Surah আল-মুরসালাত

Listen

Bangali বাংলা

Surah আল-মুরসালাত - Aya count 50

وَٱلۡمُرۡسَلَـٰتِ عُرۡفࣰا ﴿١﴾

শপথ কল্যাণস্বরূপ প্রেরিত বায়ুর,

[১] আবদুল্লাহ্ ইবন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, আমরা এক গুহায় রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে উপস্থিত ছিলাম। ইত্যবসরে সূরা মুরসালাত অবতীর্ণ হল। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সূরাটি আবৃত্তি করলেন আর আমি তা শুনে মুখস্থ করলাম। সূরার মিষ্টতায় তার মুখমন্ডল সতেজ দেখাচ্ছিল। হঠাৎ একটি সাপ আমাদের উপর আক্রমণোদ্যত হলে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে হত্যা করার আদেশ দিলেন। আমরা সাপের দিকে অগ্রসর হলাম, কিন্তু তা পালিয়ে গেল। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, তোমরা যেমন তার অনিষ্ট থেকে নিরাপদ হয়েছ, তেমনি সেও তোমাদের অনিষ্ট থেকে নিরাপদ হয়েছে। [বুখারী ৩৩১৭, মুসলিম ২২৩৪] সূরা সংক্রান্ত আলোচনা: আয়াত সংখ্যা: ৫০ আয়াত। নাযিল হওয়ার স্থান: মক্কী। । রহমান, রহীম আল্লাহর নামে।


Arabic explanations of the Qur’an:

فَٱلۡعَـٰصِفَـٰتِ عَصۡفࣰا ﴿٢﴾

অতঃপর প্রলয়ংকরী ঝটিকার,


Arabic explanations of the Qur’an:

وَٱلنَّـٰشِرَ ٰ⁠تِ نَشۡرࣰا ﴿٣﴾

শপথ প্ৰচণ্ড সঞ্চালনকারীর,


Arabic explanations of the Qur’an:

فَٱلۡفَـٰرِقَـٰتِ فَرۡقࣰا ﴿٤﴾

অতঃপর সুস্পষ্টরূপে পার্থক্যকারীর,


Arabic explanations of the Qur’an:

فَٱلۡمُلۡقِیَـٰتِ ذِكۡرًا ﴿٥﴾

অতঃপর তাদের, যারা মানুষের অন্তরে পৌঁছে দেয় উপদেশ--- [১]

[১] এই সূরার প্রথমে আল্লাহ্ তা‘আলা পাঁচটি বস্তুর শপথ করে কেয়ামতের নিশ্চিত আগমনের কথা ব্যক্ত করেছেন। যে পাঁচটি জিনিসের শপথ করা হয়েছে তা হচ্ছে: (এক) একের পর এক বা কল্যাণ হিসেবে প্রেরিত। (দুই) অত্যন্ত দ্রুত এবং প্রচন্ডবেগে প্রবাহিতসমূহ। (তিন) ভালোভাবে বিক্ষিপ্তকারী। (চার) ভালোভাবে বিচ্ছিন্নকারী এবং (পাঁচ) স্মরণকে জাগ্রতকারী। এই পাঁচটি বস্তুর নাম কুরআনুল কারীমে উল্লেখ করা হয়নি, বরং নাম না বলে সেগুলোর পাঁচটি বিশেষণ উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু এগুলো কার বিশেষণ, তা পুরোপুরি নির্দিষ্ট করা হয় নি। তাই এ সম্পর্কে বিভিন্নরূপে তাফসীর বর্ণিত আছে। এক দল বলেন, প্রথম তিনটি দ্বারা বাতাস এবং পরের দু‘টি দ্বারা ফেরেশতা বুঝানো হয়েছে। [ইবন কাসীর, ফাতহুল কাদীর] অপর এক দল বলেন, প্রথম দু‘টি দ্বারা বাতাস এবং পরের তিনটি দ্বারা ফেরেশতা বুঝানো হয়েছে। [মুয়াসসার] তৃতীয় এক দল বলেন, প্রথম তিনটি বিশেষণ দ্বারা বাতাস, চতুর্থটি দ্বারা কুরআন এবং পঞ্চমটি দ্বারা ফেরেশতা বুঝানো হয়েছে। [জালালাইন, আয়সারুত তাফসীর] কেউ কেউ বলেন যে প্রতিটি বিশেষণ দ্বারা ফেরেশতাদের বুঝানো হয়েছে। সম্ভবত ফেরেশতাগণের বিভিন্ন দল এসব বিভিন্ন বিশেষণে বিশেষিত। [দেখুন, কুরতুবী] তবে ইমাম তাবারী বলেন, প্রথম আয়াত দ্বারা ফেরেশতা বা বাতাস- দুটিই উদ্দেশ্য হতে পারে। দ্বিতীয় আয়তটি দ্বারা প্রবাহিত বাতাস; আর তৃতীয় আয়াতটির মাধ্যমে বাতাস, বৃষ্টি বা ফেরেশতা সবই উদ্দেশ্য হতে পারে। চতুর্থটি দ্বারা যেকোনো সত্য-মিথ্যা পার্থক্যকারী উদ্দেশ্য হতে পারে, চাই তা ফেরেশতা হোক বা কুরআন হোক বা অন্য কিছু হোক। আর পঞ্চমটির মাধ্যমে ফেরেশতাদের উদ্দেশ্য করা হয়েছে।


Arabic explanations of the Qur’an:

عُذۡرًا أَوۡ نُذۡرًا ﴿٦﴾

ওযর-আপত্তি রহিতকরণ ও সতর্ক করার জন্য [১]

[১] এ আয়াতটি আগের আয়াতের সাথে সম্পৃক্ত। বলা হয়েছে, যে ফেরেশতারা যে উপদেশ ও ওহী নিয়ে আসে তার মাধ্যমে সৃষ্টির পক্ষ থেকে ওজর পেশ করার সুযোগ বন্ধ করা এবং আল্লাহর পক্ষ থেকে আযাবের ভীতি প্রদর্শনের উদ্দেশ্য থাকে। ফাররা বলেন, আল্লাহর পক্ষ থেকে যে উপদেশ-বাণী বা ওহী আসে তা মুমিনদের জন্যে ওযর-আপত্তি রহিত করার কারণ হয় এবং কাফেরদের জন্যে সতর্ককারী হয়ে যায়। [ফিাতহুল কাদীর]


Arabic explanations of the Qur’an:

إِنَّمَا تُوعَدُونَ لَوَ ٰ⁠قِعࣱ ﴿٧﴾

নিশ্চয় তোমাদেরকে যে প্ৰতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে তা অবশ্যম্ভাবী।


Arabic explanations of the Qur’an:

فَإِذَا ٱلنُّجُومُ طُمِسَتۡ ﴿٨﴾

যখন নক্ষত্ররাজির আলো নির্বাপিত করা হবে,


Arabic explanations of the Qur’an:

وَإِذَا ٱلسَّمَاۤءُ فُرِجَتۡ ﴿٩﴾

আর যখন আকাশ বিদীর্ণ করা হবে


Arabic explanations of the Qur’an:

وَإِذَا ٱلۡجِبَالُ نُسِفَتۡ ﴿١٠﴾

আর যখন পর্বতমালা চূৰ্ণবিচূর্ণ করা হবে


Arabic explanations of the Qur’an:

وَإِذَا ٱلرُّسُلُ أُقِّتَتۡ ﴿١١﴾

আর যখন রাসূলগণকে নির্ধারিত সময়ে উপস্থিত করা হবে [১] ,

[১] এখানে আল্লাহ্ তা‘আলার ওয়াদা বা ভীতিপ্ৰদ বিষয়সমূহ বাস্তবায়ন মুহূর্তের কতিপয় ভয়ানক অবস্থা বর্ণনা করে বলেন যে, প্রথমে সব নক্ষত্র জ্যোতিহীন হয়ে যাবে এবং ঝরে যাবে। দ্বিতীয় অবস্থা এই যে, আকাশ বিদীর্ণ হয়ে যাবে। তৃতীয় অবস্থা এই যে, পর্বতসমূহ চূর্ণ হয়ে বিক্ষিপ্ত ধূলি-কণা হওয়ার পর নাই হয়ে যাবে। চতুর্থ অবস্থা হলো, নবী-রাসূলগণের জন্যে তাদের ও তাদের উম্মতের মাঝে বিচারের জন্য উপস্থিত হওয়ার যে সময় নিরূপিত হয়েছিল, তারা যখন সে সময়ে পৌছে যাবেন এবং তাদেরকে জড়ো করা হবে। [মুয়াসসার, সা‘দী]


Arabic explanations of the Qur’an:

لِأَیِّ یَوۡمٍ أُجِّلَتۡ ﴿١٢﴾

এসব স্থগিত রাখা হয়েছে কোন্ দিনের জন্য?


Arabic explanations of the Qur’an:

لِیَوۡمِ ٱلۡفَصۡلِ ﴿١٣﴾

বিচার দিনের জন্য।


Arabic explanations of the Qur’an:

وَمَاۤ أَدۡرَىٰكَ مَا یَوۡمُ ٱلۡفَصۡلِ ﴿١٤﴾

আর আপনাকে কিসে জানাবে বিচার দিন কী?


Arabic explanations of the Qur’an:

وَیۡلࣱ یَوۡمَىِٕذࣲ لِّلۡمُكَذِّبِینَ ﴿١٥﴾

সেদিন দুর্ভোগ মিথ্যারোপকারীদের জন্য [১]।

[১] ويل দ্বারা উদ্দেশ্য ধ্বংস, দুর্ভোগ। অর্থাৎ কতই না দুর্ভোগ ও ধ্বংস রয়েছে সেসব লোকের জন্য, যারা সেদিনের আগমনের খবরকে মিথ্যা বলে মনে করেছিল। আল্লাহ্ তাদেরকে শপথ করে বলেছেন, কিন্তু তারা তা বিশ্বাস করে নি। ফলে তারা কঠোর ও কঠিন শাস্তির যোগ্য হয়ে উঠল। [সা‘দী]


Arabic explanations of the Qur’an:

أَلَمۡ نُهۡلِكِ ٱلۡأَوَّلِینَ ﴿١٦﴾

আমরা কি পূর্ববর্তীদেরকে ধ্বংস করিনি?


Arabic explanations of the Qur’an:

ثُمَّ نُتۡبِعُهُمُ ٱلۡـَٔاخِرِینَ ﴿١٧﴾

তারপর আমরা পরবর্তীদেরকে তাদের অনুগামী করব [১]।

[১] এটা আখেরাতের স্বপক্ষে ঐতিহাসিক প্ৰমাণ। এতে বর্তমান লোকদেরকে অতীত লোকদের অবস্থা থেকে শিক্ষা গ্ৰহণ করতে বলা হয়েছে। আদ, সামুদ, কাওমে-লুত, কাওমে-ফির‘আউন ইত্যাদিকে আল্লাহ্ ধ্বংস করেছেন। সে ধারাবাহিকতায় মক্কার কাফেরদেরকেও তিনি ধ্বংস করবেন। [দেখুন, তাবারী; ফাতহুল কাদীর] এই আযাব বদর, ওহুদ প্রভৃতি যুদ্ধে তাদের উপর পতিত হয়েছে। আর যদি দুনিয়াতে সে আযাব নাও আসে, আখেরাতে তা অবশ্যই আসবে। [ফাতহুল কাদীর]


Arabic explanations of the Qur’an:

كَذَ ٰ⁠لِكَ نَفۡعَلُ بِٱلۡمُجۡرِمِینَ ﴿١٨﴾

অপরাধীদের প্রতি আমরা এরূপই করে থাকি।


Arabic explanations of the Qur’an:

وَیۡلࣱ یَوۡمَىِٕذࣲ لِّلۡمُكَذِّبِینَ ﴿١٩﴾

সেদিন দুর্ভোগ মিথ্যারোপকারীদের জন্য।


Arabic explanations of the Qur’an:

أَلَمۡ نَخۡلُقكُّم مِّن مَّاۤءࣲ مَّهِینࣲ ﴿٢٠﴾

আমরা কি তোমাদেরকে তুচ্ছ পানি হতে সৃষ্টি করিনি?


Arabic explanations of the Qur’an:

فَجَعَلۡنَـٰهُ فِی قَرَارࣲ مَّكِینٍ ﴿٢١﴾

তারপর আমরা তা রেখেছি নিরাপদ আধারে [১],

[১] অর্থাৎ মায়ের গর্ভস্থল। একে মহান আল্লাহ্ তা‘আলা মুক্ত বাতাস থেকেও সংরক্ষণ করেছেন। [তাতিম্মাতু আদ্ওয়াউল বায়ান]


Arabic explanations of the Qur’an:

إِلَىٰ قَدَرࣲ مَّعۡلُومࣲ ﴿٢٢﴾

এক নির্দিষ্ট কাল পর্যন্ত,


Arabic explanations of the Qur’an:

فَقَدَرۡنَا فَنِعۡمَ ٱلۡقَـٰدِرُونَ ﴿٢٣﴾

অতঃপর আমরা পরিমাপ করেছি, সুতরাং আমরা কত নিপুণ পরিমাপকারী [১]!

[১] এটা মৃত্যুর পরের জীবনের সম্ভাব্যতার স্পষ্ট প্রমাণ। আল্লাহ্ তা‘আলার এ বাণীর অর্থ হলো, যখন আমি নগণ্য এক ফোটা বীর্য থেকে সূচনা করে তোমাকে পূর্ণাঙ্গ একজন মানুষ বানাতে সক্ষম হয়েছি তখন পুনরায় তোমাদের অন্য কোনোভাবে সৃষ্টি করতে সক্ষম হবো না কেন? আমার যে সৃষ্টি কর্মের ফলশ্রুতিতে তুমি আজ জীবিত ও বর্তমান তা একথা প্রমাণ করে যে, আমি অসীম ক্ষমতার অধিকারী। আমি এমন অক্ষম নই যে, একবার সৃষ্টি করার পর তোমাদেরকে পুনরায় আর সৃষ্টি করতে পারবো না। [আত-তাহরীর ওয়াত তানওয়ীর]


Arabic explanations of the Qur’an:

وَیۡلࣱ یَوۡمَىِٕذࣲ لِّلۡمُكَذِّبِینَ ﴿٢٤﴾

সেদিন দুর্ভোগ মিথ্যারোপকারীদের জন্য [১]।

[১] এখানে এ আয়াতংশ যে অর্থ প্রকাশ করছে তা হলো, মৃত্যুর পরের জীবনের সম্ভাব্যতার এ স্পষ্ট প্রমাণ সামনে থাকা সত্ত্বেও যারা তা অস্বীকার করছে তাদের জন্য ধ্বংস অনিবার্য। [দেখুন, সা‘দী] সুতরাং তারা আখেরাত ও পুনরুত্থান নিয়ে যত ইচ্ছা হাসি রঙ-তামাসা ও ঠাট্টা-বিদ্রুপ করুক এবং এর ওপর বিশ্বাস স্থাপনকারী লোকদের তারা যত ইচ্ছা ‘সেকেলে’ অন্ধবিশ্বাসী এবং কুসংস্কারাচ্ছন্ন বলতে থাকুক। যে দিনকে এরা মিথ্যা বলছে যখন সেদিনটি আসবে তখন তারা জানতে পারবে, সেটিই তাদের জন্য ধ্বংসের দিন।


Arabic explanations of the Qur’an:

أَلَمۡ نَجۡعَلِ ٱلۡأَرۡضَ كِفَاتًا ﴿٢٥﴾

আমরা কি যমীনকে সৃষ্টি করিনি ধারণকারীরূপে,


Arabic explanations of the Qur’an:

أَحۡیَاۤءࣰ وَأَمۡوَ ٰ⁠تࣰا ﴿٢٦﴾

জীবিত ও মৃতের জন্য [১]?

[১] অর্থাৎ ভূমি জীবিত মানুষকে তার পৃষ্ঠে এবং সকল মৃতকে তার পেটে ধারণ করে। [সা‘দী; মুয়াসসার]


Arabic explanations of the Qur’an:

وَجَعَلۡنَا فِیهَا رَوَ ٰ⁠سِیَ شَـٰمِخَـٰتࣲ وَأَسۡقَیۡنَـٰكُم مَّاۤءࣰ فُرَاتࣰا ﴿٢٧﴾

আর আমরা তাতে স্থাপন করেছি সুদৃঢ় উচ্চ পর্বতমালা এবং তোমাদেরকে পান করিয়েছি সুপেয় পানি [১]।

[১] অর্থাৎ এ পৃথিবীর অভ্যন্তরে সুপেয় পানি সৃষ্টি করা হয়েছে। এর পৃষ্ঠদেশের উপরেও সুপেয় পানির নদী ও খাল প্রবাহিত করা হয়েছে। যেমন অন্য আয়াতে বলেছেন, “তোমরা যে পানি পান কর তা সম্পর্কে আমাকে জানাও তোমরা কি সেটা মেঘ হতে নামিয়ে আন, না আমরা সেটা বর্ষণ করি? আমরা ইচ্ছে করলে তা লবণাক্ত করে দিতে পারি। তবুও কেন তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর না?” [সূরা আল-ওয়াকি‘আহ ৬৮-৭০]


Arabic explanations of the Qur’an:

وَیۡلࣱ یَوۡمَىِٕذࣲ لِّلۡمُكَذِّبِینَ ﴿٢٨﴾

সেদিন দুর্ভোগ মিথ্যারোপকারীদের জন্য [১]।

[১] এখানে এ আয়াতাংশ এ অর্থে বলা হয়েছে যে, যেসব লোক আল্লাহ্ তা‘আলার কুদরত ও কর্মকৌশলের এ বিস্ময়কর নমুনা দেখেও আখেরাতের সম্ভাব্যতা ও যৌক্তিকতা অস্বীকার করছে এবং এ দুনিয়ার ধ্বংসের পর আল্লাহ্ তা‘আলা আরো একটি দুনিয়া সৃষ্টি করবেন এবং সেখানে মানুষের কাছ থেকে তার কাজের হিসেব গ্রহণ করবেন এ বিষয়টিকেও যারা মিথ্যা মনে করছে, তারা তাদের এ খামখেয়ালীতে মগ্ন থাকতে চাইলে থাকুক। তাদের ধারণা ও বিশ্বাসের সম্পূর্ণ বিপরীত এসব কিছু যেদিন বাস্তব হয়ে দেখা দেবে, সেদিন তারা বুঝতে পারবে যে, এ বোকামির মাধ্যমে তারা নিজেরাই নিজেদের ধ্বংসের ব্যবস্থা করেছে মাত্ৰ।


Arabic explanations of the Qur’an:

ٱنطَلِقُوۤاْ إِلَىٰ مَا كُنتُم بِهِۦ تُكَذِّبُونَ ﴿٢٩﴾

তোমরা যাতে মিথ্যারোপ করতে, চল তারই দিকে।


Arabic explanations of the Qur’an:

ٱنطَلِقُوۤاْ إِلَىٰ ظِلࣲّ ذِی ثَلَـٰثِ شُعَبࣲ ﴿٣٠﴾

চল তিন শাখাবিশিষ্ট আগুনের ছায়ার দিকে,


Arabic explanations of the Qur’an:

لَّا ظَلِیلࣲ وَلَا یُغۡنِی مِنَ ٱللَّهَبِ ﴿٣١﴾

যে ছায়া শীতল নয় এবং যা রক্ষা করে না অগ্নিশিখা হতে,


Arabic explanations of the Qur’an:

إِنَّهَا تَرۡمِی بِشَرَرࣲ كَٱلۡقَصۡرِ ﴿٣٢﴾

নিশ্চয় জাহান্নাম উৎক্ষেপন করবে বৃহৎ স্ফুলিংগ অট্টালিকাতুল্য,


Arabic explanations of the Qur’an:

كَأَنَّهُۥ جِمَـٰلَتࣱ صُفۡرࣱ ﴿٣٣﴾

তা যেন পীতবর্ণ উটের শ্রেণী [১],

[১] অর্থাৎ জাহান্নামের প্রত্যেকটি স্ফুলিঙ্গ প্রাসাদের মত বড় হবে। আর যখন এসব বড় বড় স্ফুলিঙ্গ উথিত হয়ে ছড়িয়ে পড়বে এবং চারদিকে উড়তে থাকবে তখন মনে হবে যেন কালো কিছুটা হলুদ বর্ণের উটসমূহ লম্ফ ঝম্ফ করছে। [মুয়াসসার]


Arabic explanations of the Qur’an:

وَیۡلࣱ یَوۡمَىِٕذࣲ لِّلۡمُكَذِّبِینَ ﴿٣٤﴾

সেদিন দুর্ভোগ মিথ্যারূপকারীদের জন্য।


Arabic explanations of the Qur’an:

هَـٰذَا یَوۡمُ لَا یَنطِقُونَ ﴿٣٥﴾

এটা এমন এক দিন যেদিন না তারা কথা বলবে [১] ,

[১] অর্থাৎ সেদিন কেউ কথা বলতে পারবে না এবং কাউকে কৃতকর্মের ওযর পেশ করার অনুমতি দেয়া হবে না। অন্যান্য আয়াতে কাফেরদের কথা বলা এবং ওযর পেশ করার কথা রয়েছে। সেটা এর পরিপন্থী নয়। কেননা হাশরের ময়দানে বিভিন্ন স্থান আসবে। কোনো স্থানে ওযর পেশ করা নিষিদ্ধ থাকবে এবং কোনো স্থানে অনুমতি দেয়া হবে। [ইবন কাসীর]


Arabic explanations of the Qur’an:

وَلَا یُؤۡذَنُ لَهُمۡ فَیَعۡتَذِرُونَ ﴿٣٦﴾

আর না তাদেরকে অনুমতি দেয়া হবে ওযর পেশ করার।


Arabic explanations of the Qur’an:

وَیۡلࣱ یَوۡمَىِٕذࣲ لِّلۡمُكَذِّبِینَ ﴿٣٧﴾

সেদিন দুর্ভোগ মিথ্যারোপকারীদের জন্য।


Arabic explanations of the Qur’an:

هَـٰذَا یَوۡمُ ٱلۡفَصۡلِۖ جَمَعۡنَـٰكُمۡ وَٱلۡأَوَّلِینَ ﴿٣٨﴾

‘এটাই ফয়সালার দিন, আমরা একত্র করেছি তোমাদেরকে এবং পূৰ্ববর্তীদেরকে।’


Arabic explanations of the Qur’an:

فَإِن كَانَ لَكُمۡ كَیۡدࣱ فَكِیدُونِ ﴿٣٩﴾

অতঃপর তোমাদের কোনো কৌশল থাকলে তা প্রয়োগ কর আমার বিরুদ্ধে [১]।

[১] অর্থাৎ দুনিয়ায় তো তোমরা অনেক কৌশল ও চাতুর্যের আশ্রয় নিতে। এখন এখানে কোনো কৌশল বা আশ্রয় নিয়ে আমার পাকড়াও থেকে বাঁচতে পারলে তা একটু করে দেখাও। কিন্তু আজ তোমাদের কোনো কৌশল কাজে আসবে না। আজ তোমরা পাকড়াও থেকে বাঁচতে পারবে না। যেমন অন্য আয়াতে আল্লাহ্ বলেন, “হে জিন ও মানব সম্প্রদায়! আসমানসমূহ ও যমীনের সীমা তোমরা যদি অতিক্রম করতে পার অতিক্রম কর, কিন্তু তোমরা অতিক্রম করতে পারবে না সনদ ছাড়া।” [সূরা আর-রহমান ৩৩] [সা‘দী]


Arabic explanations of the Qur’an:

وَیۡلࣱ یَوۡمَىِٕذࣲ لِّلۡمُكَذِّبِینَ ﴿٤٠﴾

সেদিন দুর্ভোগ মিথ্যারোপকারীদের জন্য।


Arabic explanations of the Qur’an:

إِنَّ ٱلۡمُتَّقِینَ فِی ظِلَـٰلࣲ وَعُیُونࣲ ﴿٤١﴾

নিশ্চয় মুত্তাকীরা [১] থাকবে ছায়ায় ও প্রস্রবণ বহুল স্থানে,

‘দ্বিতীয় রুকূ’ [১] মুত্তাকী শব্দ বলে এখানে সেসব লোকদের বুঝানো হয়েছে যারা আখেরাতকে মিথ্যা বলে অস্বীকার করা থেকে বিরত থেকেছে এবং আখেরাতকে মেনে নিয়ে এ বিশ্বাসে জীবন-যাপন করেছে যে, আখেরাতে আমাদেরকে নিজেদের কথাবার্তা, কাজ-কর্ম এবং স্বভাব চরিত্র ও কর্মকাণ্ডের জন্য জবাবদিহি করতে হবে। তাই কথাবার্তা, কাজ-কর্মে সত্যবাদিতার প্রমাণ রেখেছে এবং তারা ফরয ও ওয়াজিব সঠিক মত আদায় করেছে। [দেখুন, সা‘দী]


Arabic explanations of the Qur’an:

وَفَوَ ٰ⁠كِهَ مِمَّا یَشۡتَهُونَ ﴿٤٢﴾

আর তাদের বাঞ্ছিত ফলমূলের প্রাচুর্যের মধ্যে।


Arabic explanations of the Qur’an:

كُلُواْ وَٱشۡرَبُواْ هَنِیۤـَٔۢا بِمَا كُنتُمۡ تَعۡمَلُونَ ﴿٤٣﴾

‘তোমাদের কর্মের পুরস্কারস্বরূপ তোমরা তৃপ্তির সাথে পানাহার কর।’


Arabic explanations of the Qur’an:

إِنَّا كَذَ ٰ⁠لِكَ نَجۡزِی ٱلۡمُحۡسِنِینَ ﴿٤٤﴾

এভাবে আমরা মুহসিনদেরকে পুরস্কৃত করে থাকি।


Arabic explanations of the Qur’an:

وَیۡلࣱ یَوۡمَىِٕذࣲ لِّلۡمُكَذِّبِینَ ﴿٤٥﴾

সেদিন দুর্ভোগ মিথ্যারোপকারীদের জন্য।


Arabic explanations of the Qur’an:

كُلُواْ وَتَمَتَّعُواْ قَلِیلًا إِنَّكُم مُّجۡرِمُونَ ﴿٤٦﴾

তোমরা খাও এবং ভোগ করে নাও অল্প কিছুদিন, তোমরা তো অপরাধী [১]।

[১] অর্থাৎ কিছুদিন খেয়ে-দেয়ে নাও এবং আরাম করে নাও। তোমরা তো অপরাধী; অবশেষে কঠোর আযাব ভোগ করতে হবে। নবী-রাসূলগণের মাধ্যমে একথা দুনিয়াতে মিথ্যারোপকারীদেরকে বলা হয়েছে। উদ্দেশ্য এই যে, ক্ষণস্থায়ী আরাম-আয়েশের পর তোমাদের কপালে আযাবই আযাব রয়েছে। [দেখুন, সা‘দী]


Arabic explanations of the Qur’an:

وَیۡلࣱ یَوۡمَىِٕذࣲ لِّلۡمُكَذِّبِینَ ﴿٤٧﴾

সেদিন দুর্ভোগ মিথ্যারোপকারীদের জন্য।


Arabic explanations of the Qur’an:

وَإِذَا قِیلَ لَهُمُ ٱرۡكَعُواْ لَا یَرۡكَعُونَ ﴿٤٨﴾

যখন তাদেরকে বলা হয়, রুকু কর তখন তারা রুকু করে না [১]।

[১] এখানে অধিকাংশ তফসীরবিদের মতে রুকুর পারিভাষিক অর্থই উদ্দেশ্য। অর্থ এই যে, যখন তাদেরকে সালাতের দিকে আহ্বান করা হত তখন তারা সালাত পড়ত না। কাজেই আয়াতে রুকু বলে পুর্ণ সালাত বোঝানো হয়েছে। [বাগভী; ইবন কাসীর; সা‘দী]


Arabic explanations of the Qur’an:

وَیۡلࣱ یَوۡمَىِٕذࣲ لِّلۡمُكَذِّبِینَ ﴿٤٩﴾

সেদিন দুর্ভোগ মিথ্যারোপকারীদের জন্য।


Arabic explanations of the Qur’an:

فَبِأَیِّ حَدِیثِۭ بَعۡدَهُۥ یُؤۡمِنُونَ ﴿٥٠﴾

কাজেই তারা কুরআনের পরিবর্তে আর কোন্ কথায় ঈমান আনবে [১]!

[১] অর্থাৎ মানুষকে হক ও বাতিলের পার্থক্য বুঝিয়ে দেয়ার এবং হিদায়াতের পথ দেখানোর জন্য সবচেয়ে বড় জিনিস যা হতে পারতো তা কুরআন আকারে নাযিল করা হয়েছে। তারা যখন কুরআনের মত অপূর্ব, অলংকারপূর্ণ, তত্ত্বপূর্ণ ও সুস্পষ্ট প্রমাণাদিমণ্ডিত কিতাবে ঈমান আনল না, তখন এরপর আর কোন্ কথায় বিশ্বাস স্থাপন করবে? এ কুরআন পড়ে বা শুনেও যদি একে বাদ দিয়ে আর অন্য কোন জিনিসের দিকে ধাবিত হয় তবে তাদের মত দুর্ভাগা আর কে হতে পারে? [দেখুন, সা‘দী]


Arabic explanations of the Qur’an: