Surah আল-ইনফিতার

Listen

Bangali বাংলা

Surah আল-ইনফিতার - Aya count 19

إِذَا ٱلسَّمَاۤءُ ٱنفَطَرَتۡ ﴿١﴾

যখন আসমান বিদীর্ণ হবে,

সূরা সংক্রান্ত আলোচনা: আয়াত সংখ্যা: ১৯ আয়াত। নাযিল হওয়ার স্থান: মক্কী। । রহমান, রহীম আল্লাহর নামে ।


Arabic explanations of the Qur’an:

وَإِذَا ٱلۡكَوَاكِبُ ٱنتَثَرَتۡ ﴿٢﴾

আর যখন নক্ষত্রমণ্ডলী বিক্ষিপ্তভাবে ঝরে পরবে,


Arabic explanations of the Qur’an:

وَإِذَا ٱلۡبِحَارُ فُجِّرَتۡ ﴿٣﴾

আর যখন সাগরগুলো বিস্ফোরিত করা হবে,


Arabic explanations of the Qur’an:

وَإِذَا ٱلۡقُبُورُ بُعۡثِرَتۡ ﴿٤﴾

আর যখন কবরসমূহ উন্মোচিত হবে,

[১] প্রথম তিনটি আয়াতে কিয়ামতের প্রথম পর্বের উল্লেখ করা হয়েছে এবং এই আয়াতে দ্বিতীয় পর্বের কথা বলা হয়েছে। কবর খুলে ফেলার মানে হচ্ছে, তা খুলে তা থেকে মানুষকে আবার নতুন করে জীবিত করে উঠানো। [কুরতুবী]


Arabic explanations of the Qur’an:

عَلِمَتۡ نَفۡسࣱ مَّا قَدَّمَتۡ وَأَخَّرَتۡ ﴿٥﴾

তখন প্রত্যেকে জানবে, সে কী আগে পাঠিয়েছে ও কী পিছনে রেখে গিয়েছে [১]।

[১] অর্থাৎ আকাশ বিদীর্ণ হওয়া, নক্ষত্ৰসমূহ ঝরে পড়া, সমুদ্র একাকার হয়ে যাওয়া, কবর থেকে মৃতদের বের হয়ে আসা ইত্যাকার কেয়ামতের ঘটনা যখন ঘটে যাবে, তখন প্রত্যেকেই জেনে নিবে সে কি অগ্ৰে প্রেরণ করেছে এবং কি পশ্চাতে ছেড়েছে। মূলে বলা হয়েছে, مَّا قَدَّمَتۡ وَأَخَّرَتۡ। এ শব্দগুলোর কয়েকটি অর্থ হতে পারে এবং সবগুলো অর্থই এখানে প্রযোজ্য। এক. যে ভালো ও মন্দ কাজ করে মানুষ আগে পাঠিয়ে দিয়েছে তাকে مَا قَدَّمَتْ এবং যেগুলো করতে সে বিরত থেকেছে তাকে مَاأخَّرَتْ বলা যায়। সুতরাং কেয়ামতের দিনে প্রত্যেকেই জেনে নিবে সে সৎ অসৎ কি কর্ম করেছে এবং কি সৎ অসৎ কর্ম করেনি। [তাবারী] দুই. যা কিছু প্ৰথমে করেছে তা مَّا قَدَّمَتۡ এবং যা কিছু পরে করেছে তা مَاأَخَّرَتْ এর অন্তর্ভুক্ত। অর্থাৎ সম্পাদনের ধারাবাহিকতা ও তারিখ অনুসারে মানুষের প্রত্যেকটি কাজের হিসেব সম্বলিত আমলনামা তার সামনে এসে যাবে। [মুয়াসসার] তিন. যেসব ভালো বা মন্দ কাজ মানুষ তার জীবনে করেছে সেগুলো مَّا قَدَّمَتۡ এর অন্তরভুক্ত। এ মানুষের সমাজে এসব কাজের যে প্রভাব ও ফলাফল সে নিজের পেছনে রেখে এসেছে সেগুলো مَاأَخَّرَتْ এর অন্তর্ভুক্ত। কাজটি সৎ হলে তার সওয়াব সে পেতে থাকবে এবং অসৎ হলে তার গোনাহ আমলানামায় লিখিত হতে থাকবে। হাদীসে আছে “যে ব্যক্তি ইসলামে কোনো উত্তম সুন্নত ও নিয়ম চালু করে সে তার সওয়াব সবসময় পেতে থাকবে। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি কোনো কুপ্ৰথা অথবা পাপ কাজ চালু করে যতদিন মানুষ এই পাপ কাজ করবে ততদিন তার আমলনামায় এর গোনাহ লিখিত হতে থাকবে।” [তিরমিয়ী ২৬৭৫, ইবন মাজাহ ২০৭, মুসনাদে আহমাদ ২/৫০৪] [আত-তাফসীরুসসহীহ]


Arabic explanations of the Qur’an:

یَـٰۤأَیُّهَا ٱلۡإِنسَـٰنُ مَا غَرَّكَ بِرَبِّكَ ٱلۡكَرِیمِ ﴿٦﴾

হে মানুষ! কিসে তোমাকে তোমার মহান রব সম্পর্কে বিভ্ৰান্ত করল?


Arabic explanations of the Qur’an:

ٱلَّذِی خَلَقَكَ فَسَوَّىٰكَ فَعَدَلَكَ ﴿٧﴾

যিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন, অতঃপর তোমাকে সুঠাম করেছেন এবং সুসামঞ্জস্য করেছেন [১],

[১] অর্থাৎ মহান আল্লাহ্ তোমাকে এই পূর্ণাঙ্গ মানবিক আকৃতি দান করেছেন। তোমার সামনে সব রকমের প্রাণী রয়েছে, তাদের মোকাবিলায় তোমার সবচেয়ে সুন্দর শারীরিক কাঠামো এবং শ্রেষ্ঠ ও উন্নত শক্তি একেবারেই সুস্পষ্ট। অন্যত্র বলা হয়েছে, “অবশ্যই আমরা সৃষ্টি করেছি মানুষকে সুন্দরতম গঠনে।” [সূরা আত-তীন ৪] [আদওয়াউল বায়ান]


Arabic explanations of the Qur’an:

فِیۤ أَیِّ صُورَةࣲ مَّا شَاۤءَ رَكَّبَكَ ﴿٨﴾

যে আকৃতিতে চেয়েছেন, তিনি তোমাকে গঠন করেছেন [১]।

[১] এখানে মানুষ সৃষ্টির প্রারম্ভিক পর্যায় প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, আল্লাহ্ তোমাকে সৃষ্টি করেছেন, তদুপরি তোমার সমস্ত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে সুবিন্যস্ত করেছেন। এরপর বলা হয়েছে যে, আল্লাহ্ তা‘আলা সব মানুষকে, যাকে যেরূপে ইচ্ছা সে আকার-আকৃতিতে সৃষ্টি করতে পারেন। তিনি কোটি কোটি মানুষের আকার-আকৃতি এমনভাবে গঠন করেছেন যে, পরস্পরের মধ্যে স্বাতন্ত্র্য ও পার্থক্য সুস্পষ্টভাবে ধরা পড়ে। আর তা আল্লাহ্ তা’আলার এক বড় নিদর্শন। [আদওয়াউল বায়ান]


Arabic explanations of the Qur’an:

كَلَّا بَلۡ تُكَذِّبُونَ بِٱلدِّینِ ﴿٩﴾

কখনো নয়, তোমরা তো প্রতিদান দিবসে মিথ্যারোপ করে থাক [১];

[১] অর্থাৎ যে জিনিসটি তোমাদেরকে ধোঁকায় ফেলে দিয়েছে, তোমাদেরকে বিভ্রান্ত করেছে তা হল এই ধারণা যে, দুনিয়ার এই কর্মজগতের পরে আর কোনো কর্মফল, প্রতিদান ও বিচারের জগত নেই। এ বিভ্রান্ত ও ভিত্তিহীন ধারণাই তোমাকে আল্লাহ্ থেকে গাফেল করে দিয়েছে, মহান আল্লাহ্ সম্পর্কে বিভ্ৰান্তিতে ফেলেছে। [ইবন কাসীর]


Arabic explanations of the Qur’an:

وَإِنَّ عَلَیۡكُمۡ لَحَـٰفِظِینَ ﴿١٠﴾

আর নিশ্চয় নিয়োজিত আছেন তোমাদের উপর সংরক্ষকদল;


Arabic explanations of the Qur’an:

كِرَامࣰا كَـٰتِبِینَ ﴿١١﴾

সম্মানিত লেখকবৃন্দ;


Arabic explanations of the Qur’an:

یَعۡلَمُونَ مَا تَفۡعَلُونَ ﴿١٢﴾

তারা জানে তোমরা যা কর [১]।

[১] অর্থাৎ ফেরেশতারা প্রত্যেক ব্যক্তির প্রত্যেকটি কাজ সম্পর্কে পুরোপুরি অবগত। সব জায়গায় সব অবস্থায় সকল ব্যক্তির সাথে তারা এমনভাবে লেগে আছে যে, তারা জানতেই পারছে না যে, কেউ তাদের কাজ পরিদর্শন করছে। কোন ব্যক্তি কোন নিয়তে কি কাজ করেছে তাও তারা জানতে পারে। তাই তাদের তৈরি করা রেকর্ড একটি পুর্ণাঙ্গ রেকর্ড। এই রেকর্ডের বাইরে কোনো কথা নেই। এ সম্পর্কেই সূরা কাহাফের ৪৯ নং আয়াতে বলা হয়েছে: “কিয়ামতের দিন অপরাধীরা অবাক হয়ে দেখবে তাদের সামনে যে আমলনামা পেশ করা হচ্ছে তার মধ্যে তাদের ছোট বড় কোনো একটি কাজও অলিখিত থেকে যায়নি । যা কিছু তারা করেছিল সব হুবহু ঠিক তেমনিভাবেই তাদের সামনে আনা হয়েছে।’’ [করতুবী]


Arabic explanations of the Qur’an:

إِنَّ ٱلۡأَبۡرَارَ لَفِی نَعِیمࣲ ﴿١٣﴾

পুণ্যবানেরা তো থাকবে পরম স্বাচ্ছন্দ্যো [১];

[১] পূণ্যবানেরা কি কি নেয়ামতে থাকবে সেটা জানতে হলে আমাদেরকে পবিত্র কুরআনের অন্যত্র একটু দেখতে হবে। অন্যত্র এসেছে, “অবশ্যই পূণ্যবানদের ‘আমলনামা ‘ইল্লিয়্যীনে, ‘ইল্লিয়্যীন সম্পর্কে আপনি কী জানেন? এটা চিহ্নিত ‘আমলনামা। যারা আল্লাহর সান্নিধ্য প্রাপ্ত তারা তা দেখে। পূণ্যবানগণ তো থাকবে পরম স্বাচ্ছন্দ্যে, তারা সুসজ্জিত আসনে বসে অবলোকন করবে। আপনি তাদের মুখমণ্ডলে স্বাচ্ছন্দ্যের দীপ্তি দেখতে পাবেন। তাদেরকে মোহর করা বিশুদ্ধ পানীয় হতে পান করান হবে; এটার মোহর মিস্কের, এ বিষয়ে প্রতিযোগীরা প্রতিযোগিতা করুক। এটার মিশ্রণ হবে তাস্নীমের; তা একটা প্রস্রবণ, যা থেকে সান্নিধ্যপ্রাপ্তরা পান করে। [সূরা আল-মুতাফফিফীন ১৮-২৮]


Arabic explanations of the Qur’an:

وَإِنَّ ٱلۡفُجَّارَ لَفِی جَحِیمࣲ ﴿١٤﴾

আর পাপাচারীরা তো থাকবে জাহান্নামে [১];

[১] পাপাচারীরা কি কঠিন শাস্তিতে থাকবে সেটা জানতেও আমাদেরকে পবিত্র কুরআনের অন্যত্র দেখতে হবে, সেখানে বলা হয়েছে, “কখনো না, পাপাচারীদের আমলনামা তো সিজ্জীনে আছে। সিজ্জীন সম্পর্কে আপনি কী জানেন? এটা চিহ্নিত আমলনামা। সেদিন দুর্ভোগ হবে অস্বীকারকারীদের, যারা কর্মফল দিনকে অস্বীকার করে, শুধু প্ৰত্যেক পাপিষ্ঠ সীমালংঘনকারী এটাকে অস্বীকার করে; তার কাছে আমাদের আয়াতসমূহ আবৃত্তি করা হলে সে বলে, ‘এটা পূর্ববর্তীদের উপকথা।’ কখনো নয়; বরং তাদের কৃতকর্মই তাদের হৃদয়ে জঙ্ ধরিয়েছে। না, অবশ্যই সেদিন তারা তাদের প্রতিপালক হতে অন্তরিত থাকবে। তারপর তারা তো জাহান্নামে প্রবেশ করবে, তারপর বলা হবে, ‘এটাই তা যাকে তোমরা অস্বীকার করতে।” [সূরা আল-মুতাফফিফীন ৭-১৭]


Arabic explanations of the Qur’an:

یَصۡلَوۡنَهَا یَوۡمَ ٱلدِّینِ ﴿١٥﴾

তারা প্ৰতিদান দিবসে তাতে দগ্ধ হবে;


Arabic explanations of the Qur’an:

وَمَا هُمۡ عَنۡهَا بِغَاۤىِٕبِینَ ﴿١٦﴾

আর তারা সেখান থেকে অন্তৰ্হিত হতে পারবে না [১]।

[১] জাহান্নামীরা কোনো সময় জাহান্নাম থেকে পৃথক হবে না, অনুপস্থিত থাকতে পারবে না; মৃত্যুর মাধ্যমেও নয়, বের হওয়ার মাধ্যমেও নয়। সেখানে তাদের জন্যে চিরকালীন আযাবের নির্দেশ আছে। [মুয়াসসার,সা‘দী]


Arabic explanations of the Qur’an:

وَمَاۤ أَدۡرَىٰكَ مَا یَوۡمُ ٱلدِّینِ ﴿١٧﴾

আর কিসে আপনাকে জানাবে : প্রতিদান দিবস কী?


Arabic explanations of the Qur’an:

ثُمَّ مَاۤ أَدۡرَىٰكَ مَا یَوۡمُ ٱلدِّینِ ﴿١٨﴾

তারপর বলি, কিসে আপনাকে জানাবে: প্রতিদান দিবস কী?


Arabic explanations of the Qur’an:

یَوۡمَ لَا تَمۡلِكُ نَفۡسࣱ لِّنَفۡسࣲ شَیۡـࣰٔاۖ وَٱلۡأَمۡرُ یَوۡمَىِٕذࣲ لِّلَّهِ ﴿١٩﴾

সেদিন কেউ কারও জন্য কিছু করার মালিক হবে না; আর সেদিন সব বিষয়ের কর্তৃত্ব হবে আল্লাহর [১]।

[১] অর্থাৎ হাশরের ময়দানে কোনো ব্যক্তি নিজ ইচ্ছায় অন্যের কোনো উপকার করতে পারবে না এবং কারও কষ্ট লাঘবও করতে পারবে না; অপর ব্যক্তি তার যত প্রিয় ও কাছের মানুষ-ই হোক না কেন। অনুরূপভাবে সুপারিশও কারও নিজ ইচ্ছার উপর হবে না, যে পর্যন্ত আল্লাহ্ কাউকে কারও জন্যে সুপারিশ করার অনুমতি না দেন। একমাত্র আল্লাহ্ তা‘আলাই সকল আদেশের মালিক। তিনি স্বীয় কৃপায় কাউকে সুপারিশের অনুমতি দিলে এবং তা কবুল করলে তাও তাঁরই আদেশ হবে। [ইবন কাসীর, সা‘দী]


Arabic explanations of the Qur’an: