Surah আন-নাযেআত

Listen

Bangali বাংলা

Surah আন-নাযেআত - Aya count 46

وَٱلنَّـٰزِعَـٰتِ غَرۡقࣰا ﴿١﴾

শপথ [১] নির্মমভাবে উৎপাটনকারীদের [২],

সূরা সংক্রান্ত আলোচনা: আয়াত সংখ্যা: ৪৬ আয়াত। নাযিল হওয়ার স্থান: মক্কী। রহমান, রহীম আল্লাহর নামে [১] এ সূরার শুরুতে কতিপয় গুণ ও অবস্থা বর্ণনা করে তাদের শপথ করা হয়েছে। এ পাঁচটি গুণাবলী কোনো কোনো সত্তার সাথে জড়িত, একথাও এখানে পরিস্কার করে বলা হয়নি। কিন্তু বিপুল সংখ্যক সাহাবী ও তাবেঈন এবং অধিকাংশ মুফাসসিরের মতে এখানে ফেরেশতাদের কথা বলা হয়েছে। তাছাড়া শপথের জওয়াবও উহ্য রাখা হয়েছে। মূলতঃ কেয়ামত ও হাশর-নশর অবশ্যই হবে এবং সেগুলো নিঃসন্দেহে সত্য, একথার ওপরই এখানে কসম খাওয়া হয়েছে। [কুরতুবী] অথবা কসম ও কসমের কারণ এক হতে পারে, কেননা ফেরেশতাদের প্রতি ঈমান আনা ঈমানের স্তম্ভসমূহের মধ্যে অন্যতম। [সা‘দী] [২] বলা হয়েছে, যারা নির্মমভাবে টেনে আত্মা উৎপাটন করে। এটা যাদের শপথ করা হয়েছে সে ফেরেশতাগণের প্রথম বিশেষণ। অধিকাংশ সাহাবী ও তাবেয়ী বলেন, ডুব দিয়ে টানা এবং আস্তে আস্তে বের করে আনা এমন সব ফেরেশতার কাজ যারা মৃত্যুকালে মানুষের শরীরে গভীর অভ্যন্তরে প্রবেশ করে তার প্রতিটি শিরা উপশিরা থেকে তার প্রাণ বায়ু টেনে বের করে আনে। এখানে আযাবের সেসব ফেরেশতা বোঝানো হয়েছে যারা কাফেরের আত্না নির্মমভাবে বের করে। [ফাতহুল কাদীর]


Arabic explanations of the Qur’an:

وَٱلنَّـٰشِطَـٰتِ نَشۡطࣰا ﴿٢﴾

আর মৃদুভাবে বন্ধনমুক্তকারীদের [১]

[১] এটা যাদের শপথ করা হয়েছে সে ফেরেশতাগণের দ্বিতীয় বিশেষণ। বলা হয়েছে যে, যে ফেরেশতা মুমিনের রূহ কবজ করার কাজে নিয়োজিত আছে, সে অনায়াসে রূহ কবজ করে- কঠোরতা করে না। প্রকৃত কারণ এই যে, কাফেরের আত্মা বের করার সময় থেকেই বরযখের আযাব সামনে এসে যায়। এতে তার আত্মা অস্থির হয়ে দেহে আত্মগোপন করতে চায়। ফেরেশতা জোরে-জবরে টাঁনা-হেঁচড়া করে তাকে বের করে। পক্ষান্তরে মুমিনের রূহের সামনে বরযখের সওয়াব নেয়ামত ও সুসংবাদ ভেসে উঠে। ফলে সে দ্রুতবেগে সেদিকে যেতে চায়। [কুরতুবী]


Arabic explanations of the Qur’an:

وَٱلسَّـٰبِحَـٰتِ سَبۡحࣰا ﴿٣﴾

আর তীব্ৰ গতিতে সন্তরণকারীদের [১],

[১] এটা তাদের তৃতীয় বিশেষণ। سابحات এর আভিধানিক অর্থ সাঁতার কাটা। এই সাঁতারু বিশেষণটিও মৃত্যুর ফেরেশতাগণের সাথে সর্ম্পকযুক্ত। মানুষের রূহ কবজ করার পর তারা দ্রুতগতিতে আকাশের দিকে নিয়ে যায়। [কুরতুবী]


Arabic explanations of the Qur’an:

فَٱلسَّـٰبِقَـٰتِ سَبۡقࣰا ﴿٤﴾

আর দ্রুতবেগে অগ্রসরমানদের [১],

[১] এটা তাদের চতুৰ্থ বিশেষণ। উদ্দেশ্য এই যে, যে আত্মা ফেরেশতাগণের হস্তগত হয় তাকে ভাল অথবা মন্দ ঠিকানায় পৌছানোর কাজে তারা দ্রুততায় একে অপরকে ডিঙ্গিয়ে যায়। তারা মুমিনের আত্মাকে জান্নাতের আবহাওয়ায় ও নেয়ামতের জায়গায় এবং কাফেরের আত্মাকে জাহান্নামের আবহাওয়ায় ও আযাবের জায়গায় পৌছিয়ে দেয়। [ফাতহুল কাদীর]


Arabic explanations of the Qur’an:

فَٱلۡمُدَبِّرَ ٰ⁠تِ أَمۡرࣰا ﴿٥﴾

অতঃপর সব কাজ নির্বাহকারীদের [১]।

[১] পঞ্চম বিশেষণ। অর্থাৎ মৃত্যুর ফেরেশতাদের সর্বশেষ কাজ এই যে, তারা আল্লাহ্ তা'আলার নির্দেশে দুনিয়ার বিভিন্ন কাজ নির্বাহের ব্যবস্থা করে। [সা‘দী]


Arabic explanations of the Qur’an:

یَوۡمَ تَرۡجُفُ ٱلرَّاجِفَةُ ﴿٦﴾

সেদিন প্রকম্পিতকারী প্রকম্পিত করবে,


Arabic explanations of the Qur’an:

تَتۡبَعُهَا ٱلرَّادِفَةُ ﴿٧﴾

তাকে অনুসরণ করবে পরবর্তী কম্পনকারী [১] ,

[১] প্রথম প্রকম্পনকারী বলতে এমন প্রকম্পন বুঝানো হয়েছে, যা পৃথিবী ও তার মধ্যকার সমস্ত জিনিস ধ্বংস করে দেবে। আর দ্বিতীয় প্রকম্পন বলতে যে কম্পনে সমস্ত মৃতরা জীবিত হয়ে যমীনের মধ্য থেকে বের হয়ে আসবে তাকে বুঝানো হয়েছে। [মুয়াস্সার] অন্যত্র এ অবস্থাটি নিমোক্তভাবে বর্ণিত হয়েছে: “আর শিংগায় ফুঁক দেয়া হবে। তখন পৃথিবী ও আকাশসমূহে যা কিছু আছে সব মরে পড়ে যাবে, তবে কেবল তারাই জীবিত থাকবে যাদের আল্লাহ্ (জীবিত রাখতে) চাইবেন। তারপর দ্বিতীয়বার ফুঁক দেয়া হবে। তখন তারা সবাই আবার হঠাৎ উঠে দেখতে থাকবে।” [সূরা আয-যুমার ৬৮] এক হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রাত্রির দুই তৃতীয়াংশ অতিবাহিত হলে দাঁড়িয়ে বলতেন, হে মানুষ! তোমরা আল্লাহর যিকর কর, তোমরা আল্লাহ্র যিকর কর। ‘রাজেফাহ’ (প্রকম্পণকারী) তো এসেই গেল (প্রায়), তার পিছনে আসবে ‘রাদেফাহ’ (পশ্চাতে আগমনকারী), মৃত্যু তার কাছে যা আছে তা নিয়ে হাজির, মৃত্যু তার কাছে যা আছে তা নিয়ে হাজির। সাহাবী উবাই ইবন কা'ব বলেন, আমি বললাম হে আল্লাহর রাসূল! আমি আপনার উপর বেশী বেশী সালাত (দরুদ) পাঠ করি। এ সালাত পাঠের পরিমাণ কেমন হওয়া উচিত? তিনি বললেন, তোমার যা ইচ্ছা। আমি বললাম, (আমার যাবতীয় দো‘আর) এক চতুর্থাংশ? তিনি বললেন, যা তোমার ইচ্ছা। তবে যদি এর থেকেও বেশী কর তবে সেটা তোমার জন্য কল্যাণকর হবে। আমি বললাম, অর্ধেকাংশ? তিনি বললেন, যা তোমার ইচ্ছা। তবে যদি এর থেকেও বেশী কর তবে সেটা তোমার জন্য কল্যাণকর হবে। আমি বললাম, দুই তৃতীয়াংশ? তিনি বললেন, যা তোমার ইচ্ছা। তবে যদি এর থেকেও বেশী কর তবে সেটা তোমার জন্য কল্যাণকর হবে। আমি বললাম, তাহলে আমি আপনার জন্য আমার সালাতের সবটুকুই নির্ধারণ করব, (অর্থাৎ আমার যাবতীয় দো‘আ হবে আপনার উপর সালাত বা দরুদ প্রেরণ) তখন রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, তাহলে তা তোমার যাবতীয় চিন্তা দূর করে দিবে এবং তোমার গোনাহ ক্ষমা করে দিবে।” [তিরমিয়ী ২৪৫৭, মুস্তাদরাকে হাকিম ২/৫১৩, দ্বিয়া, আলমুখতারাহ ৩/৩৮৮, ৩৯০]


Arabic explanations of the Qur’an:

قُلُوبࣱ یَوۡمَىِٕذࣲ وَاجِفَةٌ ﴿٨﴾

অনেক হৃদয় সেদিন সন্ত্রস্ত হবে [১],

[১] “কতক হৃদয়” বলতে কাফের ও নাফরমানদের বোঝানো হয়েছে। কিয়ামতের দিন তারা ভীত ও আতঙ্কিত হবে। [মুয়াস্সার] সৎ মু‘মিন বান্দাদের ওপর এ ভীতি প্রভাব বিস্তার করবে না। অন্যত্র তাদের সম্পর্কে বলা হয়েছে: “সেই চরম ভীতি ও আতংকের দিনে তারা একটুও পেরেশান হবে না এবং ফেরেশতারা এগিয়ে এসে তাদেরকে অভ্যর্থনা জানাবে। তারা বলতে থাকবে, তোমাদের সাথে এ দিনটিরই ওয়াদা করা হয়েছিল।” [সূরা আল-আম্বিয়া ১০৩]


Arabic explanations of the Qur’an:

أَبۡصَـٰرُهَا خَـٰشِعَةࣱ ﴿٩﴾

তাদের দৃষ্টিসমূহ ভীতি-বিহ্বলতায় নত হবে।


Arabic explanations of the Qur’an:

یَقُولُونَ أَءِنَّا لَمَرۡدُودُونَ فِی ٱلۡحَافِرَةِ ﴿١٠﴾

তারা বলে, ‘আমরা কি আগের অবস্থায় ফিরে যাবই---


Arabic explanations of the Qur’an:

أَءِذَا كُنَّا عِظَـٰمࣰا نَّخِرَةࣰ ﴿١١﴾

চূৰ্ণবিচূর্ণ অস্থিতে পরিণত হওয়ার পরও?’


Arabic explanations of the Qur’an:

قَالُواْ تِلۡكَ إِذࣰا كَرَّةٌ خَاسِرَةࣱ ﴿١٢﴾

তারা বলে, ‘তাই যদি হয় তবে তো এটা এক সর্বনাশা প্ৰত্যাবর্তন।’


Arabic explanations of the Qur’an:

فَإِنَّمَا هِیَ زَجۡرَةࣱ وَ ٰ⁠حِدَةࣱ ﴿١٣﴾

এ তো শুধু এক বিকট আওয়াজ [১],

[১] অর্থাৎ আল্লাহর জন্য এটা কোন কঠিন কাজ নয়। এ কাজটি করতে তাঁকে কোনো বড় রকমের প্রস্তুতি নিতে হবে না। এর জন্য শুধু একটি ধমক বা আওয়াজই যথেষ্ট। এরপরই তোমরা সমতল ময়দানে আবির্ভূত হবে। [ইবন কাসীর]


Arabic explanations of the Qur’an:

فَإِذَا هُم بِٱلسَّاهِرَةِ ﴿١٤﴾

তখনই ময়দানে [১] তাদের আবির্ভাব হবে।

[১] আয়াতে বর্ণিত ساهرة শব্দের অর্থ সমতল ময়দান। কেয়ামতে পূনরায় যে ভূপৃষ্ঠ সৃষ্টি করা হবে, তা সমতল হবে। একেই আয়াতে ساهرة বলে ব্যক্ত করা হয়েছে। এর অর্থ জমিনের উপরিভাগও হতে পারে। [ইবন কাসীর]


Arabic explanations of the Qur’an:

هَلۡ أَتَىٰكَ حَدِیثُ مُوسَىٰۤ ﴿١٥﴾

আপনার কাছে মূসার বৃত্তান্ত পৌঁছেছে কি [১]?

[১] কাফেরদের অবিশ্বাস, হটকারিতা ও শক্রতার ফলে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে মর্মপীড়া অনুভব করতেন, তা দূর করার উদ্দেশ্যে মূসা আলাইহিস্ সালাম ও ফির‘আউনের ঘটনা উল্লেখ করা হয়েছে। এতে ইঙ্গিত করা হয়েছে যে, শত্রুরা কেবল আপনাকেই কষ্ট দেয়নি, পূর্ববর্তী সকল রাসূলকেও কষ্ট দিয়েছে, কিন্তু তাদের পরিণতি হয়েছে ভয়াবহ। সুতরাং আপনিও সবর করুন। [দেখুন, কুরতুবী]


Arabic explanations of the Qur’an:

إِذۡ نَادَىٰهُ رَبُّهُۥ بِٱلۡوَادِ ٱلۡمُقَدَّسِ طُوًى ﴿١٦﴾

যখন তাঁর রব পবিত্র উপত্যকা ‘তুওয়া’য় তাঁকে ডেকে বলেছিলেন,


Arabic explanations of the Qur’an:

ٱذۡهَبۡ إِلَىٰ فِرۡعَوۡنَ إِنَّهُۥ طَغَىٰ ﴿١٧﴾

‘ফির‘আউনের কাছে যান, সে তো সীমালঙ্ঘন করেছে,’


Arabic explanations of the Qur’an:

فَقُلۡ هَل لَّكَ إِلَىٰۤ أَن تَزَكَّىٰ ﴿١٨﴾

অতঃপর বলুন, ‘তোমার কি আগ্ৰহ আছে যে, তুমি পবিত্র হও—


Arabic explanations of the Qur’an:

وَأَهۡدِیَكَ إِلَىٰ رَبِّكَ فَتَخۡشَىٰ ﴿١٩﴾

‘আর আমি তোমাকে তোমার রবের দিকে পথপ্রদর্শন করি, যাতে তুমি তাঁকে ভয় কর?’


Arabic explanations of the Qur’an:

فَأَرَىٰهُ ٱلۡـَٔایَةَ ٱلۡكُبۡرَىٰ ﴿٢٠﴾

অতঃপর তিনি তাকে মহানিদর্শন দেখালেন [১]।

[১] বড় নিদর্শন বলতে সবগুলো মুজিযা উদ্দেশ্য হতে পারে। আবার লাঠির অজগর হয়ে যাওয়া এবং হাত শুভ্র হওয়ার কথাও বুঝানো হতে পারে। [কুরতুবী, মুয়াসসার]


Arabic explanations of the Qur’an:

فَكَذَّبَ وَعَصَىٰ ﴿٢١﴾

কিন্তু সে মিথ্যারোপ করল এবং অবাধ্য হল।


Arabic explanations of the Qur’an:

ثُمَّ أَدۡبَرَ یَسۡعَىٰ ﴿٢٢﴾

তারপর সে পিছনে ফিরে প্রতিবিধানে সচেষ্ট হল [১]।

[১] অর্থাৎ হককে বাতিল দ্বারা প্ৰতিহত করতে চেষ্টা করতে লাগল। [ইবন কাসীর]


Arabic explanations of the Qur’an:

فَحَشَرَ فَنَادَىٰ ﴿٢٣﴾

অতঃপর সে সকলকে সমবেত করে ঘোষণা দিল,


Arabic explanations of the Qur’an:

فَقَالَ أَنَا۠ رَبُّكُمُ ٱلۡأَعۡلَىٰ ﴿٢٤﴾

অতঃপর বলল, ‘আমিই তোমাদের সর্বোচ্চ রব।’


Arabic explanations of the Qur’an:

فَأَخَذَهُ ٱللَّهُ نَكَالَ ٱلۡـَٔاخِرَةِ وَٱلۡأُولَىٰۤ ﴿٢٥﴾

অতঃপর আল্লাহ্ তাকে আখেরাতে ও দুনিয়ায় কঠিন শাস্তিতে পাকড়াও করলেন [১]।

[১] نكال শব্দের অর্থ দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি, যা দেখে অন্যরাও আতঙ্কিত হয়ে যায় এবং শিক্ষা পায়। [কুরতুবী]


Arabic explanations of the Qur’an:

إِنَّ فِی ذَ ٰ⁠لِكَ لَعِبۡرَةࣰ لِّمَن یَخۡشَىٰۤ ﴿٢٦﴾

নিশ্চয় যে ভয় করে তার জন্য তো এতে শিক্ষা রয়েছে।


Arabic explanations of the Qur’an:

ءَأَنتُمۡ أَشَدُّ خَلۡقًا أَمِ ٱلسَّمَاۤءُۚ بَنَىٰهَا ﴿٢٧﴾

তোমাদেরকে [১] সৃষ্টি করা কঠিন, না আসমান সৃষ্টি? তিনিই তা নির্মাণ করেছেন [২];

‘দ্বিতীয় রুকূ’ [১] কিয়ামত ও মৃত্যুর পরের জীবন যে সম্ভব এবং তা যে সৃষ্টি জগতের পরিবেশ পরিস্থিতির যুক্তিসংগত দাবী একথার যৌক্তিকতা এখানে পেশ করা হয়েছে। [ইবন কাসীর] [২] এখানে মরে মাটিতে পরিণত হওয়ার পর পুনরুজ্জীবন কিরূপে হবে, কাফেরদের এই বিস্ময়ের জওয়াব দেওয়া হয়েছে। এখানে সৃষ্টি করা মানে দ্বিতীয়বার মানুষ সৃষ্টি করা। মৃত্যুর পরের জীবন সম্পর্কে এই যুক্তিটিই কুরআনের বিভিন্ন স্থানে পেশ করা হয়েছে। যেমন অন্যত্র বলা হয়েছে: “আর যিনি আকাশ ও পৃথিবী তৈরি করেছেন, তিনি কি এই ধরনের জিনিসগুলোকে (পুনর্বার) সৃষ্টি করার ক্ষমতা রাখেন না? কেন নয়? তিনি তো মহাপরাক্রমশালী স্রষ্টা। সৃষ্টি করার কাজ তিনি খুব ভালো করেই জানেন।” [সূরা ইয়াসীন ৮১] অন্যত্র আরও বলা হয়েছে: “অবশ্যি আকাশসমূহ ও পৃথিবী সৃষ্টি করা মানুষ সৃষ্টির চেয়ে অনেক বেশী বড় কাজ। কিন্তু অধিকাংশ লোক জানে না। [সূরা গাফির ৫৭ আয়াত] [ইবন কাসীর]


Arabic explanations of the Qur’an:

رَفَعَ سَمۡكَهَا فَسَوَّىٰهَا ﴿٢٨﴾

তিনি এর ছাদকে সুউচ্চ করেছেন ও সুবিন্যস্ত করেছেন।


Arabic explanations of the Qur’an:

وَأَغۡطَشَ لَیۡلَهَا وَأَخۡرَجَ ضُحَىٰهَا ﴿٢٩﴾

আর তিনি এর রাতকে করেছেন অন্ধকারাচ্ছন্ন এবং প্ৰকাশ করেছেন এর সূর্যালোক;


Arabic explanations of the Qur’an:

وَٱلۡأَرۡضَ بَعۡدَ ذَ ٰ⁠لِكَ دَحَىٰهَاۤ ﴿٣٠﴾

আর যমীনকে এর পর বিস্তৃত করেছেন [১]।

[১] “এরপর তিনি যমীনকে বিছিয়েছেন”- এর অর্থ এ নয় যে, আকাশ সৃষ্টি করার পরই আল্লাহ্ পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন। কেননা কুরআনে কোথাও পৃথিবী সৃষ্টির ব্যাপারটি আগে এবং আকাশ সৃষ্টির ব্যাপারটি পরে উল্লেখ করা হয়েছে। যেমন সূরা আল-বাকারার ২৯ নং আয়াতে। কিন্তু এ আয়াতে আকাশ সৃষ্টির ব্যাপারটি আগে এবং পৃথিবী সৃষ্টির ব্যাপারটি পরে উল্লেখ করা হয়েছে। এটি আসলে কোনো বিপরীতধর্মী বক্তব্য নয়। কেননা পৃথিবী সৃষ্টি আকাশ সৃষ্টির পূর্বে হলেও পৃথিবী বিস্তৃতকরণ, পানি ও তৃণ বের করা, পাহাড় স্থাপন ইত্যাদি করা হয়েছে আকাশ সৃষ্টির পর। [ইবন কাসীর]


Arabic explanations of the Qur’an:

أَخۡرَجَ مِنۡهَا مَاۤءَهَا وَمَرۡعَىٰهَا ﴿٣١﴾

তিনি তা থেকে বের করেছেন তার পানি ও তৃণভূমি,


Arabic explanations of the Qur’an:

وَٱلۡجِبَالَ أَرۡسَىٰهَا ﴿٣٢﴾

আর পর্বতকে তিনি দৃঢ়ভাবে প্রোথিত করেছেন;


Arabic explanations of the Qur’an:

مَتَـٰعࣰا لَّكُمۡ وَلِأَنۡعَـٰمِكُمۡ ﴿٣٣﴾

এসব তোমাদের ও তোমাদের চতুষ্পদ জন্তুগুলোর ভোগের জন্য।


Arabic explanations of the Qur’an:

فَإِذَا جَاۤءَتِ ٱلطَّاۤمَّةُ ٱلۡكُبۡرَىٰ ﴿٣٤﴾

অতঃপর যখন মহাসংকট উপস্থিত হবে [১]

[১] এই মহাসংকট ও বিপর্যয় হচ্ছে কিয়ামত। এ জন্য এখানে “আত-তাম্মাতুল কুবরা” শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। “তাম্মাহ্” বলতে এমন ধরনের মহাবিপদ, বিপর্যয় ও সংকট বুঝায় যা সবকিছুর উপর ছেয়ে যায়। এরপর আবার তার সাথে “কুবরা” (মহা) শব্দ ব্যবহার করে একথা প্ৰকাশ করা হয়েছে যে সেই বিপদ, সংকট ও বিপর্যয় হবে অতি ভয়াবহ ও ব্যাপক। [দেখুন, কুরতুবী]


Arabic explanations of the Qur’an:

یَوۡمَ یَتَذَكَّرُ ٱلۡإِنسَـٰنُ مَا سَعَىٰ ﴿٣٥﴾

মানুষ যা করেছে তা সে সেদিন স্মরণ করবে,


Arabic explanations of the Qur’an:

وَبُرِّزَتِ ٱلۡجَحِیمُ لِمَن یَرَىٰ ﴿٣٦﴾

আর প্রকাশ করা হবে জাহান্নাম দর্শকদের জন্য,


Arabic explanations of the Qur’an:

فَأَمَّا مَن طَغَىٰ ﴿٣٧﴾

সুতরাং যে সীমালঙ্ঘন করে


Arabic explanations of the Qur’an:

وَءَاثَرَ ٱلۡحَیَوٰةَ ٱلدُّنۡیَا ﴿٣٨﴾

এবং দুনিয়ার জীবনকে অগ্ৰাধিকার দেয়।


Arabic explanations of the Qur’an:

فَإِنَّ ٱلۡجَحِیمَ هِیَ ٱلۡمَأۡوَىٰ ﴿٣٩﴾

জাহান্নামই হবে তার আবাস [১]।

[১] এ আয়াতে জাহান্নামীদের কথা বর্ণনা করা হয়েছে: যে ব্যক্তি আল্লাহ্ তা‘আলা ও তাঁর রাসূলের অবাধ্যতা করবে, আর পার্থিব জীবনকে আখেরাতের উপর অগ্ৰাধিকার দেবে অর্থাৎ আখেরাতের কাজ ভুলে গিয়ে দুনিয়ার সুখ ও আনন্দকেই অগ্ৰাধিকার দিবে; তার সম্পর্কে বলা হয়েছে, জাহান্নামই তার আবাস বা ঠিকানা। [সা‘দী]


Arabic explanations of the Qur’an:

وَأَمَّا مَنۡ خَافَ مَقَامَ رَبِّهِۦ وَنَهَى ٱلنَّفۡسَ عَنِ ٱلۡهَوَىٰ ﴿٤٠﴾

আর যে তার রবের অবস্থানকে [১] ভয় করে এবং কুপ্রবৃত্তি হতে নিজকে বিরত রাখে

[১] রাবের অবস্থানের দু‘টি অর্থ হতে পারে, এক. রবের সামনে হাজির হয়ে হিসাব নিকাশের সম্মুখীন হতে হবে- এ বিশ্বাস করে প্রবৃত্তির অনুসরণ হতে যে নিজেকে হেফাযত করেছে তার জন্য রয়েছে জান্নাত। দুই. রবের যে সুমহান মর্যাদা তাঁর এ উচ্চ মর্তবার কথা স্মরণ করে অন্যায় অশ্লিল কাজ এবং প্রবৃত্তির অনুসরণ থেকে বিরত থেকেছে সে জান্নাতে যাবে। উভয় অর্থই এখানে সঠিক। [বাদা’ই‘উত তাফসীর]


Arabic explanations of the Qur’an:

فَإِنَّ ٱلۡجَنَّةَ هِیَ ٱلۡمَأۡوَىٰ ﴿٤١﴾

জান্নাতই হবে তার আবাস।


Arabic explanations of the Qur’an:

یَسۡـَٔلُونَكَ عَنِ ٱلسَّاعَةِ أَیَّانَ مُرۡسَىٰهَا ﴿٤٢﴾

তারা আপনাকে জিজ্ঞেস করে, ‘কিয়ামত সম্পর্কে, তা কখন ঘটবে?’


Arabic explanations of the Qur’an:

فِیمَ أَنتَ مِن ذِكۡرَىٰهَاۤ ﴿٤٣﴾

তা আলোচনার কি জ্ঞান আপনার আছে?


Arabic explanations of the Qur’an:

إِلَىٰ رَبِّكَ مُنتَهَىٰهَاۤ ﴿٤٤﴾

এর পরম জ্ঞান আপনার রবেরই কাছে [১];

[১] এ সম্পর্কে অন্য আয়াতে বলা হয়েছে, “তারা আপনাকে জিজ্ঞাসা করে কিয়ামত কখন ঘটবে। বলুন, ‘এ বিষয়ের জ্ঞান শুধু আমার প্রতিপালকেরই আছে। শুধু তিনিই যথাসময়ে এর প্রকাশ ঘটাবেন; এটা আকাশমন্ডলী ও যমীনে একটি ভয়ংকর ঘটনা হবে। হঠাৎ করেই এটা তোমাদের উপর আসবে।’ আপনি এ বিষয়ে সবিশেষ জ্ঞাত মনে করে তারা আপনাকে প্রশ্ন করে। বলুন, ‘এ বিষয়ের জ্ঞান শুধু আল্লাহরই আছে, কিন্তু অধিকাংশ লোক জানে না।’ [সূরা আল-আরাফ ১৮৭] এখানে ঠিক এটাকে বলা হয়েছে যে, এর পরম জ্ঞান রয়েছে আপনার রবের কাছেই। হাদীসে জিবরাঈল নামক প্রসিদ্ধ হাদীসেও জিবরাঈলের প্রশ্নের উত্তরে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একই উত্তর দিয়ে বলেছিলেন, “যাকে প্রশ্ন করা হয়েছে সে প্রশ্নকারীর চেয়ে বেশী জানে না।” [বুখারী ৫০]


Arabic explanations of the Qur’an:

إِنَّمَاۤ أَنتَ مُنذِرُ مَن یَخۡشَىٰهَا ﴿٤٥﴾

যে এটার ভয় রাখে আপনি শুধু তার সতর্ককারী।


Arabic explanations of the Qur’an:

كَأَنَّهُمۡ یَوۡمَ یَرَوۡنَهَا لَمۡ یَلۡبَثُوۤاْ إِلَّا عَشِیَّةً أَوۡ ضُحَىٰهَا ﴿٤٦﴾

যেদিন তারা তা দেখতে পাবে সেদিন তাদের মনে হবে যেন তারা দুনিয়ায় মাত্ৰ এক সন্ধ্যা অথবা এক প্ৰভাত অবস্থান করেছে [১]!

[১] দুনিয়ার জীবনের স্বল্পতার বিষয়বস্তুটি পবিত্র কুরআনের অন্যান্য স্থানেও বর্ণিত হয়েছে। যেমন সূরা ইউনুস, সূরা আল-ইসরা, সূরা ত্বা-হা, সূরা আল-মুমিনূন, সূরা আর-রূম, সূরা ইয়াসীন ও সূরা আহকাফে এ দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে।


Arabic explanations of the Qur’an: