Surah আন-নাবা

Listen

Bangali বাংলা

Surah আন-নাবা - Aya count 40

عَمَّ یَتَسَاۤءَلُونَ ﴿١﴾

তারা একে অন্যের কাছে কী বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে?

সূরা সংক্রান্ত আলোচনা: আয়াত সংখ্যা: ৪০ আয়াত। নাযিল হওয়ার স্থান: মক্কী। । রহমান, রহীম আল্লাহর নামে।


Arabic explanations of the Qur’an:

عَنِ ٱلنَّبَإِ ٱلۡعَظِیمِ ﴿٢﴾

মহাসংবাদটির বিষয়ে [১],

[১] অর্থাৎ তারা কি বিষয়ে পরস্পরে জিজ্ঞাসাবাদ করছে? অতঃপর আল্লাহ্ নিজেই উত্তর দিয়েছেন যে, মহাখবর সম্পর্কে। তাফসীরবিদ মুজাহিদ বলেন, এখানে মহাখবর বলে কুরআনকে উদ্দেশ্য নেয়া হয়েছে। কাতাদাহ বলেন, এখানে মহাখবর বলে কেয়ামত বোঝানো হয়েছে। এখানে এটাই প্রাধান্যপ্রাপ্ত মত। [ইবন কাসীর]


Arabic explanations of the Qur’an:

ٱلَّذِی هُمۡ فِیهِ مُخۡتَلِفُونَ ﴿٣﴾

যে বিষয়ে তারা মতানৈক্য করছে [১],

[১] আয়াতের আরেকটি অর্থ হচ্ছে: “এ ব্যাপারে তারা নানা ধরনের কথা বলছে ও ঠাট্টা-বিদ্রুপ করে ফিরছে।” অন্য অর্থ এও হতে পারে, দুনিয়ার পরিণাম সম্পর্কে তারা নিজেরাও কোনো একটি অভিন্ন আকীদা পোষণ করে না বরং “তাদের মধ্যে এ ব্যাপারে বিভিন্ন মত পাওয়া যায়।” কেউ কেউ আবার আখেরাত পুরোপুরি অস্বীকার করতো না, তবে তা ঘটতে পারে কিনা এ ব্যাপারে তাদের সন্দেহ ছিল। কুরআন মজীদে এ ধরনের লোকদের এ উক্তি উদ্ধৃত করা হয়েছে, “আমরা তো মাত্র একটি ধারণাই পোষণ করি, আমাদের কোনো নিশ্চিত বিশ্বাস নেই।” [সূরা আল-জাসিয়াহ ৩২] আবার কেউ কেউ একদম পরিষ্কার বলতো, “আমাদের এ দুনিয়ার জীবনটিই সবকিছু এবং মরার পর আমাদের আর কখনো দ্বিতীয়বার উঠানো হবে না।” [সূরা আল-আন‘আম ২৯]; “আমাদের এই দুনিয়ার জীবনটিই সব কিছু। এখানেই আমরা মরি, এখানেই জীবন লাভ করি এবং সময়ের চক্র ছাড়া আর কিছুই নেই যা আমাদের ধ্বংস করে।” [সূরা আল-জাসিয়াহ্ ২৪] [ফাতহুল কাদীর]


Arabic explanations of the Qur’an:

كَلَّا سَیَعۡلَمُونَ ﴿٤﴾

কখনো না [১], তারা অচিরেই জানতে পারবে;

[১] অর্থাৎ আখেরাত সম্পর্কে যেসব কথা এরা বলে যাচ্ছে এগুলো সবই ভুল। এরা যা কিছু মনে করেছে ও বুঝেছে তা কোনোক্রমেই সঠিক নয়। [মুয়াসসার]


Arabic explanations of the Qur’an:

ثُمَّ كَلَّا سَیَعۡلَمُونَ ﴿٥﴾

তারপর বলি কখনো না, তারা অচিরেই জানতে পারবে।


Arabic explanations of the Qur’an:

أَلَمۡ نَجۡعَلِ ٱلۡأَرۡضَ مِهَـٰدࣰا ﴿٦﴾

আমরা কি করিনি যমীনকে শয্যা


Arabic explanations of the Qur’an:

وَٱلۡجِبَالَ أَوۡتَادࣰا ﴿٧﴾

আর পর্বতসমূহকে পেরেক ?


Arabic explanations of the Qur’an:

وَخَلَقۡنَـٰكُمۡ أَزۡوَ ٰ⁠جࣰا ﴿٨﴾

আর আমরা সৃষ্টি করেছি তোমাদেরকে জোড়ায় জোড়ায়,


Arabic explanations of the Qur’an:

وَجَعَلۡنَا نَوۡمَكُمۡ سُبَاتࣰا ﴿٩﴾

আর তোমাদের ঘুমকে করেছি বিশ্ৰাম [১],

[১] মানুষকে দুনিয়ায় কাজ করার যোগ্য করার জন্য মহান আল্লাহ্ অত্যন্ত কর্মকুশলতা সহকারে তার প্রকৃতিতে ঘুমের এক চাহিদা সৃষ্টি করে দিয়েছেন। কর্মের ক্লান্তির পর ঘুম তাকে স্বস্তি, আরাম ও শান্তি দান করে। [সা‘দী]


Arabic explanations of the Qur’an:

وَجَعَلۡنَا ٱلَّیۡلَ لِبَاسࣰا ﴿١٠﴾

আর করেছি রাতকে আবরণ,


Arabic explanations of the Qur’an:

وَجَعَلۡنَا ٱلنَّهَارَ مَعَاشࣰا ﴿١١﴾

আর করেছি দিনকে জীবিকা আহরণের সময়,


Arabic explanations of the Qur’an:

وَبَنَیۡنَا فَوۡقَكُمۡ سَبۡعࣰا شِدَادࣰا ﴿١٢﴾

আর আমরা নির্মাণ করেছি তোমাদের উপরে সুদৃঢ় সাত আকাশ [১]

[১] সুস্থিত ও মজবুত বলা হয়েছে এ অর্থে যে, আকাশ তৈরি হয়েছে অত্যন্ত দৃঢ়-সংঘবদ্ধভাবে, তার মধ্যে সামান্যতম পরিবর্তনও কখনো হয় না, ধ্বংস হয় না, ফেটে যায় না। [তাবারী]


Arabic explanations of the Qur’an:

وَجَعَلۡنَا سِرَاجࣰا وَهَّاجࣰا ﴿١٣﴾

আর আমরা সৃষ্টি করেছি প্রোজ্জ্বল দীপ [১]।

[১] এখানে সূর্যকে উদ্দেশ্য করা হয়েছে, যা সমগ্ৰ পৃথিবীর মানুষের জন্য প্রজ্জ্বলিত প্ৰদীপ। [ইবন কাসীর]


Arabic explanations of the Qur’an:

وَأَنزَلۡنَا مِنَ ٱلۡمُعۡصِرَ ٰ⁠تِ مَاۤءࣰ ثَجَّاجࣰا ﴿١٤﴾

আর আমরা বর্ষণ করেছি মেঘমালা হতে প্রচুর বারি [১],

[১] معصرات শব্দটি معصرة এর বহুবচন। এর অর্থ জলে পরিপূর্ণ মেঘমালা। [তাবারী]


Arabic explanations of the Qur’an:

لِّنُخۡرِجَ بِهِۦ حَبࣰّا وَنَبَاتࣰا ﴿١٥﴾

যাতে তা দ্বারা আমরা উৎপন্ন করি শস্য, উদ্ভিদ


Arabic explanations of the Qur’an:

وَجَنَّـٰتٍ أَلۡفَافًا ﴿١٦﴾

ও ঘন সন্নিবিষ্ট উদ্যান।


Arabic explanations of the Qur’an:

إِنَّ یَوۡمَ ٱلۡفَصۡلِ كَانَ مِیقَـٰتࣰا ﴿١٧﴾

নিশ্চয় নির্ধারিত আছে বিচার দিন [১];

[১] অর্থাৎ যে দিন মহান আল্লাহ্ তা‘আলা তাঁর সৃষ্টির মাঝে বিচার-মীমাংসা করবেন সে দিন তথা কেয়ামত নির্দিষ্ট সময়েই আসবে। [মুয়াসসার]


Arabic explanations of the Qur’an:

یَوۡمَ یُنفَخُ فِی ٱلصُّورِ فَتَأۡتُونَ أَفۡوَاجࣰا ﴿١٨﴾

সেদিন শিংগায় ফুঁক দেয়া হবে তখন তোমরা দলে দলে আসবে [১],

[১] অন্যান্য আয়াত থেকে জানা যায় যে, দু’বার শিংগায় ফুৎকার দেয়া হবে। প্রথম ফুৎকারের সাথে সাথে সমগ্র বিশ্ব ধ্বংস প্রাপ্ত হবে এবং দ্বিতীয় ফুৎকারের সাথে সাথে পুনরায় জীবিত ও প্রতিষ্ঠিত হয়ে যাবে। এ সময় বিশ্বের পূর্ববতী ও পরবর্তী সব মনুষ দলে দলে আল্লাহর কাছে উপস্থিত হবে। এ স্থানে শিংগার দ্বিতীয় ফুঁকের কথা বলা হয়েছে। এর আওয়াজ বুলন্দ হওয়ার সাথে সাথেই প্রথম থেকে শেষ- সমস্ত মরা মানুষ অকস্মাৎ জেগে উঠবে। [ফাতহুল কাদীর]


Arabic explanations of the Qur’an:

وَفُتِحَتِ ٱلسَّمَاۤءُ فَكَانَتۡ أَبۡوَ ٰ⁠بࣰا ﴿١٩﴾

আর আকাশ উন্মুক্ত করা হবে, ফলে তা হবে বহু দ্বারবিশিষ্ট [১]।

[১] “আকাশ খুলে দেয়া হবে” এর মানে এটাও হতে পারে যে, উর্ধজগতে কোনো বাধা ও বন্ধন থাকবে না। আসমানে বিভিন্ন দরজা তৈরি হয়ে সেগুলো হতে সবদিক থেকে ফেরেশতারা নেমে আসতে থাকবে। [ইবন কাসীর]


Arabic explanations of the Qur’an:

وَسُیِّرَتِ ٱلۡجِبَالُ فَكَانَتۡ سَرَابًا ﴿٢٠﴾

আর চলমান করা হবে পর্বতসমূহকে, ফলে সেগুলো হয়ে যাবে মরীচিকা [১],

[১] পাহাড়ের চলার ও মরীচিকায় পরিণত হবার মানে হচ্ছে, দেখতে দেখতে মুহুর্তের মধ্যে পর্বতমালা স্থানচ্যুত হয়ে যাবে। তারপর ভেঙ্গে চূৰ্ণ বিচূর্ণ হয়ে এমনভাবে মরীচিকার মতো ছড়িয়ে পড়বে যে, মনে হবে সেখানে কিছু আছে, কিন্তু কিছু নেই। এর পরই যেখানে একটু আগে বিশাল পর্বত ছিল সেখানে আর কিছুই থাকবে না। এ অবস্থাকে অন্যত্র বলা হয়েছে: “এরা আপনাকে জিজ্ঞেস করছে, সেদিন এ পাহাড় কোথায় চলে যাবে? এদের বলে দিন, আমার রব তাদেরকে ধূলোয় পরিণত করে বাতাসে উড়িয়ে দেবেন এবং যমীনকে এমন একটি সমতল প্রান্তরে পরিণত করে দেবেন যে, তার মধ্যে কোথাও একটুও অসমতল ও উঁচু-নীচু জায়গা এবং সামন্যতম ভাঁজও দেখতে পাবে না।” [সূরা ত্বা-হা ১০৫-১০৭] [ইবন কাসীর]


Arabic explanations of the Qur’an:

إِنَّ جَهَنَّمَ كَانَتۡ مِرۡصَادࣰا ﴿٢١﴾

নিশ্চয় জাহান্নাম ওৎ পেতে অপেক্ষমান;


Arabic explanations of the Qur’an:

لِّلطَّـٰغِینَ مَـَٔابࣰا ﴿٢٢﴾

সীমালঙ্ঘনকারীদের জন্য প্রত্যাবর্তনস্থল।


Arabic explanations of the Qur’an:

لَّـٰبِثِینَ فِیهَاۤ أَحۡقَابࣰا ﴿٢٣﴾

সেখানে তারা যুগ যুগ ধরে অবস্থান করবে [১]।

[১] অর্থাৎ তারা সেখানে অবস্থানকারী হবে সুদীর্ঘ বছর। আয়াতে ব্যবহৃত أحقاب শব্দটি حقب এর বহুবচন। এর অর্থ নির্ধারণ নিয়ে মতপার্থক্য থাকলেও স্বাভাবিকভাবে বলা যায় যে, এর দ্বারা ‘সুদীর্ঘ সময়’ উদ্দেশ্য নেয়া হয়েছে। সুতরাং أحقاب দ্বারা তখন কোনো সুনির্দিষ্ট সময় বোঝা উচিত হবে না। তাই উপরে এর অনুবাদ করা হয়েছে, ‘যুগ যুগ ধরে’। এর মানে হচ্ছে, একের পর এক আগমনকারী দীর্ঘ সময় তারা সেখানে অবস্থান করবে। এমন একটি ধারাবাহিক যুগ যে, একটি যুগ শেষ হওয়ার পর আর একটি যুগ শুরু হয়ে যায়। একের পর এক আসতেই থাকবে এবং এমন কোনো যুগ হবে না যার পর আর কোনো যুগ আসবে না। [দেখুন, ইবন কাসীর] কুরআনের ৩৪ জায়গায় জাহান্নামবাসীদের জন্য ‘খুলুদ’ (চিরন্তন) শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। তিন জায়গায় কেবল ‘খুলুদ’ বলেই শেষ করা হয়নি বরং তার সাথে “আবাদান” (চিরকাল) শব্দও বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। এক জায়গায় পরিষ্কার বলা হয়েছে, “তারা চাইবে জাহান্নাম থেকে বের হয়ে যেতে, কিন্তু তারা কখনো সেখান থেকে বের হতে পারবে না এবং তাদের জন্য রয়েছে স্থায়ী আযাব।” [সূরা আল-মায়েদাহ ৩৭]


Arabic explanations of the Qur’an:

لَّا یَذُوقُونَ فِیهَا بَرۡدࣰا وَلَا شَرَابًا ﴿٢٤﴾

সেখানে তারা আস্বাদন করবে না শীতলতা, না কোনো পানীয়---


Arabic explanations of the Qur’an:

إِلَّا حَمِیمࣰا وَغَسَّاقࣰا ﴿٢٥﴾

ফুটন্ত পানি ও পুঁজ ছাড়া [১];

[১] মূলে গাস্সাক শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। এর অর্থ হয়: পুঁজ, রক্ত, পুঁজ মেশানো রক্ত এবং চোখ ও গায়ের চামড়া থেকে বিভিন্ন ধরনের কঠোর দৈহিক নির্যাতনের ফলে যেসব রস বের হয়, যা প্রচণ্ড দুৰ্গন্ধযুক্ত। [ইবন কাসীর]


Arabic explanations of the Qur’an:

جَزَاۤءࣰ وِفَاقًا ﴿٢٦﴾

এটাই উপযুক্ত প্রতিফল [১]।

[১] অর্থাৎ জাহান্নামে তাদেরকে যে শাস্তি দেয়া হবে, তা ন্যায় ও ইনসাফের দৃষ্টিতে তাদের বাতিল বিশ্বাস ও কুকর্মের অনুরূপ হবে। এতে কোনো বাড়াবাড়ি হবে না। [মুয়াসসার, সা‘দী]


Arabic explanations of the Qur’an:

إِنَّهُمۡ كَانُواْ لَا یَرۡجُونَ حِسَابࣰا ﴿٢٧﴾

নিশ্চয় তারা কখনো হিসেবের আশা করত না,


Arabic explanations of the Qur’an:

وَكَذَّبُواْ بِـَٔایَـٰتِنَا كِذَّابࣰا ﴿٢٨﴾

আর তারা আমাদের নিদর্শনাবলীতে কঠোরভাবে মিথ্যারোপ করেছিল [১]।

[১] এ হচ্ছে তাদের জাহান্নামের ভয়াবহ আযাব ভোগ করার কারণ। তারা আল্লাহর সামনে হাজির হয়ে নিজেদের আসনের হিসেব পেশ করার সময়ের কোনো আশা করত না। দ্বিতীয়ত, আল্লাহ্ যেসব আয়াত পাঠিয়েছিলেন সেগুলো মেনে নিতে তারা সম্পূর্ণরূপে অস্বীকার করত এবং সেগুলোকে মিথ্যা বলে প্রত্যাখ্যান করত। [ফাতহুল কাদীর]


Arabic explanations of the Qur’an:

وَكُلَّ شَیۡءٍ أَحۡصَیۡنَـٰهُ كِتَـٰبࣰا ﴿٢٩﴾

আর সবকিছুই আমরা সংরক্ষণ করেছি লিখিতভাবে।


Arabic explanations of the Qur’an:

فَذُوقُواْ فَلَن نَّزِیدَكُمۡ إِلَّا عَذَابًا ﴿٣٠﴾

অতঃপর তোমরা আস্বাদ গ্রহণ কর, আমরা তো তোমাদের শাস্তিই শুধু বৃদ্ধি করব।


Arabic explanations of the Qur’an:

إِنَّ لِلۡمُتَّقِینَ مَفَازًا ﴿٣١﴾

নিশ্চয় মুত্তাকীদের জন্য আছে সাফল্য,

‘দ্বিতীয় রুকূ’


Arabic explanations of the Qur’an:

حَدَاۤىِٕقَ وَأَعۡنَـٰبࣰا ﴿٣٢﴾

উদ্যানসমূহ, আঙ্গুরসমূহ,


Arabic explanations of the Qur’an:

وَكَوَاعِبَ أَتۡرَابࣰا ﴿٣٣﴾

আর সমবয়স্কা [১] উদ্ভিন্ন যৌবনা তরুণী

[১] এর অর্থ এও হতে পারে যে, তারা পরস্পর সমবয়স্কা হবে। [মুয়াসসার, সা‘দী]


Arabic explanations of the Qur’an:

وَكَأۡسࣰا دِهَاقࣰا ﴿٣٤﴾

এবং পরিপূর্ণ পানিপাত্র।


Arabic explanations of the Qur’an:

لَّا یَسۡمَعُونَ فِیهَا لَغۡوࣰا وَلَا كِذَّ ٰ⁠بࣰا ﴿٣٥﴾

সেখানে তারা শুনবে না কোনো অসার ও মিথ্যা বাক্য [১];

[১] জান্নাতে কোনো কটুকথা ও আজেবাজে গল্পগুজব হবে না। কেউ কারো সাথে মিথ্যা বলবে না এবং কারো কথাকে মিথ্যাও বলবে না। কুরআনের বিভিন্ন স্থানে এ বিষয়টিকে জান্নাতের বিরাট নিয়ামত হিসেবে গণ্য করা হয়েছে। [সা‘দী]


Arabic explanations of the Qur’an:

جَزَاۤءࣰ مِّن رَّبِّكَ عَطَاۤءً حِسَابࣰا ﴿٣٦﴾

আপনার রবের পক্ষ থেকে পুরস্কার, যথোচিত দানস্বরূপ [১],

[১] লক্ষণীয় যে, এসব নেয়ামত বর্ণনা করে বলা হয়েছে, জান্নাতের এসব নেয়ামত মুমিনদের প্রতিদান এবং আপনার রবের পক্ষ থেকে পর্যাপ্ত দান। এখানে জান্নাতের নেয়ামতসমূহকে প্রথমে কর্মের প্রতিদান ও পরে আল্লাহর দান বলা হয়েছে। প্রতিদান শব্দের পরে আবার যথেষ্ট পুরস্কার দেয়ার কথা বলার অর্থ এ দাঁড়ায় যে, তারা নিজেদের সৎকাজের বিনিময়ে যে প্রতিদান লাভের অধিকারী হবে কেবলমাত্র ততটুকুই তাদেরকে দেয়া হবে না বরং তার ওপর অতিরিক্ত পুরস্কার এবং অনেক বেশী পুরস্কার দেয়া হবে। বিপরীত পক্ষে জাহান্নামবাসীদের জন্য কেবল এতটুকুই বলা হয়েছে যে, তাদেরকে তাদের কাজের পূর্ণ প্রতিফল দেয়া হবে। অর্থাৎ তাদের যে পরিমাণ অপরাধ তার চেয়ে বেশী শাস্তি দেয়া হবে না এবং কমও দেয়া হবে না। [দেখুন, তাতিম্মাতু আদ্ওয়াউল বায়ান] কুরআন মজীদের বিভিন্ন স্থানে একথা সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। যেমন সূরা ইউনুস ২৬-২৭ আয়াত, সূরা আন নামল ৮৯-৯০ আয়াত, সূরা আল কাসাস ৮৪ আয়াত, সূরা সাবা ৩৩ আয়াত এবং সূরা আল মু‘মিন ৪০ আয়াত।


Arabic explanations of the Qur’an:

رَّبِّ ٱلسَّمَـٰوَ ٰ⁠تِ وَٱلۡأَرۡضِ وَمَا بَیۡنَهُمَا ٱلرَّحۡمَـٰنِۖ لَا یَمۡلِكُونَ مِنۡهُ خِطَابࣰا ﴿٣٧﴾

যিনি আসমানসমূহ, যমীন ও এ দু’য়ের মধ্যবর্তী সমস্ত কিছুর রব, দয়াময়; তাঁর কাছে আবেদন-নিবেদনের শক্তি তাদের থাকবে না [১]।

[১] এই বাক্যটি পূর্বের বাক্যের সাথে সম্পর্কযুক্ত। এর অর্থ এই হবে যে, এটি সে-রবের পক্ষ থেকে প্রতিদান, যিনি আসমান ও যমীনের রব; তাঁর অনুমতি ব্যতিরেকে কেয়ামতের ময়দানে কারও কথা বলার ক্ষমতা হবে না; যদি-না তিনি অনুমতি দেন। [মুয়াসসার]


Arabic explanations of the Qur’an:

یَوۡمَ یَقُومُ ٱلرُّوحُ وَٱلۡمَلَـٰۤىِٕكَةُ صَفࣰّاۖ لَّا یَتَكَلَّمُونَ إِلَّا مَنۡ أَذِنَ لَهُ ٱلرَّحۡمَـٰنُ وَقَالَ صَوَابࣰا ﴿٣٨﴾

সেদিন রূহ্ ও ফেরেশতাগণ সারিবদ্ধভাবে দাঁরাবে [১]; সেদিন কেউ কথা বলবে না, তবে ‘রহমান’ যাকে অনুমতি দেবেন সে ছাড়া এবং সে সঠিক কথা বলবে [২]।

[১] অধিকাংশ তাফসীরকারগণের মতে ‘রূহ’ বলে এখানে জিবরাঈল আলাইহিস্ সালামকে বোঝানো হয়েছে। [মুয়াসসার, সা‘দী] ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিত আছে যে, রূহ দ্বারা আল্লাহ্ তা‘আলার এক বড় আকৃতির ফেরেশতাকে বোঝানো হয়েছে। কাতাদাহ বলেন, এখানে রূহ বলে আদম সন্তানদেরকে বোঝানো হয়েছে। শেষোক্ত দু‘টি তাফসীর অনুযায়ী দুটি সারি হবে- একটি রূহের ও অপরটি ফেরেশতাগণের। [আত-তাফসীর আস-সাহীহ] [২] এখানে কথা বলা মানে শাফা‘আত করা বলা হয়েছে। শাফা‘আত করতে হলে যে ব্যক্তিকে যে গুনাহগারের জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে শাফা‘আত করার অনুমতি দেয়া হবে একমাত্র সে-ই তার জন্য শাফা‘আত করতে পারবে। আর শাফা‘আতকারীকে সঠিক ও যথার্থ সত্য কথা বলতে হবে। অন্যায় সুপারিশ করতে পারবে না। [দেখুন, কুরতুবী]


Arabic explanations of the Qur’an:

ذَ ٰ⁠لِكَ ٱلۡیَوۡمُ ٱلۡحَقُّۖ فَمَن شَاۤءَ ٱتَّخَذَ إِلَىٰ رَبِّهِۦ مَـَٔابًا ﴿٣٩﴾

এ দিনটি সত্য; অতএব, যার ইচ্ছে সে তার রবের নিকট আশ্রয় গ্ৰহণ করুক।


Arabic explanations of the Qur’an:

إِنَّاۤ أَنذَرۡنَـٰكُمۡ عَذَابࣰا قَرِیبࣰا یَوۡمَ یَنظُرُ ٱلۡمَرۡءُ مَا قَدَّمَتۡ یَدَاهُ وَیَقُولُ ٱلۡكَافِرُ یَـٰلَیۡتَنِی كُنتُ تُرَ ٰ⁠بَۢا ﴿٤٠﴾

নিশ্চয় আমরা তোমাদেরকে আসন্ন শাস্তি সম্পর্কে সতর্ক করলাম; যেদিন মানুষ তার কৃতকর্ম দেখতে পাবে এবং কাফির বলবে, ‘হায়! আমি যদি মাটি হতাম [১] !’

[১] আবদুল্লাহ ইবন আমর, আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুম থেকে বর্ণিত আছে, কেয়ামতের দিন সমগ্র ভূপৃষ্ঠ এক সমতল ভূমি হয়ে যাবে। এতে মানব, জিন, গৃহপালিত জন্তু এবং বন্য জন্তু সবাইকে একত্রিত করা হবে। জন্তুদের মধ্য কেউ দুনিয়াতে অন্য জন্তুর উপর জুলুম করে থাকলে তার কাছ থেকে প্রতিশোধ নেয়া হবে। এমন কি কোনো শিংবিশিষ্ট ছাগল কোনো শিংবিহীন ছাগলকে মেরে থাকলে সেদিন তার প্রতিশোধ নেয়া হবে। এই কর্ম সমাপ্ত হলে সব জন্তুকে আদেশ করা হবে: মাটি হয়ে যাও। তখন সব মাটি হয়ে যাবে। এই দৃশ্য দেখে কাফেররা আকাঙ্ক্ষা করবে - হায়। আমরাও যদি মাটি হয়ে যেতাম। এরূপ হলে আমরা হিসাব-নিকাশ ও জাহান্নামের আযাব থেকে বেঁচে যেতাম। [মুস্তাদরাকে হাকিম ২/৩৪৫, ৪/৫৭৫, মুসনাদে ইসহাক ইবনে রাহওয়াই ৩২২, সিলসিলা সহীহা ১৯৬৬]


Arabic explanations of the Qur’an: