি ইচ্ছে করলে আগেই তো এদেরকে এবং আমাকেও ধ্বংস করতে পারতেন! আমাদের মধ্যে যারা নির্বোধ, তারা যা করেছে সে জন্য কি আপনি আমাদেরকে ধ্বংস করবেন? এটা তো শুধু আপনার পরীক্ষা, যা দ্বারা আপনি যাকে ইচ্ছে বিপদ্গামী করেন এবং যাকে ইচ্ছে সৎপথে পরিচালিত করেন। আপনিই তো আমাদের অভিভাবক; কাজেই আমাদেরকে ক্ষমা করুন এবং আমাদের প্রতি দয়া করুন। আর ক্ষমাশীলদের মধ্যে আপনিই তো শ্রেষ্ঠ।’
۞ وَٱكۡتُبۡ لَنَا فِی هَـٰذِهِ ٱلدُّنۡیَا حَسَنَةࣰ وَفِی ٱلۡـَٔاخِرَةِ إِنَّا هُدۡنَاۤ إِلَیۡكَۚ قَالَ عَذَابِیۤ أُصِیبُ بِهِۦ مَنۡ أَشَاۤءُۖ وَرَحۡمَتِی وَسِعَتۡ كُلَّ شَیۡءࣲۚ فَسَأَكۡتُبُهَا لِلَّذِینَ یَتَّقُونَ وَیُؤۡتُونَ ٱلزَّكَوٰةَ وَٱلَّذِینَ هُم بِـَٔایَـٰتِنَا یُؤۡمِنُونَ ﴿١٥٦﴾
‘আর আপনি আমাদের জন্য এ দুনিয়াতে কল্যাণ লিখে দিন এবং আখেরাতেও। নিশ্চয় আমরা আপনার কাছে ফিরে এসেছি [১]।’ আল্লাহ্ বললেন, আমার শাস্তি যাকে ইচ্ছে দিয়ে থাকি আর আমার দয়া –তা তো প্রত্যেক বস্তুকে ঘিরে রয়েছে [২] কাজেই আমিই তা লিখে দেব তাদের জন্য যারা তাকওয়া অবলম্বন করে, যাকাত দেয় ও আমাদের অয়াতসমূহে ঈমান আনে।
ٱلَّذِینَ یَتَّبِعُونَ ٱلرَّسُولَ ٱلنَّبِیَّ ٱلۡأُمِّیَّ ٱلَّذِی یَجِدُونَهُۥ مَكۡتُوبًا عِندَهُمۡ فِی ٱلتَّوۡرَىٰةِ وَٱلۡإِنجِیلِ یَأۡمُرُهُم بِٱلۡمَعۡرُوفِ وَیَنۡهَىٰهُمۡ عَنِ ٱلۡمُنكَرِ وَیُحِلُّ لَهُمُ ٱلطَّیِّبَـٰتِ وَیُحَرِّمُ عَلَیۡهِمُ ٱلۡخَبَـٰۤىِٕثَ وَیَضَعُ عَنۡهُمۡ إِصۡرَهُمۡ وَٱلۡأَغۡلَـٰلَ ٱلَّتِی كَانَتۡ عَلَیۡهِمۡۚ فَٱلَّذِینَ ءَامَنُواْ بِهِۦ وَعَزَّرُوهُ وَنَصَرُوهُ وَٱتَّبَعُواْ ٱلنُّورَ ٱلَّذِیۤ أُنزِلَ مَعَهُۥۤ أُوْلَـٰۤىِٕكَ هُمُ ٱلۡمُفۡلِحُونَ ﴿١٥٧﴾
‘যারা অনুসরণ করে রাসূলের, উম্মী [১] নবীর, যার উল্লেখ তারা তাদের কাছে তাওরাত ও ইঞ্জীলে লিপিবদ্ধ পায় [২], যিনি তাদের সৎকাজের আদেশ দেন, অসৎকাজ থেকে নিষেধ করেন, তাদের জন্য পবিত্র বস্তু হালাল করেন এবং অপবিত্র বস্তু হারাম করেন [৩]। আর তাদেরকে তাদের গুরুভার ও শৃংখল হতে মুক্ত করেন যা তাদের উপর ছিল [৪]। কাজেই যারা তার প্রতি ঈমান আনে, তাকে সম্মান করে, তাকে সাহায্য করে এবং যে নূর তার সাথে নাযিল হয়েছে সেটার অনুসরণ করে, তারাই সফলকাম [৫]।
قُلۡ یَـٰۤأَیُّهَا ٱلنَّاسُ إِنِّی رَسُولُ ٱللَّهِ إِلَیۡكُمۡ جَمِیعًا ٱلَّذِی لَهُۥ مُلۡكُ ٱلسَّمَـٰوَ ٰتِ وَٱلۡأَرۡضِۖ لَاۤ إِلَـٰهَ إِلَّا هُوَ یُحۡیِۦ وَیُمِیتُۖ فَـَٔامِنُواْ بِٱللَّهِ وَرَسُولِهِ ٱلنَّبِیِّ ٱلۡأُمِّیِّ ٱلَّذِی یُؤۡمِنُ بِٱللَّهِ وَكَلِمَـٰتِهِۦ وَٱتَّبِعُوهُ لَعَلَّكُمۡ تَهۡتَدُونَ ﴿١٥٨﴾
বলুন, ‘হে মানুষ! নিশ্চয় আমি তোমাদের সবার প্রতি আল্লাহ্র রাসূল [১], যিনি আসমানসমূহ ও যমীনের সার্বভৌমত্বের অধিকারী। তিনি ছাড়া কোনো সত্য ইলাহ নেই; তিনি জীবিত করেন ও মৃত্যু ঘটান। কাজেই তোমরা ঈমান আন আল্লাহ্র প্রতি ও তাঁর রাসূল উম্মী নবীর প্রতি যিনি আল্লাহ ও তাঁর বাণীসমূহে ঈমান রাখেন। আর তোমরা তার অনুসরণ কর, যাতে তোমরা হিদায়াতপ্রাপ্ত হও।’
وَمِن قَوۡمِ مُوسَىٰۤ أُمَّةࣱ یَهۡدُونَ بِٱلۡحَقِّ وَبِهِۦ یَعۡدِلُونَ ﴿١٥٩﴾
আর মূসার সম্প্রদায়ের মধ্যে এমন দল রয়েছে যারা অন্যকে ন্যায়ভাবে পথ দেখায় ও সে অনুযায়ীই (বিচারে) ইনসাফ করে [১]।
وَقَطَّعۡنَـٰهُمُ ٱثۡنَتَیۡ عَشۡرَةَ أَسۡبَاطًا أُمَمࣰاۚ وَأَوۡحَیۡنَاۤ إِلَىٰ مُوسَىٰۤ إِذِ ٱسۡتَسۡقَىٰهُ قَوۡمُهُۥۤ أَنِ ٱضۡرِب بِّعَصَاكَ ٱلۡحَجَرَۖ فَٱنۢبَجَسَتۡ مِنۡهُ ٱثۡنَتَا عَشۡرَةَ عَیۡنࣰاۖ قَدۡ عَلِمَ كُلُّ أُنَاسࣲ مَّشۡرَبَهُمۡۚ وَظَلَّلۡنَا عَلَیۡهِمُ ٱلۡغَمَـٰمَ وَأَنزَلۡنَا عَلَیۡهِمُ ٱلۡمَنَّ وَٱلسَّلۡوَىٰۖ كُلُواْ مِن طَیِّبَـٰتِ مَا رَزَقۡنَـٰكُمۡۚ وَمَا ظَلَمُونَا وَلَـٰكِن كَانُوۤاْ أَنفُسَهُمۡ یَظۡلِمُونَ ﴿١٦٠﴾
আর তাদেরকে আমরা বারটি গোত্রে বিভক্ত করেছি। আর মূসার সম্প্রদায় যখন তার কাছে পানি চাইল, তখন আমরা তার প্রতি ওহী পাঠালাম, ‘আপনার লাঠির দ্বারা পাথরে আঘাত করুন’; ফলে তা থেকে বারটি ঝর্ণা ধারা উৎসারিত হল। প্রত্যেক গোত্র নিজ নিজ পানস্থান চিনে নিল। আর আমরা মেঘ দ্বারা তাদের উপর ছায়া দান করেছিলাম এবং তাদের উপর আমরা মান্না ও সালওয়া নাযিল করেছিলাম। (বলেছিলাম) ‘তোমাদেরকে যে রিযক দিয়েছি তা থেকে পবিত্র বস্তু খাও।’ আর তারা আমাদের প্রতি কোনো যুলুম করেনি, ররং তারা নিজেদের উপরই যুলুম করত।
وَإِذۡ قِیلَ لَهُمُ ٱسۡكُنُواْ هَـٰذِهِ ٱلۡقَرۡیَةَ وَكُلُواْ مِنۡهَا حَیۡثُ شِئۡتُمۡ وَقُولُواْ حِطَّةࣱ وَٱدۡخُلُواْ ٱلۡبَابَ سُجَّدࣰا نَّغۡفِرۡ لَكُمۡ خَطِیۤـَٔـٰتِكُمۡۚ سَنَزِیدُ ٱلۡمُحۡسِنِینَ ﴿١٦١﴾
আর স্মরণ করুন, যখন তাদেরকে বলা হয়েছিল, ‘তোমরা এ জনপদে বাস কর ও যেখানে খুশি খাও এবং বল, ‘ক্ষমা চাই’। আর নতশিরে দরজা দিয়ে প্রবেশ কর; আমরা তোমাদের অপরাধসমূহ ক্ষমা করব। অবশ্যই আমরা মুহসিনদেরকে বাড়িয়ে দেব।’
فَبَدَّلَ ٱلَّذِینَ ظَلَمُواْ مِنۡهُمۡ قَوۡلًا غَیۡرَ ٱلَّذِی قِیلَ لَهُمۡ فَأَرۡسَلۡنَا عَلَیۡهِمۡ رِجۡزࣰا مِّنَ ٱلسَّمَاۤءِ بِمَا كَانُواْ یَظۡلِمُونَ ﴿١٦٢﴾
অতঃপর তাদের মধ্যে যারা যালিম ছিল তাদেরকে যা বলা হয়েছিল, তার পরিবর্তে তারা অন্য কথা বলল। কাজেই আমরা আসমান থেকে তাদের প্রতি শাস্তি পাঠালাম, কারণ তারা যুলুম করত।
وَسۡـَٔلۡهُمۡ عَنِ ٱلۡقَرۡیَةِ ٱلَّتِی كَانَتۡ حَاضِرَةَ ٱلۡبَحۡرِ إِذۡ یَعۡدُونَ فِی ٱلسَّبۡتِ إِذۡ تَأۡتِیهِمۡ حِیتَانُهُمۡ یَوۡمَ سَبۡتِهِمۡ شُرَّعࣰا وَیَوۡمَ لَا یَسۡبِتُونَ لَا تَأۡتِیهِمۡۚ كَذَ ٰلِكَ نَبۡلُوهُم بِمَا كَانُواْ یَفۡسُقُونَ ﴿١٦٣﴾
আর তাদেরকে সাগর তীরের জনপদবাসী [১] সম্বন্ধে জিজ্ঞেস করুন, যখন তারা শনিবারে সীমালংঘন করত; যখন শনিবার পালনের দিন মাছ পানিতে ভেসে তাদের কাছে আসত। কিন্তু যেদিন তারা শনিবার পালন করত না, সেদিন তা তাদের কাছে আসত না। এভাবে আমরা তাদেরকে পরীক্ষা করতাম, কারণ তারা ফাসেকী করত।
وَإِذۡ قَالَتۡ أُمَّةࣱ مِّنۡهُمۡ لِمَ تَعِظُونَ قَوۡمًا ٱللَّهُ مُهۡلِكُهُمۡ أَوۡ مُعَذِّبُهُمۡ عَذَابࣰا شَدِیدࣰاۖ قَالُواْ مَعۡذِرَةً إِلَىٰ رَبِّكُمۡ وَلَعَلَّهُمۡ یَتَّقُونَ ﴿١٦٤﴾
আর স্মরণ করুন, যখন তাদের একদল বলেছিল, ‘আল্লাহ যাদেরকে ধ্বংস করবেন কিংবা কঠোর শাস্তি দেবেন, তোমরা তাদেরকে সদুপদেশ দাও কেন?’ তারা বলেছিল, ‘তোমাদের রবের কাছে দায়িত্ব-মুক্তির জন্য এবং যাতে তারা তাকওয়া অবলম্বন করে, এজন্য।’
فَلَمَّا نَسُواْ مَا ذُكِّرُواْ بِهِۦۤ أَنجَیۡنَا ٱلَّذِینَ یَنۡهَوۡنَ عَنِ ٱلسُّوۤءِ وَأَخَذۡنَا ٱلَّذِینَ ظَلَمُواْ بِعَذَابِۭ بَـِٔیسِۭ بِمَا كَانُواْ یَفۡسُقُونَ ﴿١٦٥﴾
অতঃপর যে উপদেশ তাদেরকে দেয়া হয়েছিল, তারা যখন তা ভুলে গেল, তখন যারা অসৎকাজ থেকে নিষেধ করত তাদেরকে আমরা উদ্ধার করি। আর যারা যুলুম করেছিল তাদেরকে আমরা কঠোর শাস্তি দেই, কারণ তারা ফাসেকী করত [১]।
فَلَمَّا عَتَوۡاْ عَن مَّا نُهُواْ عَنۡهُ قُلۡنَا لَهُمۡ كُونُواْ قِرَدَةً خَـٰسِـِٔینَ ﴿١٦٦﴾
অতঃপর তারা যখন নিষিদ্ধ কাজ বাড়াবাড়ির সাথে করতে লাগল তখন আমরা তাদেরকে বললাম, ‘ঘৃণিত বানর হও!’
وَإِذۡ تَأَذَّنَ رَبُّكَ لَیَبۡعَثَنَّ عَلَیۡهِمۡ إِلَىٰ یَوۡمِ ٱلۡقِیَـٰمَةِ مَن یَسُومُهُمۡ سُوۤءَ ٱلۡعَذَابِۗ إِنَّ رَبَّكَ لَسَرِیعُ ٱلۡعِقَابِ وَإِنَّهُۥ لَغَفُورࣱ رَّحِیمࣱ ﴿١٦٧﴾
আর স্মরণ করুন, যখন আপনার রব ঘোষণা করেন যে [১] অবশ্যই তিনি কিয়ামত পর্যন্ত তাদের উপর এমন লোকদেরকে পাঠাবেন, যারা তাদেরকে কঠিন শাস্তি দিতে থাকবে [২]। আর নিশ্চয় আপনার রব শাস্তি দানে তৎপর এবং নিশ্চয় তিনি ক্ষমাশীল, পরম দয়াময়।
وَقَطَّعۡنَـٰهُمۡ فِی ٱلۡأَرۡضِ أُمَمࣰاۖ مِّنۡهُمُ ٱلصَّـٰلِحُونَ وَمِنۡهُمۡ دُونَ ذَ ٰلِكَۖ وَبَلَوۡنَـٰهُم بِٱلۡحَسَنَـٰتِ وَٱلسَّیِّـَٔاتِ لَعَلَّهُمۡ یَرۡجِعُونَ ﴿١٦٨﴾
আর আমরা তাদেরকে যমীনে বিভিন্ন দলে বিভক্ত করেছি [১]; তাদের কেউ কেউ সৎ কর্মপরায়ণ আর কেউ অন্যরূপ [২]। আর আমরা তাদেরকে মঙ্গল ও অমঙ্গল দ্বারা পরীক্ষা করেছি, যাতে তারা প্রত্যবর্তন করে [৩]।
فَخَلَفَ مِنۢ بَعۡدِهِمۡ خَلۡفࣱ وَرِثُواْ ٱلۡكِتَـٰبَ یَأۡخُذُونَ عَرَضَ هَـٰذَا ٱلۡأَدۡنَىٰ وَیَقُولُونَ سَیُغۡفَرُ لَنَا وَإِن یَأۡتِهِمۡ عَرَضࣱ مِّثۡلُهُۥ یَأۡخُذُوهُۚ أَلَمۡ یُؤۡخَذۡ عَلَیۡهِم مِّیثَـٰقُ ٱلۡكِتَـٰبِ أَن لَّا یَقُولُواْ عَلَى ٱللَّهِ إِلَّا ٱلۡحَقَّ وَدَرَسُواْ مَا فِیهِۗ وَٱلدَّارُ ٱلۡـَٔاخِرَةُ خَیۡرࣱ لِّلَّذِینَ یَتَّقُونَۚ أَفَلَا تَعۡقِلُونَ ﴿١٦٩﴾
অতঃপর অযোগ্য উত্তরপুরুষরা একের পর এক তাদের স্থলাভিষিক্তরূপে কিতাবের উত্তরাধিকারী হয় [১]; তারা এ তুচ্ছ দুনিয়ার সামগ্ৰী গ্রহণ করে এবং বলে, ‘আমাদেরকে ক্ষমা করা হবে [২]। কিন্তু এগুলোর অনুরূপ সামগ্রী তাদের কাছে আসলে তাও তারা গ্রহণ করে; কিতাবের অঙ্গীকার কি তাদের কাছ থেকে নেয়া হয়নি যে, তারা আল্লার সম্বদ্ধে সত্য ছাড়া বলবে না [৩]? অথচ তারা এতে যা আছে তা অধ্যয়নও করে [৪]। আর যারা তাকওয়া অবলম্বন করে তাদের জন্য আখেরাতের আবাসই উত্তম; তোমারা কি এটা অনুধাবন কর না?
وَٱلَّذِینَ یُمَسِّكُونَ بِٱلۡكِتَـٰبِ وَأَقَامُواْ ٱلصَّلَوٰةَ إِنَّا لَا نُضِیعُ أَجۡرَ ٱلۡمُصۡلِحِینَ ﴿١٧٠﴾
যারা কিতাবকে দৃঢ়ভাবে ধারণ করে ও সালাত কায়েম করে, আমরা তো সৎকর্মপরায়ণদের শ্রমফল নষ্ট করি না [১]।
۞ وَإِذۡ نَتَقۡنَا ٱلۡجَبَلَ فَوۡقَهُمۡ كَأَنَّهُۥ ظُلَّةࣱ وَظَنُّوۤاْ أَنَّهُۥ وَاقِعُۢ بِهِمۡ خُذُواْ مَاۤ ءَاتَیۡنَـٰكُم بِقُوَّةࣲ وَٱذۡكُرُواْ مَا فِیهِ لَعَلَّكُمۡ تَتَّقُونَ ﴿١٧١﴾
আর স্মরণ করুন, যখন আমরা পর্বতকে তাদের উপরে উঠাই, আর তা ছিল যেন এক শামিয়ানা। তারা মনে করল যে, সেটা তাদের উপর পড়ে যাবে [১]। (বললাম,) ‘আমরা যা দিলাম তা দৃঢ়ভাবে ধারণ কর এবং তাতে যা আছে তা স্মরণ কর, যাতে তোমরা তাকওয়ার অধিকারী হও।’
وَإِذۡ أَخَذَ رَبُّكَ مِنۢ بَنِیۤ ءَادَمَ مِن ظُهُورِهِمۡ ذُرِّیَّتَهُمۡ وَأَشۡهَدَهُمۡ عَلَىٰۤ أَنفُسِهِمۡ أَلَسۡتُ بِرَبِّكُمۡۖ قَالُواْ بَلَىٰ شَهِدۡنَاۤۚ أَن تَقُولُواْ یَوۡمَ ٱلۡقِیَـٰمَةِ إِنَّا كُنَّا عَنۡ هَـٰذَا غَـٰفِلِینَ ﴿١٧٢﴾
আর স্মরণ করুন, যখন আপনার রব আদম-সন্তানের পিঠ থেকে তার বংশধরকে বের করেন এবং তাদের নিজেদের সম্বদ্ধে স্বীকারোক্তি [১] গ্রহণ করেন এবং বলেন, ‘আমি কি তোমাদের রব নই [২]?’ তারা বলেছিল, ‘হ্যাঁ অবশ্যই, আমরা সাক্ষী রইলাম।’ এটা এ জন্যে যে, তোমরা যেন কিয়ামতের দিন না বল, ‘আমরা তো এ বিষয়ে গাফেল ছিলাম [৩]।‘
أَوۡ تَقُولُوۤاْ إِنَّمَاۤ أَشۡرَكَ ءَابَاۤؤُنَا مِن قَبۡلُ وَكُنَّا ذُرِّیَّةࣰ مِّنۢ بَعۡدِهِمۡۖ أَفَتُهۡلِكُنَا بِمَا فَعَلَ ٱلۡمُبۡطِلُونَ ﴿١٧٣﴾
কিংবা তোমার যেন না বল, ‘আমাদের পিতৃপুরুষরাও তো আমাদের আগে শির্ক করেছে, আর আমরা তো তাদের পরবর্তী বংশধর; তবে কি (শির্কের মাধ্যমে) যারা তাদের আমলকে বাতিল করেছে তাদের কৃতকর্মের জন্য আপনি আমাদেরকে ধ্বংস করবেন [১]?’
وَكَذَ ٰلِكَ نُفَصِّلُ ٱلۡـَٔایَـٰتِ وَلَعَلَّهُمۡ یَرۡجِعُونَ ﴿١٧٤﴾
আর এভাবে আমরা নিদর্শন বিশদভাবে বর্ণনা করি যাতে তারা ফিরে আসে [১]।
وَٱتۡلُ عَلَیۡهِمۡ نَبَأَ ٱلَّذِیۤ ءَاتَیۡنَـٰهُ ءَایَـٰتِنَا فَٱنسَلَخَ مِنۡهَا فَأَتۡبَعَهُ ٱلشَّیۡطَـٰنُ فَكَانَ مِنَ ٱلۡغَاوِینَ ﴿١٧٥﴾
আর তাদেরকে ঐ ব্যক্তির বৃত্তান্ত পড়ে শুনান [১] যাকে আমরা দিয়েছিলাম নিদর্শনসমূহ, তারপর সে তা হতে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়, অতঃপর শয়তান তার পিছনে লাগে, আর সে বিপথগামীদের অন্তর্ভুক্ত হয়।
وَلَوۡ شِئۡنَا لَرَفَعۡنَـٰهُ بِهَا وَلَـٰكِنَّهُۥۤ أَخۡلَدَ إِلَى ٱلۡأَرۡضِ وَٱتَّبَعَ هَوَىٰهُۚ فَمَثَلُهُۥ كَمَثَلِ ٱلۡكَلۡبِ إِن تَحۡمِلۡ عَلَیۡهِ یَلۡهَثۡ أَوۡ تَتۡرُكۡهُ یَلۡهَثۚ ذَّ ٰلِكَ مَثَلُ ٱلۡقَوۡمِ ٱلَّذِینَ كَذَّبُواْ بِـَٔایَـٰتِنَاۚ فَٱقۡصُصِ ٱلۡقَصَصَ لَعَلَّهُمۡ یَتَفَكَّرُونَ ﴿١٧٦﴾
আর আমরা ইচ্ছে করলে এর দ্বারা তাকে উচ্চ মর্যাদা দান করতাম, কিন্তু সে যমীনের প্রতি ঝুঁকে পড়ে [১] এবং তার প্রবৃত্তির অনুসরণ করে। সুতরাং তার দৃষ্টান্ত হচ্ছে কুকুরের মত; তার উপর বোঝা চাপালে সে জিহবা বের করে হাঁপাতে থাকে এবং বোঝা না চাপালেও জিহবা বের করে হাঁপায় [২]। যে সম্প্রদায় আমাদের নিদর্শনসমূহে মিত্যারোপ করে তাদের অবস্থানও এরূপ। সুতরাং আপনি বৃত্তান্ত বর্ণনা করুন যাতে তারা চিন্তা করে [৩]।
سَاۤءَ مَثَلًا ٱلۡقَوۡمُ ٱلَّذِینَ كَذَّبُواْ بِـَٔایَـٰتِنَا وَأَنفُسَهُمۡ كَانُواْ یَظۡلِمُونَ ﴿١٧٧﴾
সে সম্প্রদায়ের দৃষ্টান্ত কত মন্দ! যারা আমাদের নিদর্শনসমূহে মিথ্যারোপ করে। আর তারা নিজদের প্রতিই যুলুম করত।
مَن یَهۡدِ ٱللَّهُ فَهُوَ ٱلۡمُهۡتَدِیۖ وَمَن یُضۡلِلۡ فَأُوْلَـٰۤىِٕكَ هُمُ ٱلۡخَـٰسِرُونَ ﴿١٧٨﴾
আল্লাহ যাকে পথ দেখান সে-ই পথ পায় এবং যাদেরকে তিনি বিপথগামী করেন তারাই ক্ষতিগ্রস্ত [১]।
وَلَقَدۡ ذَرَأۡنَا لِجَهَنَّمَ كَثِیرࣰا مِّنَ ٱلۡجِنِّ وَٱلۡإِنسِۖ لَهُمۡ قُلُوبࣱ لَّا یَفۡقَهُونَ بِهَا وَلَهُمۡ أَعۡیُنࣱ لَّا یُبۡصِرُونَ بِهَا وَلَهُمۡ ءَاذَانࣱ لَّا یَسۡمَعُونَ بِهَاۤۚ أُوْلَـٰۤىِٕكَ كَٱلۡأَنۡعَـٰمِ بَلۡ هُمۡ أَضَلُّۚ أُوْلَـٰۤىِٕكَ هُمُ ٱلۡغَـٰفِلُونَ ﴿١٧٩﴾
আর আমরা তো বহু জিন ও মানবকে জাহান্নামের জন্য সৃষ্টি করেছি [২]; তাদের হৃদয় আছে কিন্তু তা দ্বারা তারা উপলব্ধি করে না, তাদের চোখ আছে তা দ্বারা তারা দেখে না এবং তাদের কান আছে তা দ্বারা তারা শুনে না; তারা চতুষ্পদ জন্তুর মত, বরং তার চেয়েও বেশী বিভ্রান্ত। তারাই হচ্ছে গাফেল [৩]।
وَلِلَّهِ ٱلۡأَسۡمَاۤءُ ٱلۡحُسۡنَىٰ فَٱدۡعُوهُ بِهَاۖ وَذَرُواْ ٱلَّذِینَ یُلۡحِدُونَ فِیۤ أَسۡمَـٰۤىِٕهِۦۚ سَیُجۡزَوۡنَ مَا كَانُواْ یَعۡمَلُونَ ﴿١٨٠﴾
আর আল্লাহর জন্যই রয়েছে সুন্দর সুন্দর নাম। অতএব তোমরা তাঁকে সেসব নামেই ডাক [১]; আর যারা তাঁর নাম বিকৃত করে তাদেরকে বর্জন কর [২]; তাদের কৃতকর্মের ফল অচিরেই তাদেরকে দেয়া হবে।
وَمِمَّنۡ خَلَقۡنَاۤ أُمَّةࣱ یَهۡدُونَ بِٱلۡحَقِّ وَبِهِۦ یَعۡدِلُونَ ﴿١٨١﴾
আর যাদেরকে আমরা সৃষ্টি করেছি তাদের মধ্যে একদল লোক আছে যারা ন্যায়ভাবে পথ দেখায় [১] ও সে অনুযায়ীই (বিচারে) ইনসাফ করে।
وَٱلَّذِینَ كَذَّبُواْ بِـَٔایَـٰتِنَا سَنَسۡتَدۡرِجُهُم مِّنۡ حَیۡثُ لَا یَعۡلَمُونَ ﴿١٨٢﴾
আর যারা আমাদের নিদর্শনসমূহে মিথ্যারোপ করেছে, অচিরেই আমরা তাদেরকে এমনভাবে ধীরে ধীরে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাব যে, তারা জানতেও পারবে না [১]।
وَأُمۡلِی لَهُمۡۚ إِنَّ كَیۡدِی مَتِینٌ ﴿١٨٣﴾
আর আমি তাদেরকে সময় দিয়ে থাকি; নিশ্চয় আমার কৌশল অত্যন্ত বলিষ্ঠ।
أَوَلَمۡ یَتَفَكَّرُواْۗ مَا بِصَاحِبِهِم مِّن جِنَّةٍۚ إِنۡ هُوَ إِلَّا نَذِیرࣱ مُّبِینٌ ﴿١٨٤﴾
তারা কি চিত্তা করে না যে, তাদের সাথী মোটেই উন্মাদ নন [১]; তিনি তো এক স্পষ্ট সতর্ককারী।
أَوَلَمۡ یَنظُرُواْ فِی مَلَكُوتِ ٱلسَّمَـٰوَ ٰتِ وَٱلۡأَرۡضِ وَمَا خَلَقَ ٱللَّهُ مِن شَیۡءࣲ وَأَنۡ عَسَىٰۤ أَن یَكُونَ قَدِ ٱقۡتَرَبَ أَجَلُهُمۡۖ فَبِأَیِّ حَدِیثِۭ بَعۡدَهُۥ یُؤۡمِنُونَ ﴿١٨٥﴾
তারা কি লক্ষ্য করে না, আসমানসমূহ ও যমীনের সার্বভৌম কর্তৃত্ব সম্পর্কে এবং আল্লাহ যা কিছু সৃষ্টি করেছেন তার সম্পর্কে? [১] আর এর সম্পর্কেও যে, সম্ভবত তাদের নির্ধারিত সময় নিকটে এসে গিয়েছে, কাজেই এরপর তারা আর কোন্ কথায় ঈমান আনবে?
مَن یُضۡلِلِ ٱللَّهُ فَلَا هَادِیَ لَهُۥۚ وَیَذَرُهُمۡ فِی طُغۡیَـٰنِهِمۡ یَعۡمَهُونَ ﴿١٨٦﴾
আল্লাহ্ যাদেরকে বিপথগামী করেন তাদের কোনো পথপ্রদর্শক নেই। আর তিনি তাদেরকে তাদের অবাধ্যতায় উদভ্রান্তের মত ঘুরে বেড়াতে দেন [১]।
یَسۡـَٔلُونَكَ عَنِ ٱلسَّاعَةِ أَیَّانَ مُرۡسَىٰهَاۖ قُلۡ إِنَّمَا عِلۡمُهَا عِندَ رَبِّیۖ لَا یُجَلِّیهَا لِوَقۡتِهَاۤ إِلَّا هُوَۚ ثَقُلَتۡ فِی ٱلسَّمَـٰوَ ٰتِ وَٱلۡأَرۡضِۚ لَا تَأۡتِیكُمۡ إِلَّا بَغۡتَةࣰۗ یَسۡـَٔلُونَكَ كَأَنَّكَ حَفِیٌّ عَنۡهَاۖ قُلۡ إِنَّمَا عِلۡمُهَا عِندَ ٱللَّهِ وَلَـٰكِنَّ أَكۡثَرَ ٱلنَّاسِ لَا یَعۡلَمُونَ ﴿١٨٧﴾
তারা আপনাকে কিয়ামত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে (বলে) ‘তা কখন ঘটবে? [১] বলুন, ‘এ বিষয়ের জ্ঞান শুধু আমার রবেরই নিকট। শুধু তিনিই যথাসময়ে সেটার প্রকাশ ঘটাবেন; আসমানসমূহ ও যমীনে সেটা ভারী বিষয় [২]। হঠাৎ করেই তা তোমাদের উপর আসবে [৩]।’ আপনি এ বিষয়ে সবিশেষ জ্ঞানী মনে করে তারা আপনাকে প্রশ্ন করে। বলুন, ‘এ বিষয়ে জ্ঞান শুধু আল্লাহ্রই নিকট, কিন্তু অধিকাংশ লোক জানে না [৪]।
قُل لَّاۤ أَمۡلِكُ لِنَفۡسِی نَفۡعࣰا وَلَا ضَرًّا إِلَّا مَا شَاۤءَ ٱللَّهُۚ وَلَوۡ كُنتُ أَعۡلَمُ ٱلۡغَیۡبَ لَٱسۡتَكۡثَرۡتُ مِنَ ٱلۡخَیۡرِ وَمَا مَسَّنِیَ ٱلسُّوۤءُۚ إِنۡ أَنَا۠ إِلَّا نَذِیرࣱ وَبَشِیرࣱ لِّقَوۡمࣲ یُؤۡمِنُونَ ﴿١٨٨﴾
বলুন, ‘আল্লাহ যা ইচ্ছে করেন তা ছাড়া আমার নিজের ভালো মন্দের উপরও আমার কোনো অধিকার নেই। আমি যদি গায়েবের খবর জানতাম তবে তো আমি অনেক কল্যাণই লাভ করতাম এবং কোনো অকল্যাণই আমাকে স্পর্শ করত না। ঈমানদার সম্প্রদায়ের জন্য সতর্ককারী ও সুসংবাদদাতা ছাড়া আমি তো আর কিছুই নই [১]।’
۞ هُوَ ٱلَّذِی خَلَقَكُم مِّن نَّفۡسࣲ وَ ٰحِدَةࣲ وَجَعَلَ مِنۡهَا زَوۡجَهَا لِیَسۡكُنَ إِلَیۡهَاۖ فَلَمَّا تَغَشَّىٰهَا حَمَلَتۡ حَمۡلًا خَفِیفࣰا فَمَرَّتۡ بِهِۦۖ فَلَمَّاۤ أَثۡقَلَت دَّعَوَا ٱللَّهَ رَبَّهُمَا لَىِٕنۡ ءَاتَیۡتَنَا صَـٰلِحࣰا لَّنَكُونَنَّ مِنَ ٱلشَّـٰكِرِینَ ﴿١٨٩﴾
তিনিই তোমাদেরকে এক ব্যক্তি থেকে সৃষ্টি করেছেন ও তার থেকে তার স্ত্রী সৃষ্টি করেছেন যাতে সে তার কাছে শান্তি পায় [১]। তারপর যখন সে তার সাথে সংগত হয় তখন সে এক হালকা গর্ভধারণ করে এবং এটা নিয়ে সে অনায়াসে চলাফেরা করে। অতঃপর গর্ভ যখন ভারী হয়ে আসে তখন তারা উভয়ে তাদের রব আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করে, ‘যদি আপনি আমাদেরকে এক পূর্ণাঙ্গ সন্তান দান করেন তাহলে আপানার প্রতি কৃতজ্ঞ থাকব।’
فَلَمَّاۤ ءَاتَىٰهُمَا صَـٰلِحࣰا جَعَلَا لَهُۥ شُرَكَاۤءَ فِیمَاۤ ءَاتَىٰهُمَاۚ فَتَعَـٰلَى ٱللَّهُ عَمَّا یُشۡرِكُونَ ﴿١٩٠﴾
আতঃপর তিনি (আল্লাহ) যখন তাদেরকে এক পূর্ণাঙ্গ সুসন্তান দান করেন, তখন তারা তাদেরকে তিনি যা দিয়েছেন সেটাতে আল্লাহ্র বহু শরীক নির্ধারণ করে [১]; বস্তুতঃ তারা যাদেরকে (তাঁর সাথে) শরীক করে আল্লাহ্ তার চেয়ে অনেক উর্ধ্বে [২]।
أَیُشۡرِكُونَ مَا لَا یَخۡلُقُ شَیۡـࣰٔا وَهُمۡ یُخۡلَقُونَ ﴿١٩١﴾
তারা কি এমন বস্তুকে শরীক করে যারা কিছুই সৃষ্টি করে না? বরং ওরা নিজেরাই সৃষ্ট [১],
وَلَا یَسۡتَطِیعُونَ لَهُمۡ نَصۡرࣰا وَلَاۤ أَنفُسَهُمۡ یَنصُرُونَ ﴿١٩٢﴾
এরা না তাদেরকে সাহায্য করতে পারে আর না নিজেদেরকে সাহায্য করতে পারে [২]।
وَإِن تَدۡعُوهُمۡ إِلَى ٱلۡهُدَىٰ لَا یَتَّبِعُوكُمۡۚ سَوَاۤءٌ عَلَیۡكُمۡ أَدَعَوۡتُمُوهُمۡ أَمۡ أَنتُمۡ صَـٰمِتُونَ ﴿١٩٣﴾
আর তোমরা তাদেরকে সৎপথে ডাকলেও তারা তোমাদেরকে অনুসরণ করবে না; তোমরা তাদেরকে ডাক বা চুপ থাক, তোমাদের জন্য উভয়ই সমান [১]।
إِنَّ ٱلَّذِینَ تَدۡعُونَ مِن دُونِ ٱللَّهِ عِبَادٌ أَمۡثَالُكُمۡۖ فَٱدۡعُوهُمۡ فَلۡیَسۡتَجِیبُواْ لَكُمۡ إِن كُنتُمۡ صَـٰدِقِینَ ﴿١٩٤﴾
আল্লাহ ছাড়া তোমরা যাদেরকে আহবান কর তারা তো তোমাদেরই মত বান্দা; সুতরাং তোমরা তাদেরকে ডাক, অতঃপর তারা যেন তোমাদের ডাকে সাড়া দেয়, যদি তোমরা সত্যবাদী হও।
أَلَهُمۡ أَرۡجُلࣱ یَمۡشُونَ بِهَاۤۖ أَمۡ لَهُمۡ أَیۡدࣲ یَبۡطِشُونَ بِهَاۤۖ أَمۡ لَهُمۡ أَعۡیُنࣱ یُبۡصِرُونَ بِهَاۤۖ أَمۡ لَهُمۡ ءَاذَانࣱ یَسۡمَعُونَ بِهَاۗ قُلِ ٱدۡعُواْ شُرَكَاۤءَكُمۡ ثُمَّ كِیدُونِ فَلَا تُنظِرُونِ ﴿١٩٥﴾
তাদের কি পা আছে যা দিয়ে তারা চলে? তাদের কি হাত আছে যা দিয়ে তারা ধরে? তাদের কি চোখ আছে যা দিয়ে তারা দেখে? কিংবা তাদের কি কান আছে যা দিয়ে তারা শুনে? বলুন, ‘তোমারা যাদেরকে আল্লাহ্র শরীক করেছে তাদেরকে ডাক তারপর আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র কর এবং আমাকে অবকাশ দিও না [১]’;
إِنَّ وَلِـِّۧیَ ٱللَّهُ ٱلَّذِی نَزَّلَ ٱلۡكِتَـٰبَۖ وَهُوَ یَتَوَلَّى ٱلصَّـٰلِحِینَ ﴿١٩٦﴾
আমার অভিভাবক তো আল্লাহ্ যিনি কিতাব নাযিল করেছেন এবং তিনিই সৎকর্মপরায়ণদের অভিভাবকত্ব করে থাকেন [১]।
وَٱلَّذِینَ تَدۡعُونَ مِن دُونِهِۦ لَا یَسۡتَطِیعُونَ نَصۡرَكُمۡ وَلَاۤ أَنفُسَهُمۡ یَنصُرُونَ ﴿١٩٧﴾
আর আল্লাহ ছাড়া তোমরা যাদেরকে ডাক তারা তো তোমাদেরকে সাহায্য করতে পারে না এবং তারা তাদের নিজেদেরকেও সাহায্য করতে পারে না।
وَإِن تَدۡعُوهُمۡ إِلَى ٱلۡهُدَىٰ لَا یَسۡمَعُواْۖ وَتَرَىٰهُمۡ یَنظُرُونَ إِلَیۡكَ وَهُمۡ لَا یُبۡصِرُونَ ﴿١٩٨﴾
আর যদি আপনি তাদেরকে সৎপথে ডাকেন তবে তারা শুনবে না [১] এবং আপনি দেখতে পাবেন যে, তারা আপনার দিকে তাকিয়ে আছে; অথচ তারা দেখে না [২]।
خُذِ ٱلۡعَفۡوَ وَأۡمُرۡ بِٱلۡعُرۡفِ وَأَعۡرِضۡ عَنِ ٱلۡجَـٰهِلِینَ ﴿١٩٩﴾
মানুষের (চরিত্র ও কর্মের) উৎকৃষ্ট অংশ গ্রহণ করুন, সৎকাজের নির্দেশ দিন এবং অজ্ঞদেরকে এড়িয়ে চলুন [১]।
وَإِمَّا یَنزَغَنَّكَ مِنَ ٱلشَّیۡطَـٰنِ نَزۡغࣱ فَٱسۡتَعِذۡ بِٱللَّهِۚ إِنَّهُۥ سَمِیعٌ عَلِیمٌ ﴿٢٠٠﴾
আর যদি শয়তানের কুমন্ত্রণা আপনাকে প্ররোচিত করে, তবে আল্লাহর আশ্রয় চাইবেন। নিশ্চয় তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ [১]।
إِنَّ ٱلَّذِینَ ٱتَّقَوۡاْ إِذَا مَسَّهُمۡ طَـٰۤىِٕفࣱ مِّنَ ٱلشَّیۡطَـٰنِ تَذَكَّرُواْ فَإِذَا هُم مُّبۡصِرُونَ ﴿٢٠١﴾
নিশ্চয় যারা তাকওয়া অবলম্বন করছে, তাদেরকে শয়তান যখন কুমন্ত্রণা [১] দেয় তখন তারা আল্লাহকে স্বরণ করে এবং সাথে সাথেই তাদের চোখ খুলে যায় [২]।
وَإِخۡوَ ٰنُهُمۡ یَمُدُّونَهُمۡ فِی ٱلۡغَیِّ ثُمَّ لَا یُقۡصِرُونَ ﴿٢٠٢﴾
তাদের সঙ্গী-সাথীরা তাদেরকে ভুলের দিকে টেনে নেয়। তারপর এ বিষয়ে তারা কোনো ত্রুটি করে না [১]।
وَإِذَا لَمۡ تَأۡتِهِم بِـَٔایَةࣲ قَالُواْ لَوۡلَا ٱجۡتَبَیۡتَهَاۚ قُلۡ إِنَّمَاۤ أَتَّبِعُ مَا یُوحَىٰۤ إِلَیَّ مِن رَّبِّیۚ هَـٰذَا بَصَاۤىِٕرُ مِن رَّبِّكُمۡ وَهُدࣰى وَرَحۡمَةࣱ لِّقَوۡمࣲ یُؤۡمِنُونَ ﴿٢٠٣﴾
আপনি যখন তাদের কাছে (তাদের চাওয়া মত) কোনো আয়াত [১] নিয়ে আসেন না, তখন তারা বলে, ‘আপনি নিজেই একটি আয়াত বানিয়ে নেন না কেন?’ বলুন, ‘আমার রবের পক্ষ থেকে যা আমার কাছে ওহী হিসেবে প্রেরণ করা হয়, আমি তো শুধু তারই অনুসরণ করি। এ কুরআন তোমাদের রবের পক্ষ থেকে স্পষ্ট প্রমাণ। আর হিদায়াত ও রহমত এমন সম্প্রদায়ের জন্য যারা ঈমান আনে [২]।
وَإِذَا قُرِئَ ٱلۡقُرۡءَانُ فَٱسۡتَمِعُواْ لَهُۥ وَأَنصِتُواْ لَعَلَّكُمۡ تُرۡحَمُونَ ﴿٢٠٤﴾
আর যখন কুরআন পাঠ করা হয় তখন তোমরা মনোযোগের সাথে তা শুন এবং নিশ্চুপ হয়ে থাক যাতে তোমাদের প্রতি দয়া করা হয় [১]।
وَٱذۡكُر رَّبَّكَ فِی نَفۡسِكَ تَضَرُّعࣰا وَخِیفَةࣰ وَدُونَ ٱلۡجَهۡرِ مِنَ ٱلۡقَوۡلِ بِٱلۡغُدُوِّ وَٱلۡـَٔاصَالِ وَلَا تَكُن مِّنَ ٱلۡغَـٰفِلِینَ ﴿٢٠٥﴾
আর আপনি আপনার রবকে নিজ মনে স্মরণ করুন [১] সবিনয়ে, সশংকচিত্তে ও অনুচ্চস্বরে, সকালে ও সন্ধ্যায়। আর উদাসীনদের অন্তর্ভুক্ত হবেন না।
إِنَّ ٱلَّذِینَ عِندَ رَبِّكَ لَا یَسۡتَكۡبِرُونَ عَنۡ عِبَادَتِهِۦ وَیُسَبِّحُونَهُۥ وَلَهُۥ یَسۡجُدُونَ ۩ ﴿٢٠٦﴾
নিশ্চয় যারা আপনার রবের সান্নিধ্যে রয়েছে তারা তাঁর ইবাদাতের ব্যাপারে অহঙ্কার [১] করে না। আর তারা তাঁরই তাসবীহ পাঠ করে [২] এবং তাঁরই জন্য সাজদা [৩] করে।